“উইল ডু” জেনারেশান

ভূমিকা

পশ্চিমের সোশাল এলিটদের একটি গ্রুপকে ’৫০ এর দশকে “জেট সেট” বলা শুরু হয়। এদের দেখা মিলত ইউরোপের সব বড় এয়ারপোর্টে, উড়ালের অপেক্ষায়। তখনকার এয়ার ফেয়ার সাধারণদের জন্য অকল্পনীয় রকমের ব্যয়সাধ্য ছিল বলে জেট প্লেনে ভ্রমণ কেবল অতিধনীদের জন্যই বরাদ্দ ছিল (লন্ডন-নিউ ইয়র্ক এখন যেখানে ৬০০ ডলারে ঘুরে আসা যায়, ’৫০ এর দশকে সেখানে আজকের হিসেবে ৫ থেকে ৬ হাজার ডলার খরচ হতো) । অঞ্জন দত্ত তার ‘মালা’ গানটি যে গানের অবলম্বনে/অনুকরণে রচনা করেছেন, পিটার সার্সটেটের সেই “Where do you go to (my lovely)” গানটিতে জেট সেটদের তীক্ষ্ণধী বিবরণ আছে। সে বর্ণনার সাথে বাংলাদেশের অতিধনীদের মিলিয়ে দেখার ইচ্ছা থেকেই এ লেখার শুরু। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে জেট সেটদের সমার্থক কোনও শ্রেণী বাংলাদেশে আছে কি না, থাকলে তাদের কী নামে ডাকা যায়, কতো সম্পদ কিংবা ঠিক কী ধরনের আচরণ এদের বিশেষায়িত করে – এ ধরনের বহু প্রশ্ন নিয়ে আমি বাংলাদেশের কিছু অতিধনীদের সাথে কথা বলা শুরু করি, যাদের বয়স ২৫ থেকে চল্লিশের মধ্যে। নিজেরা অতিধনী না বাবা অতিধনী এই পার্থক্যে আমি যাই নি যেহেতু সামগ্রিকতার খোঁজ দেয়া আমার পক্ষে সম্ভবপর না, আমি কেবল নির্মোহভাবে এদের কয়েকজনকে দেখতে চেয়েছি। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল যাদের সাথে কথা বলছি তাদের ছবিও জুড়ে দেবো, যেহেতু এই মানুষগুলোকে বোঝার জন্য তাদের চেহারা দেখা খুব জরুরী। সমস্যা হোল, লেখালেখির কথা শুনলে হয় তারা নিজেদের গুটিয়ে নেন, নয়তো বানিয়ে বলা শুরু করেন। একজন বাদে (যিনি নিজেকে অতিধনী মনে করেন না) প্রত্যেকেরই শর্ত, পরিচয় দেয়া চলবে না। তাই আসল পরিচয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে দেয়া হোল।

রাইজ অফ দি ফকিন্নীজ

অপ্টামাস প্রাইমদের উত্তরা ৪ নং সেক্টরে ৫ কাঠা জমির ওপর কিউবিস্ট আর্কিটেকচারের মডার্ন ডুপ্লেক্সটি যখন ’৮৯ সালে বানানো শেষ হয় তখন খরচ হয়েছিলো এক কোটির সামান্য বেশী। সেদিনের ক্লাস সিক্সে পড়া কিশোরটি এখন পুরো দস্তুর ব্যবসায়ী। বিশাল পারিবারিক ব্যবসার একটি অংশ (চামড়াজাত জুতা তৈরী) পরিচালনা করেন। কিছুদিন আগে তিনি প্রায় সোয়া কোটি টাকা খরচ করে ২০১১ এডিশানের বিএমডাব্লিউ 5 সিরিজের কাস্টোম মেড একটি গাড়ী কিনেছেন। তার কিছুদিন আগে কিনেছেন মার্সিডিজ এস ক্লাস। বিএমডাব্লিউটি তিনি নিজে ড্রাইভ করেন ছুটি-ছাটায় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনও স্থানে যেতে হলে (যেমন ফাইন ডাইনিং রেস্টারান্ট কিংবা মন্ত্রিবাড়ী)। যে শহরে ৮০ কিলোমিটারের বেশী গতিতে কয়েক সেকেন্ডের বেশী গাড়ী চালানো সম্ভব না সেখানে কোটি টাকা দিয়ে বিএমডাব্লিউ কিনে কী লাভ – এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, “ সারাদিন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকি, এটাই তো একমাত্র শখ।”

অপ্টামাস প্রাইমদের ব্যবসায়িক উত্থান ট্যানারি থেকে। শুরুতে বাবা আর চাচা থাকলেও দুই পরিবারের চার পুত্র সন্তান যোগ দেয়ায় এখন ব্যবসার বিস্তৃতি বেড়েছে বহুগুণ (কন্যা সন্তানরা ব্যবসায় নেই, তারা প্রবাসী) প্রথম দিকে ব্যবসার ঝোঁকটা ছিল বিদেশের দিকে। এখন দেশের বাজারই বিশাল। বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। তিন বছর আগে আমি কল্পনাও করিনি যে বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের স্যান্ডেল দুই হাজার টাকায় বিক্রি হবে; অপ্টামাস প্রাইমরা সেটাও করে দেখাচ্ছে। এমন অর্থনৈতিক রূপান্তর শিল্পোদ্যোক্তাদের উপভোগ না করার কোনও কারণ নেই। কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিণতি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। ক্রমশই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। তার মতে এখানে ভদ্রলোকদের জন্য আর কোনও জায়গাই অবশিষ্ট নেই। শুরু হয়েছিলো ওয়ান-ইলেভেনে। খালেদা জিয়া-শেখ হাসিনা জেলে গেলে ফকিন্নীরা বাকবাকুম হয়ে ভাবতে শুরু করে যে আমাদের সাথে তাদের তো আর কোনই পার্থক্য নেই। যে কারণে ফকিন্নীরা কোনও সমস্যা হলেই এখন গাড়ী ভাঙে (এ কথাটার ইঙ্গিত ছিল এই আলাপের একদিন আগে সংগঠিত অটোরিকশা চালকদের সংঘবদ্ধ বিক্ষোভে সাধারণ নাগরিকদের গাড়ী ভাঙার প্রতি), ঢিল ছোড়ে বাড়ীতে। ভবিষ্যতে ফকিন্নীদের বাড় আরও বাড়বে বলে আশংকা অপ্টামাস প্রাইমের; তখন তারা রাস্তাঘাটে ভদ্রলোকদের থাপ্পড় মাড়বে, তর্ক করবে।

ড্রীম মেশিনস/মেন’স টয়জ

অপ্টামাস প্রাইমের সাথে এক স্কুলে একই ক্লাসে পড়াশোনা করেছিলো অটোবট বাম্বলবী। আশির দশকে শোনা যেত যে তার চাচা বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। ওবিস হওয়ার কারণে স্কুলে সে জনপ্রিয় ছিল না মোটেও। ক্লাসের বাকী ছেলেদের মতে সেজন্যেই তার জায়গা হয়েছিলো তিন উইয়ার্ডোর ছোট্ট এক দলে যারা টিফিন পিরিয়ডে এক সাথে হেটে বেড়াতো, আগের দিন প্ল্যান করে টিফিন নিয়ে আসতো, ফ্লাস্কে থাকতো ট্যাং। ক্লাসের বুলীরা বাম্বলবীকে খেপিয়ে বিনোদিত হতো, আর মেয়েরা নিরাপদ দূরত্বে এড়িয়ে যেত সম্ভবত তার দৈহিক বিশালত্বের কারণে। দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু করে ক্লাস এইট-নাইনে ওঠার পর। অবহেলার বাম্বলবী হয়ে ওঠে ঈর্ষার পাত্র। একসময় ওদের ঐশ্বর্য ছিল শুধুই একটা তথ্য, বড়জোর সাধারণ আলাপের বিষয়; কিন্তু এখন সেটা চেখে দেখার মতন বাস্তবতা, বিস্ময় আর ঈর্ষার খোরাক। বাম্বলবী চুল কাটতে সিঙ্গাপুর যায়, কিংবা যে সব মেয়েদের ওর সাথে এক গাড়ীতে দেখা যায় তারা সব বেহেস্তেরই প্রাণী (কিন্তু চরিত্র ভালো না), এসাইনমেন্ট শেষে ফিরে যাবে।

কলেজ-ইউনিভার্সিটির ফ্যান্টাসির দিনগুলো শেষে এখন বাম্বলবীর ইমেজ কী?  আশ্চর্যজনক ভাবে অপ্টামাস প্রাইমের মতন এখানেও একটা বড় ফ্যাক্টর হোল গাড়ী। নায়োমি ক্লাইন তার “নো লোগো” বইটিতে দেখিয়েছেন ’৯০ এর দশকে আমেরিকার বড় ব্র্যান্ডগুলো কীভাবে মানুষের আইডেন্টিটির অনুষঙ্গ হয়ে দাড়ায়, কতটুকু অন্তঃসারশূন্য হলে কেউ নাইকির লোগোর উল্কি আঁকায় বাহুতে। আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশের উইল ডু জেনারেশানের কাছে গাড়ী এমনই একটা আইডেন্টিটি যা ছাড়া তারা নিজেদের সম্পূর্ণ মনে করতে পারে না, যেজন্য তারা ফেইসবুকের প্রোফাইলে নিজের না, তাদের গাড়ীর পোট্রেট আপলোড করে। ছোটবেলায় স্কুলে আমাদের ক্লাসে অনেকগুলো ইমরান ছিল যার মধ্যে একজনকে আলাদা করার সুবিধার্থে বলা হতো কুত্তা ইমরান; কেননা সে কুকুর পুষত। যে ছেলেগুলো ছোটবেলায় ওকে কুত্তা ইমরান বলত এখন তারা বিশেষিত করে ইভো এইট চালিয়ে ইমরান হিসেবে। বাম্বলবী তার পরিমণ্ডলে পরিচিত  ঢাকার একমাত্র (?) ফিফথ জেনারেশান শেভি ক্যামেরোর মালিক হিসেবে। জনশ্রুতি যদি সত্য হয় তাহলে বাম্বলবী একদিন হয়তো গাড়ীর কালেকশানে পাল্লা দেবে জে লেনোর সাথে। শোনা মতে তার গারাজে আরো আছে স্কাইলাইন জিটিআর, দুটো পোর্শ, পাঁচটি বিএমডাব্লিউ এবং অগণিত ছানাপোনা।

এই ব্যাপারটা আমাকে খুব আশ্চর্য করে। স্বাভাবিক চিন্তায় আপনি আশা করবেন যে অনেক টাকা থাকলে কেউ হয়তো তিন চার কোটি টাকা দিয়ে গাড়ী না কিনে ছোটো-খাটো একটা পিকাসো কিনবে (নিপট বিনিয়োগ হিসাবেও যার খুঁত পাওয়া যাবে না), ওয়াইন সেলারে ভিন্টেজ ১৯৯৭ ডোমেন ডে লা রোমেনী কোটীর পসার সাজিয়ে সমঝদারের ভান করবে, কিংবা স্লাভোয় জিজেক, নাসিম নিকোলাস তালেবকে দাওয়াত দিয়ে দেশে এনে পাবলিক ফোরামে “মাই ডীয়ার ফ্রেন্ড নাসিম” কে পরিচয় করিয়ে দেবে (রবীন্দ্রনাথ যেভাবে দেশবিদেশ ঘুরে বেড়াতেন আর কি)। বেশী টাকা হওয়ার প্রথম উপসর্গ হোল পরিচয় সঙ্কট যার প্রতিফলন দেখা যাবে জাতে ওঠার চেষ্টায় (এই কসরতটিকে পুরোপুরি খারাপও বলা যাবে না)। কিন্তু পৃথিবীতে এতকিছু থাকতে সবাই একযোগে একটিমাত্র শখের অনুবর্তী কেন হবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সম্ভবত ছোটবেলায় টেলিভিশনের পর্দায় যে রঙ্গিন স্বপ্নলোকের সন্ধান তারা পেয়েছিল, দেশে বসে সে স্বপ্নলোককে ছুঁয়ে দেখবার কেবল একটিই পথ তারা বের করতে পেরেছে। অটোবট আয়োনহাইড এ প্রসঙ্গে তার দার্শনিক মতামত দিয়েছেন অকপট প্রবচনে: “ওয়েস্টে পোলাপানরা পুরুষ হওয়ার প্রমাণ দিতে আগের দিনে স্কাউটিং এ গোপনে জমায়েত হয়ে জিপার খুলে স্কেল নিয়ে কন্টেস্ট করতো কারটা লম্বা, আর আমাদের দেশে পোলাপানরা শুক্রবার রাতে বাপের টাকায় কেনা গাড়ী বাইর করে দেখায় Carটা লম্বা।”

মানি কান্ট বাই এভ্রিথিং, দ্যাটস ওয়াই ওয়ান নীডস পাওয়ার

অটোবট আয়োনহাইডদের পারিবারিক ব্যবসা প্রিন্টিং। উইল ডু জেনারেশানের ব্যাপারে তার কাছে পাওয়া যাবে বিস্তর তথ্য, কিন্তু নিজে এখনও সেই ক্লাসকে প্রতিনিধিত্ব করেন না বলেই তার দাবী। কেন? তার মতে এই ক্লাসটি খুবই এক্সক্লুসিভ। আপনার ব্যবসা যদি একশ’ কোটি টাকার উপরে হয় তাহলেই কেবল এই ক্লাসে ঢোকা যাবে। মনে রাখবেন একশ কোটি টাকার ব্যবসা আর একশ কোটি টাকার জমি-জমা এক জিনিষ না। অপ্টামাস প্রাইমদের গুলশানে পৌনে দুই বিঘা জমি কেনার জন্য  তিনশ কোটি শাদা টাকা নিয়ে পার্টি রেডি আছে (জানিয়ে রাখা ভালো যে অপেরা হাউজের পাশেও পৌনে দুই বিঘা জমির দাম ৪০ মিলিয়ন ডলার না)। জমির মালিক শত কোটিপতি ঢাকা শহরে নাকি অনেকেই আছেন। কিন্তু শতকোটি টাকার ব্যবসা করতে হলে ক্ষমতাকে সংহত করতে হবে। তা সেই ক্ষমতাটি কেমন বস্তু? একটা উদাহরণ দেয়া যাক। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এক আত্মীয়র (যিনি মন্ত্রীসভায়ও আছেন) বোনের সম্পত্তি দখল করে রেখেছিল অন্য কোনও পার্টি (উল্টোটাও হতে পারে, নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই আমার জন্য)। অসীম ক্ষমতাধর ভাইটি যেখানে বোনের জমি উদ্ধার করতে পারেন নি সেখানে অপ্টামাস প্রাইমের চাচা কলকাঠি নাড়িয়ে জমির মিটমাট করেছেন মাত্র কয়েক সপ্তায়।

আয়োনহাইড ক্ষমতা আর ক্ষমতার অপব্যবহারকে মিলিয়ে দেখতে ভালোবাসেন। তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম উইল ডু জেনারেশানকে আলাদা করা যাবে কোন একটি লক্ষণে? তার উত্তর ছিল “এরোগ্যান্স”। এদের বাবারা এখনও অনেক “ডাউন টু আর্থ” কিন্তু এরা যা ইচ্ছা তাই করে, লিটারেলি। তার এক বন্ধু এয়ারপোর্ট রোডে আরেক গাড়ীর সাথে রেইস করতে গিয়ে একটু চাপিয়েছিলো। সে গাড়ীতে ছিল পশুন্ধরা গ্রুপের মালিক পরিবারের একজন সদস্য। গাড়ীর কাঁচ নামিয়ে শটগান বের করে তার দিকে তাক করে থ্রেট করা হয়। আয়োনহাইডের সুচিন্তিত পরামর্শঢাকা শহরে গাড়ী চালাতে হবে আদবের সাথে।

বাংলাদেশে ক্ষমতার কেবল দুইটি প্রকাশ চোখে পড়ে। প্রথমটি অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া অর্থাৎ যিনি যত বড় অনিয়ম করতে পারেন তিনি তত বেশী ক্ষমতাবান এবং দ্বিতীয় প্রকাশটি একেবারেই সিম্বলিক কিন্তু ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। অমুকের সাথে ম্যাডাম-বুবু চোখে তাকিয়ে কথা বললেন না মাটির দিকে তাকিয়ে, তমুককে প্রেসিডেন্ট আগে সালাম দিলেন কিংবা হবিগঞ্জ গেলে বুবু তার পুকুরের শোল মাছ না খেয়ে ফেরেন না-এ জাতীয় (এই ক্ষমতাকে উড়িয়ে দেবেন না, মোক্ষম জায়গায় এর অনেক দাম)।  উইল ডু জেনারেশান এখনও কেবল প্রথম প্রকাশটি নিয়েই চিন্তিত কিন্তু পিতারা অকপট উভগামী। তবু ভারতের অতিধনীদের সাথে এক্ষেত্রে আমাদের একটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সন্দেহ নেই যে অর্থের দিক থেকে ভারতের সাথে আমাদের অতিধনীদের তুলনা করা বোকামি কিন্তু সময়ের বিচারে দুটি শ্রেণী গড়ে উঠেছে মোটামুটি একই সাথে। এই সময়ে ভারতীয় অতিধনীরা ক্ষমতাকে সংহত করেছে অবিশ্বাস্য দক্ষতায়, যেটা বাংলাদেশীরা পেরে ওঠে নি। ভারতীয় অতিধনীরা পুরোপুরি আন্টাচেবল। কংগ্রেস, বিজেপি  দুটো দলকেই তারা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছে। রাজনীতিবিদরাও বোঝেন যে মারামারির চেয়ে গলাগলি ভালো। সে তুলনায় বাংলাদেশের অতিধনীরা এখনও আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে বিভক্ত। যে কারণে হাশেম খান, আহমেদ আকবর সোবহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে কোর্ট-কাচারি করতে হয়, আগামীতে হয়তো খান ব্রাদার্সকে করতে হবে। আমাদের দেশে উপর থেকে নীচে সবাই ক্ষমতার উগ্র প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বিধায় এই বিচিত্র চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সাধারণ মানুষের পক্ষেই যায় বলে আমার বিশ্বাস। তবে হাসিনা-খালেদা উত্তর বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা তাদের ভুল বুঝতে পারবেন: আলাদা হয়ে কামড়া-কামড়ির অপোর্চিউনিটি কস্ট অনেক বেশী। ইতিহাস বলে দস্যুতা সংহতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।  

 

দিস ইজ ওয়ান বিগ ফান প্লেস

আমার ধারণা ছিলো পৃথিবীতে অন্য কোনও দেশে বিলিয়নিয়ারদের (স্থানীয় মুদ্রায়, ডলারে না) এতো বাজে লাইফ স্টাইল নেই। যত টাকাই থাকুক ট্র্যাফিক জ্যামে দিনে দুই-তিন ঘণ্টা যাবেই, ঘুমানোর সময়টা ছাড়া দিনে বিশ মিনিটও একা থাকা সম্ভব না, বিলিওনিয়ার হওয়ার কারণে আপনার মধ্যে যে অতি-পৌরুষ জেগে উঠবে তাতে এমন মনে হওয়াটা অসম্ভব না যে তার প্রয়োগ শুধুমাত্র বাংলাদেশী নারীকুলের মধ্যে সীমিত রাখাটা অন্য জাতির মেয়েদের জন্য অবিচার। তাছাড়া যে জিনিসটির সাথে তাদের নিবিড় ও অক্ষয় প্রেম সেই মেনস টয়গুলোর উপযোগী রাস্তাও তো দেশে নেই। সে আন্দাজে প্রায় প্রত্যেককেই জিজ্ঞেস করেছি তারা বাংলাদেশে আছেন কেন? যে ছেলেটি কোনও কষ্ট না করেই কয়েক শ কোটি টাকার উত্তরাধিকার ভোগ করবে, পশ্চিমের নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করতে পারবে অনায়াসে, তার জন্য বিদেশে থাকাটাই কি স্বাভাবিক না?

অটোবট জ্যাজ দার্শনিক গোছের মানুষ। আমাকে বললেন যে, “য়ু আর ল্যাকিং পার্স্পেক্টিভ। টাকা, অর্থনৈতিক লেনদেনের মাপকাঠি ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ আপনার কাছে সেটা যথেষ্ট পরিমাণে নেই। পঞ্চাশ-একশ কোটির পরে যা ইচ্ছা তার প্রায় সবই আপনার কেনা হয়ে যায়। কিন্তু বয়স তো সবে পঁয়ত্রিশ। এরপরে ইট বিকামস এ হোল নিউ বল গেইম। কীভাবে আপনার নেটওয়ার্ক বাড়াবেন? কীভাবে আপনার পাওয়ার কনসলিডেট করবেন? পাওয়ার মানে কিন্তু এই না যে আপনার কী আছে, পাওয়ার সেটাই যেটা অন্যেরা মনে করে আপনার আছে। সবসময় যে আপনি লাভবান হবেন তা না কিন্তু য়ু ক্যান মেক ফ্রেন্ডস অ্যালঙ দ্যা ওয়ে। এটাই কিন্তু সারা পৃথিবীতে হয় এবং এটাই সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট। আপনি কাদের চেনেন। কিন্তু বাংলাদেশে, য়ু ডিসকাভার ওয়ান মোর থিং ইন দিস পার্সুট। যে আপনি যা খুশী তাই করতে পারেন এবং য়ু ক্যান গেট অ্যাওয়ে উইথ দ্যাট। এইটা যে কী চরম স্যাটিস্ফাইং বলে বোঝানো যাবে না। আপনার অস্ট্রেলিয়ায় (আমি ক্যানবেরায় থাকি) কি আপনার কোনও দাম আছে? আপনার তো কোনও পাওয়ারই নাই। আমি কিন্তু আপনাদের লাইফ জানি। আমি লন্ডনে সাত বছর ছিলাম। আয়েম টেলিং য়ু একবার এই লাইফের মজা পেলে বিদেশের লাইফ পুরা ডাল-ভাত মনে হবে।”

লক্ষ্মী-কালী দুজনের সাথেই বহুদিনের বসতবাড়ি অটোবট এলিটা ওয়ানের, জ্যাজের মতোন এতোটা এগজিসটেনশালিস্ট হয়ে ওঠেন নি। বাবা জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা তো শ্বশুর উদ্দিনময় দিনগুলোর সিংহপুরুষ। দীর্ঘদিন নিউ ইয়র্কে ছিলেন, এখন দেশে থাকেন। কিন্তু ভুলতে পারেন না নিউ ইয়র্কের নির্ঝঞ্ঝাট দিনগুলো। ভুলতে পারেন না সন্ধ্যার পরে বন্ধুরা মিলে বাড়ীর সামনের কোরিয়ান রেস্টারান্টে বসে নির্মল আড্ডার মুহূর্তগুলো। তার স্বপ্ন ছিল বেস্ট অফ বোথ ওয়ার্ল্ডস; ছ’ মাস ঢাকায় তো ছ’ মাস নিউ ইয়র্কে। বাস্তবতা কঠিন; দেশে অনেক কমিটমেন্ট, নিউ ইয়র্কে বেড়াতে যাওয়া আর মাসের পর মাস থাকা তো এক কথা না। সেখানকার বন্ধুরা (নস্টালজিয়া আক্রান্ত ও দেশে বন্দী) মিলে দেশে তাই একটা মেক বিলিভ ওয়ার্ল্ড তৈরী করেছেন। তারা ওয়াসাবি, ইজুমিতে বসে সেই পৃথিবীতে চলে যান। আলোচনা করেন ফিল্ম ও শাড়ী নিয়ে, গাড়ী ও ফেইসবুক নিয়ে, ট্র্যাফিক জ্যাম ও ডিভোর্স নিয়ে। কিন্তু সবার জন্য এই মেক বিলিভ ওয়ার্ল্ডটি যথেষ্ট না। চট্টগ্রামের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক পরিবারের একজন তরুন সদস্য মাসে একবার লন্ডন যান, অপেরা কিংবা ব্যালে দেখতে। আরেকজন শুনলাম তার লেইকা এম নাইন ক্যামেরা নিয়ে আমেরিকার য়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কে যান ফোটোগ্রাফির জন্য, এন্সেল অ্যাডামসের ক্লাসিক ছবিগুলোর ইতিহাস পড়ে, দিনক্ষণ ও লোকেশান মিলিয়ে।

ভারতে একটি পশ্চিম-ফেরত উচ্চশিক্ষিত প্রোফেশনাল ক্লাস সৃষ্টি হয়েছে, যেটি বাংলাদেশে এখনও অনুপস্থিত। এরা অনেক টাকা মাইনে পান, কিন্তু সেটা বেতনই, ব্যবসার থোক টাকা না। বছরে ৪৫ লাখ রুপী ভারতে অনেক উপার্জন কিন্তু প্রায় সমান ১ লাখ ডলার নিউ ইয়র্কে তেমন কিছু না। তাই এরা ঝাঁকে ঝাঁকে ভারতে ফিরে আসছে। কিন্তু হৃদয়ের ক্ষিদেটা ভারতে মেটে না। চারদিকে ‘আনএনলাইটেন্ড’, ‘আনসফিস্টিকেটেড’ ও ‘আনইন্টিলিজেন্ট’ মানুষের ছড়াছড়ি। তাই এরা উইকেন্ড হোম বানাচ্ছে গোয়ায়। সেখানে গিয়ে তারা এক টুকরো ‘ওয়েস্ট’ খুঁজে পায়। বাংলাদেশে এই শ্রেণীটি তৈরী হয় নি কেননা অতো বেতন দিয়ে প্রোফেশনাল পোষা এখানে কঠিন, আবার উইল ডু’রা পশ্চিম ফেরত হলেও চাকুরী করে না, বাবার ব্যবসা ধরে।  উপার্জন এতোটাই বেশী যে এরা প্রপার্টি কেনে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক কিংবা মেলবোর্নে (প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে ঢাকার অভিজাত এলাকায় প্রপার্টি কিনতে তার চাইতেও বেশী টাকা লাগে)। কিন্তু উইল ডু’দের মেক বিলিভ ওয়ার্ল্ডটি আমার কাছে ভীষণ ইন্টারেস্টিং মনে হয়। এটি ঠিক তাই যা বাংলাদেশ কখনো হবে না কিন্তু হতে গিয়ে রচনা করবে আমাদের বেদনা ও সম্ভাবনা, ভবিষ্যতের। আমাদের চারদিকে যে এতো ক্লেদ ও যাতনা তা কতক্ষণ না দেখার ভান করা যায়? উইল ডু’দের  কথা শুনে মনে হয়েছে, সারা জীবন। এদের দৃষ্টিভঙ্গি অতি স্বচ্ছ; জানি বাংলাদেশে অনেক সমস্যা, কিন্তু আমি তো এই সমস্যা সৃষ্টি করি নি। তাই আমি চোখ বন্ধ করে থাকবো, আমাকে তো সমস্যা স্পর্শ করছে না। এদের জীবনে রিয়াল আর আনরিয়ালের ভেদাভেদ কোথায় আমি বুঝে উঠতে পারি না। এমন তো নয় যে ছেলেটি অপেরা দেখতে প্রতি মাসে লন্ডন যায়, সেটিই তার কাছে সত্য ও আরাধ্য; আর বাংলাদেশ তার আসল পৃথিবীতে যাওয়ার চাবি। সেজন্যই কি তার কাছে বাংলাদেশ এতোটা ‘ফান’?

গ্রীড ইজ গুড

আসল প্রশ্নযাদেরকে আমি উইল ডু বলছি, সেই শ্রেণীটি তৈরী হোল কীভাবে?

বাংলাদেশের জিডিপি (অফিশিয়াল এক্সচেঞ্জ রেট) ২০০২ সালে ছিলো প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার; এখন সেটা ১০০ বিলিয়ন ডলার। এই পুরোটা সময়ে বাংলাদেশে কাজ করেছেন ভারতীয় টেক্সটাইল এঞ্জিনিয়ার রাজু ভেঙ্কাট। তার আগে তিনি কাজ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইন্দোনেশিয়ায়। পড়াশোনা করা ভদ্রলোকটি বাংলাদেশী নন বলে ধারণা করি যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তার মতামত অন্তত আমার চেয়ে নিরপেক্ষ। তাকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, আমাদের এতো সমস্যা, অন্টাপ্রেনিওরদের নালিশের শেষ নেই, সরকারের অদক্ষতাও প্রশ্নাতীত; তারপরও বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে কীভাবে?

রাজুর উত্তর চমকে দেয়ার মতোন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষদের সাথে কাজ করেছেন বহু বছর, দেখেছেন কাছ থেকে – কিন্তু নর্থ ইন্ডিয়ান ও বাঙালি এই দুই জাতির যে “লোভ” তা অন্য কোথাও দেখেন নি। বাংলাদেশী অন্টাপ্রেনিওরদের মতোন সাহসী অন্টাপ্রেনিওর (উইল ডু’দের বাবারা) সারা পৃথিবীতে নেই। বুঝুক না বুঝুক একটা ব্যবসা মাথায় ঢুকলে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বেই। এমন যুক্তিহীন প্রাণোচ্ছলতা একটা গরীব দেশের উন্নয়নের জন্য খুব প্রয়োজন। আলাদাভাবে ভারতের কেবল কয়েকটি রাজ্যের অর্থনীতিই কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে দ্রুত বাড়ছে। বাঙালি ও ইহুদিদের মতোন শার্প মাথাও তিনি কোথাও দেখেন নি। কিন্তু বাঙালি লীডারশিপে বিশ্বাস করে না, খুব বেশী ঈর্ষাপরায়ন এবং অতিরিক্ত লোভের কারণে আজকে একজন কোনও ব্যবসা শুরু করলে কাল সকাল হওয়ার আগেই আরেকজন সেই ব্যবসা শুরু করে দেয়, সেজন্য কেউই ঠিকমতন দাড়াতে পারে না।

তাহলে ছোটো বঙ্গের বাঙালিরা ব্যবসায় এতো পিছিয়ে পড়া কেন? মনে রাখতে হবে, বিশ্বের প্রথম দিককার মাল্টিন্যাশনাল কর্পরেশান ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি তাদের অপারেশান শুরু করে ছোটো বঙ্গে এবং হেন কোনও কুকর্ম নেই যা তারা করে নি (এডাম স্মিথের “ওয়েলথ অফ নেশান্সে” এর চমৎকার বর্ণনা আছে)। মার্কেটের ধুরন্ধর চালের সাথে ছোটো বঙ্গের বাঙালিরা অন্তত আমাদের চেয়ে অনেক বেশী দিন ধরে পরিচিতি। এমন ধারণা করাটা অমূলক যে আমাদের সাথে ওদের অন্টাপ্রেনিওরশিপের পার্থক্যটা ধর্মজাত। রাজুরও একই মত; টাকার ব্যাপারে সব ধর্মের মানুষেরই এক আদর্শ – আরো চাই। কিন্তু ছোটো বঙ্গের সাথে বড় বঙ্গের বাঙালিদের একটা বড় পার্থক্য আছে, সেটা রাজনীতির। বাংলাদেশীরা এগোয় সরকার সত্ত্বেও, সে জানে যে সরকার কোনও হেল্প করবে না, উলটা দিতে হবে ঘুষ; তাই সে কর্মোদ্ধারে বিশ্বাসী, তা সে যেভাবেই হোক (উইল ডু…)। পক্ষান্তরে ছোটো বঙ্গের বাঙালিরা দীর্ঘদিনের কমিউনিস্ট শাসনে সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেছে অন্টাপ্রেনিওরশিপ। সবকিছুতে তারা তাকিয়ে থাকে সরকারের দিকে, কখন নির্দেশ আসবে। নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি নেই।

অলিভার স্টোনের ফিল্ম “ওয়াল স্ট্রীটের” নায়ক মাইকেল ডগলাসের (চরিত্রটি বেপরোয়া স্টক ব্রোকারের) বিখ্যাত ওয়ান-লাইনার “Greed, for lack of a better word, is good” বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তাহলে কি সঠিক?

উপসংহার

বহু বছর আগে লুইস বুনুওয়েলের ফিল্ম “দ্যা ডিস্ক্রীট চার্ম অফ দ্যা বুর্জোঁয়াজি” দেখে বুর্জোঁয়াদের অন্তঃসারশূন্যতাকে আচ্ছামতো তাচ্ছিল্য করার অভিপ্রায়ে বিস্তর মাথা ঘামিয়েছিলাম। স্যাটায়ারটি অনবদ্য। তবে কী, পিটার সার্সটেটের সেই গানের নায়িকা, যে কথা বলে মালেনা ডিট্রীখের মতোন তার ডিস্ক্রীট চার্মটি এড়িয়ে যাওয়া সহজ না। অস্বীকার করার উপায় নেই যে বুর্জোঁয়াদের আচরণের পুরোটাই ভান না, ওটার আয়ত্তে সাধনার প্রয়োজন আছে। আজকের পৃথিবীর ক্যাপিটালিস্টদের হাতে সে সময় নেই, আমাদের উইল ডু’দের তো আরোই নেই। সাংস্কৃতিকভাবে এরা এক আশ্চর্য প্রজাতি; বুর্জোঁয়াও হতে পারে নি, হয়েছে নেহাত ‘ওয়ানাবি’। বহুভাবে এরা আমাদের মধ্যবিত্তকে প্রভাবিত করছে, যার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে আমাদের সমাজে। মধ্যবিত্তের খাদ্যাভ্যাস এবং ভাষা বদলে যাচ্ছে উইল ডু’দের কারণে। এই লেখকের ধারণা, দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে এদের প্রবেশের পর এবং হাসিনা-খালেদা উত্তর বাংলাদেশে এদের ক্ষমতা পুরোপুরি সংহত হলেই কেবল এর ব্যাপ্তি ও তীব্রতা পুরোপুরি অনুধাবন করা যাবে।

বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলনে মরালিটির স্থান অতি উচ্চে, রিয়ালিটি যাই হোক না কেন? নিদেনপক্ষে সেন্টার-লেফটের দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণী, বিশেষত মধ্যবিত্তকে না দেখলে, তার শ্রেষ্ঠত্বকে না মেনে নিলে মনে হয় দেখার ভুল হোল। এই লেখক সেই দলের বাইরে কোথায়? অটোবট জ্যাজ এই আন্দাজকে ধরে ফেলেছিল সহজেই। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের চরিত্র নিরূপণে তার অকপট প্রতিক্রিয়া আমাকে ভাবিয়েছিল, মনে হয় উইল ডু’দের প্রকাশ ও পরিণতি এই মতের মাঝেই নিহীত। সে বক্তব্যেই শেষ করছি এই লেখা। “আপনার কি এখনও কোনও বিপ্লবের ডিল্যুশান আছে? মনে হয় গরীবরা বড়লোকদের ঘৃণা করে? য়ু আর ইন ফুলস প্যারাডাইজ। যেই লোকটারে আপনি ভাবছেন যে বিপ্লবে অংশ নেবে তার ভিতরে খোঁজ নিয়া দেখেন সে বড়লোকদের এই কারণে ঘৃণা করে না যে বড়লোক তারে লাথি মারে, তার রাগ এই কারণে যে লাথিটা সে মারতে পারে না। ক্যাপিটালিজমের আসল কাজটা হয়ে গেছে, এই রিয়ালিটিটা আপনারা এখনও বুঝতে পারেন না। লাথি মারাটারে এখন আর কেউই ঘৃণা করে না। যেই ব্যাটা লাথি খায় সেও ঘুমানোর আগে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখেই ঘুমায়, সে জানে অন্য কোনও সিস্টেমে অন্য কেউ বড়লোক হতে পারে, কিন্তু তারে বড়লোক হতে হইলে এই সিস্টেমটাই দরকার।”

(জুন ২০১১ তে বিপরীত স্রোতে প্রকাশিত)

২১.০৫.২০১১

ক্যানবেরা থেকে

5 thoughts on ““উইল ডু” জেনারেশান

  1. brilliantly argued and composed; especially the ending note: which may well explain why the Left of the political spectrum has all but disappeared. Perhaps its only natural that dysfunctional democracies will breed only a selfish brand of Capitalism.

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s