দেবতারা সব মর্ত্যে নামুক -২

Bangladesh

ঢাকা কেন্দ্রিক ক্রাউড আর প্রবাসীদের সেকি উচ্ছ্বাস দুই বৃদ্ধ মহিলার ফোনালাপ নিয়ে! যে যার ফ্রন্ট থেকে বিশ্লেষণ করে চলেছে এই আলাপ। কেউ বলছে, হাসিনা ছিলেন শান্ত। কেউ বলছে, নাহ, তিনি খুঁচিয়েছেন খালেদাকে বড্ড বেশি। কেউবা বলছে, খালেদা ছিলেন অফেন্সিভ। রেগে গিয়ে অনেক খোলামেলা কথা বলেছেন। ইত্যাদি। I was least interested to listen to the conversation. আমি আন্দোলিত হই না। আমি অপেক্ষা করছিলাম রেজাল্ট এর জন্য। কেননা, ওদিকে মানুষ মরতেই আছে গুলিতে, বোমায়। আবারও বলি, আমি অপেক্ষা করছিলাম রেজাল্ট এর জন্য। কেননা, আমি অস্থির হয়ে আছি আমার মা, বাবার নিরাপত্তার চিন্তায়।(দুদিন আগেই বাসার সামনের গলিতে ফেটেছে বোমা, মোটর সাইকেলে করে কারা যেন টহল দেয় বাসার সামনে)।

আচ্ছা, এইযে ঢাকা কেন্দ্রিক ক্রাউড আর প্রবাসী বিদ্বানেরা, আপনারা কি জানেন, বাংলাদেশ আজ জ্বলছে? একই গ্রামে, একই পাড়ায় হয়তো বড় হয়েছে ছেলে দুটো। স্কুলে বসেছে একই বেঞ্চিতে। আজ, বিএনপি আর আওয়ামী লীগের নামে দুজন দুজনকে হত্যা করছে? বিএনপি আর আওয়ামী লীগের নামে এক বাংলাদেশী আর এক বাংলাদেশীর ঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে? ঠিক যেভাবে পিলখানায় এক বাংলাদেশী সৈন্য হত্যা করেছে আরেক বাংলাদেশী সৈন্যকে। আগুন কিন্তু ঢাকা ছুই ছুই করছে! এই আগুনের মাঝে বসে যখন দুই অবিসংবাদিত নেত্রী ফোনে আলাপ করেন, সেটা প্রকাশ হয়ে যাওয়াতে যে সমঝোতার পথ বন্ধ হয়ে গেল প্রায়, বুঝছেন?

আমি জানি না, খালেদার সম্মতিতে এই আলাপ প্রকাশ করা হোল কিনা। তবে এটা পরিষ্কার, তাঁর ফোন রেকর্ড করেছে সরকারী সংস্থা। শুধু তাই নয়, একাত্তর টিভি সেটা প্রকাশ করেছে।  সমঝোতাটা হবে? এরপরেও? আমি জানি না, হাসিনা মোরগ পোলাও নিজে রান্না করবেন কিনা খালেদার জন্য। তবে এটা পরিস্কার, ঢাকার বাইরে বহু লোক পালিয়ে বেড়াচ্ছে জীবন বাঁচাতে, দুবেলা খাবারও জুটছে না তাদের, সরকারী পুলিশ বাহিনীর বন্দুক তাক করা তাদের দিকে।

১৫ই আগস্ট হাসিনার পুরো পরিবারকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি যখন তাঁর জায়গায় নিজেকে বসাই, আমার প্রচণ্ড রাগ লাগে, মনে হয় সব ধ্বংস করে ফেলি। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি কখনও প্রধান মন্ত্রী হতে চাইবো না। কেননা, এই প্রচণ্ড রাগ, প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে যেতে পারে দেশটা। আমি জানলাম, হাসিনা খালেদার সাথে ফোনে ১৫ই আগস্টের কথা বলেছেন। বুঝলাম- নাহ, সম্ভব নয়! এভাবে সম্ভব নয়, সমঝোতা।

খালেদারও অনেক রাগ। তাঁর পুরো পরিবার আজ দেশের বাইরে। তিনি একা। তাঁর ৪০ বছরের সংসার থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে সরকার। আপোষহীন নেত্রী ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন। কিন্তু তারপর? সম্ভব সমঝোতা?

এরা নেত্রী। এদের এক কথায় মানুষ প্রাণ দিচ্ছে। এত লাশ! আসলেই কি দেশটি অভিশপ্ত হয়ে গেল? এত অর্জন আমাদের, এত গর্ব আমাদের, সবকিছু তুচ্ছ? দেশ কি গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?

আপনি  হিসেব করছেন, হারলোটা কে এই ফোনালাপে। হাসিনা নাকি খালেদা? বুঝতে পারছেন, সমঝোতা না হলে, হারবে বাংলাদেশ?

তবু স্বপ্ন দেখি। একদিন ঘুম ভেঙে শুনবো, দেবতারা সব মর্ত্যে নেমেছেন। নেতারা একসাথে বসছেন, হাসছেন, ঘুরছেন। ঠিক যেমনটি হতো বহু বছর আগে। আমার দাদা ছিলেন মুসলিম লীগের ডাকসাইটে নেতা। তিনি যখন মারা গেলেন, তাঁর স্মৃতি পরিষদের আহবায়ক হলেন, তাঁর সময়ের বিখ্যাত এক আওয়ামী লীগের নেতা, ১৯৭০/৭১ এ যিনি ছিলেন এমপি। দাদা যখন মারা গেলেন, এই শেখ হাসিনাই পত্রিকায় দিয়েছিলেন শোকবাণী। বেশি দিন আগেকার কথাও নয়। ১৯৯৭ সালের কথা বলছি।

তবু স্বপ্ন দেখি। পাড়ার আওয়ামী লীগার ছেলেটি বিএনপি করা বন্ধুটিকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে সংসদ ভবন। সংসদ ভবনের সামনের সবুজ মাঠে দাঁড়িয়ে বলছে-ইশ কি ছেলে মানুষী না করেছিলাম গত কবছর। তোর বাবার সাথে আমার নেতা বড় অন্যায় করেছে। বন্ধুটি হেসে বলছে, বাদ দে। চল, জিয়ার মাজারটা দেখে আসি। দুজনে হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলে। এগিয়ে চলে বাংলাদেশ।

4 thoughts on “দেবতারা সব মর্ত্যে নামুক -২

  1. প্রশ্ন হলো এভাবে কতোদিন চলবে? এক পক্ষ ‘ক্ষমতায় আসীন থাকতে মরিয়া, অন্যপক্ষ আসীন হতে। প্রতিদিন মানুষ মরছে। বিএনপি বা আওয়ামী লীগ- এর বাইরে এদের আরেকটা পরিচয় আছে, এরা বাংলাদেশেরই মানুষ। রাজনৈতিক ডামাডোলে এই যে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, এর দায়-দয়িত্ব কি সংঘাতে লিপ্ত দুটি পক্ষ নেবে? এই সব হত্যাকান্ডের বিচার কি কখনো হবে?

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s