নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবীতে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো আন্দোলন করছে। তাদের এই আন্দোলন যে যৌক্তিক, এই বিষয়টি কুটনৈতিক পর্যায়ে দৌড়-ঝাঁপ, সংবিধান থেকে সরে এসে সরকার দলীয় নেতার নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার সংক্রান্ত প্রস্তাব এবং বিরোধী দলীয় নেতার নির্দলীয় সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সরকারী নেতা ও বুদ্ধিজীবীগণ কর্তৃক জীবিত নির্দলীয় ব্যক্তি খোঁজার প্রচেষ্টার মাধ্যমেই প্রমানিত হয়েছে।
গত কয়েকদিন যাবতই সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানা যাচ্ছিলো যে, সরকার দলীয় নেতা বিরোধী দলীয় নেতাকে ফোন করে সংলাপের প্রস্তাব দেবেন। গত ২৫ অক্টোবর বিরোধী দলীয় নেতা তার প্রস্তাব অনুযায়ী সংলাপ শুরুর জন্য দুই দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ২৭, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর এই তিনদিন হরতাল ঘোষনা করেন। ২৫ তারিখ কোন সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয় নাই। কিন্তু ২৬ তারিখ দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় যে, সরকারদলীয় নেতা বিরোধী দলীয় নেতার লাল ফোনে কল করে কোন সাড়া পান নাই। বিরোধী দলীয় নেতা সাংবাদিক ডেকে প্রমান করে দেন যে লাল ফোনটি ডেড ছিলো।
অবশেষে পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সন্ধা ছয়টায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচিত টেলিফোন আলাপ।
এই সংলাপকে যখন সমগ্র দেশবাসী একটি আইসব্রেকিং পদক্ষেপ বলে বিবেচনা করতে শুরু করেছিলো ঠিক তখনই সরকারের শীর্ষ উপদেষ্টা জনাব এইচটি ইমাম বললেন, “খালেদা জিয়া ফোনালাপে বলেছেন, ‘মুক্তিবাহিনীর লোকেরাই গণহত্যা চালিয়েছিল’।” এবং তারপর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বললেন টেলিফোন সংলাপ রেকর্ড করা হয়েছে এবং তা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। আমি জানি না ইনু সাহেব এই ফোন আলাপ রেকর্ড করা বা প্রকাশ করার ঘোষনা দেবার আগে বিরোধী দলীয় নেতার অনুমতি নিয়েছিলেন কী না। যদি তা না নিয়ে থাকেন তবে তা সদ্য পাশ হওয়া তথ্য আইনের আওতায় একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়েছে।
বেসরকারী টিভি চ্যানেল ৭১ টিভিতে টেলিফোন আলাপ প্রকাশের পর দেখা গেলো মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়া যা বলেছেন বলে প্রচার করা হয়েছিলো তা পুরোপুরি মিথ্যা। সেই সাথে টেলিফোন আলাপ বিষয়ে মানবজমিন পত্রিকায় ছাপা তথ্যও টিপিক্যাল ট্যাবলয়েড পত্রিকার মত অর্ধসত্য।
সুতরাং প্রমানিত হলো যে,
১/ এইচ টি ইমাম সাহেব একজন মিথ্যাবাদী;
২/ মানবজমিন একটি যথার্থ ট্যাবলয়েড পত্রিকা;
৩/ মাননীয় সরকার দলীয় নেতা নিজেই টিভি ক্যামেরার সামনে বসে ফোন করেছিলেন;
৪/ বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের দুইজন শীর্ষ ব্যক্তির ফোন আলাপ প্রকাশ করা বৈধ; সুতরাং মাহামুদুর রহমানকে অন্যায়ভাবে জেলে আটক রাখা হয়েছে।
এর বাইরে বিরোধী দলীয় নেতা একটি অভিযোগ করেছিলেন যে বর্তমান সরকার দলীয় নেতা একদা মঈন-ফখরুদ্দিনের সরকারকে তাঁদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবী করেছিলেন। কিন্তু মাননীয় সরকার দলীয় নেতা সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যে তিনি তা করেন নাই। হয়তো স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে উনি ভুল তথ্য দিয়ে থাকবেন। তবে সবারই মনে আছে যে, ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে বর্তমান সরকার দলীয় নেতা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “আমাদের আন্দোলনের ফসল এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারা ফেল করলে আমাদের লজ্জা পেতে হবে। … আমরা ক্ষমতায় গেলে তাদের এসব কার্যক্রম র্যাটিফাই করে দেবো।”
এই টেলিফোন সংলাপ ফাঁস করার ফলাফল কী?
ভোটের রাজনীতিতে এই টেলিফোন আলাপের প্রভাব শূন্য। যে সব সুশীল টেলিফোন আলাপ শুনে নৌকায় ভোট দেবেন, তারা আগে থেকেই জামায়াত ইস্যুতে নৌকার যাত্রী হয়ে বসে আছেন। যাঁরা আসলেই যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করবেন, তারা অবশ্যই আলাপের শুরুতে আওয়ামী লীগ নেতা কর্তৃক বিএনপি নেতাকে ইস্যু বহির্ভূত বিষয়ে আক্রমণ করে উত্তেজিত করার বিষয়টি মাথায় রাখবেন। আরো বিবেচনায় রাখবেন এই ধরনের আলাপ রেকর্ড করে তা প্রচার করার পূর্ব পরিকল্পনাটি।
এই ফোনালাপ প্রকাশ করায় আওয়ামী লীগের কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ হচ্ছে শীর্ষ উপদেষ্টার মিথ্যাচারিতা প্রকাশ হওয়া। এই ধরণের উপদেষ্টা যে একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য কত ক্ষতিকর তা যে কোন বিবেকবান মানুষ বুঝতে পারবেন।
বাংলাদেশে কোন বিরোধী মত প্রকাশের মত মিডিয়ার অস্তিত্ব না থাকায় সরকার বিরোধী মনোভাবের মানুষকে বাধ্য হয়ে মাঝরাতে টকশোতে সরকার বিরোধী দু’একটি কথাবার্তা শুনে শান্তি পেতে হয়। সেই শ্রেনীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য খুবই ভালো লাগবে। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও তাদের নেতার এই বক্তব্যে এক হাত নেয়ার তৃপ্তি পেয়ে আরো উৎসাহিত হবে।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
Bnp zindabad, Madam Zia zindabad,
Please both have to leave or Bangladesh will be finish
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকেই আস্থার রাজনীতির সংকটে ভুগছে। এ থেকে কবে উত্তোরণ সম্ভব হবে জানি না। সত্যি আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি দিনকে দিন।