জিয়া হাসানঃ তত্ত্বাবধায়ক এর সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের একটা বড় সংকটের সমাধান বা মেনেজমেন্ট ইস্যু জড়িত |
আমার উভয় দল দুর্বৃত্তায়িত –তাদের হাতে খাওয়ার সুযোগ ছিল কিন্তু খায় নাই এমন কোনো রাষ্ট্রীয় সম্পদ আমাদের দেশে আর অস্তিত্ব নাই | এইটা স্বাধীনতার পর থেকেই ঘটে যাচ্ছে এবং গত বিশ বছরের এই খাওয়া খাওয়ির সিস্টেমটা একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে চলছে |
সেইটা হইলো পাচ বছরে একটা দল রাষ্ট্রীয় সম্পদের সম্ভব সর্বোচ্চ পরিমান লুটপাট করে এবং সর্বোচ্চ পরিমান স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পরবর্তী ইলেকশনটাকে তার নিজের ইচ্ছামত করার একটা আয়োজন করছে |
জনগণ রিয়ালায়জ করছে, এই দুর্বৃত্তায়িত প্রশাসন কে ভেঙ্গে যদি নতুন করে কনস্ট্রাকট না করা যায় এবং যদি আরো পাচ বছর একই স্ট্রাকচারটা বহাল থাকে তো তাদের দুর্বৃত্তায়নের ফাউন্ডেশন এত শক্ত হবে যে তারা একটা ভয়ঙ্কর রূপ নিবে এবং তাদেরকে আবার ভাঙ্গা অসম্ভব হবে | এই চেতনা থেকে ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে প্রতিটা সরকার পরিবর্তন এর সময় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নির্দলীয় জনগণ যারা ভোটারদের সব চেয়ে বড় অংশ তারা বিরোধী দল এর সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করছে এবং সাথে থাকছে | এবং তাদের নিজের হাতে গড়া প্রশাসনের হাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এই প্যাটার্ন টা ভাঙ্গা অসম্ভব চিন্তা করে তারা নির্দিধায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে |
জনগণ খুব ভালো করেই জানে রাষ্ট্রের যে প্রগতি তার সাথে শাসক দল সম্পর্ক খুব কম বরং তাকে আগাইতে হইছে শাসক দল গুলোর দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং রেড টেপ সহ অন্যান্য বাধা সত্তেও | সে জানে প্রশাসন এবং রাজনীতিকে পরিবর্তন করার কোনো টুলস তার হাতে নাই ফলে তার হাতে এক মাত্র টুল হইলো, ডেমেজ মিটিগেশন করার জন্যে স্ট্রাকচারটাকে ভেঙ্গে দেয়া যাতে নতুন একটা দল এর হাতে দুর্বৃত্তায়ন এর নতুন স্ট্রাকচার গড়ে তলার ফাকে সে একটু হাফ ছেড়ে বাচতে পারে এবং দুই দল এর ঝগড়া ঝাটিতে একটু চেক এন্ড ব্যালান্স হয় |
ফলে, নির্বাচনে বিজয়ী দল সব সময়ে এই বিজয়কে তাদের আদর্শিক বিজয় হিসেবে দেখালেও -৯১ এর পর প্রতিটা ইলেকশন মূলত জনগণ এর ডেমেজ মিটিগেসানের যে চেতনা তার প্রতিফলন | পরীক্ষিত চোর বিরোধী দলের হাতে আবার ক্ষমতা তুলে দেয়ার রিস্ক টা সম্পর্কে জনগণ খুব ভালো ভাবে ওয়াকিবিহাল থাকলেও কোনো গ্রহনযোগ্য তৃতীয় শক্তির অভাবে, দুর্বিত্তায়িত স্ট্রাকচারটা ভাঙ্গার জন্যে জনগণ এর হাতে সেইটাই ছিল এক মাত্র অপশন |
দুর্নীতির চেক এন্ড ব্যালান্স করার জন্যে এই প্যাটার্ন টাকে ভাঙ্গা – বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার একটা বড় প্রশ্ন |
২০১৩ সালে এসে ঠিক একই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি বাংলাদেশ |
এবং এই বার স্টেক টা আরো হায়ার এবং প্রশ্ন গুলো আর একটু জটিল |
এর দুইটা এসপেক্ট | একটা হইলো, জনগণ যে প্যাটার্ন টা আবার ২০১৩ সালে এসে ভাঙ্গবে এইটা মাথায় রেখে আওয়ামী লিগ বিগত পাচ বছরে দেশকে আদর্শিক ভাবে বিভাজন করার একটা সম্মিলিত চেষ্টা করছে তার পোষা বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা | মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ, বাঙালি জাতীয়তাবোধকে সুপ্রিম আইডেন্তিটি হিসেবে দেখিয়ে কালচারাল বিভাজন করা এবং ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠিদের উস্কে তাদের প্রতিক্রিয়াকে কাউন্টার করে –লিবারেল এবং সেকুলারদের পক্ষে নিয়ে আসার মাধ্যমে জনগণকে বিভক্ত করে তারা এই প্যাটার্নটাকে ভাঙ্গার এই প্যাটার্ন টা ভাঙ্গতে চেষ্টা করছে |
সেকেন্ড এসপেক্ট হইলো , আওয়ামী লিগ এর বিগত পাচ বছরের সরকার স্বাধীনতার পর সব চেয়ে শক্তিশালী সরকার | মেডিয়া সম্পূর্ণ তার দখলে, প্রশাসন সম্পূর্ণ তার দখলে এবং আওয়ামী লিগ এর সাংগঠনিক শক্তি সেন্ট্রাল কমিটি থেকে শুরু করে থানা লেভেলে গিয়ে প্রায় পাচ থেকে ছয়টা লেভেলে ছড়িয়ে আছে | ফলে, এই পাচ বছরে দুর্বৃত্তায়ন সত্যিকার অর্থেই গ্রাসরুট লেভেলে পৌছেছে – একে ভাঙ্গতে গেলে তারা অত্যন্ত ভীয়লেন্ট ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে | ফলে সেই ভয় থেকে জনগণ এর নির্বিবাদী অংশ এখন অত্যন্ত সংকিত এবং ইনটিমিডেটেড ফিল করতাছে |
আমি ফেইসবুকে অনেক মানুষ কে দেখি যারা এখন বিএনপির প্রতি অনুরাগ দেখায় অথচ তারা কোন মতেই দল হিসেবে বিএনপির সাপোর্টার না এবং ঘাতক দালাল দের বিচার করার ব্যাপারে আন্তরিক |
আমার কাছে মনে হইছে এদের অনেকেই, এই প্যাটার্নটাকে ভেঙ্গে দুর্নীতির চেক এন্ড ব্যালান্স এর স্বাভাবিক যে চেতনা সেই স্পিরিট থেকে এখন বিএনপিকে সাপোর্ট দিচ্ছে | এরা কখনো বিএনপি যখন আবার ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট করবে তার ভাগিদার হবেনা | আবার তখন তারা বিএনপির সমালোচনা করবে |
আজকে আমার তাই মনে হয়, বিএনপি যে আন্দোলন করতাছে তা একটা এলায়েন্স | বিনপির কোনো গ্রাসরুট নাই | কালকেও দেখলাম খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রাস্তার মোড়এ একটা ট্রাক এর উপর বিএনপির নেতারা সিরিয়ালি জালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছে, সামনে পাচ ছয় জন লোক আর হেটে যাওয়া পাবলিক ফিরেও তাকাচ্ছেনা |
এনি ওয়ে পয়েন্টটা হইলো, বিগত পাচ বছরে দুর্বৃত্তায়নের যে স্ট্রাকচার দাড়াইছে সেই স্ট্রাকচাটা ভাঙ্গা ইম্পর্টান্ট | রাজপুত্তুর আবার এসে জোরেসরে উনাদের হারানো রাজত্বের সম্পদ ফিরিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে –জানি |যদিও খালেদা জিয়া একটা ভাষণে বলছেন যে উনি চেঞ্জ করবেন , কিন্তু উনাদের আচরণে, জনবলে, চেতনায় কোনো কিছুতে কোনো পরিবর্তন আসছে তার এক আনা লক্ষন ও দেখা যায় নাই | তবুও জনগণ এর উপায় নাই গোলাম হোসেন টাইপ অবস্থা | কারণ মানুষ বুঝে, , বর্তমান স্ট্রাকচার টা আরো পাচ বছর বহাল থাকবে দেশের প্রতিটা করিবর্গা খুলে নিয়ে যাবে | এইটার রিস্ক অনেক বেশি |
দুর্নীতির চেক এন্ড ব্যালান্স করার জন্যে এই প্যাটার্ন টাকে ভাঙ্গা – বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার একটা বড় প্রশ্ন |
এবং এই প্যাটার্নটাকে ভাঙ্গতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক এর কোনো বিকল্প নাই |
Most important part
“দুর্নীতির চেক এন্ড ব্যালান্স করার জন্যে এই প্যাটার্ন টাকে ভাঙ্গা – বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার একটা বড় প্রশ্ন |
এবং এই প্যাটার্নটাকে ভাঙ্গতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক এর কোনো বিকল্প নাই |”
Well written.