মহাজোট তৈরির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় প্রদর্শন করার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা তার পছন্দের একটি বিরোধী দল তৈরির মাধ্যমে দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রেখে আগামীতে দেশ পরিচালনা করার যে রণকৌশল নিয়ে আগাচ্ছেন সেটি সফল হলে বাংলাদেশ বিশ্বের রাজনীতির ইতিহাসে নতুন চ্যাপ্টারের সূচনা করবে। যে চ্যাপ্টারের জনক হিসেবে ইতিহাসে শেখ হাসিনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু একে কেউ বাকশাল বা একদলীয় শাসন বলতে পারবে না।
এক.
আওয়ামী লীগের ভিতরেই আরেকটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ তৈরি হচ্ছে। এটি বিএনপি-র রাজনীতির বিদায় ধ্বনি কিনা সেই প্রশ্ন মনে আসতেই পারে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একাধিক শক্তিশালী দল দরকার। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে গিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিপক্ষ তৈরি হলে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা গণতন্ত্র চর্চার জন্য ফুরাতে বাধ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত ম্যাচিওর রাজনীতি করছেন। এই প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালের প্রধানমন্ত্রী নন। তিনি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তার দূরদৃষ্টির ছাপ রাখছেন। ২০২১ সালের যে রূপকল্প তিনি তৈরি করেছেন সেটি নিজ হাতে বাস্তবায়নের পথও তিনি রচনা করছেন। তিনি একটি বিষয় সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনেক সুদূর প্রসারী ও কূটনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। বিএনপির মতো পুকুরের পানির সারফেসে তারা বসবাস করে না।
দুই.
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির জন্মই হয়েছিল আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় রাজনীতির বিরোধীতাকারীদের নিয়ে। আমরা লক্ষ্য করি, বিএনপি-তে তারাই যোগ দিয়েছেন যারা পদ ও ক্ষমতা প্রত্যাশী কিন্তু আওয়ামী লীগে জায়গা পাচ্ছিলেন না। এই ধরনের একটি পরিস্থিতি বর্তমানে আওয়ামী লীগে বিরাজমান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন প্রবীণ ও চেনা মুখগুলোর পরিবর্তে নতুনদের নিয়ে একটি মন্ত্রীসভা গঠন করা হয়। এতে কিছুটা হলেও নিজেদের বঞ্চিত ভেবেছেন প্রবীণ ও চেনা মুখগুলো। কিন্তু শেখ হাসিনা তাদেরকে ম্যানেজ করেছেন অত্যন্ত দক্ষভাবে।
তিন.
বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করছি, আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রবীণ ও চেনা মুখগুলো যারা ক্ষমতা ও পদ প্রত্যাশী ছিলেন তারা আওয়ামী লীগের মধ্যে আওয়ামী রাজনীতির বিরোধীতা করছেন। এই গ্রুপে যে আওয়ামী রাজনীতিবিদগণ আছেন তাদের যেমন বিপুল জনসমর্থন ও আন্তর্জাতিক পরিচিতি রয়েছে তেমনি এই গ্রুপে সাবেক মন্ত্রী ও আমলরা রয়েছেন। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, শেখ হাসিনা তাদেরকে যে একদম বঞ্চিত রেখেছেন তাও নয়। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে তাদেরকে স্থান দেয়া হয়েছে। সংসদেও তাদেরকে ব্যাপক সম্মান দেখানো হচ্ছে। তারপরও তারা কিন্তু সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন। এবং এটি তারা অনেকটা বিনা বাধায় করতে পারছেন। সেটাই বিশেষভাবে চোখে পড়ছে। তবে কি শেখ হাসিনা আরো বড় কোন চিন্তা নিয়ে আগাচ্ছেন? তিনি কি তার চেনাজানা প্রতিপক্ষ চান?
চার.
আমরা লক্ষ্য করছি, যে সমীকরণের মধ্য দিয়ে একসময় বিএনপি-র রাজনীতিতে এই দেশের রাজনীতিবিদরা যোগ দিয়েছিল সেই সমীকরণ এখন দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী লীগের মধ্যে তৈরি করা হয়ে হয়েছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যদি ভেঙ্গে আরেকটি নতুন দল তৈরি হয় তাহলে বিএনপি-র রাজনীতি বেকায়দায় পড়তে বাধ্য। বিএনপি-কে মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগের নেতাদের তৈরি করা কোন দল বিএনপি-র বদরুদ্দোজা কিংবা অলি আহমেদের দল হবে না। যে দলে সুরঞ্জিত, তোফায়েল, মান্নার মতো রাজনীতিবিদরা থাকবেন সেদলের জনসমর্থন অনেক বেশি হবে। তাছাড়া, আমার ধারণা যদি সত্যি হয়। এই দল যদি জননেত্রী শেখ হাসিনার আর্শিবাদে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কাবু করার রণকৌশল হিসেবে তৈরি হয় সেক্ষেত্রে বিএনপি-র রাজনীতি পথে বসতে বাধ্য। কারণ, সুরঞ্জিত তোফায়েলরা কোন দল গঠন করলে সেই দলে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি থেকেও নেতৃবৃন্দ যোগ দেবে। যেমনটা একসময় বিএনপি-তে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের নেতারা যোগ দিয়েছিল।
পাঁচ.
মহাজোট তৈরির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় প্রদর্শন করার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা তার পছন্দের একটি বিরোধী দল তৈরির মাধ্যমে দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রেখে আগামীতে দেশ পরিচালনা করার যে রণকৌশল নিয়ে আগাচ্ছেন সেটি সফল হলে বাংলাদেশ বিশ্বের রাজনীতির ইতিহাসে নতুন চ্যাপ্টারের সূচনা করবে। যে চ্যাপ্টারের জনক হিসেবে ইতিহাসে শেখ হাসিনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু একে কেউ বাকশাল বা একদলীয় শাসন বলতে পারবে না।
(লেখাটি ২০১১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মুসাবিদা করা হয়েছে। প্রায় তিন বছর হতে চলল। পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। শুধুমাত্র চার নাম্বার প্যারার অধীনে লেখা কিছু বাক্য পরিবর্তন করা দরকার। সেটা আরো দুই মাস পরে করলেও চলবে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)
অপূর্ব বিশ্লেষণ! “জননেত্রী” শব্দের মাত্র ৩ বার ব্যবহারের ফলে লেখাটা ছাগুপন্থী মনে হচ্ছে। ৬ বার থাকলে লেখাটাকে নিরপেক্ষ বলতে পারতাম। তার চেয়েও বড় কথা, আপনার বিশ্লেষণ অনুযায়ী আ’লীগের ভিতরে যে গ্রহণযোগ্য ও জনমুখী ধারাটা তৈরি হচ্ছিল, শেখ হাসিনা কয়েকটা চাকরি, কয়েকটা টেন্ডার আর কয়েকটা উপহার দিয়ে সেই ধারাটাকে বলাৎকার করে দিয়েছেন। নাটকে তাই এখন রাবণ, সীতা, রাম, লক্ষণ, সবাই হনুমান সেজে নাচছে। সেক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য অনুযায়ী শেখ হাসিনা নিজেই বিএনপির ধ্বংস হওয়ার পথ রুধ্ব করেছেন। ভুত তো, পা দু’টো উলটো, তাই উলটো পথে হাঁটে। যাই হোক, ভালো লেখা, আগামীবার লেখা “জননেত্রী” শব্দের সংখ্যা বাড়িয়ে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিবেন, এই আশা করছি।