অনেক কারনেই আমি গনতন্ত্রের ভক্ত না । কিত্নু কথায় কথায় গনতন্ত্র গণতন্ত্র বলে যারা ম্যাতকার করে তারা বলে থাকে, গণতন্ত্রে নাকি মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে । আপনাকে আপনার অপছন্দের মতও শুনতে হবে, মানতে হবে । কিন্তু আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে গনতন্ত্রের সংজ্ঞা দাঁড়ায়,” আমার(পড়ুন সরকারের) মতাদর্শ মেনে নেয়া, আমার হ্যাঁয়ের সাথে হ্যাঁ, না এর সাথে না মেলানই গনতন্ত্র। এর বাইরে দেশে আর কোন মত থাকতে পারবে না।”
একেএম ওয়াহিদুজ্জামান একজন সুপরিচিত ব্লগার এবং খুবই চমৎকার এনালিস্ট এবং রাজনৈতিকভাবে উনি বিএনপির মতাদর্শী । আমি উনার অনেক লেখা ফলো করি, যদিও উনার সকল মতের সাথে একমত না । কিত্নু জাতীয় ইস্যুগুলোতে উনার বিশ্লেষণ এক কথায় অসাধারন(রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নিয়ে উনার বিশ্লেষণধর্মী লেখাগুলো পড়ে দেখতে পারেন)/ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কথিত কটূক্তির ভিত্তিতে উনাকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে । জীবনে অনেক কিছুই আসলে শেখার বাকী আছে, কটূক্তি কাকে বলে সেটাও মনে হয় শিখতে হবে । কারন অনেক সুপরিচিত আওয়ামী ঘরনার ব্লগারদের অনেক লেখাই পড়েছি, সেখানে খালেদা জিয়াসহ আওয়ামী মতাদর্শের বাইরের লোকজনকে রীতিমত অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় ।
আশ্চর্যজনকভাবে আজ পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার করা তো দুরের কথা, উল্টো তাদেরকে নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে । আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ওয়াহিদুজ্জামানকে কখনও একটা গালি পর্যন্ত দিতে দেখিনি । উনি যাই বলেন অত্যান্ত বলিষ্ঠ ভাষায় যুক্তি সহকারে বলেন । তাহলে মানে দাঁড়াচ্ছে, আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই জেলে যেতে হবে ? এভাবে কি একটা দেশ চলতে পারে ? তিন চতুর্থাংশ সমর্থন নিয়ে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, বিভিন্ন জরীপে দেখা যাচ্ছে, তারা এখন মাত্র ২০-২৫% মানুষের মাঝে জনপ্রিয়। দিনে দিনে হয়ত এটি আরো কমবে। কত জনের মুখ আপনারা বন্ধ করতে পারবেন?
ইকোনমিষ্টে ছাপানো স্কাই পে কনভারসেশন আমার দেশে অনুবাদ করায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হল অথচ দুই নেত্রীর ব্যক্তিগত ফোনালাপ প্রকাশ করে আলোচনার পরিবেশ নস্টকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেল । এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখতে দেখতে ঘেন্না ধরে যাচ্ছে । এসব ঘটনার প্রভাব আপাত দৃশ্যমান না হলেও দীর্ঘমেয়াদে সরকারের ইমেজের ভয়াবহ ক্ষতি করছে। মানুষ সহনশীলতা পছন্দ করে চরমপন্থা নয় ।
এসবের ইন্ধন দাতারা, প্রকাশ্য ও নীরব সমর্থনকারীরা কি ভুলে গেছেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী না। আজ হয়ত আপনার দল ক্ষমতায় আছে কাল নাও থাকতে পারে তখন যে এর উল্টো প্রয়োগ আপনাদের উপর হবে না তার গ্যারান্টি কি ?
আর প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে চামচাদের ফুসলানিতে এসে কোন পদক্ষেপ নিয়েন না, কারন আপনার সরকারের সাফল্য বা ব্যর্থতার জন্য সবাই আপনাকেই কৃতিত্ব দিবে অথবা দোষারোপ করবে,চামচাদের দিকে ফিরেও তাকাবে না। এই শেষ সময়ের ভয়ভীতি, নির্যাতন, জুলুম আপনাদের ব্র্যান্ড ইমেজের জন্য বিষধর হয়ে দেখা দিবে। কারন শেষ ভালো যার সব ভালো তার !
শাহরিয়ার আহমেদ