সোশ্যাল মিডিয়া এবং আমাদের সচেতনতা
|
বর্তমান সময়ে সমাজ সচেতনতার অন্যতম একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। সমাজের খুঁটিনাটি বিষয় গুলো নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কারনে আমরা খুব সহজেই সমাজের নানা অসঙ্গতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হচ্ছি। কিন্তু শিক্ষিত সমাজের একটি বিশাল অংশ সমাজের এই খুঁটিনাটি অসঙ্গতি সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা করতে নারাজ। আমাদের দেশে এ বিষয়ে কোন গবেষণা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই, তবে আমার অবজারভেশন হচ্ছে অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী শুধুমাত্র ফ্রেন্ডস এন্ড ফেমেলির চিত্তাকর্ষক বিষয়গুলোই শেয়ার করে থাকে; যেমন- ফ্রেন্ডস এন্ড ফেমেলির নানাবিধ অনুষ্ঠান তথা রঙ্গ তামাশার পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে। গণমাধ্যমের ডিসাবলিমেশন প্রক্রিয়ার প্রতিফলনই আমরা দেখতে পাচ্ছি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এখনকার প্রজন্ম সামাজিক অসংগতির দিকে দৃষ্টিপাত করতে অনিচ্ছুক। এই অসংগতিকে অ্যাভয়েড করাকেই তারা ভাবছে সমাজের কল্যানকামিতা। এই ভেবে তারা পরিতৃপ্তিতে ভোগে যে তাদের দ্বারা কোন অসঙ্গতি হচ্ছেনা। অথচ অসঙ্গতি অ্যাভয়েড করা মানেই তা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে ভূমিকা পালন করা। অধিকাংশের ফেইসবুক শেয়ারিং এ, আপনি দেখতে পাবেন আত্মকেন্দ্রিকতা; আনন্দ বিনোদন ও কামপ্রবৃত্তি অনুযায়ী জীবন চর্চার প্রতিফলন। সমাজ জীবনে যত যাই ঘটুক; সে বিষয়গুলো নিব্রিঘ্নে জীবন পরিচালনায় বাধা মনে করে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা। এই এড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতা থেকেই সামাজিক অসংগতিগুলো রুপ নিচ্ছে বিষবাস্প হিসেবে। সমাজ জীবনের ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা কত ভয়াবহ হতে পারে তার একটা উদাহরন দিচ্ছি নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম ট্রেনে করে; কমলাপুর ষ্টেশনে নেমে একটু অগ্রসর হতেই ট্রেন লাইনের উপর কিছু মানুষের ভিড় দেখে এগিয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? একজন বলল ট্রেনের চাকায় একটা ছেলের পা কেটে গিয়েছে। ভিড় ভেদ করে সামনে আগালাম। দেখলাম একটা দশ-বারো বছরের ছেলে রেল লাইনের উপর পড়ে আছে; তার দুই পা কেটে গিয়েছে। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম ছেলেটা জীবিত কিন্তু সবাই হা করে দেখছে আর তার পায়ের উপরের অংশ থেকে জর জর করে রক্ত জরছে। সামনে এগিয়ে বললাম কেউ একজন আমার সাথে আসেন ছেলেটাকে হাসপাতালে নিতে হবে। পিছন থেকে একজন বলল ওকে ধরবেন না পুলিশি কেইস; ঝামেলায় পড়বেন। বললাম ছেলেটা রক্ত ক্ষরণে মারা যাবে আর আমরা দাঁড়িয়ে দেখব। পরবর্তীতে আরও কয়েকজন এগিয়ে আসল। ছেলেটাকে হাসপাতালে নেয়া হোল। চিন্তা করে দেখুন- আমাদের ব্যক্তি জীবনে ঝামেলায় জড়াতে হবে তাই আমরা অন্যের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসবনা। এই প্রজন্মের সামাজিক অসংগতির অ্যাভয়েডিং টেন্দেছি ঐ ছেলের মতই সমাজকে ভঙ্গুর করে দিচ্ছে।
এ কথা সহজেই অনুমেয় যে ফেইসবুক শেয়ারিং এর বিষয়স্তু নির্ধারণ করে দেয় সামাজিক কাঠামো। আমরা সমাজের অসঙ্গতিগুলো এড়িয়ে চলছি; আবার স্বাধীন সার্বভৌম মননশীল সমাজ আশা করছি। সমাজ ব্যক্তির নিজস্ব উদ্যোগের গতিশীলতা দ্বারা নির্ধারিত এবং নিয়ন্ত্রিত। আমরা যে ধরনের চর্চা যোগাযোগ মাধ্যমে করব, সে ধরনের সমাজই আমরা গড়ে তুলব। দার্শনিক বাট্রানড রাসেল বলেছিলেন “আধুনিক জগতে ব্যক্তি কেন্দ্রিক মঙ্গলের ধারণার চেয়ে সামাজিক মঙ্গলের ধারনা অনেক বেশি প্রয়োজন”/ সামাজিক অসংগতিগুলো থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়ই হোল সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা। আর এ সচেতনতা তৈরির অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমই বর্তমান সময়ে সমাজ পরিগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে সমকালীন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াকে বিকল্প সংবাদ মাধ্যম হিসেবে আমরা গড়ে উঠতে দেখেছি। এই গড়ে উঠার পিছনে কাজ করেছে এই সমাজেরই কিছু সচেতন তরুন এবং যুবকদের ভূমিকা। এই সচেতনতাবোধকে আরও সম্প্রসারনের মাধ্যমেই আমরা সামাজিক অসংগতি থেকে নিস্তার পেতে পারি।