ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন হলো এমন ধরনের মিলিটারী অথবা ইন্টেলিজেন্স অপারেশন যেখানে দুনিয়ার সবাইকে বিভ্রান্ত করতে কোনো একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধ পক্ষের ছদ্মবেশ ধারন করে নিজ দলের বা নিজ সমর্থকদের উপরে এক বা একাধিক সহজে দৃশ্যমান আক্রমন পরিচালনা করে। এই আক্রমন গুলির প্রধান উদ্দ্যেশ্যই হলো সবার সামনে প্রতিপক্ষকে হীন প্রমান করে প্রতিপক্ষের উপরে আক্রমনের বিশ্বাসযোগ্য অজুহাত পাওয়া। সামরিক ও ইন্টেলিজেন্স ইতিহাসে ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের অসংখ্য ঘটনা আছে। এর মধ্যে একটি বিখ্যাত ঘটনা হলো ঠিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার আগে, ইউরোপে গ্লাইভিৎজ এর ঘটনা।
১৯৩৯ এর গ্রীষ্মের শেষে হিটলারের জার্মানী পোল্যান্ড আক্রমনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে এনেছিলো। কিন্তু এমনকি হিটলারের মতো সরকারেরও অন্য একটি দেশ আক্রমনের আগে পৃথিবীর দেশগুলির সামনে ও জার্মানীর জনগনের কাছে একটি সরাসরি কারন দেখানো দরকার ছিলো। এজন্যে ১৯৩৯ এর অগাস্টে শুরু হয় সংবাদপত্র ও রেডিও মিডিয়ার সাহায্যে নানারকম উত্তেজক খবর। পোল্যান্ডে জার্মান বংশদ্ভুতদের উপরে অত্যাচার চলছে, পোলিশ সন্ত্রাসীরা হঠাৎ হঠাৎ জার্মান সীমানায় ঢুকে লুটপাট করে বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে এরকম খবর বের হতে থাকে প্রতিদিন। এই অপারেশনের চূড়ান্ত রূপ নেয় ৩১শে আগস্ট।
সেই রাতে নাৎসী জার্মানীর কুখ্যাত গোয়েন্দাবাহিনী গেস্টাপোর একটি দল, পোল্যান্ডের সৈনিকদের পোশাক পরে, পোল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি চেকোস্লোভাকিয়ার (তখন জার্মানীর অধীনে) গ্লাইভিৎজ (Gleiwitz) শহরে একটি অভিযান চালায়। গ্লাইভিৎজে ছিলো সেই সময়ে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ একটি রেডিও ট্রান্সমিশন কেন্দ্র। পোলিশ সৈন্যদের ছদ্মবেশে গেস্টাপো’র সেই দলটি কিছু সময়ের জন্যে রেডিও স্টেশনটি দখল করে জার্মান বিরোধী নানা রকম উস্কানিমূলক প্রচার করে। এর পর তারা উধাও হয়ে যায়।
এই ফলস আক্রমনটিকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করতে গেস্টাপো বাহিনী ডাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে কয়েকজন রাজনৈতিক বন্দীকে ধরে জার্মান পুলিশ আর পোলিশ সৈন্যদের ইউনিফর্ম পরিয়ে গুলী করে মেরে ফেলে। তারপরে তাদের লাশ গ্লাইভিৎজ রেডিও স্টেশনের আশেপাশে এমনভাবে ফেলে রাখে যেনো মনে হয় ৩১শে আগস্ট রাতে সত্যিই এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ করে পোলিশ সৈন্যরা রেডিও স্টেশন দখল করেছিলো। জার্মান সরকার সেই রাত পার না হতেই এই ‘ঘৃন্য’ পোলিশ আক্রমন নিয়ে মিডিয়া, কূটনৈতিক মহলে বিশাল হৈ চৈ শুরু করলো। আমেরিকান সাংবাদিক, কূটনীতিবিদদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হলো গ্লাইভিৎজ রেডিও স্টেশনে। তাদেরকে দেখানো হলো সেই রাতের হীন, কাপুরুষোচিত আক্রমনের অবশিষ্ট।
অবশ্য বিদেশীরা গ্লাইভিৎজ আক্রমনের এই কাহিনী মোটেই বিশ্বাস করে নি। গোটা ইউরোপ তখন হিটলারের জার্মানীর উন্মত্ত শক্তি নিয়ে আতংকিত। এই অবস্থায় পোল্যান্ড যেচে পরে নিজের উপরে আক্রমনকে উৎসাহিত করবে এটা বাইরের কারো বিশ্বাস হয় নি। কিন্তু তাতে কি হয়েছে। নিজ দেশেই জার্মান জনগনকে একটা কারনে দেখানো ও যুদ্ধ শুরুর একটা উপলক্ষ তো পাওয়া গেলো। ১লা সেপ্টেম্বরেই জার্মান বাহিনী ষাট ডিভিশন সৈন্য নিয়ে পোলান্ডের উপরে ঝাপিয়ে পড়লো। শুরু হলো পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম যুদ্ধ।
বিশ্বযুদ্ধপূর্ব ইউরোপের মতো এপিক ক্যানভাস না হলেও, আমাদের এই দেশে এখন সেই রকম ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
1/ সাঁথিয়ার ঘটনায় টুকুকে দুষছে সিপিবি-বাসদ
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) দাবি করেছে, পাবনার সাঁথিয়ায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় প্রশ্রয় দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এই দল দুটি।
2/ http://www.thedailystar.net/beta2/news/some-attackers-seen-with-tuku/
3// ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন বেশি ঘটেছে মহাজোট সরকারের আমলে’
