সায়ান তানভি
ঘটনা -১
এক নবদম্পতি গাড়ীতে করে যাচ্ছিল ।দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোজাম্মেল দলবলসহ গাড়িটি আটক করে ,ড্রাইভার আর নববধূর স্বামীকে হত্যা করে ,মেয়েটিকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে ,অতঃপর তিনদিন পর তাঁর লাশ পাওয়া যায় টঙ্গি ব্রীজের নীচে ।
পৈশাচিক এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র ।বিশেষ অভিযানে দায়িত্বরত মেজর নাসেরের হাতে মোজাম্মেল ধরা পড়ে ,মোজাম্মেল মেজরকে বলে ,ঝামেলা না করে আমাকে ছেড়ে দিন ,আপনাকে তিন লাখ টাকা দেবো ।বিষয়টা সরকারি পর্যায়ে নেবেন না ।স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমি ছাড়া পাবো ।আপনি পড়বেন বিপদে ।আমি তুচ্ছ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে জড়াতে চাই না ।মেজর নাসের হুঙ্কার ছাড়লেন ,এটা তুচ্ছ বিষয় ?আমি অবশ্যই তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবার ব্যবস্থা করবো ।তোমার তিনলাখ টাকা তুমি তোমার গুহ্যদ্বারে ঢুকিয়ে রাখো ।
এরপরের কাহিনী অতি সরল ।কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোজাম্মেলের বাবা ,দুই ভাই গেল শেখ মুজিবের কাছে ,তিনি আসতেই তার পা জড়িয়ে কান্নার রোল পড়লো ।মুজিব জিজ্ঞাসিলেন ,ঘটনা কি ?টঙ্গি আলীগের সভাপতি বললেন ,আমাদের সোনার ছেলে মোজাম্মেল মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে ।মেজর নাসির তাকে ধরে নিয়ে গেছে ,বলেছে তিন লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দিবে ।কাঁদতে কাঁদতে আরো বললো ,এই মেজর আলীগের নাম শুনলেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে ।সে প্রকাশ্যে ঘোষনা করেছে ,টঙ্গিতে আমি আলীগের কোন শূয়োর রাখবো না ।বঙ্গবন্ধু !আমি নিজেও এখন ভয়ে অস্থির !টঙ্গিতে থাকি না ।ঢাকায় চলে আসছি ।এবার হুঙ্কার ছাড়লেন বঙ্গবন্ধু ,কাঁদার মতো কিছু হয় নাই ।আমি এখনো বেঁচে আছি ,মরে যাই নাই ।এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি ।
অতঃপর মোজাম্মেলকে তাৎক্ষণিক ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন এবং মেজর নাসেরকে টঙ্গি থেকে সরিয়ে দেয়া হলো ।
ঘটনা -২
নারায়নগন্জের নাগরিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা ,সন্ত্রাস-চাদাবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বীর ছেলে ,স্কুল পড়ুয়া ত্বকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ।অতঃপর তারা দায় চাপায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর ।সুনির্দিষ্ট প্রমান এবং অভিযোগের পরও পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনরুপ ব্যবস্থা নেয়ার আগ্রহ দেখায় নি ,অথবা বলা যায় কোন
প্রভাবশালী উচ্চ মহল থেকে তাদের নিষেধ করে দেয়া হয়েছিল ।তবে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত র্যাব একটু সাহসী কাজই করে ফেলে ,তারা হত্যাকান্ডে জড়িত একজনকে ধরে ফেলে এবং তার জবানবন্দি অনুযায়ী হত্যাকান্ডের মূল অভিযুক্ত শামীম ওসমানদের একটি টর্চার সেলে অভিযান চালায় ,উদ্ধার করে রক্তমাখা জিনস প্যান্ট ,গজারির লাঠি ,নাইলনের রশি ।দেয়ালে ও শোকেসে অসংখ্য গুলির
আলামত খুজে পায় ।অথচ প্রধানমন্ত্রী তখনো বললেন ,আইভি এবং শামীমের বিরোধকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী পক্ষই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে ।
র্যাবের ঐ অভিযানের পর অভিযুক্ত শামীম ওসমান র্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার করেন ,এবং এর পরপরই ত্বকী হত্যা মামলার তদারককারী কর্মকর্তা র্যাব ১১ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর আলমকে চট্টগ্রামে র্যাব ৭ এ বদলি করা হয় ।থমকে যায় আলোচিত এ মামলার তদন্তকাজ ।পাঠক ,প্রথম ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন ,অবিশ্বাস্যরকম মিল খুজে পাবেন ।খুন ,অতঃপর প্রধানমন্ত্রীর অকুন্ঠ সমর্থন ,খুন করেও সর্বসমক্ষে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো ,তদন্তকারী সেনা কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক অপসারন ।ওহ কি আশ্চর্য মিল ।পিতার আদর্শ সন্তানই বটে ।একেবারে কার্বন কপি ।আমার এক প্রেমিকা ছিল একদা ,বাবার মতোই ,শ্যামল বর্ণের ,প্রগলভ ,বাচাল ,নির্বোধ ,রুক্ষ ,অসৎ ,অযোগ্য ,দাম্ভিক অথচ বাইরে থেকে মনে হতো দয়াদ্র ,স্নেহপ্রবন ,যদিও এ সবই ছিল বাহুল্য ,লোক দেখানো ,ছ্যাবলামি ।
আজ ১৫ নভেম্বরের প্রথম আলোর খবর ,ত্বকী হত্যাকান্ডে জড়িত আরেকজন র্যাবের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন খুনটি শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানই করেছিল ।এবার প্রধানমন্ত্রী কি বলবেন ,তবুও কি বলবেন বিরোধী দলই হত্যাকান্ডে জড়িত ?তিনি কি আরেক দফা র্যাবের কর্মকর্তাকে বদলির ব্যবস্থা করবেন ?অবশ্য তিনি যদি বঙ্গবন্ধুর (সোনার বাংলা!) গড়ার স্বপ্নই দেখে থাকেন শয়নে স্বপনে ,তাহলে প্রশ্নের উত্তর না দিলেও চলবে ।উত্তর আমাদের জানাই আছে ।
সায়ান তানভি