একই ঘটনা বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মত ঘটল; শুধুমাত্র কুশীলবদের স্থান পরিবর্তন। অনেকেই অনেক ভাবে এরশাদ কে নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। আমি বলব হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ।
বাংলাদেশের রাজনিতিতে একমাত্র খালেদা জিয়াই প্রিঞ্চিপাল ঠিক রেখে রাজনীতি করে আসছেন। ১৯৮৬ সালে যেমন তিনি স্বৈরশাসকের সাথে আপোষ করেননি, ঠিক তেমনি ২০০৭ সালেও মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অবৈধ সরকারের নিকট মাথা নত করে দেশ ত্যাগ করতে রাজি হননি। শেখ হাসিনা কিন্তু সে সময়ে ঠিকই দেশত্যাগ করেছিলেন। খালেদা জিয়ার এই ক্লিন ইমেজের কারনেই তাকে আপোষহীন নেত্রী বলা হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী প্রোপাগান্ডার মিথ্যাচারগুলো আপনি একটু সজাগ হলে খুব সহজেই ধরতে পারবেন। আওয়ামীলীগ যে বিষয়গুলো নিজেদের জন্য প্রযোজ্য তাই বিএনপির উপর চাপিয়ে দেয়। আওয়ামীলীগ বলে থাকে বিএনপি ক্যান্টনমেন্টের দল। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আপনি দেখতে পাবেন ক্যান্টনমেন্টের সাথে আওয়ামীলীগেরই সখ্যতা বেশি। বাংলাদেশের সব সামরিক অভ্যুত্থানের সাথে আওয়ামী লীগ জড়িত। পঁচাত্তরে সেনাবাহিনী আসছে মোশতাক আহমেদের হাত ধরে। বিরাশিতে যখন এরশাদ আসলো তখন এই শেখ হাসিনা বিবিসিকে বলেছিলেন ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি’, আওয়ামী লীগের তৎকালীন মুখপাত্র বাংলার বাণী লিখেছিল ‘এত সুন্দর একটা ক্যু, এক ফোঁটা রক্তও ঝরে নাই’/ ছিয়ানব্বিতে নাসিমের ক্যুয়ের সাথে আওয়ামী লীগ জড়িত ছিল। এরপর মঈন উদ্দীনের ক্যুয়ের সাথে আওয়ামী লীগ জড়িত ছিল। ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকারের বৈধতা দিবেন। খালেদা জিয়া সে সময়ে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অবৈধ সরকারকে স্বাগত জানাননি।
দ্বিতীয় আরেকটি প্রোপাগান্ডা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি যে জাতীয় পার্টির নেতাদের সাথে বিএনপির সখ্যতা বেশি। অথচ স্বৈরাচারী এরশাদের দল কখনই বিএনপির সাথে যুক্ত হয়নি। ১৯৯৬ সালে এরশাদ আওয়ামীলীগকে মেজরিটি পেতে সহায়তা করে। ২০০১ সালেও নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এরশাদ ডিগবাজী দিয়ে চারদলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ২০০৭ সালেও মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অবৈধ সরকার আসার পিছনে কাজ করেছিল এরশাদের নির্বাচন বরজনের ঘোষণা। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে এরশাদ অংশগ্রহন করেছিল আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অধীনে।
গত কিছুদিন যাবত এরশাদ বলে আসছিল আমি মহাজোটের সর্বদলীয় সরকারে গেলে লোকে আমাকে থুতু মারবে, জাতীয় বেঈমান বলবে। আর আজ সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়ে প্রমান করলেন যে উনি আসলেই জাতীয় বেঈমান। এরশাদ এর স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮৬ সালে শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে একটি সভায় বলেছিলেন “শুধুমাত্র একটি জাতীয় বিশ্বাসঘাতক এই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন,” / এই ঘোষণার একদিন পরে শেখ হাসিনা নির্বাচনে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এবং জাতীয় বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই এরশাদ এর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি অংশগ্রহন করেনি। ১৯৮৬ সালের ওই নির্বাচনের পর এরশাদ (১৯৮৮ সালের একদলীয় নির্বাচন ব্যতীত) আর কোন নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাটুকুও পাননি। উনি এ যাবতকাল বাংলাদেশের রাজনিতিতে টিকে আছেন বানরের ন্যায় ডাল বেয়ে বেয়ে। আওয়ামীলীগ কি পাতানো নির্বাচন করে সেই পরিনতির দিকেই যাবে?