আজকাল দেখতে পাচ্ছি বিএনপি সিনিয়র নেতারা মাঠে না থাকা নিয়ে একটা ব্যাপক মত জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে- বিশেষত বিএনপি অনলাইন এক্টিভিস্টদের মধ্যে। তারা নেতাদের হাতের কাছে পাইলে শিক্ষা দিবে, ম্যাডাম কিছু করতেসেনা এইসব লিখা দিয়া স্ট্যাটাস ভরে ফেলছেন। কেউ খোলা চিঠিতে তিরস্কার তো কেউ নেতাদের ভাগায়ে দেয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। আমি এ ব্যাপারে সবিনয়ে একটু দ্বিমত পোষণ করতে চাই।
আমার মনে হচ্ছে এই বিএনপি পন্থী এক্টিভিস্টরা বুঝে ( আল্লাহ না করুক) কিংবা না বুঝে একটা গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আওয়ামী ষ্ট্র্যাটেজী এনালাইসিস অনুযায়ী তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ষ্ট্র্যাটেজী হচ্ছে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে তাদের নেতাদের উপর আস্থাহীনতা তৈরি করা আর নেতাদের উদ্বুদ্ধ করা দলত্যাগ করে পাতানো নির্বাচনে হিস্যা নিতে। সেই লক্ষ্যে তারা নেতাদের মাঠে পাওয়া মাত্র কোন মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করছে, পরে পূরান বা নতুন মামলাতে রিমান্ডে নিচ্ছে। এমনকি মাঠে না বাসা থেকেও যাকে পাচ্ছে নিয়ে যাচ্ছে। এ যেন হামাস নেতৃত্বের প্রতি ইসরাইলের দেয়া হুমকীর ফটোকপি! গ্রেফতার তারা হতেই পারেন, এটা দলের জন্য এক ধরণের কোরবানী! এমন অনেকে ভাবেন! কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার নেত্রির সেই বয়স নাই যে একলা পল্টন অফিসে বসে দল চালাবেন। দলের ষ্ট্র্যাটেজীক ডিশিসন নিতে উনার পাশে উপদেষ্টাদের প্রয়োজন আছে। আপনার মনে হতে পারে এমন ডিশিসন তো আপনেই নিতে পারেন, ঐ সিনিয়র নেতারা না থাকলেও দলের চলবে! কিন্তু বিনয়ের সাথে বলতে হচ্ছে আসলে গ্যালারীতে বসে ‘মার ছক্কা’ বলা যত সহজ, তামীমকে রিপ্লেস করা ততো সহজ না!
অনেকদিন ধরেই বাকশালপন্থী এক্টিভিস্টরা বিএনপির নেতারা মাঠে থাকেনা, এই প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে আর সফলভাবে কর্মীদের হতাশ করতেসে। মনে রাখবেন তাদের অনলাইন ষ্ট্র্যাটেজী সেন্ট্রালী নিয়ন্ত্রিত। তারা তাদের প্রপাগান্ডা থিম কেন্দ্র থেকে পায়। এই থিমের সাথে মিল রেখে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের সাহায্য করে- যেমন পুলিশ এইক্ষেত্রে করতেসে। আপনারা ভাল মানুষের মতো তাদের ফাদে পা দিচ্ছেন। আমি আশংকা করি তাদের কিছু এক্টিভিস্ট ভোল পালটে আপনাদের মাঝেও আছে। তারা আপনাদের উস্কানী দিচ্ছে। এই উস্কানীতে এর পর দেখা যাবে বিএনপি কর্মীরা তাদের নেতাদের উপর হামলা করে বসছে, বা নিজেদের মধ্যে মারামারি শুরু করছে। তারপর লাঞ্চিত নেতা দলত্যাগ করসেন। সেই সময় বুবুজান মুখ টিপে হাসবে আর পুরো বিএনপির স্ট্রাকচার ভেঙ্গে পরবে। সুতরাং সময় থাকতে সাধু সাবধান!
কেউ কেউ বলতেসেন তারেক দেশে এসে লিড নেয়া উচিত। আবার কেউ আশংকা করছেন সে দেশে আসলে খুন হয়ে যেতে পারে। আপনি বুকে হাত দিয়ে বলেন তো আসলেই খুন হয়ে গেলে এই ইসরাইলী টাইপ নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বিএনপি কি প্রতিক্রিয়া করতে পারবে? বড়জোর সাতদিন হরতাল। খালেদা জিয়া থাকবেন আইসিইউ তে আর বিএনপি নেতারা দলে দলে বিএনএফ এ জয়েন করবে! সন্দেহ আছে? আপনার থাকতে পারে, অনেকের নাই! সো যারা নিজের দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কর্মীদের খেপাচ্ছেন, আই হোপ না বুঝে করছেন! তবে হ্যা তারেকের এখন একটা অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে গাইডেন্স দেয়া উচিত। যারা বলেন ফোনে এই কাজ করতে, তারা সম্ভবত জানেন না, আমাদের এলিট ফোর্স ফোন ট্যাপিং এ বেশ পারদর্শী, কয়েকশো কোটি টাকার ইকুইপমেন্ট- একটু সফিস্টিকেটেড হওয়ার ই কথা বটে!
এখন আমাকে বলেন টপ নেতাদের মাঠে না পাইলে আন্দোলন হবেনা, এত সহজে এই আওয়ামী শরবত খাওয়ার কারণ কি? মাঝারী নেতারা আগে মাঠ দখল করেন, যাতে পুলিশ চাইলেও নেতাদের গ্রেফতার না করতে পারে! দুই চারবার পুলিশকে গ্রেফতার করা থেকে বিরত করেন, তখন এমনিই নেতারা মাঠে থাকবে। তা না করে উল্টা যারা পাব্লিক খেপাচ্ছেন, অনুগ্রহ করে একটু বিবেচনা করবেন আমার কথাগুলি। নেতৃত্বের উপর কর্মীদের আস্থা ও সমর্থন একটা সফল আন্দোলনের জন্য অত্যাবশ্যক। ধণ্যবাদ।