by Shikin Aman
(এই লেখার পূর্ববর্তী ভার্সনে সুশীলতা ছিল, এই ভার্সনটা বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে পরিমার্জিত। বাকশালী মনোভাবের লোকজনকে লেখাটি এড়িয়ে যেতে বিনীতভাবে অনুরোধ রইলো)
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। আড়াইশত বছর পরাধীনতার পরে আমরা একটা স্বাধীণ দেশ হিসেবে মাথা তুলে দাড়াই এই মহান যুদ্ধের মাধ্যমে। এই যুদ্ধে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তারা আমাদের জাতীয় বীর।দেশের একটা ক্রান্তিলগ্নে তারা আমাদের মুক্তির পথের দিশারী ছিলেন। তাদের সেই মহান আত্মত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন কি আমরা করতে পেরেছি, নাকি আমরা তাদের অর্জনকে শুধু ক্ষুদ্রস্বার্থে (চেতনা) ব্যাবসার কাজে লাগাচ্ছি? আমাদের দেশের উন্নতির জন্য কি এই মহান স্মৃতি পথিকৃত এর ভুমিকা রাখছে, নাকি এর অপব্যাবহারে আমাদের উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে? দেশের উন্নতির জন্য ভবিষ্যত সরকারের কাছে আমাদের কি চাওয়া থাকতে পারে?
- মুক্তিযোদ্ধা প্রসংগঃ
আজকে ৪২ বছর গত হয়েছে সেই মহান স্বাধীণতা যুদ্ধের। দেশ আর দেশের মানুষ এখন অনেক বদলে গেছে। সেই সময়ে যারা যুদ্ধে গিয়েছিলেন তারা সবাই আজকে ষাঠোর্ধ বৃদ্ধ।
দেশের কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু নিবেন এমন মনোভাব নিয়ে যুদ্ধে গেছেন এমন যোদ্ধা পাওয়া যাবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।বিভিন্ন সময় তাদের সাক্ষাতকারে আমি দেখেছি, সাধারণ যোদ্ধাদের একমাত্র চাওয়া ছিল একটা শোষণ ও নির্যাতনমুক্ত সমাজ। শিক্ষিতদের চাওয়া ছিল রাজনৈতিক স্বাধীণতা, দেশের সম্পদ দেশে থাকার নিশ্চয়তা, মুক্তচিন্তার বিকাশ, সাথে একটা উন্নত দেশের স্বপ্ন। তবে হ্যা, রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেকে হয়তো ভাবতেন, স্বাধীণ দেশে মন্ত্রী মিনিস্টার হবেন, পতাকা লাগানো গাড়ীতে ঘুরবেন।আমি মনে করি এই স্বপ্ন তারা দেখতেই পারেন। সেইজন্যে তারা দেশের মুক্তির জন্য তদবীর করেছেন। কোলকাতায় কষ্ট করে থেকেছেন (১৯৭০ সালে নির্বাচিত সাংসদদের মধ্যে কয়জন যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন? সাংসদ বাদ দিলাম, কতজন বড় নেতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন? কিন্তু ভুলবেন না, তারা তখন স্বামর্থবান ছিলেন) এই প্রসংগটা আনতাম না।(ভুল বুঝবেন না প্লিস।। আমি অবশ্যই মানি যুদ্ধকালীন একটা সরকার আবশ্যক ছিল, তবে সব নেতাদেরই কোলকাতায় বসে থাকা দরকার ছিলো কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে) এই প্রসংগ আনার কারণ হচ্ছে, রাজনীতিবিদরা সাধারণ যোদ্ধাদের মনোভাব আর নিজেদের মনোভাব এক করে ফেলেন। তাই যুদ্ধের ৪২ বছর পরেও তারা ওই যুদ্ধ নিয়ে রাজনীতি করে চলেছেন।তারা মনে করেন মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো তাদের মতই স্বাধীণ দেশের কাছে পাওনা (!) বুঝে পেতে চাইবেন।তারা ভুলে যান, এই যোদ্ধারা জীবন যৌবন বাজী রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। কিছু পাওয়ার লোভ থাকলে, নিরাপদ কোথাও আত্মগোপনে থাকতেন, সম্মুখ সমরে যাওয়ার সাহস করতেন না। আর যে মহান যোদ্ধা বুলেটের মুখে হাসিমুখে দৌড়ে যেতে পারেন, সে জীবনযুদ্ধে অন্যের সাহায্যের আশায় বসে থাকবেন, এটা আমার কাছে দুরুহকল্পনা। যুদ্ধাহত যোদ্ধাদের কথা আলাদা। তারা না চাইলেও রাষ্ট্রের উচিত পুনর্বাসন করা। তবে সেই সময়ও পার হয়ে গেছে। ৪২ বছর পরে এসে এই প্রসংগ অবান্তর।
এই কথাগুলো বলার উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে, এতদিন পরেও আমারা মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ বিতরন করে চলেছি, আর ক্যান্সেল করে চলেছি। তাদের নাতি নাতনিদের কোটা দিয়ে বেড়াচ্ছি।প্রকৃত যোদ্ধারা এইসব নিয়ে মাতামাতি করবে আমার বিশ্বাস হয়না। যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীণ করার মতো সাহস রাখে, তারা রাষ্ট্রের দয়ার জন্য বসে আছেন, এটা কখনই সম্ভব না। (আমি কোটা নিয়ে বিতর্কের সময় খেয়াল করেছি, অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলেছেন, তার কাছে বাবার সনদ আছে, কিন্তু তিনি নিজ যোগ্যতায় ক্যারিয়ার গড়েছেন। তারা গর্বিত যোদ্ধার গর্বিত সন্তান)।
তাহলে, এই সনদ ব্যাবসায়ীরা কারা? অনিচ্ছা স্বত্তেও আমার চোখ চলে যায়, তাদের দিকে যারা আসলে যুদ্ধটাকে একটি ব্যাবসা হিসেবে গণ্য করে। যারা মনে করে দেশ স্বাধীণ হয়েছে, এখন বিদেশি শোষকরা যে ভাগটুকু নিয়ে যেতো তা আমার প্রাপ্য!! আমাদের দুর্ভাগা জাতি, শত বছরের বিদেশী শাষণ শেষে যার দেশীয় রক্ষকরা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ন?
- রাজাকার প্রসংগঃ
এবার আসি রাজাকার প্রসংগে।। স্বাধীণতা যুদ্ধের সময় আমাদের দেশেরই কিছু লোক স্বাধীণতার বিপক্ষে ছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল একটি রাজনৈতিক দলঃ জামায়াতে ইসলাম। তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তাদের অনেক সদস্য আল বদর, আল শামস ইত্যাদি দল গঠন করে স্বাধীনতা ্যুদ্ধের বিরোধীতা করেছে। তাছাড়াও অনেক সুযোগ সন্ধানীরা এই সময় দেশের অস্থিতিশীলতার সুযোগে এইসকল সংগঠনে যোগ দিয়ে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করেছে।এখানে দুই ধরনের লোক আছে। একদল লোক মনে করতেন পাকিস্তান একটি ইসলামী রাষ্ট্র, ভারত চক্রান্ত করে তাকে দ্বিখন্ডিত করার চেষ্টা করছে, তাই তারা এই বিচ্ছিন্নতা বাদের বিরুদ্ধে। তারা দেশের কোটি লোকের আবেগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কিন্তু তাদের অনেকেই আমানবিক যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন না। আরেকদল লোক ছিলেন যারা দেশের শত্রুদের হাতে হাত মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধ করেছেন।সিভিল লোকদের হত্যা, নির্দ্ধাযাতন, ধর্ষণ, লুটপাট ইত্যাদি এর অন্তর্ভূক্ত।যারা এইসব গর্হিত কাজ করেছে তারা কোন মতাদর্শের জন্য এসব করেনি। তারা অমানুষ, তাদের বিবেকবোধ লালসায় নিমজ্জিত ছিল তাই সুবিধাবাদী কাজ করেছে। এদের মধ্যে সকল দলের লোক ছিল, যেমন আজকের দিনেও সব দলেই খারাপ লোক আছে। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে একজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলেছি, যার পরিবার স্বাধীণতার পর তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা নির্যাতন ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। এই স্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা (অদ্যাক্ষর মো হো মা) মুখে কাপড় বেধে ডাকাতি করছিলেন, একপর্যায়ে তার মুখের কাপড় সরে যায়। তিনি এখন চেতনার ধজ্জাবাহক।
সুতরাং দল মত নির্বিশেষে যারা এইসব কুকর্ম করেছেন, তারা নিঃসন্দেহে অপরাধী। তাদেরকে স্বাধীণতার পরপরই ঝুলিয়ে দেয়া দরকার ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা অনেক ক্ষেত্রেই এই শুভকাজটি সম্পন্ন করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে করতে পারেননি বিভিন্ন কারণে।এরপর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দ্বায়িত্ব ছিল তাদের বিচারের কাঠগরায় দাড়া করানোর। বেশ কিছু অপরাধীকে বিচার করাও হয়। আমাদের স্বাধীণতা আন্দোলনের মহান নেতা বংগবন্ধু তখন নেতৃত্বে ছিলেন। আমার বিশ্বাস তিনি সেই সময়ের সকল নেতার চেয়ে বেশী দেশপ্রেমী ও ভবিষ্যতদ্রষ্টা ছিলেন। তিনি সল্প সময়ের মধ্যেই এই বিষয় নিয়ে মাতামাতি বন্ধ করেন। এর কারণ কি?
একটা স্বাধীণ দেশের উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হলো জাতীয় একাত্মতা (national reconciliation)। প্রতিশোধ আর হানাহানির রাজনীতি কখনই দেশের জন্য সুফল আনেনা। বিচার ও শাস্তির সাইকোলজিকাল উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যত অপরাধীদের সতর্ক করা, সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখা। জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্বীকৃতি হয়ে যাবার পর আর পাকিস্তান একীভূত হওয়ার কোন আশংকা ছিলোনা। তাই তখন যুদ্ধুপরাধীদের বিচার সেই সাইকোলজিকাল গুরুত্ব হারায়। বঙ্গবন্ধু ঠিকই বুঝেছিলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এইসব হানাহানি বন্ধ করতে হবে। তাই তিনি আইন করে জিঘাংসা রোধ করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি জাতীয় একাত্মতা প্রশ্নে একটু চরম্পন্থা নিয়ে ফেলেন (বাকশাল আইন)। তিনি হয়ত দেশের ভালই চেয়েছিলেন। কিন্তু যেই স্বাধীণতার জন্য এত জীবনদান, অনেকের কাছেই বাকশাল এর উলটো পথ!
এরপরে আসেন জেনারেল জিয়া।তার ক্ষমতার পথ যেমনই হোক, দেশের উন্নতির জন্য তার পরিকল্পনাও সদূরপ্রসারী ছিলো। স্বভাবতই তিনিও যুদ্ধকালীন কর্মকান্ড নিয়ে হানাহানির পথে যাননি। সকল মত আর পথকেই নিজের সাথে একীভূত করার চেষ্টা করেছেন। তার কাছেও নিঃসন্দেহে মূল প্রয়োজন ছিল দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। এরপর আসলেন এরশাদ।তার শাষণ আমলেও দেশের মধ্যে যুদ্ধকালীন কর্মকান্ড নিয়ে মাতামাতি দেখা যায়না। এরপর আসলো সাধের গনতন্ত্র।।
৯১ গেলো, ৯৬ গে্লো, ২০০১ ও গেলো! ৯/১১ তে আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিল।আফগানিস্তান/ ইরাকের পশ্চিমা বিরোধী ঢেউ আমাদের দেশ সহ সব মুসল্মান দেশেই ছোয়া দিয়ে গেল। ফলে ওই সময়টাতে দেশে দেশে জঙ্গিবাদের দেখা মিলল। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া (বালির বোমাহামলা ভুলেননি নিশ্চয়ই) ইত্যাদি মুসলিমপ্রধাণ দেশগুলোও এর শিকার হয়। তাই এর সাথে দেশের সরকারকে সরাসরি যুক্ত করা ঠিক হবেনা।
২০০১ এর নির্বাচনে একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে।। আওয়ামিলীগ মোট ভোট বেশি পেয়েও, নির্বাচনে ব্যাপকভাবে হারে। ভোটের রাজনীতিতে যোগ হয় এক নতুন মাত্রা। হিসাবে দেখা যায়, বিএনপি ও জামাত জোট না বাধলে আওয়ামীলিগের অন্ধ ভোটারদের সমর্থনের জোরে আওয়ামীলিগ বার বার ক্ষমতায় যেতে পারে! এই নির্বাচনী হিসাবের প্রেক্ষিতে আওয়ামীলিগ ২০০১ নির্বাচনের পর থেকেই জামাতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, যুদ্ধাপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ আনতে থাকে। যদিও জঙ্গীবাদের মূল উতস ও কারণ কোনটাই জামাতের রাজনীতির সাথে যুক্ত না। এর কারণ আমেরিকার ঘোষিত global war on terrorism আর দেশে দেশে চলমান গোপন আন্দোলন Islamic Caliphate। যেহেতু জামাতের কর্মীরা ইসলামপন্থী, তাদের কিছু প্রাক্তন সদস্য স্বাভাবিক ভাবেই আমেরিকার গ্লোবাল ওয়ার এর বিপক্ষে যোগ দিতে আফগানিস্তান ইরাক যায়, এবং ফলস্রুতিতে নিষিদ্ধ সংগঠনে যুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু দেশীয় রাজনীতির সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই বললেই চলে।তাছাড়া ততকালীন সরকার বিশেষ বাহিনী র্যাব গঠন করে বেশ কঠোর ভাবেই জঙ্গীবাদ দমন করে।বাংলা ভাই আর তার সাংগ পাংগদের ফাসী দিয়ে সেই কালো অধ্যায়ের ইতি ততকালীন সরকারই টেনে দেয়।
কিন্তু আওয়ামীলিগের জন্য এটা ছিল প্রধাণ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নির্বাচনকালীন মিত্র জামাতকে ঘায়েল করার সুবর্ণ সুযোগ। তারা বিদেশী শক্তিদের কাছে জামাতকে তথা সরকারকে জঙ্গীসংশ্লিষ্ট প্রমান করতে মরিয়া হয়ে উঠে।উপরে বর্ণিত কারণে (জামাতের কিছু সদস্যের পশ্চিমাবিরোধী যুদ্ধে যোগদানের প্রমাণ ও পরবর্তীতে দেশে ফিরে জঙ্গী সংগঠণের সাথে যোগাযোগের প্রমাণ) তারা এ ক্ষেত্রে সফলও হয়। একই সাথে তারা জামাতকে যুদ্ধাপরাধকারী দল হিসেবে তরূণ প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধের বিচার করার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী ম্যানিফ্যাস্টো করে। যেই national reconciliation বা জাতীয় ঐক্যের জন্য বঙ্গবন্ধু/ জিয়া ৪০ বছর আগে এই ইস্যুকে শেষ করেছিলেন, ক্ষমতায় যাবার জন্য আবার সেই ইস্যুকে জাগ্রত করা হয়।
গত ৪২ বছরের মধ্যে আর কখনো বাঙ্গালী জাতি এতোটা দ্বিধাবিভক্ত ছিলোনা। কারণ দলকানা ছাড়া যে কেউ স্বীকার করবে এই বিচারের আসল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। দেশের উন্নতি, অগ্রগতির সাথে এই বিশাল যজ্ঞের কোন সম্পর্ক নাই। নাহলে কেন যুদ্ধাপরাধীরা প্রায় সবাই একটা বিশেষ দলের টপ নেতাই? আর কোন যুদ্ধ অপরাধী দেশে নাই?? একজন অপরাধীর ফাসির আদেশের বিরোধীতা করতে গিয়ে শত লোকের জীবনদান, বাঙ্গালী ইতিহাসে তো দূরের কথা, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তার মানে কি এই হাজার হাজার লোক যারা এই বিচারের বিরোধীতা করেছে সবাই ব্রেইন ওয়াশড? তার মানে কি বাঙ্গালি জাতির বিশাল অংশ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী? নাকি বাঙ্গালী এই বিচার ব্যাবস্থায় আস্থা রাখেনা?? যতদূর জা্না যায় এইসব যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাক্ষী দেয়ার জন্য শত শত লোক ছিল কিন্তু আইন বদল করে তাদের সাক্ষী দিতে দেয়া হয় নাই। অপরদিকে বিপক্ষে সাক্ষী দেয়ার লোকদের সেফ হোমে রাখা হয়েছে। আদেশ মতো সাক্ষ্য না দিলে গুম করে ভারতের কারাগারে পাঠানোর উদাহরণও আছে! ( আমার মতে ৪০ বছর পরে একটা বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়া দূরুহ ব্যাপার। আর বাংলাদেশে আমরা যেভাবে দলকানা, তাতে নেতা আদেশ করলে আমরা মিথ্যা সাক্ষ্য দিতেও পিছপা হবেনাঃ জনগনের উপর এই আস্থা আমার আছে।এই ধারা না বদল হলে আগামী দিনে আরো নতুন নতুন যুদ্ধাপরাধীর দেখা মিলবে বলে আমার বিশ্বাস!) আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্কে বলে, ‘আমার দলে যোগ দিলে তুমি ভাল, আর নাহলে তুমি ছাগু’- এই তত্ত্বে যারা বিশ্বাসী, তাদেরই ব্রেইন প্রকৃতভাবে ওয়াশড! ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে একটা দেশের জনগনকে বিভক্ত করার এমন উদাহরণ ও পৃথিবীতে বিরল (রুয়ান্ডা একটা উদাহরণ হতে পারে)।
কোন সন্দেহ নাই রাজাকারের বিচার দরকার আছে।। তাহলে এতদিনে বিচার শেষ করে ফাসি/জেল দেয়া হলোনা কেন? পাচ ছয়জন লোকের বিচার করতে কি পাচ বছর লাগে? সরকার বিচারের রায়ের সময়কাল নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম এইটা বুঝতে আইনস্টাইন হওয়া লাগে? একসাথে সবগুলি আসামীকে ফাসি দিলেও আমার মনে হয় এর চেয়ে বেশী রিয়াকশন হইত না। তার মানে বুঝা যাচ্ছে আপনাদের আসল উদ্দেশ্য এদের বিচার না!! আপনারা আশায় আছেন এদের ফাসি দেয়ার ধুয়া তুলে জনগণকে ব্ল্যাক্মেইল করবেন!! এদের ফাসি দেয়ার জন্য আপনাদের চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকা জরুরী! বাহ কি সুন্দর আপনাদের যুক্তিবোধ! এখানে আমার এক ফেসবুক ভাইয়ের ডায়লগ মনে পরে গেলঃ বাংগালীরে হাইকোর্ট দেখানো বন্ধ করেন!!
এটা পরিস্কার বোঝা যায়, যুদ্ধাপরাধী বিচার শুধুই একটা ইস্যুঃ উদ্যেশ্য এক ঢিল এ দুই পাখী! একঃ বিএনপি-জামাত জোট ভাঙ্গা। দুইঃ জনগনের ইমোশন নিয়ে খেলা করে ভোটের রাজনীতিতে লাভ করা। দেশের উন্নতি-অগ্রগতির সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। এইখানে প্রসংগত গজা মঞ্চের কথা চলে আসে, কিন্তু সেইটা আরেক প্যাচঃ কে খেলোয়ার, কে কোচ, কে ফাইনান্সার আর গোলপোস্ট কোনদিকে সেইটা সল্পসংখক লোকেরই জানা আছে। এই মঞ্চ আসলে এই মুহুর্তে দেশের জন্য কোন ভুমিকা রাখার ক্ষমতাও রাখেনা। তাই এই লেখায় তাদের নিয়ে আলোচনায় যাবো না।
জনগণের চাওয়া কি?
আমি ভাই আমজনতা।স্বাধীনতা যুদ্ধ, যুদ্ধের সূর্যসন্তানরা আমার গর্ব। আমার মা বোনের ইজ্জত যারা নিসে তাদের আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি।বঙ্গবন্ধুকে আমি শ্রদ্ধা করি, ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত তার অসামান্য নেতৃত্বের জন্য। জিয়াকেও আমি শ্রদ্ধা করি এক দুঃসময়ে দেশের হাল শক্ত হাতে ধরার জন্য। কিন্তু তার মানে এই না ৪০ বছর আগের দুঃসপ্ন দেখায়া, বারবার মৃত সম্মানিত নেতাদের গল্প শুনায়া আমার ভোট আপনি নিয়া যাবেন। ওইসব গল্পের দিন শেষ। ব্যাকগ্রাউন্ড কাহিনী বাদ দেন।
এই লেখাটার পূর্ববর্তী ভার্সনে এই কথাগুলী দুই নেত্রীর উদ্দেশ্যে বলসিলাম। কিন্তু বিগত কয়েকদিনে সরকারী দলের বাকশালী কর্মকান্ড দেখে বুঝলাম, তাদের এইসব কথা বলে লাভ নাই। তারা চেতনা ব্যাবসা করেই দিন কাটাবে ঠিক করসে। এই আফিমের ঘোরে তারা দেশের কোটি কোটি লোককে আচ্ছন্ন করে রাখসে। এই চেতনা দিয়ে দেশের কোন উন্নতি হবেনা যেনেও তারা না জানার ভান করে আছে, কারণ ব্যাবসাটা তাদের জন্য বেশ লাভজনক। দেশের সম্পদ লুঠ, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলী আর দেশের কাংখিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে দলীয় লোকদের দুর্নীতি প্রকাশ হওয়ার পর তাদের কাছে ক্ষমতায় টিকে থাকার একটা রাস্তাই খোলা আছে বলে মনে হয়- সেটা হলো চেতনা ব্যাবসা। ঘুমের অভিনয় করা লোককে তো আর ঘুম থেকে তুলা যায়না। তাই সে চেষ্টা ক্ষান্ত দিলাম। তাই এই ভার্সনে শুধু বি এন পি নেত্রীর প্রতি আহবান রইলো।
আপনি ইতিমদ্ধে দুইবার প্রধাণ মন্ত্রী হইসেন। দেশের মানুষ আপনাকে অনেক সম্মান দিসে। বয়স ও তো কম হইলো না! এইবার ই হয়তো শেষ সুযোগ দেশকে একটু এগিয়ে নেয়ার।শেষ সুযোগ দেশের জন্য সত্যিই কিছু করার। নিজেদের ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে সঠিক পথে চলার অংগীকার করার জন্য প্রচন্ড আন্তরিকতা ও সতসাহস প্রয়োজন। এটার রাজনৈতিক ঝুকিও আছে। কিন্তু কখনো কখনো ঝুকি নিলে তা বৃথা যায়না। আর আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় আপনার মধ্যে সেই প্রচন্ড সাহসটাও আছে। দেশের স্বার্থে একবার একটা বোল্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে দেখেন না!
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবেনা সেই আশঙ্কা প্রবল। কিন্তু কমন্সেন্স বলে, বিএনপি যদি নিজেদের ভুলের জন্য জনসমর্থন না হারায়, তাহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবেনা কিংবা নির্বাচন করে বেশীদিন ক্ষমতায় তারা থাকতে পারবেনা। সুতরাং বিএনপি কে এখন সঠিক পথে চলতে হবে, যাতে গণমানুষ তাদের উপর থেকে আস্থা না হারায়। রাজপথে যথেষ্ট সমর্থন অর্জন না করে জনদুর্ভোগ দীর্ঘায়িত করলে জনগণের আস্থা হারানোর সম্ভাবনা প্রবল। তাই এখনই সময় কিভাবে জনগণকে আপনাদের দাবীর সাথে সম্পৃক্ত করা যায় তা ভাবার। আমার মতে তা করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একটা সঠিক নির্বাচনী এজেন্ডা প্রকাশ করা যা জনগনের চাহিদাকে পূরণ করতে পারবে। এগুলো যাতে জনগণের কাছে ফাকা বুলি মনে না হয়, সেজন্য প্রয়োজনে খসড়া আইন (দূর্নীতি দমন, টেন্ডার, আইন বিভাগ ইত্যাদি নিয়ে) প্রনয়ন ও প্রকাশ করতে হবে, যা আপনারা ক্ষমতায় গেলে কার্যকর করবেন। জনগন যদি আপনাদের কথা ও কাজে আন্তরিকতার ছোয়া পায় তাহলে, গণজোয়ার কেউ ঠেকাতে পারবেনা।
এই কথা নিশ্চিত যে দেশের জনগণের সমর্থন যদি পেতে চান, তাহলে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন আপনাদের নির্বাচনি এজেন্ডায় পড়তে হবে। অন্য দল খারাপ এইজন্য ভোট দেন, এই হিসাবে হয়ত নির্বাচনে জেতা যায় কিন্তু এই আশায় থাকলে এইবার আর নির্বাচনে যাওয়া লাগবেনা। আপনাদের ছাড়াই ডিজিটাল নির্বাচনে ৮০% ভোট পড়ে যাবে। পুলিশ, আর্মী কেউই এর বিরোধিতা করবেনা। বরং আপনারা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে বিপদে পড়বেন। আর্মি মাঠে থাকলে নির্বাচন বানচাল করা কঠিনই হবে। তাই বলছি জনগনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেন, যাতে এই নির্বাচন না হয় কিংবা জনগণ দৃশ্যমানভাবে নির্বাচন বর্জন করে। জনগণ আপনাদের কাছ থেকে কি চায় তা আপনারা ভালই জানেন। তবু এই অভাজন আপনাদের একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাইঃ
- কথা দিতে হবে প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ আর দুর্নীতির রাজনীতি বন্ধ করবেন।
- দল মত নির্বিশেষে সবাইকে দেশের কাজে একত্রিভূত করবেন। মেধার মূল্যায়ন করবেন, দলীয় পরিচয়ের না।
- দূর্নীতি দমনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশের সম্পদের লুন্ঠন বন্ধ করবেন। দুর্নীতিবাজদের দমনে কঠিন আইন করবেন।
- বিরোধী মতকে শক্তি দিয়ে দমন করবেন না। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবেন।
- পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দিবেন, যাতে জনগন নিরাপদে থাকে। দলীয় কাজে ব্যাবহার করবেন না।
- বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করবেন না। তাদের জনগনের সেবা করতে বাধ্য করবেন।
- দলীয় টেন্ডারবাজী বন্ধ করে সচ্ছতা নিশ্চিত করবেন। উন্নত দেশের আদলে সচ্ছভাবে সরকারী টাকা খরচের হিসাব অনলাইনে দিবেন।
- ছাত্র রাজনীতি সীমিত করে প্রকৃত ছাত্রদের নেতা বানাবেন। মেধার বিকাশ ও মূল্যায়নে সাহায্য করবেন। চাদাবাজদের দল থেকে বিতারিত করবেন।
- আমদানি, রপ্তানী বানিজ্য, গার্মেন্টস, শেয়ারবাজার রাহুমুক্ত করবেন।
- মানবসম্পদ রপ্তানী করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো, কূটনীতি, সাপোর্ট এর ব্যাবস্থা করবেন।
- সংসদে বিরোধী দলকে হেয় করবেন না। সংবিধানে সংশোধনী এনে সকল এমপিদের দেশের স্বার্থে প্রয়জনে দলের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার সুযোগ দিবেন।
- যোগ্য, তরুণ মেধাবীদের মন্ত্রী করবেন।দেশের সেরা মেধাগুলোকে একসাথে করে সরকারের সাথে নিয়ে দেশসেবায় নিয়োজিত করবেন।
নেত্রী আমার আশংকা হচ্ছে আপনার আশেপাশের ঝুনা নেতারা আপনাকে এই পথে আসতে বাধা দিবে। তারা যুক্তি দিবে, দুর্নীতি বন্ধ করলে আর দেশের স্বার্থ দেখলে কি এর সুবিধাভোগি ব্যাবসায়ী, আমলা, পার্শবর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, তাদের সাথে যুক্ত রাজনৈতিক দল, এরা আমাদের সরকারকে টিকতে দিবে? বছর না ঘুরতে ১/১১ সরকারের মতো বিপদে পড়বো আমরা! কিন্তু আসলে ১/১১ সরকার আর নির্বাচিত সরকার এক না।। আপনারা যদি দেশের সত্যিকার উন্নতির জন্য চেষ্টা করেন দেশের দেশপ্রেমী মানুষ, পুলিশ, আর্মী সবাই আপনার জন্য বুক পেতে দাড়ায়ে যাবে। হয়ত কিছুদিন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য জন্য জনগনের কষ্ট হবে, কিন্তু আপনারা আন্তরিক হলে জনগণ সব বুঝতে পারবে। আর বাংগালী একবার যদি জাগ্রত হয়, কারো সাধ্য নাই, তাদের দমিয়ে রাখে।
একবার সরকার গঠণ করলে পাচবছরের মধ্যে কারো ক্ষমতা নাই সরকারকে হটায়! কিন্তু পাচ বছরের মধ্যে দেশটা একটা ফ্লায়িং ষ্টার্ট পেতে পারে। সাথে আপনারাও হয়ত সক্ষম হবেন পাচ বছর পরেও জনপ্রিয়তা ধরে রাখার সুযোগ। আপানাদের আবার পাচ বছর পরে পাতানো নির্বাচনের চেষ্টা করে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার প্রয়োজন হবে না। শুধু আপনাদের একটু সৎসাহস আর সদিচ্ছার মুখাপেক্ষি আমরা। দিবেন নাকি প্রকাশ্য জনসভায় বা মিডিয়াতে একটা যুগান্তকারী ঘোষনা??? দিবেন নাকি আমাদের একটা বিশ্বাসযোগ্য আর আন্তরিক আশ্বাস, সাদা-কালো রেফারেন্স সহ? আমরা জনগনরা যেনো ভবিষ্যতে সেই রেফারেন্স দিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করতে পারি? আমার আন্তরিক বিশ্বাস এই দেশের জনগণের একটা বিশাল অংশ দেশের প্রকৃত উন্নতির জন্য প্রয়োজনে ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।। তাদের অপেক্ষা শুধু একটা সৎ, দেশপ্রেমী আর যোগ্য নেতৃত্বের। পথ চেয়ে আছে বাংলাদেশ!