ক্রাইসিস মোমেন্টে আপনার ভুমিকা কি ছিল?

বাংলাদেশে বর্তমানে এক নাম্বার ইস্যু কি? এই ব্যাপারে সবাই একমত হবেন। কিন্তু সবাই এ ব্যাপারে কথা বলবেননা। দুই দলের ক্ষমতার লড়াই বলে বসে আছে ম্যাংগো পিপলরা। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করছে তাদের স্বার্থের জন্য, আমরা কেন কথা বলব? বর্তমান রাজনৈতিক সিস্টেমকে ঘৃণা করি বলে আপনি তৃপ্তিতে ভোগেন। প্রশ্ন হোল কোন কথা না বলা কি একধরনের স্বার্থপরতা নয় কি? অন্যের ঘরে আগুন লাগছে বলে বসে থাকলে, আগুন নেবানোর উদ্যোগ না নিলে আমার ঘরেও আগুন লাগবে। দেশের স্বার্থে রাজনীতি করছেন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর একথা সত্য  কিন্তু দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশের আপামর জনতা থেকে কিছু মানুষ কে সোচ্চার হতেই হয়; সোচ্চার না হলে  এই ক্রান্তি থেকে উত্তরন হয়না।  যেকোনো ক্রাইসিসে দুটি পক্ষ থাকে; এক পক্ষ ক্রাইসিস তৈরির উদ্যোক্তা আর অন্য পক্ষ ক্রাইসিস থেকে উত্তরনের উদ্যোক্তা। একই সাথে দুটি পক্ষ ক্রাইসিস তৈরির উদ্যোক্তা হতে পারেনা। আপনি আমার সাথে একমত না হলে ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন; সকল ক্রাইসিসে পক্ষ দুটি এবং দুটি পক্ষই ক্রাইসিস ঘনীভূত করার কাজ করলে তো আর পক্ষ দুটি থাকেনা একপক্ষই হয়ে যায়। অথচ আমাদের ম্যাংগো পিপল যারা নিজেদের খুব স্মার্ট ভাবেন, তারা বলছেন বর্তমান ক্রাইসিসের জন্য দুটি পক্ষই দায়ী। আমার প্রশ্ন হোল দুটি পক্ষই দায়ী হলে তো এক পক্ষই হয়ে গেল, তাহলে উত্তরণের পক্ষ কোথায়? বলবেন এ থেকে উত্তরণ সম্ভব শুধুমাত্র দুইপক্ষকে মাইনাস করে। এটা কোন ফিসিবল সলুশান না। হ্যাঁ আমি এগ্রি করছি দুই পক্ষই যে ধারার রাজনীতি করছেন তার থেকে গঠনমূলক রাজনীতি প্রয়োজন; কিন্তু সেটা হচ্ছে লংটার্ম সলুশান। তা দিয়ে বর্তমান ক্রাইসিস থেকে উত্তরনের সুযোগ নেই। বর্তমান ক্রাইসিস থেকে উত্তরনের জন্য ফিসিবল সলুশান হচ্ছে চলমান রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকেই একটি পক্ষকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা অবশ্যই গঠনমূলক রাজনীতি এবং স্থিতিশীল ও সহিষ্ণু গণতন্ত্র তৈরির জন্য প্রচেষ্টা চালাব। কিন্তু সেই প্রশ্ন এই ক্রাইসিস মোমেন্টে উঠানো একেবারেই অবান্তর। আপনি হুট করে পুরো প্রচেসটা পরিবর্তন করতে পারবেননা। যারা লংটার্ম সলুশানকে সর্টটার্ম ক্রাইসিস থেকেউত্তরণের কথা বলছেন; তারা আদতে সলুশান চান কিনা প্রশ্ন উঠতে পারে। তারা হয়ত ভাবছেন এই ক্রাইসিস দীর্ঘদিন কনটিনিউ করলে লংটার্মে  গঠনমূলক রাজনীতির পরিবেশ তৈরি হতে পারে। যারা এ ধরনের ম্যানটালিটি পোষণ করেন, তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি; আপনি আমেরিকান স্টাইল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেও ক্রাইসিস থাকবে। সেক্ষেত্রে সলুশানও হবে উদারনৈতিক কিংবা সহিষ্ণু পন্থায়। এখনো সে ধরণের পরিবেশ তৈরি হয়নি অথচ আপনি এক্সপেক্ট করছেন সে পরিবেশের সলুশান।
এবার আসা যাক বর্তমান ক্রাইসিসের উদ্যোক্তা কারা? এ ব্যাপারেও অধিকাংশ মানুষই একমত হবেন যে, ক্রাইসিসের উদ্যোক্তা আওয়ামীলীগ; তারা নিজেদের স্বার্থে সংবিধান পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। মজার ব্যাপার হোল আপনি ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবেন বেশীর ভাগ ক্রাইসিসের উদ্যোক্তা রাষ্ট্র শক্তি। ১৯৫২, ৭১, ৯০, ৯৬  তে ক্রাইসিস তৈরি করেছিল রাষ্ট্র শক্তিই। ১৯৯৬ সালে বিএনপির হাতে রাষ্ট্র শক্তি ছিল তারা সে শক্তিকে ইউজ করে ক্রাইসিস তৈরি করেছিল আর আওয়ামীলীগ তখন জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করে ক্রাইসিস থেকে উত্তরনের ব্যবস্থা করেছিল। আর এখন আওয়ামীলীগ রাষ্ট্র শক্তিকে ইউজ করে ক্রাইসিস তৈরি করেছে আর বিএনপি জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করে ক্রাইসিস থেকে উত্তরনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন হোল ম্যাংগো পিপলরা কি ভূমিকা রাখতে পারে? ক্রাইসিস মোমেন্টে সাধারন জনতার মধ্য থেকেই অনেকে ভুমিকা পালন করে থাকেন। যাদের উদ্দেশ্য হীন ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ নয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশেরই আপামর জনসাধারণ থেকে কিছু মানুষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যারা বিবেকের তাড়নায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন; তারা কিন্তু চেতনার ব্যবসা করেননি। যারা চেতনার ব্যবসা করছেন, তারা কিন্তু সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তারা রাজনীতিবিদ হিসেবে পুরো যুদ্ধকালীন সময়ে কলকাতায় অবস্থান করেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ফায়দা হাসিল করা তারা সে ফায়দা হাসিল করে চলেছে। সে সময়ও যদি মুক্তিযুদ্ধারা এই ভেবে চুপ থাকতেন যে এটা রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা দখলের কৌশল, তাহলে কি দেশ স্বাধীন হতো?  ক্রাইসিস থেকে উত্তরণ হতো? মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন এ দেশেরই কিছু নাগরিক ক্রাইসিস উদ্যোক্তাদের পক্ষে ভূমিকা পালন করেছিলেন; তারাই ছিল রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধে এ দুটি পক্ষের বাহিরে অনেকেই ছিলেন। সবাই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে পারেনি। অনেকে বয়স, সামর্থ্য থাকার পরও অংশ গ্রহন করেননি। এরাই ছিলেন তখনকার ম্যাংগো পিপল! এই ম্যাংগো পিপলরা সকল কালে এবং যুগে অপেক্ষায় থাকে পানি কোন দিকে গড়ায়।
তাহলে বর্তমান সময়ে কিভাবে ভুমিকা রাখা যেতে পারে? ভুমিকা রাখার জন্য আপনাকে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির অংশীদার হওয়ার প্রয়োজন নেই। ক্রাইসিস থেকে উত্তরনের জন্য আপনি আপনার অবস্থান থেকেই সমাজ সচেতনতা তৈরির ভুমিকা রাখতে পারেন। আর আপনি যদি রাজনীতিবিদদের কামড়া-কামড়ি বলে চুপ করে বসে থাকেন, তাহলে আপনি হয়ে যাবেন কাপুরুষ ম্যাংগো পিপল! এবার আপনিই ডিসাইড করুন; এই ক্রাইসিস মোমেন্টে আপনার ভুমিকা কি হবে? আপনি কি ক্রাইসিস উত্তরণের যোদ্ধা হবেন, না ক্রাইসিস তৈরির উদ্যোক্তাদের ক্রিয়ানক হিসেবে এই ক্রাইসিসের রাজাকার হবেন; নাকি ম্যাংগো পিপল হয়ে দেখবেন পানি কোন দিকে গড়ায়। আপনার ভুমিকা ইতিহাসের অংশ হচ্ছে; ইতিহাসই বলে দিবে ক্রাইসিস মোমেন্টে আপনার ভুমিকা কি ছিল?

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s