by আজগর খান
ইসলাম ও মুসলিমের ছিদ্রান্বেষণে চিরঅক্লান্ত ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠি তথা ধর্মনিরপেক্ষ ধারার মূল ধ্বজাধারীরা সম্প্রতি একটি নতুন আবিষ্কার করে অনলাইনে ব্যপকভাবে ও বাস্তবে থেমে থেমে কিছুটা উল্লম্ফনে মত্ত হয়েছেন। ব্যক্তিচরিত্রে কালিমা লেপনের মত নারীঘটিত দলিল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও না পেয়ে হতাশ হয়ে তারা আল্লামা শফির যারা জীবনের ওয়াজ-বক্তব্য খুঁজে খুঁজে, ঘেঁটে ঘেঁটে যাচাই বাছাই করতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত মোটামুটি দাঁড় করানোর মত একটাই তত্ত্ব পাওয়া গেল যেটাকে কিছুটা টুইস্টেড ভঙ্গিতে পরিবেশন করতে পারলে দলের যম হেফাজতের সর্বগ্রাসী প্রভাব কমানোয় ধন্বন্তরি ওষধির কাজ দিলেও দিতে পারে। তারা ধরেই রেখেছিলেন এই তত্ত্বের যুগান্তকারী আবিষ্কারের ফলে হেফাজতকর্মী থেকে শুরু করে আপামর ইসলামপ্রিয় জনতা যারা ইসলামের সাম্প্রতিক প্রাধান্য বিস্তারে পুলকিত হয়েছিলেন তারা মুষড়ে পড়বেন। আদতে নিজেরাই গণবিচ্ছিন্ন হওয়ায় পর্বতের মূষিক প্রসবের মত এত মারাত্মক অস্ত্র নিক্ষেপ করেও এত অল্প ফলাফল পাওয়া যাবে এ আশা ঘুণাক্ষরেও তারা করেননি। যাই হোক এই পোস্টের আলোচনা আল্লামা শফির অবস্থানকে কিছুটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টাকে ঘিরেই আবর্তিত হবে।
সারাদেশের আলেমওলামা তথা তাওহীদি জনতা এবং সাধারণ ধর্মভীরু জনগণের কাছে আল্লামা শফি একটি অতি সম্মানিত নাম। যাঁর এক ডাকে সারা দেশের এক এক জেলায় লক্ষ লক্ষ জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে তাঁর চেয়ে আলোকিত মানুষ আর কে হতে পারে ? এই মূহুর্তে বাংলাদেশের ইতিহাসে জনপ্রিয়তম একটি নাম হচ্ছে আল্লামা শফি। উনি এবং ওনার ডাকে মানুষ কাফন পরে শাহাদাতের জন্য তৈরি হয়ে যায়, এখনো ডাক দিলে আবার আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ হবে। একমাত্র ইসলামের খাঁটি দুশমন যারা তারা ছাড়া আর বাকি সবার কাছে উনি শুধু আলোকিত না, জ্যোতির্ময় একটি নাম।
হ্যাঁ সরকার ও সরকাররের অন্ধ সমর্থকদের জন্য অবশ্য উনি খুবই বিপজ্জনক একটি নাম। কারণ বিএনপি-জামাতকে প্রায় হজম করে ফেলে ২০২১ পর্যন্ত নিজেরা ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে লুটেপুটে সর্বস্বান্ত করা ও অবশেষে ভারতের অঘোষিত উপনিবেশে পরিণত করার ব্যবস্থা যখন প্রায় পাকা _ ঠিক তখনই আল্লামা শফি আহুত স্মরণকালের বৃহত্তম গণআন্দোলনে সেই পরিকল্পনা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবার পরিস্থিতি তৈরি হয়। বর্তমানে এই হেফাজতের প্রভাবেই প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে যত্নের সাথে অপ্রতিরোধ্যভাবে হেরে ভূত হয়ে চলেছে সরকার। জনসমর্থন স্মরণকালের নিম্নতম শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে ৬৫ বছরের ইতিহাসে এই আল্লামা শফির আন্দোলনের কারণেই। সেজন্যেই আল্লামা শফি ও হেফাজত এখন সরকারি দলের আতঙ্কের আরেক নাম, যাকে যুগপৎ ভীষণ ভয় ও ঘৃণা করে সরকার এবং সরকারের অন্ধ সমর্থকরা।
মাওলানা শফির ওয়াজ সাধারণ ইসলামপ্রেমী মানুষের জন্য। উনি আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজ করেন। ইসলামে যা আছে তাই বলেছেন বাড়তি কিছু বলেন নি। আঞ্চলিক ভাষায় করা সাবলীল এই ওয়াজটি অধিকাংশ মডারেট মুসলিমদের মত ‘উচ্চশিক্ষিত’ রুচিবান’ ‘শহুরে’ মানুষদের জন্য নয়, যেহেতু না মানতে না মানতে ইসলামের খুব কম হুকুম মানার যোগ্যতাই এখন তাদের অবশিষ্ট আছে। আল্লাহর দ্বীনকে তারা মোটামুটি খেলতামাশার বস্তু বানিয়ে ফেলেছেন যেটুকু ইচ্ছা হয় মানেন, যেটুকু ইচ্ছা হয় না মানেন না। এই ওয়াজ তাদের মত মানুষদের জন্য না, যারা মানতে অভ্যস্ত ও মানতে পারেন সেইসব কম শিক্ষিত কিন্তু অনুগত সহজ সরল সাধারণ মানুষদের জন্য। সাধারণভাবে মডারেট মুসলিমদের জন্য জন্য সহজপাচ্য ওয়াজ ও ফতওয়াও মাওলানা শফি দিয়েছেন। যেমন ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটুকু পর্দা করেন বা পোষাক পরেন, সেটুকু পর্দা করলে বা পোষাক পরলেও গ্রহণযোগ্য হবে।’ মনে পড়ে এই কথাও শফি সাহেব বলেছিলেন ?
আগের যুগে পুঁথি পড়া হত, নামতার সুরে গ্রামবাংলার অজ পাড়াগেঁয়ে মানুষের কথ্য ‘প্রাকৃত’ ভাষায় যেসব অপভ্রংশনির্ভর পালাগান রচনা করা হত _ যার প্রতিফলন যাত্রা-পালাগানেও আমরা এখনো দেখতে পাই, সেটি আবহমান বাংলার গ্রামীণ লোকায়ত সংষ্কৃতির আবহের সাথে যতটা সাযুজ্যপূর্ণ, উপভোগ্য, ইন্টারএ্যাকটিভ _ শহুরে আধুনিক নগরসভ্যতার ঘুণচক্করের পাঁচমিশালি মিশ্রশংকর বাকপটু জটিল সংষ্কৃতি প্লাস কোলকাতার বাবুসংষ্কৃতির কুটিল মিশ্রণে ‘গোছানো’ কথাবার্তায় অভ্যস্ত শহরবাসীদের মানসিক গঠনের কাছে ততটাই দূর্বোধ্য, বিরক্তিকর। এখন শহুরে ভাষায় ওয়াজ করলে তা হবে গ্রাম্য মানুষদের কাছে দূর্বোধ্য _ তাদের জীবনযাপন-রঙ্গরসিকতা-বোধগম্যতা কিছুই শহরের মানুষদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এখন পালাগান গায়কই হোক বা ধর্মজ্ঞানী আল্লামা শফিই হন _ যার যার যে মেসেজ গ্রাম্য মানুষদের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন সেটি তাদের মত করেই তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আমার ধারণা আল্লামা শফি এই ক্ষেত্রে মূল বক্তব্যটি পৌঁছাতে পেরেছেন।
বলা বাহুল্য আজকের দিনে পুঁথিপাঠ-পালাগান গ্রামের সহজিয়া সংষ্কৃতির ধারক কৃষক-শ্রমিকদের কাছে এখনো যে আবেদন রাখে, রাত জেগে পরম আগ্রহ নিয়ে সরলমনে যেভাবে তারা শোনে _ শহরের মানুষ পাঁচ মিনিট শুনলেই হাই তুলতে শুরু করবে, বিরক্তি প্রকাশ করবে। পুঁথিপাঠ-পালাগানের মতই সহজিয়া সংষ্কৃতির আরেকটি অনুসঙ্গ হচ্ছে ‘ওয়াজ মাহফিল’, যে লিংকটি দিয়েছেন সেটি গ্রামের ওয়াজ মাহফিল যাতে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে সাধারণ গ্রামবাংলার মানুষের কাছে সহজ সরল ভাষায় কিন্তু ‘তাদের মত করে’ ‘উপভোগ্য’ করে ‘সহজবোধ্য’ করে ধর্মের বাণী পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখন এই গ্রাম্য অডিয়েন্সের সামনে আঞ্চলিক ওয়াজকে যদি আপনি ‘আধুনিক শহুরে রুচির’ পাল্লায় মাপেন তাহলে সেটি ‘অবিচার’ হবে।
উপসংহার :
যারা আজ আল্লামা শফির বক্তব্যের ছিদ্রান্বেষণে পাগলপারা হচ্ছে তারা কারা এবং তাদের উদ্দেশ্য ও বিধেয় কি তা বাংলাদেশের আপামর তাওহীদি জনতার অজানা নেই। ৫ টি নির্বাচনে গণমানুষের কাছে তাদের অবস্থান কোথায় তাও স্পষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের পুরনোদের কাছেও তাদের পারফরমেন্স আজ বিপজ্জনকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় মরিয়া হয়ে তারা আত্মরক্ষার পথ খুঁজছে। হেফাজত ঝড়ে তাদের ২০০৮ এর নির্বাচনী রণতরী আজ ভাঙ্গাতরী হয়ে টালমাটাল অবস্থায় বিক্ষুব্ধ সমুদ্রে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। বেদিশা হয়ে তাই মিশন নিয়েছে কি করে হেফাজতের প্রভাব খর্ব করা যায়। কারণ জনমনে হেফাজতের যে প্রভাব তা কমাতে না পারলে আগামী নির্বাচনে জয়লাভ তো দূরের কথা পিঠের চামড়া অক্ষত থাকবে কি না সেটাই এখন জ্বলজ্যান্ত দুশ্চিন্তা হিসেবে তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।
সেজন্যেই তারা একদিকে ইসলামবিদ্বেষীদের তোষণ করে, আরেকদিকে আলেমওলামাদের গণহত্যা করে ‘লালরঙ’ তত্ত্ব দিয়ে বিদ্রুপ করে। কোরআন নিয়ে কুৎসিত ব্যঙ্গবিদ্রুপাত্মক রচয়িতা থাবা বাবাকে শহীদ আখ্যা দেয় _ আবার নিজেরা কোরআন পুড়িয়ে জীবন্ত কোরআন আলেমওলামা-হাফেজ সাহেবানদের ওপর কোরআন পোড়ানোর অপবাদ চাপাতে কসুর করে না। এরাই একদিকে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে সারাদেশে ধর্ষণের মহোৎসবে মেতে ওঠে _ আবার শফি সাহেবের পুরনো ওয়াজ ঘেঁটে ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ আবিষ্কার করে নারীর দরদে দরদি হয়।
তবে কিনা চোরের দশদিন গৃহস্থের একদিন। এদের ছলাকলা চাতুরি শয়তানি পাবলিকের সামনে এমন স্পষ্টভাবে নগ্ন হয়ে গেছে যে এখন কোন জারিজুরিতেই আর কাজ হবে না।
[Previously published in Shodalap Blog]
need to spread more and more !