দেশে অস্থিরতা-সহিংসতার বিস্তার রোধ করার অজুহাত তুলে, মিথ্যাচার ও বিদ্বেষ এর অভিযোগ এনে আমারদেশ, দিগন্ত টিভি, সোনার বাংলা এরকম অনেক মিডিয়া হাউসকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই। এদিকে আওয়ামী লীগের সরাসরি তত্বাবধানে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া ব্লগগুলিতে, আওয়ামী সমর্থনের নামে চলছে তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ। এটা শুধু ইসলাম বা মুসলিম ধর্ম বিদ্বেষ নয়, এটি মুসলিম নামধারী মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার মতো তীব্র বিদ্বেষ। লেখাগুলি দেখলেই বোঝা যায় এগুলি কোনো প্রাক্তন মুসলিম নাস্তিকের লেখা নয়। একজন নাস্তিকও নিজের পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজন, নিজ সমাজবাসীকে নিশ্চিহ্ন করার মতো বিদ্বেষ কখনোই ধারন করতে পারে না। এগুলি কেবল মাত্র অন্য ধর্মের তীব্র বিদ্বেষীদের পক্ষেই সম্ভব। আওয়ামী সমর্থকেরা, যারা অনেকেই ধর্ম পালন করার চেষ্টা করে, তারা দলীয় সমর্থনের নামে এই বিজাতীয় ধর্মবিদ্বেষকে দেখেও না দেখার ভান করছে কিংবা উৎসাহিত করছে। তাদের বিন্দুমাত্র হুশ নেই নেই স্বধর্মী অন্য রাজনীতির মানুষদের দমনের জন্যে নেকড়ে দের উৎসাহিত করার মাধ্যমে তারা নিজেরাই কতো ভয়ংকর পরিনতি কে আহবান করছে।
বাংলা ব্লগ জগতে ‘আমারব্লগ’ বেশ পরিচিতো। আওয়ামী লীগের সরাসরি তত্বাবধানে পরিচালিত এই ব্লগটিই হলো অমি পিয়াল, আইজুদ্দীন নামের ব্লগজগতের বড়ো বড়ো মহারথীদের লালনভূমি বলে পরিচিতো। এই ব্লগে বিএনপি, জামাত বিরোধিতা ও আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালানোর ফাকে ফাকে তীব্র ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া হয়। এটা এমনভাবে চলে যে সাধারন আওয়ামী সমর্থকেরা সাধারন রাজনৈতিক প্রচারণার ফাকে এই বিদ্বেষকে আলাদা করতে পারে না। এটা হলো Subliminal message এর উৎকৃষ্ট ব্যবহার। কিন্তু সময়ে, সময়ে কোনো কোনো সংবাদে এই বিধর্মী নেকড়েগুলি এতোই উল্লসিত হয়ে উঠে যে তারা তাদের নখদাতগুলি আড়াল করতে ভুলে যায় এবং এদের স্বরূপ বেড়িয়ে আসে।
সম্প্রতি আফ্রিকার এংগোলায় ইসলাম ও মসজিদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই নামে একটি বিতর্কিত সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সংবাদে ইসলাম বিরোধী মহলে তীব্র আনন্দল্লাস বয়ে যায় এবং একের পর এক ইসলামবিরোধী পোস্ট প্রকাশ করা হয়। আমারব্লগে বর্তমানে তীব্র বিএনপি বিরোধী ও আওয়ামী সমর্থক ব্লগারদের মধ্যে ঋতানৃত তূর্য্য নামের একজন আছেন। তার বিএনপি বিরোধী ব্লগার পরিচয়ের আড়ালে যে এক ভয়ংকর মুসলিম বিদ্বেষী, গনহত্যাকামী রয়েছে সেটা আর তিনি আড়াল রাখতে পারেন নি। সেদিনই “নিষিদ্ধ ইসলাম! এমনই হবার ছিলো…” (তারিখঃ সোমবার, ২৫/১১/২০১৩ – ২৩:৪৩) নামের একপোস্টে তিনি বাংলাদেশের ইসলাম ও মুসলিমদের স্পষ্ট হুমকি দিলেন বিশ্বজুড়ে গনহত্যার ভয় দেখিয়ে। তার নিজের কথাতেই,
” পৃথিবী থেকে মুসলমানদের নাম-নিশানা মুছে দেয়ার বহুবিধ কারণ আছে। আমি কেবল দু-তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করবো-
– মুসলমানেরা পৃথিবীকে কি দিয়েছে বা দিচ্ছে??
– এমনিতেই পৃথিবী জনসংখ্যার ভারে নূজ্ব্য তার উপরে মুসলমানেরা “মুখ দিয়াছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি” -মনে মনে জপতে জপতে বছর বছর সন্তান উৎপাদন করেন। যেনো বিয়া করা হৈছে সন্তান উৎপাদনের মেশিন হিসেবে! আর তা হবেই বা না কেনো। কোনো এক হাদীসে আছে, নবী বলেছেন- যে মেয়ের বংশ “বহুপ্রসবা” সে মেয়েবে বিয়া করতে; বংশে বন্ধ্যা থাকলে সেখানে বিয়া না করতে। এই বিপুল জনসংখ্যা পৃথিবীর বোঝাই শুধু বাড়াচ্ছে।
– পৃথিবীর খাদ্যভাণ্ডার ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। এমনকি প্রাকৃতিক সম্পদও। আর আল্লাও সেই পৃথিবী তৈরির সময় যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়েছিলেন সেটার আপডেট করেননি। ফলে যারা দুনিয়ার জন্য বোঝা তাদের আখিরাতে পাঠাবার ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এ দৌড়ে মুসলমানেরাই এগিয়ে। অবশ্য আফ্রিকার কয়েকটি দেশও ইনক্লুড হতে পারে।
সুতরাং আবারো বলছি, এখনো সময় আছে- ধর্মীয় ভাতৃত্ববোধ বজায় রাখুন। ষংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু টার্মগুলো মস্তিষ্ক থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন; আখেরে ভালো হবে। ভুলে যাবেন না- বাপেরও বাপ থাকে…”
এই বাপের বাপ বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন এই ব্লগার তা নিশ্চই না বোঝার কারন নেই। এই রকম স্পষ্ট গনহত্যাকামী, ধর্মবিদ্বেষী লেখা স্বত্বেও আমারব্লগের মতো আওয়ামী ব্লগগুলো কোন চিন্তা ছাড়াই চলে দিনের পর দিন। আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তীর্যক মন্তব্যের ভূয়া অভিযোগে খ্যাতনামা ব্লগারদের জামিন ছাড়াই জেলে আটকে রাখা হয় মাসের পর মাস। ভবিষৎ-এ আওয়ামী লীগের শাসনের বাংলাদেশ এর চিত্র কল্পনা করতে এই ইংগিতগুলিই যথেষ্ট।
এখানে সেই ব্লগপোস্ট টির লিংক দেয়া হলো। সেই সাথে মুছে ফেলার আগেই রেকর্ডের জন্যে দুটি স্ক্রীনশট।