ক্লাস টেনের এক ক্লাস রুম। প্রতিদিন সকালে কেউ এসে ক্লাসের সবার চোখে পড়ে এমন একটা জায়গায় মেথামফেটামিন (য়াবা) রেখে যায়। প্রথম কিছুদিন কেউ ছুঁয়ে না দেখলেও শেষ পর্যন্ত কয়েকজন ধরেই ফেলে ড্রাগটা। মনে রাখবেন – সবাই না, কয়েকজন।
এই এডিকশানের জন্য দোষী কে?
এই প্রশ্নের উত্তর একেকজন একেকভাবে দেবে। যে সব ছাত্র য়াবা খাওয়া শুরু করলো না তারা বলবে কৈ আমরা তো খাই নি; যারা খেয়েছে তারাই দোষী। যারা খাওয়া শুরু করলো তারা বলবে এখানে না রাখা হলে আমরা য়াবা খেতাম না। আওয়ামী লীগ বলবে এটা এইট পাশ খালেদার কাজ আর বিএনপি বলবে আওয়ামী লীগের আমলে সামান্য ক্লাসরুমও য়াবার থাবা থেকে রক্ষা পায় নাই। বাম-পন্থীরা সারা পৃথিবীর দোষ খুঁজে পাবে শুধুমাত্র ক্লাসরুমের ছেলেপুলে ছাড়া। সুশীলরা বলবে কি এক সময় আসলো যে বাচ্চারা রবীন্দ্রনাথ না পড়ে য়াবায় পড়ে থাকে – এজন্যেই কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? আর ইসলামিস্টদের ব্যাখ্যা বরাবরই খুব সহজ – মুসলমানের ঈমান কমজোড় হয়ে গেলেই সব আপদ।
আমি আইডিয়ালিস্ট নই, হার্ডকোর রিয়ালিস্ট। আমার ব্যাখ্যা সাদাসিধা । যারা য়াবা খাওয়া শুরু করলো, তারা ক্লাসে য়াবা না পেলেও কোনো না কোনো দিন হয় তো শুরু করতো কিন্তু “আমি যদি পাখি হতাম” লাইনের যুক্তিতর্কে আমার রুচি নেই। বাস্তবতা হোলো বাচ্চা বাচ্চা দশটা ছেলের হাতের নাগালে ড্রাগ রাখলে সবাই হয়তো খাবে না কিন্তু কয়েকজন খাবেই খাবে – এর অন্যথা হবে না। এটা আপনি আটকাতে পারবেন না। কাজেই দোষী সে যে ড্রাগটা ওখানে রাখে প্রতিদিন। পাগলকে সাঁকোর মাঝখানে যে মনে করিয়ে দেয় পাগল ভালো হয়ে গেছে – দোষটা তার, পাগলের না।
আমি বলছি না যে আমার দৃষ্টিভঙ্গিই একমাত্র সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। আপনি যদি এ সমস্যা নিয়ে কবিতা লিখতে চান তাহলে, হয়তো বামপন্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি কাজে দেবে। যদি ফেসবুকে লাইক চান, সম্ভবত সুশীলদের দৃষ্টিভঙ্গি কাজে দেবে। কিন্তু আপনি যদি সমস্যার সমাধান করতে চান তাহলে একমাত্র আমার দৃষ্টিভঙ্গিই কাজে দেবে। হ্যা, কেবলমাত্র রিয়ালিস্টরাই যে কোনো সামাজিক সমস্যার টেকসই সমাধান দিতে পারে। আইডিয়ালিস্টরা সমস্যাকে ঘনীভূত করে।
আজকে বাংলাদেশের সমস্যা জটিল। আপনি নানানভাবে আপনার সুবিধামতোন এর ব্যাখ্যা করতে পারেন। বিজ্ঞানীদের এর চেয়েও জটিলতর সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় হর-হামেশা (তবে সে সব সমস্যার কারণে মানুষ মরে না)। তারা সফল হন খুব বেশি কারণ তারা অসম্ভব জটিল সমস্যার সরলতম ন্যারেটিভ বের করতে পারেন – মানে ঐ “মোদ্দা কথায়” যেতে পারেন তাড়াতাড়ি। ছোটো মানুষেরা ফালতু আলাপে দিনভর থাকেন পেরেশান। মতিকন্ঠ করে, অপছন্দের মানুষটিকে খুবই ক্রিয়েটিভ, মনপসন্দ গালি দিয়ে আপনার পিংপং বল সাইজের ইগোটা একটু ফুলে টেনিস বল হয়ে উঠতে পারে বৈকি কিন্তু তাতে সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।
আজকের বাংলাদেশী রাজনীতির স্টেল মেটের “মোদ্দা কথাটা” তাহলে কী?
বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে খুব ভালোবাসে এবং এই কাজটার মাঝেই তাদের নাগরিক কর্তব্য সম্পন্ন করতে চায়। গণতন্ত্রের একমাত্র বিষয় ভোট না, কিন্তু প্রথম বিষয় ভোট। কাজেই জনগণের এই স্বপ্নটা ন্যায্য (তাদের আরোও অনেক স্বপ্ন দেখার কথা ছিলো, যেটা তারা দেখে না)। সমস্যা হোলো খালেদা কিংবা হাসিনা কিংবা তাদের দল ভোটগ্রহণের কাজটা নিরপেক্ষভাবে করবে এটা কেউ বিশ্বাস করে না – এবং ন্যায্য কারণেই করে না। কিন্তু হাসিনার খুব সাধ ২০২১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার। এই সাধ হওয়াটা দোষের না কিন্তু তিনি চান খালি মাঠে গোল দিতে। মানে হয় একাই নির্বাচন করে জিতবেন, নয়তো ভোটে ইয়ে করে জিতবেন। সেজন্য তিনি সংবিধানটাকে দেবব্রত চাকীর অঙ্কের নোটবই বানিয়েছেন (এই নোটবই নাকি ছয়ের দশক থেকে আছে, আমাদের সময়েও ছিলো, চাকী সাহেব মরে ভূত, সিলেবাস বদলেছে সতেরবার কিন্তু “দেবব্রত চাকী নোটবই” টিকে ছিলো – আছে হয়তো এখনো)।
বাস্তবতা হোলো আপনি যখনই বাংলাদেশে এলেকশান নিয়ে চাতুরীর আশ্রয় নেবেন, টালবাহানা করবেন; আন্দোলন হবে, মানুষ মরবে। এটা রিয়ালিটি। শেখ হাসিনা ঠিক এই কাজটা করেছেন এবং করছেন। এটা সত্য এবং তা অস্বীকারের উপায় নেই। দায়ের কথা বলার, বিচার করার সময় পড়ে আছে। এখন দরকার এই মানুষ মারার রাজনীতি বন্ধ করা।
এখান থেকে বেরিয়ে আসার কেবল একটিই উপায় আছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। কারণ হাসিনা বা খালেদার আন্ডারে কোনো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। তার চেয়েও সত্য কথা: হাসিনা পদত্যাগ না করলে হত্যার রাজনীতি বন্ধ তো হবেই না – সম্ভবত আমরা এমন একটা phase এ ঢুকে যাবো যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে এক প্রজন্ম ব্যয় হয়ে যেতে পারে – য়েস ইট ইজ দ্যাট সিরিয়াস।
………………………………….
বাংলাদেশের এক নাম করা ইংরেজি কলামিস্টের সাথে আলোচনায় টিপিকাল সুশীল মানসিকতার পরিচয় পেলাম – এটা আলোচনা করা দরকার। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তার মত হোলো Why doesn’t the two hire a place and fight it out and leave us alone. এটা কোনো ছাগু বা চেতনাইজড লো লাইফের কথা না, সার্টিফায়েড এল্ডার সুশীলের কথা। ফেসবুকেও এই লাইনের হাজার হাজার মানুষ আছে। তোমারা লীগ, বিএনপি মারপিট করো – আমাদেরকে দু দণ্ড শান্তি দাও।
এই খোকাবাবুরা মনে করেন যে বিএনপি-লীগ তাদের থেকে আলাদা কোনো এক স্ফেয়ারে ফাংশান করে। তারা নিজেরা মারপিট করলে করুক – আমাদের বাউন্ডারীর মধ্যে না ঢুকলেই হোলো। এই ভদ্রলোকের ইতিহাসের ওপর যথেষ্ট কাজ থাকা সত্ত্বেও এতোটুকু জানেন না যে পীস টাইম কোনো “রিয়ালিটি” না, কন্ডিশান। শান্তি ওহী মারফৎ নাজিল হয় না। এর জন্য নাগরিকদের তার দায় শোধ করতে হয়। যখন হাসিনার মাঝে বাংলাদেশের সংবিধান, জুডিশিয়ারি, নির্বাহী বিভাগ সব ফানা ফি হাসিনা হয়ে যাচ্ছিলো তখন “ইয়া হাসিনা ইয় লীগ” বলে জিকির করে এখন যদি আশা করেন হুট করে সব সুন্দর হয়ে যাবে তাহলে দুঃখিত: জিকিরের আগে একটু ভালো মন্দ কিছু খেতেও হবে।
এই দেশটা শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়ার কোনো সম্পত্তি না – এই কথাটা সবাই বিশ্বাস করে কিন্তু যা বিশ্বাস করে না তা হলো – এই দেশটা আমার, আমি ওন করি এবং আমার দায় আছে পরবর্তী প্রজন্মকে একটা বাসযোগ্য দেশ উপহার দেয়ার। তাই আমাদের সবার দায় আছে এটা নিশ্চিত করার যে কোনো মানুষই যেন এই দেশটাকে তার ইচ্ছার পুতুল বানিয়ে না ফেলে। বিএনপি, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রিয়ালিটি – আপনার কাজ শুধু ভোট দেয়া না, এই দুটো দলে যেন কখনোই কোনো হাসিনা কেউ হয়ে উঠতে না পারে, সেদিকে নিশ্চিত না করলে নিশ্চিত থাকুন: আপনি আপনার নিজের শান্তিটুকু খোয়াবেন। আপনি জিজ্ঞেস করুন নিজেকে সততার সাথে – আপনার সন্তান যদি কখনো প্রশ্ন করে, সে উত্তর দিতে যতোটুকু সততা লাগে ততোটুকু সততার সাথে, দেশটাকে যখন হাসিনা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তার খেলনা ঘর বানিয়ে ফেলছিলেন আপনি কি আপনার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন তাকে থামাতে?
Reblogged this on Emrul Mahmud.
” শান্তি ওহী মারফৎ নাজিল হয় না।” – কথাটা পছন্দ হয়েছে। ধন্যবাদ।
Out of 160 million population about 100 so called political leader of leading parties with their few thousands activist playing with the fate of the nation only for their own benifit in the name of Muktijudher Cetona, zudhaporadhi becarer dohai shadhinata rokhar dohai etc.They underscored our Intelligence Thought Attitude.we want to get rid of these bullsheet leadership.We want to breathe freely.I appreciate your article and explanation.thnx.