মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বৈরতন্ত্রের নকশা এবং আপনার মানসিক সুস্থতার পরীক্ষা

1

A police officer on a street in Dhaka1031100_472316

By Nur Hossain

ছবিগুলো  ভালো করে দেখুন। স্বাধীন দেশটির এরকম রূপ দেখতে কেমন লাগছে? বুকের মধ্যে একটুও কি কষ্ট হচ্ছেনা?যদি না হয় তাহলে এই লেখা আপনের জন্যই লিখছি।

দিন বদলের কথা দিয়েছিলো আওয়ামিলীগ। ঢাকায় বসে যখন একথা লিখছি, তখন উপলব্ধি করলাম আসলেই তো। দিন বদলে দিয়েছে আওয়ামিলীগ। এতো মৃত্যু, এতো কান্না,এতো রক্ত, এতো আগুন আমার ২৫ বছরের জীবনদশায় আগে কখনো দেখিনি। আজকাল ঘর থেকে বের হবার সময় মনে হয় আর কি ফিরে আসতে পারব? আর কি দেখতে পাবো আমার মায়ের এবং বাবার প্রিয় মুখটা?এখন চারিদিকে মানুষের মধ্যে একটা শংকা,তাদের দু-চোখে ধিকিধিকি জ্বলছে চাপা ক্রোধের আগুন। প্রিয় দেশটাকে হারানোরক্রোধ। আসলে দেশটা তো হারিয়েই গিয়েছে।

কিন্তু কিভাবে আমার দেশটা হারালো? মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্মাদনায়। এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আওয়ামীলিগ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে স্বৈরতন্ত্র চালু করার জন্য। এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আওয়ামীলিগ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে লুটতরাজ করার জন্য। এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আওয়ামীলিগ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে গণমাধ্যমের কন্ঠকে বন্ধ করার জন্য। এই চেতনাকে ঢাল হিসেবে আওয়ামিলিগ ব্যবহার করেছে বিচার-ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ এবং পুলিশ প্রশাসনকে দলীয় অঙ্গসংগঠনে রূপান্তর করার যুক্তি হিসেবে।

চেতনার কথা বলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে প্রতিবাদী মানবাধিকার সংঘটনগুলোর মুখ। এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এখন মহা সমারোহে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালে তালে চলছে একদলিয় সরকার গঠনের পায়তারা। হয়ত, দেশের ৯০% মানুষের মতকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে, সারি সারি লাশের উপর হেটে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ঢাল এবং ঢাক জোরেশোর বাজিয়ে গায়ের জোরে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করেই ফেলবে। কিন্তু বাংলাদেশটা হারিয়েই যাচ্ছে। এই হারানো আর কেউ ঠেকাতে পারবেনা। যারা সবচেয়ে দরকারী ভূমিকা রাখতে পারতো সেই সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষিত তরুণরা ও আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্মাদনায় পাগলপ্রায় হয়ে পরেছে। স্বাভাবিক বিচার-বুদ্ধি লোপ পাওয়ার যোগাড়। এদের মধ্যে কিছু আছে অবস্য পেইড এজেন্ট। এদের কাজ হচ্ছে ‘নিরপেক্ষ’ থাকা। এবং এই নিরপেক্ষতার তকমা এটে দিনের পর দিন সংবাদপত্রে, ব্লগে, টিভিতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম আওয়ামীলীগের অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারকে সাপোর্ট করা। সাধারণ ছেলে-পেলে যারা চেতনার উন্মাদনায় পাগল এরা এইসব পেইড এজেন্টদের বিষাক্ত বাণীতে দুষিত হতে হতে স্বৈরাচারের আন-পেইড এজেন্ট -এ রুপান্তরিত হয়েছে।

এখন স্বাধীনতার চেতনা মানে শুধুই বিরোধীদল দমন করা ও গুলি করে হত্যা করা । এক কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এখন পলিটিক্যাল এসাসিনেশনের আরেক নাম। আওয়ামীলিগ জানে যে দলীয় সরকারের অধীনে বিরোধী দল নির্বাচন মেনে নিবেনা। জেনে শুনে দলটি দেশকে ঠেলে দিলো আগুনের মধ্যে। শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রানী শেখহাসিনার গদি আগলে রাখার জন্য। মুক্তিযুদ্ধ ছিল স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আর আওয়ামীলিগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবহার করছে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঢাল হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের  চেতনাকে দলটি ব্যবহার করেছে মুক্তিযুদ্ধের সাথে বেইমানি করার জন্য।

দেশটা স্বাধীন হয়েছিলো কি এইজন্য? ইতিহাস পড়লে জানা যাবে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আশায়। আসুন গত পাঁচ বছরে স্বাধীনতায় উজ্জেবিত সরকার আমাদের দেশে কি করেছে তা দেখে নেই।

স্বাধীন রাষ্ট্রে গত পাচ বছরের সমাজ,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকজীবনের বাস্তব চিত্র:

ইচ্ছেমত যখন খুশি গুম করা হচ্ছে বাংলাদেশের নাগরিকদের। একটা স্বাধীন দেশে ট্রেন সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম, প্রতিদিন দূর-দুরান্তের হাঠে-মাঠে এবং ঘাটে মরছে দেশের তরুনরা। মারছে ও তরুনরা। বাসে আগুন দেয়া হচ্ছে, পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দেয়া হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় চাকুরীদানকারী ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত -গার্মেন্ট শিল্পে আজ নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা। প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় নেমে আসে শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরির দায়ে। গার্মেন্ট মালিকেরা রাস্তায় নেমে আসছেন নিরাপদে ব্যবসার সুযোগ চাইতে। একরাতের নোটিসে দেশের সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হলো।মধ্যবিত্ত বিনিয়োগ কারীদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হলো শেয়ার বাজার থেকে। রাতের অন্ধকারে দূর-দুরান্ত থেকে আগত রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুবিধা-বঞ্চিত, নিম্নবিত্ত লক্ষ লক্ষ ধর্ম প্রাণ তরুনদের কুকুরের মতো মেরে ধরে রাজধানী থেকে খেদিয়ে দেয়া হলো। রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক গুলো থেকে কোটি কোটি টাকা চুরি করা হলো। কোটি লোকের জীবনের এবং ব্যবসার সুবিধা হতো যে সেতুটি হলে, নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে সে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দেয়া হলো। একটা স্বাধীন দেশের গর্ব হচ্ছে তার সেনাবাহিনী। সেই সেনাবাহিনীর ৫২ জন সেনাকর্মকর্তাকে নির্মমভাবে এবং অত্যন্ত অপমানজনক ভাবে খুন করা হলো। তাদের হত্যার বিচারের নামে করা হলো নাটক।

শেষ কথা
একটা দেশের সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব থাকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়া। আর সরকার ম্যানেজ করার দায়িত্বে থাকে একটি দল। গত পাঁচ বছর ধরে আওয়ামীলিগ সরকারের প্রতেকটি সংস্থা ব্যবহার করেছে বিরোধী দল দমনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে। এর ফলে এখন শুরু হয়েছে চোরা-গুপ্তা হামলা। এ হামলা কে করছে তা কেউই বলতে পারছেনা। এটা বিরোধীদল ও করতে পারে, সরকারী দলও করতে পারে বিরোধীদলকে স্যাবোটাজ করার জন্য। মাঝখানে পুড়ছে মানুষ, বাড়ি-ঘর আর কোটি মানুষের মন। একটু খেয়াল করেন, আপনেরও কি এতে ইন্ধন ছিলোনা? আপনি ও কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্মাদনায় পাগল হননি? পাগলের মতো আওয়ামীলীগের প্রত্যেকটি অনৈতিক কাজকে সাপোর্ট করেননি? এখন যখন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি তার সন্তানদের রক্তে লাল হচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশের বাতাসে শুধু শোনা যায় স্বজন হারার আর্তনাদ, আপনার কেমন লাগছে? আপনি কি এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেছিলেন? যদি করে থাকেন তাহলে জেনে নিন আপনি একজন মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ, আপনের পছন্দের দলটির নেতৃত্বের মতই। যিনি সারা বাংলাদেশে আগুন জ্বালিয়ে, ইতিহাসের জঘন্যতম সংবিধান ক্যু করে প্রতিদিন গণতন্ত্রের এবং সংবিধানের জিকির তুলতে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অশ্লীল চিন্তায় পাগল হয়ে গিয়েছেন।

One thought on “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বৈরতন্ত্রের নকশা এবং আপনার মানসিক সুস্থতার পরীক্ষা

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s