পটভূমি
এদেশের মানুষ প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ভাবে গণতন্ত্রের চর্চা করে প্রতি ৫ বছর পর পর একবার। এই পাঁচ বছর পরে একটি দিন মানুষ সত্যিকারভাবেই ক্ষমতার মালিক হয় । এবারকার ভোট পদ্ধতি নিয়ে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৯০- ভাগ মানুষ চায় তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। অথচ এই একটি দিনের জন্যও শেখ হাসিনা জনগনকে বিশ্বাস করছেনা। যদিও তিনি জনগনের প্রধান মন্ত্রী। তার মানে হচ্ছে শেখহাসিনার ক্ষমতার উত্স আর জনগণ নয়। তার ক্ষমতার মূল হচ্ছে ভারত। এর মানে কি দাড়ালো? নিজ দেশেই এদেশের জনগণ পরাধীন।কারণ তার গণতান্ত্রিক ভোটাধিকারের প্রক্রিয়া ঠিক করে দেয় আরেক দেশ।
ভারতীয় চেতনানাশক মাদক ‘স্বাধীনতার চেতনা’
ভারত চায় যে কোনো মূল্যে শেখহাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে। এর ফলে ভারতের অর্থনৈতিক লাভ অনেক। আর আওয়ামীলীগের লাভ হচ্ছে দেশের সবথেকে বড় প্রতিবেশী ভারতের ছত্রছায়ায় তার শত্রুপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করা।এই লক্ষ্যে এখন মনে হচ্ছে ভারত এবং আওয়ামিলিগ কাজ করছে গত কয়েক বছর ধরে।এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় চলেছে সংবিধানে তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা যদিও এ ব্যাপারে আওয়ামিলিগ জনগনের কাছ থেকে ম্যান্ডেট নেয় নাই। অর্থাৎ তারা নির্বাচনের আগে তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে এ ব্যাপারটি রাখেনি। একারণে আমরা একে সংবিধান-ক্যু বলতেই পারি।
এ ব্যাপারটি থেকে জনগনের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার জন্য তৈরী করা হলো নাটক। নাটকের নাম শাহবাগ। মঞ্চের অভিনেতাদের মধ্যে আছেন এসময়ের তুমুল জনপ্রিয় কিছু শিক্ষক, সংস্কৃতি কর্মী-যাদের মধ্যে বলা হয় বেশ কয়েকজন ভারতীয় এজেন্ট। অবশ্য কোনো প্রমান নেই। উনারা গানের তালে তালে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিলেন এবং স্বাধীনতার ফেন্সি চেতনার নামে তরুণ সমাজকে গৃহযুদ্ধের ফর্মুলা ধরিয়ে দিলেন। টিভিতে, পত্রিকায়, ব্লগে সব জায়গায় দেখা যায় স্বাধীনতার চেতনা। আসলে এটা চেতনানাশক চেতনা। নাহলে যখন দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় দিনের পর দিন লোক মরছে , ব্যবসা-বানিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম, স্কুল কলেজ বন্ধ, তখনও চেতনা-নাশক ড্রাগে তরুণ সমাজ ঘুমিয়ে! স্বাধীনতার চেতনা নিশ্চয় ছিলোনা দেশকে মোটামুটি বসবাসের অযোগ্য করে তোলা?১৯৭১ ছিলো দেশ গড়ার যুদ্ধ আর ২০১৩র কথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙ্গা হচ্ছে দেশ। এর কারণ ভারত চায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষতি। লাভ ভারতের। সংকীর্ণ দলীয় চিন্তায় আওয়ামিলীগ ও আটকে পড়েছে ভারতীয় জালে।
চেতনার মাদকের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা ও আমাদের গার্মেন্ট শিল্পের ভয়াবহ সংকট
ভারত কেনো আওয়ামীলীগকে একতরফা সাহায্য করছে?দুই কারণে।অর্থনৈতিক সুবিধা এবং নিজ দেশের নিরাপত্তা রক্ষায়। প্রথিতজশা চিন্তাবিদ বদরুদ্দিন উমর বলেছেন,’হাসিনা সরকারের একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে মদত জুগিয়ে ভারত আর সাম্রাজ্যবাদী চেহারা উন্মোচন করেছে।’ বদরুদ্দিন উমরের দাবি গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামীলিগ সরকার রাষ্ট্রের স্বার্থের বাইরে যায় এমন অনেক চুক্তি করেছে। সেটা তো আছেই। এছাড়াও আওয়ামী সরকারের ঘাড়ে বসে ভারত বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের চূড়ান্ত নকশায় মেতে উঠেছে। ব্যাপারটা এখন এমন মনে হচ্ছে- আওয়ামীলীগ ধংস করবে তার বিরোধী পক্ষ আর ভারত ধংস করবে বাংলাদেশ। একটা উদাহরণ হচ্ছে – এদেশের গার্মেন্ট শিল্প।
গত ২৬নভেম্বরে নয়াদিগন্তের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরী এবং নাশকতার পিছনে ভারতীয় ইন্ধন আছে। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাতে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার বিদেশী কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে ২০ হাজারই ভারতীয়। একেক কারখানায় ১০ থেকে ২০ জন ভারতীয় মিলে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ নয়া দিগন্তকে বলেন, “কারখানাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা এসব কর্মকর্তা এতটাই ক্ষমতাশালী যে, অনেক সময় স্বল্পশিক্ষিত মালিকদের তারাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। কৌশলে তারাই শ্রমিকদের সাথে মালিকদের সম্পর্ক তিক্ত করেন।” নয়াদিগন্তের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত আট থেকে ১০ বছরে যেসব কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল কমপ্লায়েন্ট। এসব কারখানায় কর্মপরিবেশ ভালো, নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়া হয়, ওভার টাইম দেয়া হয়, টিফিন থেকে শুরু করে বেশির ভাগ যুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেই এসব কারখানার শ্রমিকেরা সন্তুষ্ট। অথচ কখনো রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যুর অজুহাতে, কখনো শ্রমিক গুম কিংবা টয়লেটে ভূত থাকার মতো গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করানো হচ্ছে এসব কারখানায়। কার লাভ হচ্ছে এসব করে?
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ালস্ট্রিটজার্নাল পত্রিকায় প্রকাশিত গত ২২ মার্চের প্রতিবেদনে দেখা যায় ‘স্বাধীনতার চেতনা’ সংক্রান্ত রাজনৈতিক গন্ডগোলের কারণে বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্ডার সরিয়ে ভারতে দিয়েছে।গত ৫ ডিসেম্বরের ভারতের ইকনমিক টাইমস পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয় বাংলাদেশে রাজনৈতিক গন্ডগোলের কারণে ভারতের পোশাকরপ্তানী খাতের রপ্তানী প্রায় ১৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে দৈনিক প্রথম-আলোতে যাকে অনেকে গালি দেন ‘ভারতের -আলো’ নামে এসংক্রান্ত কোনো রিপোর্ট নেই।
চেতনার মাদকের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ভারতীয়রা অভিযোগ করে ভারতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পরে গতবারের বিএনপি -জামাত সরকারের আমলে। তাদের মতে পাকিস্তান ভারতকে বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করেছিল ভারতে সন্ত্রাসবাদ রপ্তানিতে। আর আওয়ামিলীগ অভিযোগ করে বিএনপি-জামাতের একটিঅংশ হয়তো সরকারের অগোচরে পাকিস্তানের সয়াহতায় ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মত ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটিয়ে ছিলো। এ অভিযোগের সত্যতা এখনো প্রমান হয়নি। অনেকে বলে এটা একটা অজুহাত।
দেখা যাচ্ছে আওয়ামিলীগ এবং ভারতের সখ্যতার মূল ভিত্তি হচ্ছে শত্রু নিধন। অর্থাৎ নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি এবং অর্থনৈতিক ইন্টারেস্ট-এ এরা দুজনে দুজনার। আওয়ামিলীগ মারবে বিএনপি-জামাতকে, পাকিস্তানকে মারবে ভারত আবার বাংলাদেশকেও মারবে ভারত। এই আত্মঘাতী বন্ধনে আটকা পরেছে বাংলাদেশ।সমস্যাটা হচ্ছে এরা দেশটার জনগনের জান-মালের তোয়াক্কা করছেনা। স্বাধীনতার (পরাধীনতার) চেতনায় একটা তাবেদার সরকার দেশের কোনো তোয়াক্কা না করে, ভারতের বুদ্ধিতে নিজের দেশ ধংসের খেলায় মেতে উঠেছে, একের পর এক দেশ বিরোধী চুক্তি করছে, রাজনৈতিক স্থবিরতায় দেশকে অচল করে দিয়েছে, তার শত্রুকে ধ্বংশ করার জন্য।আরেদিক বাংলাদেশে পরম শক্তিশালী ভারতীয়রা দেশের গার্মেন্ট শিল্পের ধংসের নীলনকশায় মেতে উঠেছে।
শেষ কথা
এর মানে কি এই যে আপনি ৭১এর মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চাবেননা? অবশ্যই চাবেন, কিন্তু এর মানে এই না যে আপনি অন্যায়কে প্রশ্ন করবেননা? এর মানে এই না যে আপনি দুর্নীতিকে প্রশ্ন করবেননা? শ্রমিকের নায্য মজুরি নিয়ে প্রশ্ন তুলবেননা? রাষ্ট্রীয় কাঠামো ব্যবহার করে দলীয় সন্ত্রাস নিয়ে প্রশ্ন তুলবেননা? স্বাধীনতার চেতনা কি ছিল বাংলাদেশে ভারতকে একছত্র আধিপত্য দেয়া? এখনো সময় আছে স্বাধীনতার চেতনার মাদককে না বলুন। বাংলাদেশের পক্ষে দাড়ান দল-মত নির্বিশেষে।ভারতীয়দের দেখেননা তারা কতো দেশপ্রেমিক। আর আমরা? দলপ্রেমিক।দলের জন্য দেশটাকে বিসর্জন দিতে রাজি আছি। ভারতীয় মদদে তৈরী চেতনা নাশক স্বাধীনতার বিষাক্ত চেতনার বড়ি গিলে সত্যিকারের স্বাধীনতাটাকে বিকিয়ে দিচ্ছি। যে আবেগটা নিয়ে শাহবাগে গিয়েছিলেন সেই আবেগটা নিয়ে দেশটাকে বাঁচান। প্লীজ। গর্জে উঠে বলুন দেশটা পাকিস্তানকে দেই নাই, ভারতকেও দেবোনা।