উইকেটাধিকার চাই

বাংলাদেশে গত কয়েকদিনের পত্রিকায় রাজনৈতিক সংঘাতে নিহতদের সংখ্যা দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন হিসাব মতে গত এক বছরে হেফাজতের আন্দোলনে নিহতদের ছাড়াই প্রায় দুইশতাধিক মানুষ রাজনৈতিক সংঘাতে মারা গেছে।

এত এত মানুষ একদিনে মারা যান নি। এই বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে থকে শুরু হয়েছে এই সংঘাত, আর পরিণতিতে মৃত্যুর ঘটনা। এই মানুষদের যদি যদি একটা এদের মৃত্যুর কারণসহ তালিকা করা হয় তাহলে সেই তালিকায় সবচেয়ে বেশি থাকবে কোনটা জানেন? পুলিশের গুলিতে মৃত্যু।

এই একমাসে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে বগুড়ার ইউসুফ; সিরাজগঞ্জের সাকমান; কুমিল্লার দেলোয়ার, বাবুল; ফরিদপুরের মারুফ; কক্সবাজারের বাদশা, মিজান; চাঁদপুরের আরিফ, সিয়াম, রতন, তাজুল ইসলাম; নাটোরের সুজন; ফেনীর মফিজুর; চট্টগ্রামের শরিফুল ইসলাম; সাতক্ষীরার হোসেন আলী, আরিজুল ইসলাম, শামছুর রহমানসহ আরও অন্তত দশ থেকে বারোজন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে আমরা একজন মনির কিংবা গীতা সরকারের কথা জানি। আমরা জানি নাহিদ-বাবুসহ রহস্যজনক আগুনে নিহত দশ থেকে বারোজনের কথা। তাদের কাদের কি অবস্থা, তার প্রতিটা খবর এদেশের “রাজনীতি সচেতন” কথিত সুশিল সমাজ রাখেন। তাদের সব আপডেট জানার জন্যে টিভির সামনে বসে থাকে সুশিল হওয়ার চেষ্টারত আমাদের মধ্যবিত্তরাও। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি তাদের কেউই গত এক মাসে পুলিশের গুলিতে নিহতদের একজনের নামও জানেন না। বলতেও পারবেন না। অথচ পুলিশের গুলিতে নিহতের সংখ্যা নাশকতায় নিহতদের দ্বিগুন থেকে তিনগুন।

কারণটা খুব সহজ। আমাদের মিডিয়া এদের ব্যাপারে নীরবতা পালন করে। বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মী মারা গেলে সে আর তখন মানুষ থাকে না তাদের কাছে, তারা পরিণত হয় একেকটি উইকেটে । একজন রাজনৈতিক কর্মী মারা যাওয়া মানে একজন মানুষের মৃত্যু না, একটা উইকেটের পতন। এই ‘উইকেটগুলোর’ কোন মূল্য আমাদের মূলধারার মিডিয়ার নেই। এই উইকেটগুলোর যে বাবা-মা আছে, এদেরও যে স্ত্রী-সন্তান আছে, এরা মারা যাওয়ার পর তাদের পরিবার কি অবস্থায় আছে, এদের সন্তানরাও যে মৃত্যুর পর হাউমাউ করে কাঁদে, এদের পরিবারও যে এদের মৃত্যুর পর অভাবে-অনটনে দিন কাঁটাচ্ছে- তা মূলধারার মিডিয়ার মাথাব্যাথার কারণ নয়।

এক অন্তঃসত্ত্বা গার্মেন্টসকর্মী বাসায় চুলার আগুনে পুড়ে রসিয়ে রসিয়ে মিথ্যা গল্প বানিয়ে বললেও তার জন্যে পত্রিকার প্রথম পাতার দুই কলাম বরাদ্দ রাখা হয়, কিন্তু বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মীর বুক পুলিশের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেলেও তার জন্যে বরাদ্দ থাকে পত্রিকার এক লাইন। উলটো বুক ঝাঁজরা হওয়ার খবর অনলাইন ভার্সনে থাকলেও সকালের মূল পত্রিকায় তা গায়েব হয়ে যায়। এই নিহতদের কোন স্বজনের আহাজারির ছবি পত্রিকায় আসে না, চ্যানেলগুলো প্রচার করে না।

পুলিশের গুলিতে বুক ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া সিয়াম এবং মাথায় গুলি লাগা রতন

পুলিশের গুলিতে বুক ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া সিয়াম এবং মাথায় গুলি লাগা রতন

এই উইকেটগুলোরও যে কিছু অধিকার আছে, তা আমাদের মিডিয়াকর্মী বা সুশীল সমাজ চেপে যায়। এরা হচ্ছে তাদের কাছে নিছকই বলির পাঁঠা। বাকি সবাই মানুষ। আর তারা তো অতি উচ্চশ্রেণীর মানুষ।

পতিত স্বৈরশাসক এরশাদ জীবনে হাজার হাজার মিথ্যা কথা বললেও গতকাল একটা সত্য কথা বলেছেন

আওয়ামী লীগ যখন মারে, তখন নীরবতা দেখি। কারণ, বেশির ভাগ কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী আওয়ামী লীগের দিকে। তাই তাঁরা কবিতা লেখেন না। দুঃখ পান না।

যেমন, বিপরীত ধারার কেউ অন্যায় করলে বের হয় মোহাব্বত আলীর একদিন, নিজ ধারার কেউ অন্যায় করলে লেখা হয় এই লজ্জা কোথায় রাখি

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s