এবারের সংগ্রাম ‘অস্তিত্বরক্ষার’ সংগ্রাম

সাদাতসহ আরো অনেকেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন। আমি নিজেও মনে করি এই টার্মের আগে সারাজীবন ধরে চেতনাব্যবসায়ী লীগের বিরুদ্ধে ভারততোষণের যে অভিযোগ আরোপ করা হত সেটাকে অনেকেই ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসেবেই নিত। মানুষ মনে করত লীগ ভারতঘেঁষা একটা গোষ্ঠি। কিন্তু এবারের টার্মে ভারততোষণ, চাটুকারিতা ও সেবাদাসত্বের যে নজির তারা স্থাপন করেছে ইতিপূর্বে তা দেখা যায়নি, কল্পনার সীমাকে তারা অতিক্রম করেছে এ ব্যাপারে। দেশীয় স্বার্থকে সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিয়ে একের পর এক যেসব পদক্ষেপ তারা নিয়েছে তাতে মনে হয় বিরাট কোন সাম্রাজ্যবাদি চক্রান্তের ঔপনিবেশিক সেবাদাস হিসেবে তারা দেশ ও জাতির সর্বনাশ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ‘৪৭ এ রাজনৈতিকভাবে ভাগ হওয়া অখন্ড পাকিস্তানের এক অংশ পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বিভিন্ন বৈষম্যমূলক শোষণের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে _ ক্রমান্বয়ে যার পরিণতিতে অবশেষে ‘৭১ এর রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালিদের এক সাগর রক্ত ও সীমাহীন ত্যাগতীতিক্ষার বিনিময়ে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটান। সেই যুদ্ধে ভারত আমাদের জন্যে অনেক কিছু করেছে, প্রায় কোটির কাছাকাছি শরনার্থীকে আশ্রয় দেয়া থেকে শুরু করে সামরিক সাহায্য-সহযোগিতা পর্যন্ত। রাজনৈতিক কারণেও বটে, তাদের কাছে যুদ্ধটা ছিল আসলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, পাকিস্তান ছিল এবং আজও ভারতের আজন্ম শত্রু।

এরপর থেকে যা শুরু হয় তা ভারতের আগ্রাসনের ধারাবাহিকতা। বিপুল পরিমাণ অস্ত্র যা পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের সময় রেখে যায় তা ন্যায্যতঃ বাংলাদেশের প্রাপ্য হলেও বাংলাদেশকে তা দেয়া হয়নি। প্রায় সমুদয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসম্ভার ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজের কব্জায় নিয়ে নেয়। স্বাধীনতা পরবর্তী আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তিসমূহের মধ্যে একটি শর্ত ছিল এই যে _ ‘বাংলাদেশের কোন ‘বর্ডার গার্ড’ বা সীমান্ত রক্ষীবাহিনী থাকতে পারবে না।’

১৯৭১ সালে যে সব শর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সামরিক সাহায্য দেয়, তার অন্যতম শর্ত ছিল “Frontier Guards will be disbanded” (CIA Report SC 7941/71). অর্থাৎ বাংলাদেশের কোনো বর্ডার গার্ড থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পরে নানা কারনে পাকিস্তান রাইফেলস বালাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) রূপ নেয়। বিডিআর বাহিনীটি ছিলো আধাসামরিক বাহিনী, যার মূল কমান্ড ও ট্রেনিং ছিলো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মত। অন্যদিকে ভারতের বিএসএফ ছিলো সিভিল বাহিনী, যাদের ট্রেনিং, জনবল সবই ছিলো নিম্নমানের। এসব কারনে বর্ডারে কোনো যু্দ্ধ হলে তাতে বিডিআর সামরিক পেশাদারিত্ব দিয়ে বিজয়ী হত।

আজ উপমহাদেশে ভারতের বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরি হতে দেয়া হয়নি, সর্বতোভাবে বাংলাদেশের ওপর সাংষ্কৃতিক-সামরিক-অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে যা যা করা দরকার ভারত তার সবই করেছে। বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করার পেছনে তাদের পরিকল্পনা সাফল্য লাভ করতে পারতো না কখনো, যদি তাদের দেশীয় তাঁবেদার বাহিনী জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের সুযোগ করে না দিত। শেয়ার বাজার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেশের লাখো পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে নির্বিঘ্নে প্রায় সম্পূর্ণই তাদের গ্রাস করতে দেয়া হয়েছে, ভয়াবহ ধরণের অবিশ্বাস্য ধরণের অসম চুক্তি করে বিপুল মুনাফা লুন্ঠনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাত গ্রাস করতে দেয়া হচ্ছে এমনভাবে _ আগামি দিনে খোদ বাংলাদেশের নিজের দেশে নিজেদেরই কোন নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ। তথ্য প্রযুক্তি খাতের রিসোর্সগুলি অতি অল্প মূল্যে তাদের দিয়ে দেয়া হচ্ছে যা ধরে রেখে কাজে লাগালে বাংলাদেশের তরুণেরা আগামী দিনে প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটাতে পারত। তৈরি পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করতে হাজার হাজার ভারতীয় উদ্যোক্তাদের এই সেক্টরে অবাধে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে, লক্ষ লক্ষ ভারতীয়দের এক বিশাল কর্মীবাহিনীকে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে আমাদের কর্মসংস্থানের বিরাট সংকট থাকা সত্বেও। আবাসন শিল্পে চট করে ঢুকতে পারেনি তবে চেষ্টা অব্যহত আছে, অচিরেই ঘুকে পড়বে যদি তাদের তাঁবেদাররা আবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়। এই তালিকা আরো অনেক দীর্ঘ হবে রেফারেন্স টানলে। ভারতীয়রা আমাদের উন্নয়ন চায় না, আমাদের সমস্ত সেক্টরকে ধ্বংস করতে চায় শুধু তাদের নিজেদের স্বার্থে, টিপাইমুখ বাঁধের মাধ্যমে পানিশূণ্য করতে চায় শুধু তাদের স্বার্থে, আমাদের ধর্মের প্রসারেও এমনকি পালনেও তাদের আপত্তি, আজকাল বিভিন্ন ব্লগে উপমহাদেশে আমাদের পূর্বপুরুষদের আদি ধর্ম সনাতনধর্মে আবার ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে হিন্দু মৌলবাদিদের পক্ষ থেকে, ভয়ংকরভাবে জেগে উঠছে হিন্দু মৌলবাদিদের দল, ৩-৫ বছরের মধ্যে ভারতের সাথে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তান-চায়নার সর্বব্যাপী যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে হাদিসের ভবিষ্যদ্বাণীও রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার অনেকগুলো ইঙ্গিত দৃশ্যমান। এ ব্যাপরে বিস্তারিত আলাদাভাবে বলার ইচ্ছে আছে।

কাজেই ‘৪৭ এ যেমন সম্প্রদায়গত স্বার্থ রক্ষায় সময়ের প্রয়োজনে মুসলিমদের ‘পাকিস্তান’ গঠন করতে হয়েছে, ‘৭১ এ যেমন নৃতাত্ত্বিক জাতিগত সাংষ্কৃতিক পরিচয়গতভাবে পশ্চিম পাকিস্তানীদের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ‘বাংলাদেশ’ গঠন করতে হয়েছে _ ঠিক তেমনিভাবে এই ২০১৩ তে নগ্ন ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অযুত কন্ঠে গর্জে উঠতে হবে, পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে নির্লজ্জা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। তার প্রথম পদক্ষেপ হল ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদিদের দেশীয় তাঁবেদার গোষ্ঠিকে ‘না’ বলা। এইবার প্রতিরোধ করতে না পারলে সামনে যা যা হতে পারে, তাতে ‘৭১ এর হানাদার বাহিনীর অত্যাচারকে ভুলে যাবে বাংলার মুসলমানগণ, ভারতে এবার আসছে বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদি, বিজেপির একাংশ ইতিমধ্যেই ‘বাংলাদেশ চলো’ পদযাত্রার প্রাথমিক ঘোষণা দিয়েছে, যাতে লক্ষ লক্ষ হিন্দু মৌলবাদির সমাবেশ ঘটানোর হুমকি দেয়া হয়েছে। এইবার ভুল করলে ‘৭১ এর মত এক সাগর নয়, এক মহাসাগর রক্তের বিনিময়েই আবার হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকে খুঁজে ফিরতে হবে।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s