Asif Shibgat Bhuiyan
এমফ্যাসিস দেখুন প্রথমত, আমার ধারণা। তার মানে হচ্ছে এখন আমি যে কথাগুলো বলব সেগুলো কুরআন হাদীসের আপ্ত বাণী নয়, সেই এক্সপেকটেশান আমার কাছে করাও ভুল। এই ধারণায় আমার ব্যক্তিগত ইসলামি চিন্তার প্রভাব রয়েছে এবং নিঃসংকোচে মানতে রাজি আছি যে আমার ব্যক্তিগত ইসলামি চিন্তা সবাইকে গ্রহণ করতে হবে না। যে কেউ আমার সাথে এ ব্যাপারে দ্বিমত করতে পারেন এবং আমিও যে কারও সাথে দ্বিমত করতে পারি। কমেন্টে খিস্তি খেউড় করে বা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে লাভ নেই। তবে সমালোচনা করতেই পারেন, সেই সমালোচনা গ্রহণ বা বর্জন করার এক্সক্লুসিভ রাইট আমার রয়েছে।
এই লেখাটি একটা তাগিদ থেকে লিখছি। মানুষজনের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় একজন ইসলামপন্থি হতে হলেও আমাকে জামাতকে অচ্ছ্যুৎ ঘোষণা করে কথা বলতে হবে। আমি সেটা একদমই সাপোর্ট করি না।
আমি জামাতের সদস্য নই আমি জামাত করি না। পিরিয়ড। তবে আমার জামাত না করাটা আমার জন্য কোনও ক্রেডিটের কথা নয় এবং জামাতের জন্যও কোনও ডিসক্রেডিটের কথা না। আমি এত গুরুত্বপূর্ণ কেউ নই এবং সেটা আমি প্রিটেন্ডও করব না। আমি কি জামাতকে রাজনৈতিক ভাবে সাপোর্ট করি? কমপ্লিকেটেড প্রশ্ন। আমি কোনও ইসলামি দলকে একক ভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় দেখতে চাই না, না জামাত, না তাবলীগ, না আহলে হাদীস, না এইচটি। আমি শরি’আর পক্ষপাতী কিন্তু সেটা বাংলাদেশের মানুষের শরি’আ বাস্তবায়নের যে হাস্যকর ইম্ম্যাচিউর আন্ডারস্ট্যান্ডিং সেই শরি’আ না। যেহেতু এই স্ট্যাটাস এই বিষয়ের না, আমি বিশদ ব্যাখ্যায় যাবো না। আবার আমি কোনও সেক্যুলার পন্থি দলকেও একা সরকারে দেখতে চাই না। আমার ব্যক্তিগত ধারণা যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় ইসলামি দল সহ কয়েকটি ডানপন্থি দলের যে জোট – এটিই এই মুহুর্তে বেটার। খেয়াল করবেন যে এটা আমার প্র্যাকটিকাল স্ট্যান্স, আইডিওলজিকাল স্ট্যান্স না। আইডিয়ালি কী হওয়া উচিৎ, সেটা অ্যাকাডেমিক আলোচনা, আরেকদিন। সুতরাং আমি রাজনীতিতে বিএনপি-জামাত ও অন্যান্য দল সম্বলিত জোটকে সাপোর্ট করি। একা বিএনপিকেও না, একা জামাতকেও না।
জামাতের ১৯৭১ এর ভূমিকা – এটি আমার সিনসিয়ার স্বীকারোক্তি যে ১৯৭১ এর ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আমি কনফিউজ্ড। এটা এডুকেটেড কনফিউশান, আমি বেশ কিছু বই পড়েছি এবং রেসাল্ট দাঁড়িয়েছে এই যে পিকচারটা আমার কাছে গ্রে। গ্রে-কে আমি জোর করে সাদা বা কালো বানাতে পারব না। কোলাবরেশান – আমার কাছে কোনও ফ্যাক্টর নয়। সত্যি কথা বলতে আমি যখন চিন্তা করি যে ১৯৭১ সালে আমি থাকলে কী করতাম, আমার মাথা ব্ল্যাঙ্ক থাকে। দিস ইজ গড’স অনেস্ট ট্রুথ। ওয়ার ক্রাইম? অবশ্যই! আমি সেই নবীর গর্বিত উম্মতের সদস্য যিনি বলেছিলেন যা যদি তার মেয়ে ফাতিমাও চুরি করে, তাহলে তার হাত কেটে নেয়া হবে। আফসোস যে হতভাগারা ইসলামে চোরের হাত কাটা নিয়ে মানবতাবাদের মায়াকান্না দেখে, কিন্তু ইসলামের ইমপেকেব্ল সেন্স অফ জাস্টিস খুঁজে পায় না। মানবতাবাদ সুবিচার ছাড়া আর কী? যাই হোক জামাতের যে কোনও সদস্য যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী থাকলে বিচার হতে হবে এবং উপযুক্ত শাস্তিও হতে হবে। কিন্তু অবশ্যই অবশ্যই সুষ্ঠ বিচারের মাধ্যমে কোনও রকম পক্ষপাতিত্বের বিন্দুমাত্র সুযোগ না রেখে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে। একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি শাস্তি পাওয়ার চেয়ে লাখ লাখ অপরাধী খালাস পেয়ে যাওয়া একটি ইসলামি প্রিন্সিপ্ল এবং মানবতার বেসিক দাবী। এটা নিয়ে কোনও কথাও হতে পারে না, অসম্ভব। আপনি চূড়ান্ত বুদ্ধু বা চূড়ান্ত পাজি না হলে এটা স্বীকার করে নেয়াটা আপনার মানুষ হওয়ার প্রমাণ। আমি মনে করি যে জামাতের নিজের উদ্যোগ নিয়ে সুষ্ঠ বিচারে সহায়তা করা উচিৎ। ঠিক যেমন ‘উমার তার নিজ ছেলেকে ব্যভিচারের শাস্তি দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি।
জামাতের ইসলামিক কমিটমেন্ট – জামাত রাজনৈতিক কর্মকান্ডে প্রচুর ভুল করেছে -পলিটিকাল, স্ট্র্যাটেজিকাল এবং ইসলামিকও। যে কোনও দল বা গ্রুপ মাত্রই ভুল করবে না এটা হওয়াটা অসম্ভব, অসম্ভব। জামাত, তাবলীগ, আহলে হাদীস, এইচটি, মুসলিম ব্রাদারহুড, দেওবন্দী সব্বার ভুল আছে। যে দল মনে করে তারা ভুল করে না তারা ডিসইলিউশনড। আমাদের দেশের একজন প্রসিদ্ধ স্কলার আমাকে বলেছেন যে তারা জামাতের থিংক ট্যাংককে কিছু সংস্কারের প্রস্তাব লিখিত আকারে দিয়েছিলেন। তারা গ্রহণ করেননি। সুতরাং হ্যাঁ, জামাতের ভুল আছে, সংখ্যায়ও সেগুলো কম নয়। অন্য সব দলের অবস্থা তথৈবচ। নবীজী (সা:) চলে যাওয়ার পর ত্রিশ বছর ইসলামি স্টেট একটা আদর্শিক অবস্থায় ছিলো, উইথ মাইনর হিকাপস। এরপর কিছু ডিস্ক্রিট রিজিনাল বা ইনডিভিজুয়াল ব্রিলিয়ান্স ছাড়া ইসলামিক স্টেট এবং এর সামষ্টিক অভিজ্ঞতা সবসময়ই প্রশ্নবোধক ছিলো। এতে এত উতলা হওয়ার কিছু নেই। ইসলাম মাসুম, মুসলিমরা নয়, ব্যক্তিগত ভাবেও নয়, সামষ্টিক ভাবেও নয়।
যে ব্যাপারটির আমি ঘোর বিরোধী সেটি হোলো জামাতকে ডিহিউম্যানাইজ করার ক্রমাগত চেষ্টা, কখনও তাদের ১৯৭১ এর ভূমিকা নিয়ে, কখনও তাদের ইসলামিক ভুলের দোহাই দিয়ে। ইদার কেস, আমি তাদের ডিহিউম্যানাইজ করার পক্ষপাতি নই। তাদের কড়া সমালোচনা করা হোক, তাদের ভুল পাবলিকলি আলোচিত হোক। যেমন আর সব দলকে করা হয়, হবে। কিন্তু তাদের মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, তাও যুগ-যুগান্ত ধরে, নাতি-পুতি সবাইকে? সমালোচনার পাশাপাশি তাদের সকল নাগরিক অধিকারকে ডিনাই করা (যার মাঝে তাদের রাজনৈতিক অধিকার) আমি সমর্থন করি না। এই ক্ষেত্রে আপামর মুসলিমদের ভূমিকার আমি নিন্দা জানাই। আজকে কাদের মোল্লার এই পরিণতির জন্য আপনি আমি তো ভাবের স্ট্যাটাস দিচ্ছি, কিন্তু এই অবস্থায় ব্যাপারটাকে নিয়ে আসার জন্য গত কয়েক দশক ধরে অজামাতি মুসলিমদের ভূমিকা রয়েছে। রক্তের দাগ আপনার আমার হাতেও।
জামাতের উল্লেখ করার মতো বহু কাজ আছে। প্রচুর ইসলামি বইয়ের পাবলিকেশন ও দোকান তাদের। বাংলাদেশে দুটি কনসেপ্টের আনডাউটেড পাইয়োনিয়ার তারা – ইসলামিক স্কুল এবং ইসলামিক ব্যাংকিং। আপনি এসবের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবেন না? আমি ইনশাআল্লাহ্ বুকে হাত দিয়ে করব। একটা ভায়োলেন্সের দায়ে অভিযুক্ত দলের নাগরিক অবদানগুলো যদি স্বীকার না করা হয় তবে তো তাদেরকে এক্সপায়েট করার কোনও সুযোগই আপনি রাখলেন না। এরপর যদি সেই দলের মূল নেতারা না হোক, মাঠপর্যায়ের কর্মীরা যদি ধৈর্য হারায়, আপনি তো সমালোচনা করে খালাস, কিন্তু দায় কি এড়াতে পারবেন?
না শিবিরের সন্ত্রাস সমর্থনযোগ্য নয়, যেমনটি নয় ছাত্রদলের বা ছাত্রলীগের। বাংলাদেশের সবচেয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন আর যেই হোক শিবির নয়। তার মানে এই নয় যে জামাত বা শিবির দায় এড়াতে পারবে। তার মানে এও নয় যে শুধুমাত্র জামাতকেই আপনি টার্গেট করে সলিটারি কনফাইনমেন্টে পাঠাবেন।
বহু জামাত কর্মী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা নর্মাল মানুষ, আমার মতোই, অনেকে আমার চেয়েও বেটার, অ্যাজ এ মুসলিম অ্যাজ এ পার্সন। এটা আমার হার্টফেল্ট বিলিফ যে সব মুসলিমই আমার চেয়ে বেটার মুসলিম।
Reblogged this on Emrul Mahmud.
এটি আমার সিনসিয়ার স্বীকারোক্তি যে ১৯৭১ এর ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আমি কনফিউজ্ড। কথাটির সাথে আমিও একমত পোষণ করছি। মাঝে মাঝে ভাবি, যদি পাক বাহিনী আমার স্ত্রী ও সন্তানের বিনিময় হিসেবে রাজাকার উপাধি দিতে চাইত, তবে কী করতাম? উত্তর ততটা সহজ নয়। ধন্যবাদ আপনার ব্যক্তিচিন্তাকে শেয়ার করার জন্য।
সম্পূর্ণ খোলা মন নিয়ে আপনার অভিমতটা পড়লাম। প্রথম পয়েন্টটা বলি, আপনি লিখেছেন ১৯৭১ ের ঘটনা নিয়ে আপনি কনফিউজড। কোন বিষয়টা নিয়ে কনফিউজড সেটা খুলে লিখলে আরও ভালো হতো। তারপরেও ধরে নিলাম রাজনৈতিক ব্যাপার নিয়ে আপনার কনফিউশন থাকতে পারে। কিন্তু যেভাবে নিরপরাধ মানুষকে খুন করা হয়েছে সেটার মধ্যে কোন কনফিউশন থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না। আপনি সেটা যেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখুন না কেন। এবং এই বিষয়টা অনস্বীকার্য যে জামায়াতে ইসলামী সেই সময়ে পাকিস্তানী বাহিনীর এই হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করেছে (যদিও খুব উদারতার আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করি তারপরও যেটা অসম্ভব, ধরে নিলাম সরাসরি হত্যাকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল না), এই হত্যাকাণ্ড কিংবা এটার ভ্যালিডিটি নিয়ে কি আপনার কোন কনফিউশন আছে? যদি থেকে থাকে, তাহলে আমার মনে হয় কাদের মোল্লা কিংবা অন্যান্য যেসব মানুষ নিয়ে আপনি লিখেন এগুলোও আপনার ভুলে যাওয়া উচিৎ। আর যদি নাই থাকে, তাহলে কনফিউশন যতই থাকুক আপনার উচিৎ মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করা, পাকিস্তান কিংবা জামায়াত মানবধিকার লঙ্ঘনকারী এবং এজন্য খোদার জমিনে তাদের বিচার হওয়া উচিৎ। শুধু বিচারেই নয়, তাদের মিথ্যে আইডিওলজি কোন ধর্ম কিংবা দেশের সাথে সম্পৃক্ত করার অধিকারও তাদের থাকা উচিৎ নয়।
একাত্তরে আপনি থাকলে কি করতেন সেটা নিয়ে আপনার কনফিউশন আছে, আমার ও আছে। কিন্তু আমার মনে হয় না যখন এক দল সশস্ত্র সৈন্য কোন জনপদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে একের পর এক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করবে, হিন্দু কিংবা মুসলিম পরিচয়ের জন্য লুঙ্গি খুলে চেক করবে, হিন্দুদেরকে বিনা বিচারে কোন প্রশ্ন ছাড়াই হত্যা করবে ের পরেও আমার মনে কোন কনফিউশন রয়ে যাবে। সাদাকে তখন আমার সাদাই মনে হবে কালোকে কালো। এরপরে ও গ্রে কিছু থাকার কোন কিছুই নাই। যদি থেকে থাকে তাহলে বুঝতে হবে, হিউম্যানিটি কিংবা মরালিটির প্রশ্নে আপনার ধারনাটা আরও পরিষ্কার করার প্রয়োজন রয়েছে।
আপনি বললেন, জামায়াতের কোন সদস্যের যুদ্ধাপরাধের দায় থাকলে… এই বিষয়ে আপনার কেন সন্দেহ আছে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। কেউ অন্যায় করলে তাকে ধর্মের নাম দিয়ে সাফাই করাও তো অন্যায়। বরঞ্চ, আমাদের সামাজিক কিংবা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আরও বড় অন্যায়। এটা কি অপরাধের তালিকায় পড়ে না? আপনি হয়তো বলবেন, যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞায় সমর্থন দেয়াকে খুব বড় অপরাধ হিসেবে নেয়া যায় না। আপাতত সেইসব সংজ্ঞাতে না যায়। আমার ব্যক্তি অভিমত বলি, যখন আমার ভাইকে, মাকে, বোনকে এরকম অন্যায়ভাবে নিগৃহীত করা হয়েছে এবং সেই সময়ে কিছু দাড়ি জোব্বা পরা লোক ধর্মের লেবাস লাগিয়ে নিজেরা তো বটেই দেশের অনেক মানুষকে সেই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে, তাদের অপরাধ আমার কাছে সেইসব খুনিদের চেয়ে কোন অংশে কম কিছু না। ইন ফ্যাক্ট, আমি বলবো, এদের অপরাধটা আরও বেশী জঘন্য এবং সুদূরপ্রসারী। যে অপরাধ করে তার চেয়ে যে অপরাধের জন্ম দেয় কিংবা অপরাধকে জাস্টিফাই করে তাকে নিরমুল করাটা অনেক বেশী জরুরী।
আপনি নিজেই বললেন জামায়ের যুদ্ধাপরাধের দায় থাকলে বিচার করা উচিৎ। জামায়াত কি কখনো স্বীকার করেছে অপরাধ দূরে থাক একাত্তরে তারা কোন ভুল করেছিল? বিচার তো দূরের কথা। তার উপর একাত্তরের যত দাগী অপরাধী আছে সবাইকে শিরমনি করে বসিয়ে রেখেছে বছরের পর বছর। এটা কোন ইসলামিক নীতির পরিচয়? এখানে ইসলাম ধর্মকে এজন্যই টেনে আনলাম কেননা তারা নিজেরাই ইসলামের দোহাই দেয়। সুতরাং তাদেরকে আমাদের লিবেরাল বলেন আর সেক্যুলারিস্ট বলেন, বিচারে যেমন বিচার করতে হবে ঠিক তেমনি ইসলামের কাঠগড়ায় ো দাড় করাতে হবে। এবং সত্যিটা হচ্ছে , জামায়াত এই দুইটার একটাতে ো নিরপরাধ হিসেবে পার পাবে না। তাদের জন্য ইহকাল ো নাই, পরকাল ো নাই।
জামায়াতের ডিহিউমেনাইজ করার বিষয়টা খুবই হাস্যকর। একটা মিথ্যে আইডিওলজি, যার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ খুন ধর্ষণকে জায়েজ বলে সমর্থন করা হয়েছে আপনি বললেন সেটাকে ডিহিউমেনাইজ করার কথা। এটা আমাদের সত্যিকার দুর্ভাগ্য যে, জামায়েতের মতো একটা অপরাধী সংগঠন আমাদের দেশে এখনো বেঁচে বর্তে আছে। খেয়ে পড়ে বড় হয়েছে। বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। জামায়াতকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরঞ্চ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আরও বেশী করে পরিহার করা উচিৎ। খোদা না করুক, কাল যদি বাংলাদেশের অন্য কোন জেলার মানুষ দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চায় এই দল সেদিন “আল উহুদ” কিংবা ” আল খন্দক” নাম দিয়ে হত্যা কিংবা ধর্ষণকে জায়েজ করার ফতোয়া দিয়ে দিবে। এটা জামায়াতের লোকজনকে ছোট করার কোন বিষয় না। এটা একটা আইডিওলজিকে প্রতিরোধ করা। আমার মনে হয় আপনার নিজের ও দায়িত্ব এ বিষয়ে এগিয়ে আসা।
জামায়েতর অবদানের কথা শুনে, একটা নিউজের কথা মনে পড়ে গেলো। কিছুদিন আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন স্যুয়ারেজে মাছ চাষ করা হয়েছিল। বেশ গোব্দা গাব্দা মাছ পাওয়া গিয়েছিলো। দুঃখজনক (!) হলেও, মাছে ভাতে বাঙালিরা সেই মাছ খেতে অস্বীকার তো করেছেই বরং এরকম একটা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ো করেছে। এই ঘটনার মাছগুলোও কিন্তু স্যুয়ারেজের বড় অবদান। অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ফ্যাক্ট হচ্ছে, ওই মাছের গায়ে গোলাপ জলের সুগন্ধ মাখিয়েও যদি খেতে দেয়া হয়, সেটা প্লেটে নেয়া যায় না। জামায়াত যতই গাব্দা গোব্দা মাছের চাষ করুক, তাদের কলংক কখনোই মুছে যাবে না। দ্যাটস এ ফ্যাক্ট, ফুল স্টপ।
নামাজ রোজা হজ্ব করে বলেই একজন মানুষ খুব খাঁটি মুসলিম হয়ে যায় না। সেটার ব্যাপ্তিটা অনেক, এ বিষয়ে আপনাকে জ্ঞান দেয়া থেকে বিরত থাকি। কেননা এই বিষয়টা আপনি আরও ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবেন। সো কথাটা হচ্ছে, নামাজ রোজা করে বলেই জামায়াতের আইডিওলজি হালাল হয়ে যায় না। যার গোঁড়ায় গলদ তার আগায় পানি ঢেলে কোন লাভ নেই।
এবার আপনার প্রথম পয়েন্টে ফিরে যাই, আপনি জামায়াতকে অচ্ছ্যুত ঘোষণা করতে চান না। এবং তাদের সম্মিলিত জোটকে সমর্থন করেন। ইন প্র্যাক্টিক্যাল সেন্সে। আমিও প্র্যাক্টিক্যাল সেন্সে বল ধর্মকে পিউর সেন্সে হয়তো সমষ্টিগতভাবে ব্যবহারে লিমিটেশন আছে। কিন্তু সেই লিমিটেশন কে গ্রহন করার ও লিমিট আছে। এবং সেটা কখনোই জামায়াতের অপরাধ স্কেলে না। ইন দ্যাট সেন্স, জামায়াত শুধু রাজনিতিকেই কলুষিত করে নাই বরং ধর্মকেও কলুষিত করেছে। দুই দিক থেকেই পরিত্যাজ্য। যারাই এদেরকে কোলে নিয়ে বড় করে তাদেরকে সমর্থন করাটা আমার মতো অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়। বিএনপিকে সমর্থন করতে গিয়ে এজন্যই, শুধুমাত্র এজন্যই থমকে যেতে হয়। বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ আমার কাছে আলাদা কিছু না, একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাদের অনেক অন্যায় আছে, হজম করা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু জামায়াত; েই এক জায়গায় কম্প্রমাইজ করা যায় না। একাত্তর ইজ এ ডিফারেন্ট থিং। এটার সাথে স্বাধীন বাংলার অন্য কোন সময়ের তুলনা হয় না, অপরাধের ও না। আপনারা যারা উদার মানসিকতা নিয়ে জামায়াতের অপরাধকে ইগ্নর করে এগিয়ে যেতে চান, তাদের েই বিষয়ে আরও ভাবার প্রয়োজন আছে বলেই মনে হয় আমার। এটা শুধু রাজনীতির স্বারথে না। বৃহত্তর ধর্মীয় স্বার্থেও।
সর্বশেষ একটা বিষয় তুলে ধরি, আল বদর দিয়ে যেমন বদররের যুদ্ধের নামের আড়ালে তারা তাদের ঘ্রন্যতাকে হালাল করার চেষ্টা করেছে, ঠিক তেমনি জামায়েতে ইসলাম-এ ইসলাম শব্দটা লাগিয়ে এই শব্দের আড়ালে তাদের অপরাধকে ধর্মের কাঁধে তুলে পার পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আপনার মতো যারা নিজেদেরকে জামায়ত সমর্থন করেন না দাবী করেন, তাদের উচিৎ এই ঘৃণ্য প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া। নইলে যেই শেষ বিচারের দিনের প্রতি আপনি আমি বিশ্বাস রাখি সেদিন আপনাকেও এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থাকার জন্য জবাব্দিহি করতে হবে।
আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ্ আপনার কলমকে আরও শানিত করুন।
ফুটনোটঃ আপনার অভিমতকে সামনে রেখে উত্তরগুলো লিখেছি বলে জামায়াতকে আমি সরাসরি একাত্তরের খুনি বলিনি। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, তারা একাত্তরের খুনি। এই বিষয়ে আমার মনে কোন বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
shahabager chetony apni beshi valobashen ty na?