by Sadat Shibli
ইদানিং প্রায়ই আমাকে পুলিশ আটকায়। আমার আবার থুতনিতে যে অল্প কয়টা হয় সে কয়টা দাড়ি আছে। শখে রাখসি। কাধে একটা ব্যাগ নিয়ে রিক্সায় করে অফিসে আসা-যাওয়া করি। পথে প্রায়ই পুলিশ থামায়। গম্ভির মুখে ব্যাগ চেক করে, ফায়দা মত কিছু না পেয়ে বলে “আচ্ছা যান, দিন-কাল খারাপতো তাই”/ চেহারায় সন্ত্রাসিভাব আছে কিনা বুঝতেসি না। অফিস কলিগদের জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনারা এই রকম পুলিশি চেকিং এ পড়সেন কিনা?” কেউই হ্যা বলল না। বললাম আমার চেহারায় কি সন্ত্রাসিভাব আছে? কেউ বলল – না, কেউ মুচকি হাসে। বুঝলাম চেহারাটাই মারসে। কালো হইলে যা হয় আরকি। ফরসাকারি ক্রিমওয়ালারা ফর্সা করার লোভ দেখাইয়া পকেট কাটে আর পুলিশ সন্ত্রাসী ভাইবা রাস্তায় ধরে। কি আর করা।
কিন্তু হঠাৎ মাথায় প্রশ্ন আসলো আগে তো পুলিশ এই সন্ত্রাসী চেহারা থাকা সত্ত্বেও কোথাও আটকায় নাই। তাইলে এখন কেন? বুঝলাম শাহবাগ আন্দোলনের ভুমিকা এইটা। যে দাড়ি, পাঞ্জাবি, টুপি ইসলাম এর ব্র্যান্ড ছিল তাকে জামাতিরা নিজেদের ব্র্যান্ড বানানোর মাধ্যমে ইসলামেরই বিরাট ক্ষতি করেছে। শাহবাগ এর তরুণ প্রজন্ম যদিও বলতেসে যে তাদের এ আন্দোলন ধর্মের বিরুদ্ধে না কিন্তু বিভিন্ন কার্টুন, কেরিকেচার ও লেখায় তারা কিন্তু এই পোশাককেই টারগেট করছেন, যার প্রভাব পরোক্ষভাবে হলেও ইসলামের উপর পড়ছে। একই সাথে তাঁরা এমন কিছু লোক নিয়ে আন্দোলন করছে যারা নিজেদেরকে নাস্তিক বলে প্রচার করলেও আসলে তারা ধর্মের বিরুদ্ধে উস্কানিমুলক ও আপত্তিকর লিখার মাধ্যমে মুলত ধর্মের চরম অবমাননাই করেছে। এটার ফলফল কি হচ্ছে আমরা কেউ ভেবে দেখছি না। এখন অনেকেই দাড়ি, পাঞ্জাবি ও টুপিওয়ালা কাউকে দেখলেই বিরুপ মন্তব্য করে অথবা সরাসরি জামাত বা রাজাকারের তকমা দিয়ে দেয়। আমার নিজের দেখা ঘটনা যেখানে দুজন বাচ্চা মাদ্রাসার ছাত্র টুপি ও পাঞ্জাবি পরে হেটে যাওয়ার সময় অন্য কিছু স্কুলের ছেলেরা তাদেরকে শুনিয়েই বলতেসিল “দেখ দেখ, রাজাকারের বাচ্চারা যায়”/ বাচ্চা দুটি মাথা নিচু করে হেঁটে চলে যায়। আমার কথা হল এই বাচ্চা দুটির দোষ কোথায়? তাদেরকে আমরা কিসের মধ্যে ফেলে দিচ্ছি ভেবে দেখার সময় চলে যায় নাই এখনো। অনেকে যারা জামাত ও করে না আবার রাজাকারও না, আবার দাড়ি, টুপি ও পাঞ্জাবি পরে তাদের মানসিক অবস্থাটা কি হচ্ছে তা কি কেউ ভাবছে??!!
আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে কি শিখাচ্ছি, বিচার না চেয়ে ফাসি চাওয়া!! এইবার না হয় আমরা ঠিক আছি, কিন্তু একবার যদি ফাসি চাওয়া শিখে যায় তখন মতের বিপক্ষে গেলেই কি এরা ফাসি চাওয়া শুরু করবে না!!! তখন বিচার বাবস্থার কি হবে!!?? এখন তো দেখি ব্র্যান্ডিং এর রাজনীতি চলতেসে। রাজাকার হইতে নাকি দুই সেকেন্ড ও লাগে না। শাহবাগ এর মতের সাথে একটু এদিক কিংবা ঐদিক হইসেত আপনি রাজাকার হইয়্যা যাইবেন। অথবা “ছাগু”/ ছাগুর মানেটা ক্লিয়ার হইতে পারতেসি না, তবে মনে হয় ছাগলেরই অপভ্রংশ হবে। কাদের সিদ্দিকীর মত বাঘা মুক্তিযোদ্ধাও নাকি এখন রাজাকার। তাঁকে কে “বঙ্গবীর” উপাধি দিসে এবং আদৌ তা যৌক্তিক কিনা তাও নাকি এখন খতিয়ে দেখতে হবে। জিয়াউর রহমানের মত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও নাকি পাকিস্তানের চর আসিল। সত্যিই কি বিচিত্র এই দেশের বাসিন্দারা। নিজের মতের সাথে না মিললে চরিত্র হননে আমাদের মত expert আর আছে কিনা, কে জানে।
শাহবাগ এর আন্দোলন নিয়ে আমার বিরাট আশা ছিল। এরকম স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন তো বাংলাদেশ আগে কখনও দেখে নাই। কিন্তু এদের কর্মকাণ্ড এবং বিপক্ষদের ঘায়েল করার চিরচারিত ও বিকৃত পদ্ধতি দেখে আমাকে এদের নিয়ে ভাবতেই হল। আমার ধারণা আমার মত আরও অনেককেই ভাবতে বাধ্য করেছে। এটি নাকি মুক্তচিন্তকদের আন্দোলন। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার আন্দোলন। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার মানে নিয়ে একটু টেনশানে আছি। এর মানে কি আমি যা বলব তাই সঠিক, অন্য কেউ কিছু বললেই জামাত নয়তো রাজাকার নয়তো ছাগু বলে ভোট দিয়ে দেওয়া নাকি বিভিন্ন্ মতামত সত্ত্বেও এক লক্ষে এগিয়ে যাওয়া। কেউ যদি একটু ক্লিয়ার করে দিতেন, এই অবুঝের বড়ই উপকার হত। পাইকারি হারে মানুষ মারার (১০০+) পর ও এদের কাউরে দেখলাম না যে এর বিরুদ্ধে একটা শব্দ উচ্চারণ করতে। বরং তারা পুলিশ প্রেমে একেবারে মুগ্ধ। যখন সঙ্খালঘুদের বসতবাড়ি ও মন্দিরে হামলা করতে গিয়ে আওয়ামীলীগের লোকজন ধরা পড়ে দেখলাম না একটা কিছু বলতে। যখন বোমা বানাতে গিয়ে আওয়ামীলীগের ১ জন নিহত ও কয়কজন আহত হয় তখন ও দেখলাম না কাউকে কিছু বলতে। যেখানে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বীদের মিছিলে পুলিশ গুলি করে পাখীর মত মানুষ মারে, যেখানে ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে থেকেও মির্জা ফখরুল ময়লার গাড়ি পোড়ানোর আসামী হয়ে জেল খাটেন, সেখানে দেশে এতগুলো সংখ্যালঘুর বাড়ী পোড়ানোর ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হবে না? এর মানে কি?? এগুলই কি মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার মানে। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার মানেই কি বিরোধীদের গলা চেপে ধরা? নইলে সকল পত্রিকা পক্ষে থাকা সত্ত্বেও আসল দাবি থেকে সরে এসে একটি পত্রিকার সম্পাদককে গ্রেফতারের জন্য আল্টিমেটাম এর পর আল্টিমেটাম কেন? কেন তার কণ্ঠ রোধের এত চেষ্টা। প্রায় সকল পত্রিকা পক্ষে থাকা সত্ত্বেও একটি পত্রিকার এত শক্তি কেন যে গণমানুষের এরকম একটি আন্দোলনকে ব্যর্থ করার ভয়ে তার সম্পাদককে গ্রেফতার করতে হবে। তাহলে তিনি যা বলছেন তাকি অনেক মানুষ বিশ্বাস করছেন। কেন? তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি বানানো কথা লিখে মানুষকে উস্কে দিচ্ছেন। বানানো নাকি সত্য সেটা আরেক বিতর্ক। কিন্তু কথা হল তিনিত একা এগুলো ছাপান নাই। শুনেছি আরও দুটি পত্রিকাও নাকি ছাপিয়েছিল, কিন্তু এদেরকে কিছুই বলা হচ্ছে না কেন!!?? বিষয়টা যে কি, কিছুই বুঝতেসি না। এ লেখালেখিতেতো বরং লাভ হইসে দেখতেসি। সরকার এখন সবাইকে sms পাঠাচ্ছে যে “সরকার ইসলাম ও মহানবি (সাঃ) এর অবমাননা বন্ধে বদ্ধপরিকার”/ বলতেই হয় সরকারের এটি একটি ভাল উদ্যোগ।
শাহবাগ এর আন্দোলন নাকি ৭১ এর মতোই আরেক মুক্তিযুদ্ধ। শুনে হাসব না কাঁদবো বুঝতেসি না। এদের বেশিরভাগই ৭১ দেখে নাই (আমিও দেখি নাই, কিন্তু যারা দেখেছে ও যুদ্ধ করেছে তাদের কাছে শুনেছি), খুব সহজেই তুলনা করে ফেলে। ৭১ ছিল জীবন-মৃত্যুকে হাতে নিয়ে ঘোরা, চারিদিকে গোলাগুলির মধ্যে বাঁচা-মরা, Torture, Rape, সংঘাত, প্রিয়জনকে হারানো, মৃত্যু এবং তারমাঝেও বিজয়। ৭১ ছিল ৭১, তার সাথে কোনকিছুর তুলনা হতে পারে না। শাহবাগের মত সরকারি প্রহরায়, নাচ-গান ও স্লোগান নির্ভর কোন আন্দোলন এর তো নয়ই। যুদ্ধাপরাধিদের বিচার দেশের সবাই চায়। আমি শাহবাগের আন্দোলনকারি কারো চাইতে কোন কম অংশে যুদ্ধাপরাধিদের বিচার চাই তা না, বরং বেশিই চাই। কারণ একজন মুসলিম হিসেবে আমি জানি যে জামাতই এসব যুদ্ধাপরাধিদের নেতা বানিয়ে রাজনীতি করে ইসলামের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে এবং এখনো করছে। কিন্তু এ রকম একটি বৃহত্তর আন্দোলন থেকে যখন কেবল বিরোধীদলের যুদ্ধাপরাধিদের বিরুদ্ধেই ফাসি চাওয়া হয় এবং অন্য দল বিশেষ করে সরকারি দলে থাকা রাজাকার, যুদ্ধাপরাধিরা বগল বাজায়, তখন পুরো আন্দোলন এর পিছনে অন্ন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ জাগলে কি কাউকে দোষ দেওয়া যায়!
আমার লেখায় অনেকগুলো “বিচার চাই কিন্তু…যদি…তবে” ইত্যাদি ভাব চলে এসেছে। সুত্র মতে আমি হয় ছাগু নয় রাজাকার অথবা উভয়ই। শ তে শিবলী তুই রাজাকার তুই রাজাকার…।