জামাতকে সেকুলাররা ইনজেনারেল মডারেট মুসলিমদের সবচেয়ে ডেডিকেটেড, সবচেয়ে অর্গানাইজড পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করে। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে যে মত পোষণ করি ইসলামের ব্যাপারে তা অনেক ইসলামপন্থিদের কাছে অর্থোডক্স মনে হতে পারে। ব্যাপার না মুসলিমদের মাঝে নানান মত থাকবেই বাগানের সব ফুলের গন্ধ এক হয় না। খেয়াল করে দেখুন হেফাজতের ৫ ই মের গণহত্যা বা জামাতশিবিরের বছরজুড়ে গণহত্যা দুটোই সেকুলারদের কাছে, আহলে কুফফারদের কাছে পশুপাখি মারা যাওয়ার সংবাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। এবারের লড়াইটা ‘মুসলিমদের’ বিরুদ্ধে, রাজনৈতিক রঙটা একটা মিথ্যা আবরণ মাত্র। আসল উদ্দেশ্য আড়াল করার জন্য।
তাই একই সঙ্গে আমি মনে করি এখন সমস্ত বিভেদ ভুলে মুসলিমদের এক হওয়ার সময় এসেছে। এক কালিমার পতাকাতলে, এখন অমুকবাদ তমুকিজমের দিন শেষ। এক কালিমা এক রাসূল(সাঃ) এর উম্মত হিসেবে সব বিভেদ ভুলে আমাদের এক কাতারে দাঁড়ানোর সময় এর আগে এত নিদারুণভাবে আসেনি। আজ এক শিবিরনেতা যিনি লক্ষীপুরে নৃশংস হত্যাকান্ডের চাক্ষুষ সাক্ষী, বললেন ভারতীয় দালালদের প্রাথমিক টার্গেট জামাত-শিবির, জামাত-শিবির শেষ হলে পরবর্তী টার্গেট হেফাজত। বলাই বাহুল্য একে একে সব ইসলামিক দল বা প্ল্যাটফর্মই আক্রান্ত হবে, কলোনিয়াল কাজিনস যাদেরই হুমকি হিসেবে বিবেচনা করবে। এখানে একটা হিসেব বাইরে থেকেও ঠিক বাইরেও নেই তা হল তাবলীগের একটা বিরাট অংশ হেফাজত সমর্থক, আবার হেফাজতের সমর্থকদের বেশিরভাগই নিয়মিত তাবলীগে সময় লাগায় বা একই আক্বীদার মুসলিম। চরমোনাই খুব বিপরীত মেরুর নয়। সবাই ইসলামপন্থি হিসেবে ইন কমন সেকুলারদের কাছে বিবেচিত এবং কারো জন্যই সেকুলারপন্থিদের হৃদয়ে এতটুকু মমতা যে নেই _ সেটি আজকের প্রেক্ষাপটে বড় মূল্য দিয়ে, বড় নিদারুণভাবে মুসলিমদের বুঝতে হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে না _ মিশর, সিরিয়া, তুরষ্কসহ বিভিন্ন দেশে।
‘গাযওয়ায়ে হিন্দ’ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মুশরিকদের সাথে মহাযুদ্ধ এমনিতেই সমাগত প্রায়। এখন আমরা যা দেখছি তা সূচনা বা ক্ষেত্র প্রস্তুতকৃত হওয়া। সেদিন এক শুভান্যুধায়ী মারফত এক তাবলীগি মারকাজের জেলা শুরা, বড় আলেম _ সাধারণতঃ খুবই ডিসিপ্লিনড এবং সেল্ফ-কন্ট্রোলড একজন মানুষ, হিসেবের বাইরে কোন কথাই বলতে শোনা যায় না, সেদিন সাধারণ হিসেবের বাইরে অদ্ভূত এক কথা বললেন যা আরেকজনের মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে। তা হল ‘গাযওয়ায়ে হিন্দ’ সমাগত এবং তার মূল স্ফূলিঙ্গের স্ফূরণ ঘটবে খুব সম্ভবতঃ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে। ভারতের আশেপাশের কয়েকটি রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশের চট্টগ্রামই হবে মূল কেন্দ্র। এক এনালাইজার দেখলাম কিছু তথ্যের ভিত্তিতে একটি তত্ত্বও দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন তা হল ২০১৭ সালের কিছু আগে বা কিছু পরে ঘটবে এটি। ভারত সম্পূর্ণভাবে পদানত হবার পর মুজাহিদ মুসলিমদের যারা জীবিত থাকবেন তারা খোরাসান হয়ে দামেশকের দিকে রওনা হবেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য।
যাই হোক মোটামুটি এটা তো আমরা অবশ্যই লক্ষ্য করছি যে গত এক বছরে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং বিশেষতঃ বাংলাদেশে যা ঘটছে, ঘটে চলেছে তা ইতিপূর্বে কখনোই ঘটেনি। এটি অবশ্যই ম্যাচিওর হচ্ছে এবং চুড়ান্ত একটি পরিণতির দিকে যাওয়া ছাড়া ক্ষান্ত হবে না। যত বিভেদ আমরা এখন তৈরি করব তত বেশি ক্ষয়ক্ষতি আমাদের হতে থাকবে, এক এবং একাত্ম হওয়া ছাড়া আসমান-জমিনের কোন রাস্তা আমাদের জন্য খোলা নেই। এখন মুসলিমদের ওপর যেভাবে আক্রমণ হচ্ছে সেটির পজিটিভ দিক হল এতে মতভেদ-বিভেদ ভুলে এক কালিমার ছায়াতলে সমবেত হবার বিরাট সুযোগ। এটি যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝতে পারবো যে এখন মুসলিম ঐক্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় ইসলামের স্বার্থে, আমাদের অস্তিত্বেরও স্বার্থে _ ততই মঙ্গল।
অতএব, বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মুসলিমদের যে রক্তের ধারা আমরা প্রবাহিত হতে দেখছি তা আগামী দিনগুলোতে স্ফীত থেকে স্ফীততরই হতে থাকবে। মুসলিমরা যতক্ষণ পর্যন্ত নানা মতভেদ ভুলে গিয়ে এক কালিমার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের শত্রুদের জন্য মুসলিমনিধন সহজেই সম্ভব হবে। মুসলিমদের অন্তঃকলহের সুযোগে নানা কৌশলে তারা এটি করতে সমর্থ হচ্ছে, প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে দিনে দিনে তারা আরো হিংস্র আরো আগ্রাসী হবে। মনে রাখতে হবে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে মুশরিকদের তথা ভারতীয় বর্ণবাদি হিন্দুদের প্রধান টেনশন এখন দুটো দলকে নিয়ে, জামাত ও হেফাজত। হেফাজতের লংমার্চে স্মরণকালের বৃহত্তম মুসলিম অংশগ্রহণ দেখে তাদের উদ্বেগ ও আতঙ্ক জন্মেছে, যেন তারা তাদের মরণকে দেখেছে। উল্লেখ্য ভারত সে অর্থে সেকুলার নয়, যদিও ভাব ধরে থাকে। নরেন্দ্র মোদির মত তীব্র সাম্প্রদায়িক মুসলিমবিদ্বেষী সেখানে সম্ভবতঃ প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছে, দিল্লিসহ সাম্প্রতিক ৫ টি রাজ্যে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মেরুকরণ হচ্ছে। আগের দিন আর নেই সেটা বুঝতে হবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, বিজেপির একটি অংশ ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ হিন্দু মৌলবাদির সমাবেশ ঘটিয়ে সবাইকে নিয়ে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ‘বাংলাদেশ চলো’ নামক যুদ্ধংদেহি পদযাত্রার হুমকি দিয়েছে। আজ হয়তো তারা আসবে না, কিন্তু কাল বা পরশু অথবা অচিরেই একদিন তারা অবশ্যই আসবে তাতে সন্দেহ নেই। তাদের দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল এবং আসার পর ভারতের এতদিনকার ‘বাংলাদেশ নীতি’ অনেকটাই পরিবর্তিত হবার সম্ভাবনা। এতদিন যা পায়নি সেই ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণও তারা লাভ করবে। কাজেই তার আগেই বাংলার মুসলিমদের দলমতনির্বিশেষে সমস্ত বিভেদ ভুলে এক জায়গায় দাঁড়াতে হবে। ইসলামের স্বার্থে তো বটেই, নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেও। অন্যথায় গুজরাটে নরেন্দ্র মোদিদের ইন্ধনে যে ভয়াবহ বীভৎস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যপক ও বিরাট আকারে, এমনকি ‘৭১ এর হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের চেয়ে ভয়ংকর পৈশাচিক অভিজ্ঞতা বাংলার মুসলিমদের জন্যে অপেক্ষা করছে। আমি চাই আমার এই আশংকা সত্য না হোক, কায়মনোবাক্যে চাই। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, বিপরীত অভিজ্ঞতা লাভ করাও অসম্ভব নয়।
আল্লাহ সমস্ত বিভেদ ভুলে আমাদের এক হওয়ার তাওফিক এনায়েত করুন।
আমিন।