চেতনার বিশ্বরেকর্ড

1

Human-Flag-2

আমরা ইংরেজি প্রভার্ব “নিরো ফিড্‌লস ওয়াইল রোম বার্ন্স” যখন শুনি তখন নিশ্চয়ই মনে মনে দৃশ্যায়ণ করার চেষ্টা করি যে ব্যাপারটা কীভাবে সম্ভব। এসময় আমরা খুব ইথিকালি চিন্তা করি বলে দৃশ্যায়ণের কাজটি খুব স্থূল হয়ে যায়। নিরো তো আর গর্দভ ছিলো না, সে নিশ্চয়ই ব্যাপারটির মাঝে একটা অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েলটি নিয়ে এসেছিলো, যার নান্দনিকতা ভেদ করে নৃশংসতার ডোমেইনটি বোঝা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

কথাগুলো যদি বুঝতে কষ্ট হয় তাহলেও সমস্যা নেই, ভালো উদাহরণ আছে বোঝানোর জন্য। এবং উদাহরণগুলো দেশী।

উদাহরণ ১: যখন সাভারে রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ল তখন প্রথম আলোর মেরিল তারোকালোক নাচাগানার অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া। আজ থেকে ৫০০ বছর পর কেউ যদি ঘটনাটা শোনে সেও ভাববে কীভাবে সম্ভব এটা? কিন্তু সে যদি আমাদের পেত তাহলে আমরা তাকে বোঝাতে পারতাম যে প্রথম আলো তো আর বেকুব নয়। তারা সেই “অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েলটি” বোঝে। তারা প্রোগ্রামটি বন্ধ করতে রাজি নয়, স্বার্থ জড়িত। আবার এটাও বুঝছে যে ক্রুয়েলটি হয়ে যাবে যা মানুষ পছন্দ করবে না। এখানেই প্রথম আলোর নন্দন তত্ত্ব প্রয়োগের মুন্সিয়ানা। আনিসুল হক বলল: এটা তারা জর্জ হ্যারিসনের “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ”-এর আদলে করছে। প্রোগ্রাম চলল, আবার তাতে চাঁদাও ওঠানো হোলো অর্ধ লক্ষাধিক টাকার। ব্যস, রোম বার্ন করার সময় নিরোর ফিডল বাজানোর ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেল। গান-বাজনাও হোলো, আবার কেউ আপত্তি তুললে তাকে মুখ ঝামটাও দেয়া হোলো – আমরা তো এত এত টাকা তুলেছি, তোমরা কী করেছো? এটার ফ্যালাসিটা অনেকেই ধরতে পারবে না, কারণ তারা নান্দনিকতা ভেদ করতে পারে না। টাকা তোলা এক জিনিস, আর নাচগান করা আরেক জিনিস। এ দুইটা জিনিস একসাথেই হতে হবে এমন না। প্রথম আলো নাচগান না করেও টাকা তুলতে পারতো, টাকা তোলার জন্য নাচগান শর্ত ছিলো না। ঐ পরিমাণ টাকা প্রথম আলো নিজেদের ব্যাংক ব্যালেন্স থেকেও দিতে পারতো। অথবা স্রেফ চাঁদা তুলেও করতে পারতো। টাকা না তুললেও কোনও সমস্যা ছিলো না। জাতীয় একটি দুর্যোগে প্রথম আলোর নাগরিক আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেটাকে প্রথম আলো ভেট নজরানা দিয়ে রিভার্স করতে পারবে না।

উদাহরণ ২: দেশ যখন রাজনৈতিক সমস্যার একেবারে অতল গহ্বরে তখন একদল দেশপ্রেমিক গেছেন জাতীয় পতাকার ব্লক বানিয়ে বিশ্বরেকর্ড করতে। এখানে অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েল্টি কোথায়। আমি বরং আর না বলি। আপনারা দেখুন তো এখানে অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েলটি কোথায় ধরতে পারেন কিনা? এটার নৃশংসতা কোথায় আগে বের করুন। এরপর চিন্তা করুন যে তারা কোন নান্দনিকতা ব্যবহার করলেন সেই ক্রুয়েলটি ঢাকার জন্য। বোঝা খুবই সহজ। কেন এই অ্যাস্থেটিক ক্রুয়েলটি তাদের করতে হোলো। কেননা, দেশপ্রেমের আসল যে পরিচয় তাদের এই সময় দিতে হতো সেটি তারা করতে অপারগ, তাদের স্বার্থ জড়িত, বিসনেস ল-এর ভাষায় এজেন্সি কনফ্লিক্ট হয়ে যাবে। কিন্তু আবার দেশপ্রেমের যে সোল প্রোপ্রাইটরশিপ সেটা ছাড়লেও তো চলবে না, সেটাই তো মূল ব্যবসা। কাজে কাজেই বিশ্বরেকর্ডের নান্দনিকতা।

গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ফালা ফালা হয়ে গেছে। আর কোনও দেশ এতোগুলো নিরো একসাথে প্রডিউস করতে পারেনি।

One thought on “চেতনার বিশ্বরেকর্ড

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s