http://www.hrwbd.org/2013/03/indias-war-in-bangladesh.html#sthash.CmccuUG1.dpuf
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সচেতন নাগরিকসমাজ বারবার অনলাইনে অজস্র লেখায় একথা বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে জাতিকে সতর্ক করে চলেছেন _ যারা এখনো বুঝতে পারছেন না যখন বুঝতে পারবেন নিজের চোখের জলের মাঝে স্বজন হারানোর বেদনায় নিজেই একদিন ভাসতে হবে, এবং সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়। ভারতীয় বর্ণবাদি হিন্দুরা কোনদিন আমাদের বন্ধু হবে _ এটা কোন মুসলিম বিশ্বাস করতে পারে না। কারণ এটি বিশ্বাস করলে কোরআনকে অবিশ্বাস করতে হয় যা একজন মুসলিম দুঃস্বপ্নেও করতে পারে না। কোরআন অনুযায়ী ইয়াহুদ-নাসারা-মুশরিক কখনো মুসলিমদের চিরস্থায়ী খাঁটি বন্ধু হতে পারে না।
আজ স্বাধীন বাংলাদেশের ওপর ভারতীয় আগ্রাসনের যে অশুভ ধূসর ছায়া আমরা দেখতে পাচ্ছি তা কি ‘রাজনীতিবিদ’ নামের কিছু সুবিধাবাদির আঁতাতনির্ভর বিশ্বাসঘাতকতার ফসল নয় ? চেতনার মায়াবড়ি খাইয়ে অবশ করে রেখে দিব্যি দিনেদুপুরে পুরো দেশটাকে নিজস্ব প্রভাববলয়ের চাদরে ঢেকে দিয়েছে ভারতীয় বর্ণবাদি আধিপত্যকামীরা। আবুল মাল আবুল মুহিতের মত লোক ভারত-বাংলাদেশে অভিন্ন মুদ্রা চালু করার পর্যন্ত প্রস্তাব দেয়ার দুঃসাহস পাচ্ছে আজ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অধ্যূষিত সুন্দরবনের মত সবেধন নীলমণি একটি গৌরবময় জাতীয় সম্পদকে ভারতীয় তাঁবেদার সরকারের নির্লজ্জ মেরুদন্ডহীন সহযোগিতায় ভারতের হাতে তুলে দিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুজাতা সিংহের মত মামুলি অনভিজ্ঞ ভিনদেশি একজন আমলা এসে একটি স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করে জাতীয় নির্বাচনের মত একান্ত স্পর্শকাতর আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ক্ষমতায় কে আসবে না আসবে সে বিষয়ে হাসিমুখে তাচ্ছিল্য সহকারে নির্দ্বিধায় খোলাখুলি কথা বলার স্পর্ধা দেখাতে সাহস পাচ্ছে !
খালি এক কুমীরের বাচ্চার মত ‘৭১ এর জুজু বার বার দেখালে হবে না আজকের প্রেক্ষাপটে ভাবতে হবে। কেন গণচীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও ‘স্বাধীন’ দেখতে চান সে কথা চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বাংলাদেশের আপামর জনতার এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজিত হয়েছে। ‘৪৭ এ দেশবিভাগের আগে উত্তর ভারতীয় তথা দেশবিভাগের পরে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের স্বার্থের ব্যাপারে অমানুষিকভাবে আমানতের খেয়ানত করায় পর্যায়ক্রমে ২৪ নছর পর জালিমের হাত থেকে বাঁচার আকাঙ্খায় আসে মুক্তিযুদ্ধ। ‘৭১ পরবর্তী সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে একের পর এক নানা কৌশল জনগণের আমানতই খেয়ানত করে গেছেন। আর বঙ্গবন্ধু ? ‘৭১ এ যে ভূমিকা গণমানুষের মুক্তিতে তিনি রেখেছিলেন পরবর্তীতে ঠিক তার বিপরীত ভূমিকা রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করে স্বৈরাচারিতার নতুন ধারাবাহিকতার সাড়ম্বর উদ্বোধন করে গেছেন। শেখ মুজিবুর রাহমান যে মাত্রায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করে গেছেন একমাত্র আজকের শাসকদল ছাড়া আর কোন আমলে কোন শাসকগোষ্ঠিই সে কল্পনাতীত উচ্চতায় আরোহণ করতে পারেনি। এসব সত্য আমরা জেনেও বলতে চাই না, ভাবতে চাই না। আবেগে অন্ধ হয়ে আমরা ব্যক্তিপূজায় লিপ্ত হয়ে যাই অথচ এটা শিরক, শিরক কখনো আল্লাহর কাছে ক্ষমার যোগ্য নয়।
_________________
‘৭১ এ নিঃসন্দেহে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অবর্ণনীয় জুলুমের শিকার হয়েছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। ভারতীয়রা সেসময় সাহায্যও করেছিল আমাদের। কিন্তু সেটা কি ভারত অনেকটাই নিজের স্বার্থে করে নি ? যদি নাই করে থাকে তাহলে কেন ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ’ তকমা দিয়েছিল ? কেন মুজিবনগর সরকার বা স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ না করিয়ে নিজেদের সামরিক বাহিনীর কাছে করিয়েছিল ? কেন পশ্চিম পাকিস্তানিদের অস্ত্রসমর্পণের পর স্বাধীন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রাপ্য হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র তারা আমাদের ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিনা বাধায় ভারতে নিয়ে গিয়েছিল ? আজ কেন এক একটি সেক্টরে হাজার হাজার কোটি টাকা ভারতীয় বণিক গোষ্ঠি লুন্ঠন করে নিয়ে যেতে পারছে চিন্তা করতে হবে। এই দূর্বৃত্তদের আবার এক সাগর রক্তের বিনিময়ে হলেও তাড়াতে হবে, জাতীয় সম্পদ যথেচ্ছ লুটপাটে বাধা দিতে হবে। ‘৭১ এ আমাদের নির্যাতিত পূর্বপুরুষ মুক্তিযুদ্ধ করে হানাদার পাকিস্তানিদের হটিয়ে দিয়েছিল সেই অতীত গৌরবের ধোঁয়ায় সারাক্ষণ হেরোইনের মত নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার কিছু নেই। সেটা অবশ্যই আমাদের গৌরবময় অতীত, কিন্তু সেটা তখনকার বাস্তবতা। আজকের বাস্তবতা হচ্ছে ভারতীয় আগ্রাসন এবং ‘৭১ এর চেতনায় আচ্ছন্ন হয়ে অবশ পড়ে থেকে ২০১৩ তে ভারতীয় বুটের লাথি খাওয়া ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ না। ভারতীয় তাঁবেদার গোষ্ঠির অন্ধ আনুগত্য ২০১৩ তে দেশপ্রেমও না। কি সেটা বিবেকবান পাঠকই বুঝে নেবেন।
আগেও বলেছি এখনও বলছি _ শাহবাগ ভয়ংকর সাম্রাজ্যবাদি এক মহাচক্রান্তের ক্রীড়নক মাত্র। প্রতিবেশী একটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের বাণিজ্যিক-সামরিক ভারসাম্যমূলক আধিপত্যবাদের প্রাথমিক পর্যায় বিনা বাধায় অতিক্রম করার জন্য সাংষ্কৃতিক ট্রোজান হর্স। এটাকে জাতির চোখের সামনে রেখে ধোঁকার বিভ্রান্তি-কুয়াশা সৃষ্টি করে জাতিকে অতি সহজে শতধাবিভক্ত করে সর্বব্যাপী সংঘাত-গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির মাধ্যমে মহানৈরাজ্যের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে পর্দার অন্তরালে নিজেদের অঘোষিত অঙ্গরাজ্য হিসেবে ধারাবাহিক শোষণের অভয়ারণ সৃষ্টির রাক্ষুসে মতলব। জাতি সময়ে সতর্ক হয়ে জেগে না উঠলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ আরো অকার্যকর হয়ে পড়বে। ক্যান্সারের জীবাণু প্রাইমারি স্টেজে প্রতিরোধ করা যতটুকু সহজ _ লাস্ট স্টেজে তত বেশি কঠিন। পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রকৃত স্বাধীনতার চেতনায় জেগে উঠতে হবে, শাহবাগি চেতনার হেরোইন খেয়ে ফার্মের মুরগির মত ঝিমোলে হবে না।
‘৪৭ এ প্রেক্ষাপটে নিজেদের জাতিগত স্বার্থ গঠিত পাকিস্তানের দেশপ্রেম কিন্তু ‘৭১ এ এসে শেষ হয়ে যায়। ‘৭১ এর প্রেক্ষাপটে ‘৪৭ এ যে স্বপ্ন দেখা হয়েছিল তা বাংলার জেগে ওঠা মানুষের কাছে দুঃস্বপ্ন পরিণত হয়। ‘৭১ পরবর্তী শাসকদের ক্রমাগত ব্যর্থতার ধারাবাহিকতার একটি চুড়ান্ত পর্যায়ে বাংলাদেশ আজ ভারতীয় আগ্রাসনের নির্মম শিকার। ভারতের হাতে একদিন মাতৃভূমি তুলে দিতে হবে এজন্য নিশ্চয় ‘৭১ এ মুক্তিযোদ্ধারা সর্বস্ব বাজি রেখে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনেন নি। কাজেই আমাদের এবার জেগে উঠতে হবে। যে যুক্তিতে ‘৭১ এ পাকিস্তানকে এই ভূমি তুলে দেই নি, ২০১৩ তে সেই একই যুক্তিতে ভারতকেই দেবো না। ‘৭১ এ পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর রাজাকারদের যেমন ‘না’ বলেছিলাম _ ঠিক তেমনি ২০১৩ তে ভারতীয় আগ্রাসী হানাদারদের দোসর যারা তাদেরও সমস্বরে ‘না’ বলতে হবে অযুত কন্ঠে। আল্লাহর কাছে স্বাধীনতা চাইতেও হবে, আমাদের সরকারগুলো বঙ্গভবনে শপথবাক্য পাঠ করার ভড়ং করে একের পর এক লুটপাটের নতুন নতুন রেকর্ডই সৃষ্টি করে গেছে।
আরেকটি ব্যাপার হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সাঃ) কে যারা গালিগালাজ করে তারা নিদারুণ অভিশপ্ত। তারা নিজেরা অভিশপ্ত, এমনকি তাদের অভিশপ্ত বদ আমলের কারণে তারা যে জনপদে বসবাস করে সেই জনপদও শংকামুক্ত নয়। সেজন্যে তাদের ও তাদের আশ্রয়প্রশ্রয়দাতারাও অভিশপ্ত, আল্লাহর আজাব-গজবের ভাগীদার। কোন যুক্তিতেই এই ধরণের অভিশপ্ত লোকদের সমর্থন করা যাবে না, নীতিগতভাবে না বা অন্য কোনভাবে না। করলে সারা দেশ খোদাঈ আজাবগজবের সম্মুখীন হতে হবে। খোদাদ্রোহিতা একটি অভিশপ্ত বিষয় যেটির কারণে লক্ষ বছর ইবাদাতও মূল্যহীন হয়ে যায়।আল্লাহ আমাদের গোটা জাতিকে এই অভিশাপ থেকে হেফাজত করুন।
ইনশাআল্লাহ তাহলেই আল্লাহর সাহায্যে অচিরেই আমরা আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে সমর্থ হবো। অন্যথায় ঔদ্ধত্য-অবাধ্যাচারিতা-অনাচার এগুলো খুবই দ্রুত কুফরির বিরুদ্ধে নিয়ে যাবে এবং ফলস্বরুপ যে আজাব আসবে তার ভাগীদার প্রতিবাদ-প্রতিবিধান না করায় তা আমাদেরও ছেড়ে কথা বলবে না।