এ অরাজকতা থামাতে হবে – Shah Alam

Shah Alam

না ! আর থাকতে পারলাম না। ছোট ছোট আশংকা গুলোর বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি । মস্তিস্কে আরও ভয়াবহ শঙ্কা বাসা বেধেছে। দেশ কি তবে যুদ্ধে উপনীত ? আবার যুদ্ধ ? ভাবতেই ভয়ানক আতংকে চমকে উঠছি  প্রতি মুহূর্তে । তাহলে কি বাঙ্গালী জাতি আরেকবার ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠবে ক্ষমতার উৎকট উষ্ণ স্বাদের জন্য ? প্রতিদিন মৃতের মিছিল ভারি হচ্ছে । দেশ- জনপদ অরাজকতার কিনারায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করছে । দাউ দাউ করে জলছে গাড়ী-বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা। কৃষকরা সোনার ফসল নিয়ে কেঁদে কেঁদে ফিরছে । অশান্তির আগুনে পুড়ছে গার্মেন্টস শ্রমিক। মালিকরা দেউলিয়াত্তের হাতছানি দেখতে পাচ্ছে । ন্যুনতম সম্মানবোধও বিসর্জন দিয়ে স্রমিকদের মতই রাস্তায় নামছে । কি এক ভয়ানক জাঁতাকলে সবাই পিষ্ট হচ্ছে । না ! অসহ্য । শৈত্য প্রবাহের মধ্যেও শরীর ঘামছে ।

মানবাধিকার কর্মীরা একবারও ভাবছেনা সহিংস কর্মকাণ্ড ও প্রতিঘাত প্রতিনিয়ত মানবাধিকার পদদলিত করছে । নারি নেত্রীরা ভাবছেনা দেশ-জনপদের এই সংঘাত অনেক নারিকে বিধবা করছে, হয়ত পেটে অনাগত সন্তান, কি জবাব দেবে তার শিশুকে ? কই তার বাবা ? তৈরি হবে আরেকটি অসুস্থ প্রজন্ম । আরেকটা শ্রেণিসমাজের আত্মপ্রকাশ ঘটবে । সপ্নের বাংলাদেশ মধ্যযুগে বন্দী হবে । না, এসব তারা ভাবছে না । হয়ত ধ্বংসযজ্ঞের পরে ভাববে । বিশাল হল-রুমে সংবাদ সম্মেলন করে বলবে “ বাল মে কুছ কালা হ্যাঁয়” । ধিক্কার তোমাদের ।

ইতিহাসবিদরা ভাবছে অন্যকথা । পুরনো ইতিহাস অনেক আগেই বিকৃত হয়ে গন্ধ ছড়িয়েছে । তাতে  ঘৃণা বেড়েছে বৈকি।  আবার নতুন ইতিহাস হবে । মুক্তিযোদ্ধা, বীর সৈনিক, রাজাকার, সংগ্রাম কমিটি, প্রতিরোধ কমিটি নামে জাতিসত্তা খণ্ডবিখণ্ড হবে। ইতিহাসবিদদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় উঠে আসবে গা শিওরে ওঠা বীভৎস সব চিত্র । কোন এক তরুণ বুদ্ধিজীবী কালজয়ী সিনেমা বানাবে । বিশ্ববাসী স্তম্ভিত হবে । একদল গবেষক বলবে, ২ লক্ষ মারা গেছে, পঙ্গু হয়েছে ২০ লক্ষ, ৭০ হাজার নারি সম্ভ্রম হারিয়েছে, ৩০ লক্ষ শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। নতুন করে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ, প্রত্যক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ কোটি আর সমগ্রিক অর্থনীতি দুর্ভিক্ষে পতিত । আরেক দলের প্রতিবেদন আরও ভয়াবহ। ইতিহাস হয়ত আরও নির্মম হবে । জাতিসংঘের ত্রান নিয়ে আবার কাড়াকাড়ি শুরু হবে। ইউনিসেফের সরবরাহকৃত শিশু-খাদ্য এনজিও গুলো হস্তগত করে বস্তাপচা খাবার বিতরন করবে। ভিক্ষা নির্ভর অসুস্থ রোগাক্রান্ত একটি জাতি তৈরি হবে।  বিজয়ী পক্ষ বিরোধীদের সব অপকর্মের দায় চেপে দেবে। একদল সুশীল তাতে মৌনসূচক সম্মতি দেবে। নতুন নতুন চাটুকার তৈরি হবে। হলুদ খ্যাতির আশায় বিকৃত ইতিহাস সৃষ্টি হবে। আরেক প্রজন্ম এসে বিচার দাবি করবে। আবার হানাহানি- সংঘাত হবে । এ যেন এক নিরন্তর খেলা যা চক্রাকারে ঘুরে ফেরে আসে। শুনেছি জলবায়ু পরিবর্তনের মত মহাদুর্যোগগুলো চক্রাকারে আসে নির্দিষ্ট সময় পরপর। দুর্যোগপ্রবণ বাঙ্গালী জাতি বোধহয় ভাঙ্গা-গড়ার শিক্ষাটা সেখান থেকেই নিয়েছে। কবি সাহিত্যিকেরা এরকম কথা দিয়েই অমর সাহিত্য রচনা করবে সিক্ত ভালোবাসা আর অর্থের মোহনিয় আশায়। সাহিত্যে পুতে রাখবে বিভক্তির উর্বর বীজ। বাঙ্গালীদের এই নিরন্তর হোলি খেলা চলতেই থাকবে ।

ইতিহাসবিদদের মানবিকতা আর নৈতিকতার চিন্তা করা চলেনা। তাতে পেটে ভাত জোটে না । মনের মাধুরী মিশিয়ে নতুন নতুন ইতিহাস বানিয়ে হইচই ফেলে দিতে পারলেই হোল। অর্থ, সুনাম, যশ একেবারে হুড়োহুড়ি। সে কেন মানবিকতাই গা ভাসাবে ? দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অনাচার-ব্যাভিচার, অভাব-দুর্ভিক্ষ এসব সাহিত্যের অমুল্য মাল-মসলা। এসব না ঘটলে সাহিত্যিকের রক্ত গরম হয়না। আবেগ অংকুরিত হয়না । শুধু গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়ে মগজে বুদ্ধির বজ্রপাত হয়না। ঘটার পরে টের পায় । বুদ্ধি মাথা থেকে কলমের আগায় জোয়ারের মত প্রবাহিত হয়। গরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে তোমরা সে রকম একটি সময়ের জন্যই করনীয় ঠিক কর। মনুষ্যত্বকে নেশাগ্রস্থ করে বিকৃত সুখ নাও। তোমরা কখনও অরাজকতা বন্ধ করতে পারনি, এবারো করতে হবেনা।  মানুষ বৃদ্ধ হলে রক্তের তেজ কমে যায়, দুর্বল হয়ে পরে । প্রবল প্রতাপশালীও ঠাণ্ডা হয়ে যায়। জাতির যদি বৃদ্ধকাল থাকে তবে বাঙ্গালী জাতি হয়ত বৃদ্ধ হয়েই শান্ত হবে। ততদিনে লাল সবুজের এই দেশ স্তব্ধ হয়ে যাবে। বীভৎস-বিভীষিকাময় এক জনপদ প্রত্যক্ষ হবে । দিনের আকাশে শকুনের আনাগোনা, রাতে অজস্র লোকালয়ে আলো জ্বলবেনা, শুনশান নিরবতার মাঝে শিয়াল কুকুরের মল্ল-যুদ্ধ চলবে ।

সত্যই যদি এরকম ঘটে! এই ভাবনা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে অজস্র মানুষকে। যারা রাষ্ট্রের অতিসাধারন তাদেরকে। আর্ত চিৎকারে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে লক্ষ্য লক্ষ তরুনের। জাতির অবিভাবকরা সম্বিত ফিরে পাচ্ছেনা । কে হবে কাণ্ডারি?  পথহারা জাতিকে কে এসে বাঁচাবে? সবায় হয়ত চেয়ে আছে আরেকজন বঙ্গবন্ধু আসবে। কিন্তু সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই । মানবাধিকার কর্মী নারি নেত্রী, সুশীল, কবি-সাহিত্যিক তোমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে সামনের কাতারে। দেশের তৃনমূল জনসাধারন শান্তি চায় । তাদের পাশে দাড়াও। রাজনিতিকে কলুষমুক্ত কর। সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে রাজনিতিকদের সমঝোতার চাপ দাও। একবারের জন্য তোমাদের মানবিকতাকে জাগাও । অন্তত এবার একটি ভাল কাজ কর । বিপন্ন  জাতি তোমাদের কাছেই আশ্রয় চায় ।

পাদটীকাঃ নোবেল জয়ী ড. ইউনুস ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্রতাকে জাদুঘরে পাঠাতে চেয়েছেন। তরুণ প্রজন্মকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর উৎকর্ষতার সাথে সাথে সামাজিক কল্পকাহিনীর কথা বলেছেন। মানুষের জন্য কল্যাণকর অতি উচু মানের সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখতে বলেছেন। রাজনীতি যদি গণতন্ত্রের জন্য হয়, মানুষের কল্যাণের জন্য হয় তবে রাজনিতিকরাই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। রাজনীতির সৃষ্টি সে জন্যই । সকল রাজনিতিক একসাথে হাত রাখ, এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে সেখান থেকেই বেরিয়ে আস তাতে ক্ষতি সামান্যই হয়। নয়ত জাতির জন্য বিভীষিকা অপেক্ষা করছে। ড. ইউনুসের সোশ্যাল ফিকশান উল্টে যাবে। ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্রতার পরিবর্তে রাজনিতিকদের মানুষ যাদুঘরে পাঠাবে। ভয়ংকর বীভৎসতার নিদর্শন স্বরূপ।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s