by অসিউর রহমান
কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, এই নাতিদীর্ঘ জীবনে আমি সবচেয়ে বিচিত্র, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বিষয় কী দেখেছি। আমি এতটুকু দ্বিধা না করে বলব, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ।
তার কারণ, যে বয়সটি হচ্ছে মাতৃভূমিকে গঠন করার বয়স, সেই বয়সে তারা ধ্বংস করে দেশকে, তারা এই মাতৃভূমিকে প্রতি মুহুর্তে ক্ষত বিক্ষত করছে। যে বয়সে একজন তরুণের মুক্তিযুদ্ধের ফসল দেশকে যারা গঠন করেছে, তাদের কাজে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা অনুপ্রাণিত হয় সেই মুক্তিযুদ্ধের ফসল দেশকে ধ্বংসকারীদের দিয়ে। যে বয়সে তাদের স্বপ্ন দেখার কথা দেশের বড় বড় লেখক, শিল্পী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, সাংবাদিককে নিয়ে, সেই বয়সে তারা আনুগত্য মেনে নিয়েছে সেই সব মানুষের, যারা রক্ষী বাহীনি তৈরি করে বাহাত্তর থেকে পচাত্তুর পর্যন্ত এই দেশের লেখক, শিল্পী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী আর সাংবাদিকদের হত্যা করেছে!
যে বয়সে তাদের পড়াশোনা করার কথা জীবনের নীতিবোধ তৈরী করার কথা, সেই বয়সে তারা যে শুধু এই অবিশ্বাস্য আনন্দ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে রাখে তা নয়, তারা এগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। যে বয়সে তাদের মুক্তচিন্তা শেখার কথা, গান গাওয়ার কথা, নাটক করার কথা, আদর্শ নিয়ে ভাবালুতায় ডুবে যাওয়ার কথা, সেই সময় তারা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে নিজেদের আটকে রাখতে শেখে, সাম্প্রদায়িক হতে শেখে, ধর্মবিদ্বেষী হতে শেখে। যে বয়সে ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগা ও পবিত্র, নিস্কাম ও সভ্য ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা সেই অনুভূতিগুলোকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে, গোপন ভিডিও ধারন করে বাজারজাত করে—সে জন্য তারা কত দূর যেতে পারে, সেটা আমরা সবাই নিজের চোখে দেখেছি, সেই ভয়ংকর কাহিনি আমি সবাইকে বলতেও দেখেছি! এই সামুতেই আমুলীগার অমি পিয়ালের কথা কে না জানে, ব্লগস্ফিয়ারের সবচেয়ে ভয়াবহ গালিবাজগুলোর দল কোনটা কে না জানে?
যখন এই বাংলাদেশের সব মানুষ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন ছাত্রলীগ নামে এই সংগঠনের হতভাগ্য তরুণদের নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারন ছাত্রদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য। খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাই, এখনো দেশের আনাচকানাচ থেকে তাদের আক্রমনের সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। আমার খুব জানার ইচ্ছে করে যে নেতারা তাদের বুঝিয়েছে, রাস্তায় নেমে হামলা করে মানুষের শরীর ক্ষতবিক্তর করতে হবে, নিজের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করতে হবে। সেই সব নেতা কি তাদের সন্তানদেরও পথে নামিয়েছে? আমি নিশ্চিত, সেটি ঘটেনি। আমি আগেও দেখেছি, এই নেতারা যখন তাদের কর্মী বাহিনীকে অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেয়, তখন তাদের সন্তানেরা ইংরেজি মিডিয়াম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, লন্ডনে পড়ে, প্রিমিও গাড়ি হাকিয়ে, চাঁদা’র বখরা পেয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে।
আমি অনেক চিন্তা করেছি, কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারিনি, কেমন করে বাংলাদেশের মতো রক্তস্নাত একটি দেশে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা নৃশংস পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, সেখানে একজন মানুষ মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ব্যাবসা করতে পারে! আমার মনে আছে, আমি বহুকাল পরে যখন প্রথম এই দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম, তখন ছাত্রলীগের তান্ডব দেখে একধরনের অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। —এর চেয়ে দুঃখের ব্যাপার আর কী হতে পারে?
একজন ছাত্র কেমন করে লীগ করে, তার একটি উত্তর অবশ্য আমি একবার খুঁজে পেয়েছিলাম। আমাদের স্কুলের একজন ছাত্র একবার আমাকে একটি এসএমএস করে জানিয়েছিল যে সে সোনিয়াকে, খুব ভালোবাসে এবং তার বিদ্যালয়ে ফেমাস হওয়ার খুব ইচ্ছে। তার ক্লাসের প্রধান আওয়ামী নেতার লোক এবং তাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সে যদি লীগ না করে, তাহলে তাকে সোনিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হবে না এবং তাকে বাটে ফেলে পিটানো হবে। সে জন্য সে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছে এবং এটি নিয়ে তার প্রচন্ড গ্লানী আছে। সেই এসএমএসটিতে আমি একজন মেরুদণ্ডহীন আতংকিত হতভাগা মানুষকে আবিষ্কার করেছিলাম। তার জন্য কোনো মমতা নয়, আমি করুণা অনুভব করেছিলাম। আমি ইচ্ছে করলেই সেই ছাত্রটিকে সাহায্য করতে পারতাম, তার নীতিহীন ক্লাস প্রধানের পরিচয় জানতে পারতাম কিন্তু আমি তার কিছুই করিনি—আমার রুচি হয়নি।
আমার মাঝেমধ্যে জানার ইচ্ছে করে, এ ধরনের কারণে কতজন তরুণ ছাত্রলীগের থ্রেট খেয়েছে—কোনো স্বপ্ন নয়, কোনো আদর্শ নয়, শুধু স্বার্থ, শুধু চাওয়া-পাওয়া। মাঝেমধ্যেই পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই, আওয়ামী লীগের নাকি অনেক অর্থবিত্ত, তাদের অনেক পাওয়ার। এই দলে যোগ দিলে নাকি সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া যায়, টেন্ডার পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা হল দখল করে রাখে, তাদের দল করলে সেই হলে সিট পাওয়া যায়। তারা কলেজ দখল করে রাখে, তাদের দল করলে সেই কলেজে ভর্তি হওয়া যায়। পত্রপত্রিকায় দেখি, পরিচিতদের কাছে শুনি, তাদের দল নাকি অত্যন্ত হিংস্র। আদর্শ ছাড়া কিংবা ভুল আদর্শের সংগঠন কি খুব বেশি দিন টিকে থাকতে পারে?
দীর্ঘদিন মিলিটারির শাসনে থাকার কারণে মানুষ যখন বিভ্রান্ত ছিল, তখন এই দেশে আওয়ামী লীগ ইলেকশনে অংশ নিয়েছিল। (কী লজ্জা!) যখন দেশের মানুষ গণতন্ত্রের ছোঁয়া পেতে শুরু করেছে, একটু বুঝতে শুরু করেছে তখন তারা নির্বাচনে হেরেছিল। উপায় না দেখে তখন তারা রাজাকর জামাতের ঘাড়ে চড়ে বসেছিল, প্রথমবারের মত তারা ক্ষমতা পেয়েছিল। দেশের মানুষ যখন আবার সজাগ হয়েছে, তখন আবার হেরেছে। এখন আবার ঘাড়ে উঠেছে। এই দেশে যদি ধ্বংস- ভাংচুর আর দলীয় নির্বাচন করেই ক্ষমতায় যাওয়া যায়, তাহলে তাদের জন্য পথটুকু খোলা আছে। আমার খুব আশা ছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দেশের মানুষের এত আগ্রহ, এত উত্তেজনা দেখে হয়তো এরা দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে—তারা করেনি। আমি খুব আশাহত হয়েছি যখন দেখছি রাজাকারদের বিচারের বিনিময় হার নির্ধারন করেছে দেশের গণতন্ত্রের সাথে!!!
আমি রাজনীতি ভালো বুঝি, আমার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ গুরুত্ব দিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমি একটা বিষয় খুব ভালো করে জানি, এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের ফসল বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ভবিষ্যত অস্বীকার করে আর কেউ কোনো দিন রাজনীতি করতে পারবে না। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর আর ৮২ – ৯০’র সেই কালো সময় আমরা পার হয়ে এসেছি, আর কেউ কখনো এই দেশের মানুষকে সেই অন্ধকার জগতে ঠেলে পাঠাতে পারবে না।
কাজেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মত দায়িত্বপালন করে তা দেখিয়ে কেউ সুবিধে করতে পারবে না, বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের বিচার করে এই গ্লানিময় অধ্যায়কে চিরদিনের মতো সমাপ্ত করে দিতে হবে এবং উন্নয়নের রাজনীতিকরতে হবে।
২.
আমার এই লেখাটি তোমরা যারা লীগ করো, তাদের জন্য। আমি জানি, এটি সম্পূর্ণ অর্থহীন একটি কাজ—আমার এই লেখাটি তোমাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে না এবং তোমরা যারা পড়ছো তারা আমার এই লেখায় বিভিন্ন অংশের বিরুদ্ধে এর মধ্যে নানা ধরনের যুক্তি দাঁড় করিয়েছো। শুধু তা-ই নয়, তোমাদের চরিত্র মোতাবেক—গালাগালি ও ব্যাক্তি আক্রমনে সম্ভবত এই লেখার বিরুদ্ধে বিশাল একটা প্রচারণা শুরু হবে। কিন্তু তবু আমার মনে হয়েছে, আমার এই কাজটুকু করা উচিত, তোমাদের কখনো যে সত্য কথাগুলো বলা হয়নি, আমার সেটা বলা উচিত।
তোমাদের কাছে আমার প্রথম যে প্রশ্ন সেটি হচ্ছে, তোমরা কি জানো আওয়ামী লীগ নামের যে রাজনৈতিক দলটি গড়ে উঠেছে, সেটি বাংলাদেশে প্রথম স্বৈরাচারী শাষন কায়েম করেছিল? যে মানুষটির ডাকে এই দেশ মাত্র ৯ মাসে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিল সেই মানুষটিকেই হত্যা করে ক্ষমতাচ্যুত করতে হয়েছিল? তোমরা কি জানো আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বা উন্নয়নের দল নয়, এটি স্বার্থপর রাজনৈতিক দল এবং এটি সব সময় অতীতমুখী ও ধ্বংসের রাজনীতি করে এসেছে? এই বাংলাদেশ যখন পাপীস্তানীদের বিদেয় করে সোনার বাংলা সৃষ্টি করার স্বপ্ন দেখছে, তখন তারা সেই স্বপ্ন ধ্বংস করেছে। আবার যখন এই দেশের মানুষ পাপিস্তান নামের দানবকে পরাস্ত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তখন তারা কলকাতায় গিয়ে নিরাপদে অবস্থান নিয়েছে? এখন যখন মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ করে থাকা দেশদ্রোহীদের বিচার করা হচ্ছে, তখন আবার আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অস্বীকার করে স্বৈরাচারী এরশাদকে সাথে নিয়ে গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে—সেটি ঘটেছে তোমাদের চোখের সামনে এবং তোমরা খুব ভালো করে জানো, সেখানে তোমাদের নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমার ধারণা, তোমরা যারা লীগ করো, তারা সম্ভবত কখনোই খোলা মন নিয়ে এই দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে কারও সঙ্গেই কথা বলো না। তোমরা সব সময়ই নিজেদের সঙ্গে নিজেরা কথা বলো, এবং দূর্নীতি ও আগ্রাসী আচরনের নীতি’তে একে অন্যকে উৎসাহ দাও, একে অন্যের ওপর নির্ভর করো কিন্তু তোমাদের দলের বাইরের মানুষেরা তোমাদের সম্পর্কে কী ভাবে, কখনোই তার খোঁজ নাও নাই। যদি খোঁজ নিতে, তাহলে হয়তো তোমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ছবি দেখতে পেতে। তোমরা সবিস্ময় আতংকে খেয়াল করতে, তোমরা যেভাবে যা কিছু করছো, তার সবকিছু স্বাভাবিক নয়।
তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছো, এই দেশের অজস্র সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে তোমাদের দলের দু-একটি পত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়া অন্য কোথাও তোমাদের সম্পর্কে একটিও ভালো কথা ছাপা হয় না। কিছুদিন থেকে বিস্ববিদ্যালের ছাত্র শিক্ষকদের মারধর বা পদ্মা সেতুর মত দূর্নীতির এবং সম্প্রতী দলীয় নির্বাচন করার যে প্রাচীন কর্মকাণ্ড করে চলছো, সেটি করে তোমরা যে নিজেরাই বিপদগ্রস্ত হতে শুরু করেছ, সেটা কি লক্ষ করেছো? গতকালই আমি খবরে জানতে পারলাম, আদালত বিশ্বজিৎকে হত্যার জন্য তোমাদের দায়ী করছে, তোমাদের গোমর ফাঁস করছে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এটি ধীরে ধীরে আরও বাড়তে থাকবে।
তোমরা নিজেদের জন্য যে জীবন বেছে নিয়েছো, তার মধ্যে কি বিন্দুমাত্র মর্যাদা আছে? আত্মতুষ্টি আছে?
আজ থেকে কয়েক যুগ আগেও এই বাংলাদেশ যে রকম ছিল, এখন সেই বাংলাদেশ নেই। এই বাংলাদেশ অনেক পাল্টে গেছে। নতুন বাংলাদেশ বাকশালের বাংলাদেশ নয়। আওয়ামী লীগ বা ইসলাম বিদ্বেষী বুদ্ধিজীবিদেরও নয়। নতুন বাংলাদেশ হচ্ছে মুক্তচিন্তার পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক এবং ভবিষ্যতমূখী উন্নয়নকামী একটা বাংলাদেশ। এই নতুন বাংলাদেশের মানুষেরা অসাধারণ, তারা একে অন্যের ধর্মকে সম্মান করতে শিখেছে, একে অন্যের সংস্কৃতি আর মূল্যবোধকে রক্ষা করতে শিখেছে, একে অন্যের চিন্তাকে মূল্য দিতে শিখেছে। এই নতুন বাংলাদেশে মানুষে মানুষে কোনো বিভাজন নেই। দেশ-জাতির সীমারেখা পর্যন্ত ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। আর তোমরা দাড়ি-টুপি দেখলেই রাজাকার বলে সেই সম্প্রীতি নষ্টের পায়তারা করছো।
তাই এই নতুন বাংলাদেশে যখন কেউ ধর্ম দিয়ে মানুষকে বিভাজন করে রাজনীতি করতে চায়, অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিতে চায়, চুরি চামারি করে প্রতিপক্ষকে দোষারপ করার রাজনীতি করতে চায় এবং রাজাকারের বিচার দেখিয়ে সুবিধা আদায় করতে চায়, এবং প্রতিহিংসা ও অতীতমূখী রাজনীতি করতে চায়, দেশকে উন্নয়নবিমুখ করতে চায়, বাংলাদেশের মানুষ তখন তাকে পরিত্যাগ করে।
আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দল তাই হচ্ছে বাতিল হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দল—নতুন বাংলাদেশে এই দলগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
আমি জানি, যদিও আমি এই লেখাটি লিখেছি যারা আওয়ামী লীগ করে তাদের উদ্দেশে কিন্তু তারা আসলে আমার একটি কথাও বিশ্বাস করবে না। যদি বিশ্বাস করেও ফেলে, তার পরও তারা কিছু করবে না। কারন এ ধরনের রাজনৈতিক দল তৈরিই করা হয়, স্বার্থপর লোভীদের কাল্ট হিসেবে, অনেক লোভীরা দলে ঢুকে মিলেমিশে আকাম করে। কিন্তু দলে যোগ দিয়ে যদি কিছুটা প্রায়শ্চিত দরকার, এমন বোধ হয়, তবু তারা আর দল থেকে বের হতে পারে না। অভিশপ্ত প্রেতাত্মার মতো এক অন্যকে আঁকড়ে ধরে, এবং অন্যায় অপরাধ করেই টিকে থাকতে হয়।
যারা এখনো আওয়ামী লীগে যোগ দাওনি, তারা হয়তো এই লেখাটি পড়ে একটুখানি ভাববে। যখন তাকে এই দলে যোগ দেওয়ার কথা বলবে, হয়তো তারা একটিবার চিন্তা করবে, আমাদের এই ভালোবাসার দেশটির গণতন্ত্রকে যারা টুঁটি চেপে হত্যা করতে চেয়েছিল, আজো দেশের উন্নয়ন স্তব্ধ করে দেয়, শুধু হিংসা আর ননপ্রোডাক্টিভ রাজনীতি করে, আমি কেন সেই দলে যোগ দেব? দেশকে যখন ভালোবাসার কথা, তখন কেন আমি দেশের সঙ্গে বেইমানি করব?
মাতৃভূমিকে ভালোবাসার, মাতৃভূমিকে গড়ে তোলার তীব্র আনন্দ যারা উপভোগ করেনি, যারা ভবিষ্যতেও কোনো দিন অনুভব করতে পারবে না, আমি সেসব হতভাগ্য মানুষের জন্য গভীর করুণা অনুভব করি।
—-
(ডঃ জাফর ইকবালের একটি লেখার কাঠামো’র ভেতর থেকে মুলভাবে কিছুটা পরিবর্তন এনে লেখা)