খোমেনী ইহসান:
ভাইয়েরা ও বইনেরা বুঝতেছে না যে বাংলাদেশকে হীনস্বার্থে যে দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে তাতে করে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছ আইনগত উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিচার, ক্ষমতা হস্তান্তর, জাতীয় প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতির বিবাদগুলান মীমাংসা করা উচিত ছিলে। কিন্তু একপক্ষ চাচ্ছে ইসলামবিরোধী গ্লোবাল পরিস্থিতি ও ভারতের সম্প্রসারণবাদী নীতির মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে হত্যা,জখম ও বন্দিত্বের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে নির্মূল করে দিতে।আরেক পক্ষ ইসলামের দোহাই দিয়ে যুদ্ধাপরাধ ও ভুল রাজনীতির অভিযোগগুলানকে ককটেল-হরতাল-অবরোধ দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।
মুশকিল হলো উভয়ে পক্ষের এই অগ্রহণযোগ্য কাজের কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন রক্ত ঝরেতেছে। অনেক গুরুতর ঘটনা ঘটতেছে। সব কিছু ভেঙে পড়ছে। খোদার বিচারপতিদের ভূমিকাও যুব সংগঠনের ক্যাডারের মতো। এ অবস্থায় মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। গুজব আর প্রচারণায় সয়লাব দেশ। আবদুল কাদের মোল্লাকে কি কসাই কাদের হিসেবে ফাঁসি দেয়া হলো? তার এই ফাঁসি দিতে গিয়ে বিচার করা হলো নাকি প্রতিশোধ নেয়া হলো? দুই পক্ষের প্রচারণা থেকে বুঝার উপায় নাই। মোল্লা ও মুক্তিযুদ্ধকালে ক্ষতিগ্রস্ত উভয়ে হয়তো সত্য বলেছে। কিন্তু সরকার ও জামায়াত তো মনে হয় মিথ্যার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ। যেমন তারা হত্যা ও নাশকতার প্রতিযোগিতা করছে। গণমাধ্যমগুলান এখানে ভাগ হয়ে গেছে। উভয়েই রক্ত চায়। কালো হরফে ছাপা হচ্ছে লাল রক্তপাতের ইশতেহার।
আমরা দেখছি এই যে গণজাগরণ মঞ্চ, আ্ওয়ামী লীগ ও নাগরিক সমাজ এরা কিন্তু রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর ফ্যাসিবাদ কায়েমের লক্ষ্যে মাঠে গড়াগড়ি করতেছে। আর আছে জামায়াত-শিবির। তারা সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য সহিংসতা করছে এবং নিজেরো গণহত্যার শিকার হচ্ছে।মুশকিল হলো আমাদের নিয়তি এই দুই পক্ষের এ্যাকশন, রিএ্যাকশনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে। দেশে যেভাবে রক্তপাত হচ্ছে, নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে, খোরাকির দাম বাড়ছে তাতে করে দেশে চরম অসন্তোষ ও হতাশা তৈরি হচ্ছে।আমরা ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জেনেছি ছাত্রলীগ ও যুবলীগ, সরকারপন্থী পুলিশ-আমলাদের মধ্যে ভীতি তৈয়ার হয়েছে। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। কেউ আবার পালানোর চেষ্টা করছেন।
অন্য যারা যেতে পারছেন না তার ভয় পেয়ে আগ্নেয়াস্ত্র বহন শুরু করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ কর্মীরা, মহানগর ও শহর-বন্দরে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিক লীগ নেতাকর্মীরাও অস্ত্র ধারণ করেছেন। তাদের যে সরকার অস্ত্র দিয়েছ তাও পুরো সত্য নয়। তাদের ভীতিকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় পক্ষ অস্ত্র দিচ্ছে।
অন্যদিকে বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদল ও জামায়াত-শিবিরের লোকেরা ব্যাপকতর হত্যা, পঙ্গুত্ববরণের শিকার হয়েছে। তারা কেউ ঘরে থাকতে পারছে না। ফেরার জীবন যাপন করছে। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যে কেউ কেউ অস্ত্র ধারণ করছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী অঞ্চলে এই ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আমরা ধারণা করতে পারি সারা দেশে উভয় পক্ষেই অস্ত্র ধারণের তাগিদ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এবং সেক্যুলার ও ইসলামী সন্ত্রাসবাদীরা এ অবস্থার সুযোগ নিতে চাইছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সেক্যুলার সন্ত্রাসবাদের প্রধান মদদদাতা ভারতের অবস্থান প্রকাশিত হয়েছে। অতিসম্প্রতি আবার পাকিস্তানের তালেবানের একটি বক্তব্য পাওয়া গেল। তারা পাকিস্তান বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু তারা যে বাংলাদেশে অস্ত্র ও মতবাদ রফতানি করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নাই।
এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো গেরিলাযুদ্ধের বাস্তবতা বিচার করলে প্রায় সমতলভূমির বাংলাদেশের অবস্থা নিরাপদ মনে হতে পারে। কিন্তু ঘনবসতি ও মানবজঙ্গল আকীর্ণ বাংলাদেশ আরবান গেরিয়া ওয়ারফেয়ারে উর্বর ময়দান। এখানে যদি একবার ভারি অস্ত্র ঢুকে যায় তবে পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
আমরা যে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি-সেনাবাহিনীকে যোগ্য ও দক্ষ মনে করতেছি, সামরিক সক্ষমতার কথা চিন্তা করলে তাদের নিয়ে আমাদের হতাশ হতে হবে। তারা নিরস্ত্র লোকদের মিছিল-সমাবেশ ও ককটেলবাজিকে ছত্রভঙ্গ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু সম্মুখ সমর বা ভারি অস্ত্রের চোরাগোপ্তা হামলা মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা তাদের আছে কি না এটা বেশ প্রশ্নবিদ্ধ।আমরা দেখতেছি ক্যান্টনমেন্টগুলান ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন স্থাপণাতেই সন্ত্রাস মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাই। আমরা প্রতিদিন উভয় পক্ষে যাদের এতো এতো উস্কানি দিতে দেখছি তাদের না আছে নিরাপত্তা, না আছে শারীরিক সক্ষমতা। যদি সন্ত্রাস জন্ম নেয়ার মতো পরিস্থিতিকে এখন নিয়ন্ত্রণ করতে উভয় পক্ষে সমঝোতা না হয় তবে সবাইতো নিরাপত্তাহীন হয়ে যাব।
কাজেই আমি মনে করি সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও একটা উদ্যোগ নেয়া দরকার। যা কিছু হওয়ার হয়েছে। যথেষ্ট হয়েছে। এখন-
১. সব পক্ষের সন্ত্রাস-হত্যা-সহিংসতা বন্ধ করা হোক।
২. বিচার্য বিষয়গুলান আন্তর্জাতিক উদ্যোগে সহীহভাবে নিষ্পত্তি করা হোক।
৩. বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে দিয়ে নতুন সংবিধান সভার জন্য ভোট অনুষ্ঠিত হোক।
৪. নতুন সংবিধান গঠিত হলে তার অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বশীল নির্বাচিত হোক।
৫. নতুন সরকার ন্যাশনাল রিকন্সিলেশন কমিশনের মাধ্যমে ক্ষমা, দয়া ও দরদ কায়েম করুক।