by Jahid Islam
“দি হলকাস্ট ইন্ডাস্ট্রি” নামে একটা বইটি আছে । লিখেছেন অ্যামেরিকান ভদ্রলোক নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইন। বইটিতে তিনি তুলে ধরেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের উপর নির্যাতন এর কাহিনীকে কেন্দ্র করে কীভাবে একটি বিশেষ সুবিধাবাদী শ্রেণী গড়ে উঠেছে। কোন সন্দেহ নেই যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদীদের উপর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ভয়াবহ অত্যাচার হয়েছে। তবে এটিকে কেন্দ্র করে যেই সুবিধাবাদী শ্রেণী মুনাফা অর্জন করছে তিনি এই বইতে তাদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। তিনি দি নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে এই কনসেপ্টের প্রমোশনাল ভেহিকেল বলেছেন।
আমাদের দেশের জন্য একটা বই লেখা দরকার। নাম হতে পারে “দি মুক্তিযুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রি”।আমাদের দেশে ইন্ডাস্ট্রির সদস্যরা নিউকনিয়ান ভাবধারায় বিশ্বাসী। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ইনসাফ এই যে সকল মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এই শ্রেণীর এতে বিশেষ ইন্টারেস্ট নেই। নিউকনিয়ানদের মূল বক্তব্য অনেকটা এরকম –“সাম্রাজ্যবাদকে আমরা যেভাবে মন্দ বলে এতদিন বিচার করে এসেছি সেটা ভুল। একে ‘ব্যতিক্রম’ বলে গণ্য করতে হবে। কারণ পাশ্চাত্য সভ্যতাই একমাত্র সভ্যতা। যুদ্ধ করেই এই সভ্যতাকে রক্ষা করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরোধিতা এতদিন করা হয়েছে একটা উদারনৈতিক পাপবোধ থেকে, অর্থাৎ মনে করা হয়েছে যুদ্ধবিগ্রহ হানাহানির কাজটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। এখন এইসব পাপবোধ ঝেড়ে ফেলতে হবে। পাশ্চাত্য সভ্যতাকে রক্ষা করাই এখন প্রধান ও একমাত্র কাজ।” আপনি এখানে “সাম্রাজ্যবাদ” এর স্থলে “ আওয়ামী বাকশাল” পড়ুন। দেশী সেপাইদের মতামত হল- “আওয়ামী বাকশালকে আমরা যেভাবে মন্দ বলে এতদিন বিচার করে এসেছি সেটা ভুল। একে ‘ব্যতিক্রম’ বলে গণ্য করতে হবে। কারণ এটি একমাত্র চেতনাবাহি দল । যে কোন মূল্যে এই দলকে রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজন হলে যত দরকার মানুষ মারতে হবে। বাকশালের বিরোধিতা এতদিন করা হয়েছে একটা উদারনৈতিক পাপবোধ থেকে, অর্থাৎ মনে করা হয়েছে মত প্রকাশ করতে না দেওয়ার কাজটা বোধহয় ঠিক না। এখন এইসব পাপবোধ ঝেড়ে ফেলতে হবে। এই দলটিকে রক্ষা করাই এখন প্রধান ও একমাত্র কাজ। কনসেপ্টটা এক, শুধু প্রেক্ষাপট অনুযায়ী চরিত্রও গুলোর পরিবর্তন হয়েছে।” এই ইন্ডাস্ট্রির প্রচারিত মতামতের সাথে আপনি কোন ভাবেই দ্বিমত পোষণ করতে পারবেন না। যদি করেন এই ইন্ডাস্ট্রি আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। এবার আপনি ডানপন্থী, বামপন্থি, আস্তিক, নাস্তিক, জামায়াত, হেফাজত ,বা আরও যে সব শ্রেণী বিভাগ এর কথা চিন্তা করা যায় তার যেটিরই অন্তর্ভুক্ত হন না কেন। এদের মূখপাত্র হিসেবে আছে বেশ কিছু প্রভাবশালী মিডিয়াও, ঠিক যেমনটা আছে নিউকনিয়ানদের।
আজকের এই দিনে খোলা চোখে দেখলে আপনার মনে হতে পারে যে, দেশে আপাত চলমান এই সমস্যার মূল কারণ হয়ত ৭১’এর যোদ্ধাপরাধীদের বিচার। আপনি যদি এটি ধরে থাকেন অপেক্ষায় থাকুন, আপনি খুব তাড়াতাড়ি ভুল প্রমাণিত হতে যাচ্ছেন। কেননা, নিউকনিয়ান ভাবধারায় বিশ্বাসীদের সবসময় শত্রু প্রয়োজন।একটা শ্রেণীকে এদের দরকার যার ভয়ে মানুষ এদের ভোট দিবে, ক্ষমতায় আনবে বা এদের প্রভাব বজায় থাকবে । তাই নিয়ম অনুসারে যোদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে যাওয়ার পর আসবে অন্য কোন ইস্যু যেমন- ইসলামিক টেররিজম কিংবা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঠিক যেমনটা অ্যামেরিকান মুভিতে কমিউনিস্টদের পতনের পর রাশিয়ান ভিলেনদের বদলে এসেছে আরব ভিলেন। আবার যদি কখনো অন্য কোন একটি আইডিয়োলজি আওয়ামীলীগের জন্য হুমকির কারণ হিসেবে আত্তপ্রকাশ করে তখন সেটিই এই শত্রুর স্থানটি দখল করবে । কেননা শত্রুর এ স্থানটিই হল এই ইন্ডাস্ট্রির ভ্যালু প্রপোজিশন যেটি কোন ক্রমেই ফাঁকা রাখা যাবে না । “দি মুক্তিযুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রি” লেখার জন্য একজন দেশী নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইন দরকার।”
(“দি মুক্তিযুদ্ধ ইন্ডাস্ট্রি” নামের উদ্দেশ্য কোন ভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান হানিকরা নয় বরং যারা এটাকে নিয়ে ব্যবসা করে তাদের সঠিক চিত্র তুলে ধরা।)