এম এন বি আসাদুল্লাহ
দীর্ঘ একবছর পর পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিত হত্যা মামলায় অবশেষে একটা সুরাহা হল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় আজ।
আমরা সবাই এই রায়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু এই খুনের দায়ে কারা দায়ী এটা তো অনেকেই আগে থেকে জানেন, তাহলে রায় হতে দেরি হল কেন?
এখন সরকার যদি বলে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তারা অতি বেস্ত ছিলেন, তাহলে তারা বিশ্বজিতের মামলাটাকে স্পিডি ট্রায়াল ট্রাইব্যুনালের মধ্যে কেন রাখলেন?
দ্রুত বিচার মানেটা কি? মানে হল, এই অপরাধে যারা দায়ী তাদের অপরাধ বেশ গুরুতর হবার কারনে তাদের দ্রুত শাস্তি নির্ধারণ করা। সরকারের কাছে দ্রুত মানে এক বছর, সেটা বুঝতে পারছি এখন।
৪২ বছর আগে যে যুদ্ধাপরাধ হয়েছিল সেগুলোর শাস্তি হবে অবশ্যই, কিন্তু মাত্র কিছুদিন আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন নিরপরাধ মানুষ খুন হয়েছে তার প্রতি ন্যায়বিচার হওয়াটাও ততধিক প্রয়োজন।
আরেকটা প্রশ্ন যে কারো মনে আসাটা স্বাভাবিক সেটা হল যুদ্ধাপরাধের বিচারতো বহুদিন ধরেই চলছে, সরকারের একবারের মেয়াদে তো সেটা শেষ হয়নি। তাহলে এত তড়িঘড়ি কেন?
সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজার শেষ মুহূর্তে কাদের মোল্লার ফাঁসি এবং বিশ্বজিত হত্যা মামলার রায়ের একটা সম্পর্ক না থেকে যায়ই না।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এক আসামি বলেন তার কিছুই হবে না। ঠিকই ফাঁসি এড়িয়ে উনি সহিসালামত বের হয়ে আসবেন। মৃত্যুদণ্ড পাবার পর এমন আত্মবিশ্বাস সরকারের চাটুকার ছাড়া আর কারো থাকাটা স্বাভাবিক না।
এটা বিশ্বাস করাটা মোটেই অস্বাভাবিক না যে সরকার পরিবর্তন হবার আগে হয়ত এই ফাঁসি কার্যকর হবেনা। আর যদি নাই হয়, তাহলে এই শাস্তি কালের অতলে হারিয়ে জাবার সম্ভাবনা তো থাকছেই।
ধরে নিলাম, সরকার আরেকবার ক্ষমতায় আসল এবং এখনও পর্যন্ত যেটা খুবই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তাহলে কি হবে? তাহলে কি ফাঁসি কার্যকর হবে?
ফাঁসি কার্যকর না হলে কি গনজাগরণের মত কোন জাগরণ জাগ্রত হবে? নাকি এদেশের মানুষের কাছে পরিস্থিতি অনুযায়ী অপরাধের রঙ বদলায়?
ফেলানি হত্যা রায়ের পর কিন্তু আমরা এমন কোন গণজাগরণ দেখিনি। তখন আমাদের শাহবাগি চেতনা কি উটপাখির মত মাথা লুকিয়ে বসেছিল?
আছে সাগর-রুনির হত্যা মামলা। সাংবাদিক মহল ছাড়া আর কাউকে কিন্তু তাদের চেতনা দেখাতে রাস্তায় বের হতে দেখা যায়নি।
এই সরকার যখন হাটি হাটি পা পা তখনি বিডিআর হত্যাযজ্ঞ হয়। কয়জন মানুষকে রাস্তায় দেখা গেছে আমাদের সোনার ছেলেদের মৃত্যুর বিচার দাবি করতে?
যদি ফাঁসি কার্যকর হয়েই যায় তাহলে তো ভাল নাহলে কি হয় সেটাই দেখার বিষয়। আশা করব চেতনা দুই চখামি করবেনা।
সময়েই সব বলে দিবে কি হয়।