ভূমি-দেশ-রা​ষ্ট্র

by Mohsen Alam

সময়টা যদি সাতচল্লিশের পর কোনো একদিন হয়, তাহলে চাটগাঁ অথবা মাদারীপুরের কৃষক চাষ করতেছিল পাকিস্থানের পূর্ব-বাংলাতে। আচ্ছা সেদিন কি কোনো ‘পাকিস্থানী বাঙালি’ই একটা নতুন দেশ-পতাকার জন্য গর্ববোধ করে নাই? মনে হয়, করেছিল। এখন অস্বীকার করলে কিচ্ছু সমস্যা নাই, তবে করেছিল মনে হয়। হ্যাঁ, বাংলার খন্ডন নিয়ে অনেকের বেদনা ছিল তা সত্য, তবে স্বাধীন হওয়ার আনন্দও কম মানুষের ছিল বলে মনে হয়না। পয়ষট্টির যুদ্ধে আনন্দের শরীকও কম ছিলনা বলে জানি। কিন্তু এইসব আনন্দ-উল্লাস কখনো ধ্রুব বিষয় না। ধ্রুব হল মুক্তির ব্যাপারটা। আনন্দ থাক আর না থাক, মুক্তির চাহিদা ফুরায় না কখনো। এই চাহিদাটার স্বরূপ কেমন? এই চাহিদার বলে বলীয়ান হয়ে কৃষক যে ব্রিটিশ শাসিত ভূমিতে চাষ দিত সেই ভূমি পাকিস্থান শাসিত হয়। এই চাহিদার জন্যেই নয়া পতাকা নিয়ে তৃপ্ত হতে হয়। কিন্তু এই যে আনন্দের চেয়ে মুক্তি বড়, আর মুক্তির জন্য দুঃখ সহ্যে লজ্জা থাকেনা, তখন সেই চাষকৃত ভূমির নয়া নাম দরকার হয়। নয়া নামের আড়ালে নয়া শাসনতন্ত্রের অধীনের শাসিত হয়। শাসনতন্তের শাসন আর শাসিতের শোষিত হওয়ার মাত্রার যুগল যখন বড় বেশী উদ্দাম হয়ে যায়, তখন সেই ভূমি আনচান করে উঠে। চাষ দিতে যাওয়া কৃষকেরা সেই আনচান টের পেয়ে যায়। এই টের পাওয়া যাওয়ার ঘটনাটা সোজা-সরল না, কষ্ট আছে। এই কষ্টের বিনিময়-মূল্য হিসেবে মনে হয় আরেকটা নয়া পতাকা লাগে, নয়া নিঃশ্বাস লাগে। সেই ভূমি কিন্তু একই। এই ভূমির নাম-মালিকানা পরিবর্তন কখন কখন দরকার হয়ে পড়ে তা গুরুত্বপূর্ন। আনন্দ কখন নিঃশেষ হয়ে যায়, সেই ক্ষনটা বুঝার জন্য চাষ দিতে হয়, চাষ দিতে হয় হাজার বছরের পুরনো ভূমিতে, মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার আখ্যান সে ছাড়া আর কেউই জানেনা।

কোন শাসনতন্তের শাসিত হবে সেইটা নির্ধারন করার অধিকার ভূমিরই, এই অধিকার খর্ব করে ফেলা যায় না কোনো সাফ কবলা-রেজিস্ট্রি করে।

শাসিত হওয়াটাই একটা শোষিত ধারনা। তারপরও একটা সময় শোষনের ব্যাপার পষ্ট হয়ে আরো উঠে। সেই সময়ে শোষনের বিপক্ষে, শাসনতন্ত্রের বিপক্ষে বলাটাই, প্রতিরোধে যাওয়াটাই ভূমি-কর্তব্য, দেশপ্রেম। আর প্রতিরোধের প্রতিপক্ষ বনে যাওয়া মানে রাষ্ট্রপ্রেমে মশগুল হওয়া, রাজাকারিতে লিপ্ত হওয়া, সর্বোপরি নৈতিক শয়তানের দিকে ধাবিত হওয়া। যেই শয়তান অত্যন্ত নৈতিক কারনে মাটির আদমেরে সিজদা দিতে অস্বীকার করে!

আমি ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিকভাবে শাসনের রাজনীতির লোক না। আমার রাজনীতি খেদমতের। কিন্তু তাও শাসক-শাসন-শোষিতের পূর্বেকার হিসাবের ফয়সালা করা নায্যতা হারায় না। প্রকৃতির খেদমত করে তাকে কাজে লাগানো, আর প্রকৃতিকে শাসন করে ভোগ করা; পার্থক্যটা এমনই। গরু কোরবান দেওয়া, আর গরু হত্যা করা; ফলাফল যদিও এক মনে হয় চর্মচোখে, দেখতে গেলে কিন্তু ভিন্ন। প্রানের দায় স্বীকারই রাজনীতি।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s