by Maruf Raihan Khan :
আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু একটা মেয়েকে পছন্দ করতো।
সে সাহস নিয়ে খুব আশা করে তার
বাবাকে বলতে গিয়েছিল, বাবা আমি বিয়ে করে ফেলব। সব
শুনে-টুনে আঙ্কেল এত ক্ষ্রিপ্ত হয়েছিলেন যে, তার যুবক
ছেলেকে মারধোর পর্যন্ত করেছিলেন। আমার বন্ধুর
মতো মানুষ খুব কম হয়। সে নিয়মিত নফল
রোজা রেখে ধৈর্যধারণ করে আর নিজের চরিত্র সংরক্ষণ
করতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়।
একটা ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে বিয়ে করতে চাইলে সবচে
প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়- “তুই
বিয়ে করে বউকে কী খাওয়াবি? তোকে ভরণ-পোষণ করেছি,
এখন তোর বউকেও আমি খাওয়াব?” স্যার শুনুন, আপনার
ছেলে গার্লফ্রেণ্ডের সাথে শুধু ফোনে কথা বলতে কত
টাকা খরচ করে তার হিসেব কি আপনি রাখেন?
প্রতি ডেটিঙে তার রেস্টুরেন্ট বিল কত হাজার অনুমান
করতে পারেন? ফ্যান্টাসি কিংডমে যেয়ে ওয়াটার
কিংডমের ফ্যান্টাসিতে ডুবে জলকেলি করতে একেবারে কম
খরচ
না কিন্তু। সেসব টাকাও কিন্তু আপনার মানিব্যাগ
থেকেই বিভিন্ন ছলে-বলে-কৌশলে যায়।
বাংলাদেশি একটা সাধারণ মেয়ের ভরণ-পোষণের খরচ
আর
কতইবা। নিশ্চয়ই আপনার ছেলের চরিত্রের দামের
চেয়ে বেশি না। এমনও তো হতে পারে, ছেলে-মেয়ের
মাঝে বিয়ে হয়ে থাকলো। মেয়ে মেয়ের বাসায়ই থাকবে।
ছেলে পাশ করার পর মেয়েকে তুলে আনবে। এরমাঝে তাদের
‘হালাল প্রেম’ চলতে থাকলো!
এইতো কিছুক্ষণ আগে আমার এক বন্ধু বলছিল,
“জানো আমি পর্ণোগ্রাফির নেশাটা এখনও
ছাড়তে পারিনি। অনেক চেষ্টা করেও। কিন্তু
আমি জানি বিয়ের পর আমার এ নেশাটা আর
থাকবে না।”
আমি আমার অনেক বন্ধুকে জানি, যারা পর্ণগ্রাফির
নেশায় প্রবলভাবে আসক্ত। এগুলো তাদের জীবনের অংশ
হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। সাইকোলজিটা সহজ। একটা প্রচণ্ড
ক্ষুধার্ত মানুষকে যদি দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা হয়,
তাহলে ক্ষুধার যন্ত্রণা আর সহ্য না করতে পেরে একসময়
তার চুরি করে খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। অস্বীকার
করার উপায়
নেই, যৌবনে পদার্পণ করার পর একটা মানুষ
শূন্যতা অনুভব
করতে থাকে, বিপরীত লিঙ্গের
আরেকটা মানুষকে সে নিবিড়ভাবে পেতে চায়। মন আর দেহ
দুটোই। এজন্যই বোধহয় বিয়ে প্রথার প্রচলন।
এক্সট্রিম পর্যায়ে চলে গেলে চলন্ত বাসে-ট্রেনে-ট্য
াক্সিতে, বোটানিক্যাল গার্ডেন-বলধা গার্ডেন-
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঝোপের আড়ালে,
লিটনের ফ্ল্যাটে, নগরীর হোটেল-বার-লাউঞ্জে, পাঁচ-
সাততারা আবাসিক
হোটেলে মানবতা রেইপড হয়। মানবতার আর্ত-চিতকার
আমাদের আল্ট্রামডার্ণ- ব্রডমাইণ্ডেড-ফ্যাশন সচেতন
কর্ণকুহরে পৌঁছুতে পারে না।
আর যখনই আমরা এই সহজাত-স্বাভাবিক
প্রক্রিয়াতে বাঁধা সৃষ্টি করি, তখনই ঘটে বিপত্তিটা। কিছু
তরুণ হয়তো প্রচণ্ড ধৈর্যশক্তির পরিচয়
দিয়ে বহুকষ্টে চরিত্রটা সুরক্ষিত রাখে। আর
অপরদিকে অজস্র তরুণ গা ভাসিয়ে দেয় বহমান স্রোতে,
গড্ডালিকা প্রবাহে। শুরু হয় নারীদেহের ভাঁজে-
খাঁজে তাকানো, বাসে অচেনা নারীর দেহে অবৈধ স্পর্শ,
রাতের গভীরে পর্ণগ্রাফিতে শান্তি খোঁজা আরও কত
কী।
সোসাইটির ভাব-সাব দেখে মনে হয়,
বেশি বয়সে বিয়ে করা মোটামুটি একটা আভিজাত্যের প্রতীক।
এটা অস্বীকার করব না, এখন আমাদের লাইফ-স্ট্যান্ডার্ড ঠিক
করে দেয় ওয়েস্টার্নরা। তাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণের মাঝেই
যেন কামিয়াবি! সেটা ভালো কি মন্দ তা বোঝার জন্য
মেধা খাটানোর সময় কই। এখন পশ্চিমাদের
দেখাদেখি যদি আমরাও যদি মধ্যত্রিশে-চল্ল
িশে গিয়ে বিয়ে করা শুরু করি তাহলে তো বিপদ!
আগে একটা ফ্যাক্ট বলে নিই। আমার ইউরোপে পড়ুয়া বন্ধু
বলছিল, তাদের হোস্টেলটা কম্বাইণ্ড, অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে একই
হোস্টেলে থাকে। যদিও ফ্লোর ভিন্ন। তো গভীর
নিশিতে কোনো মেয়েকে কোনো ছেলের রুমে আপত্তিকর
অবস্থায় পাওয়া যাওয়া বিস্ময়কর কিছু না। এছাড়া পশ্চিমাদের
সোসাইটিতে আছে লিভ-টুগেদার, গার্লফ্রেণ্ড-বয়ফ্রেণ্ড
কালচারে অবাধ যৌনাচার। কার গর্ভে যে কার সন্তান অনেকেই
তো বলতে পারে না। তো আমি বলি, তাদের বিয়ে করার
দরকারটা কী! কেন শুধু শুধু ঝামেলা করতে যাবে! যে যাই বলুক,
আমি বিশ্বাস করি, আমার দেশ এখনও অতটা নষ্ট হয়নি।
তবে প্রজন্ম যদি পশ্চিমাদের অনুসরণে ও সংস্কৃতির
দিকে এগুতে থাকে, তাহলে দায়ভার কে নেবে?
ভেবে দেখা যেতে পারে এখনই।
ভিন্ন কথায় আসি। আমাদের আগের জেনারেশানগুলোতে
বিয়ে কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম বয়সেই হোতো। তাদের প্রেম-
ভালোবাসা-আবেগ-অনুভূতি-রোমান্স-মায়া-মহব্বত-অনুরোধ-
অনুযোগ-অভিমান সব স্বামী-স্ত্রীকে ঘিরেই আবর্তিত হোতো।
ছিল না তাদের সময় সামাজিক এত বেহায়াপনা, প্রযুক্তির
অপব্যবহার কমই ছিল। এজন্যই হয়তো তারা আজকের তরুণের
মাইণ্ডটা ঠিকভাবে রিড করতে পারছেন না।
এই সমাজে যে তরুণটি পালিত হচ্ছে, সে দেখছে নির্বোধ যুবতীর
সেমিনগ্ন-কোয়ার্টারনগ্ন বিচরণ। মেয়েটি দেখছে অসভ্য-
বেহায়া-বর্বর পুরুষের লোভী চাহনী। ওরা দেখছে ফ্রি মিক্সিংয়ের
নামে বন্ধু-বান্ধবীদের একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পড়া।
টিভি চ্যানেলে চামড়া-ব্যবসা, রূপের পসরা সাজিয়ে বাণিজ্য।
সঙ্গীতে অশ্লীল শীতকার। সিনেমাতে ব্লুফিল্মের আবেশ।
কাব্য-গল্প-উপন্যাসের নামে চটি-সাহিত্য। সহজলভ্য
ইন্টারনেটে সহজলভ্য মহিলার বিষাক্ত গোপন সৌন্দর্য।
গার্লফ্রেণ্ড
নিয়ে সীসা লাউঞ্জে সীসা টানতে টানতে সেলফোন-
ট্যাবে পর্ণগ্রাফি দেখতে দেখতে ভাদ্র মাসের পাগলাটে কুকুর-
কুকুরীর মতো আচরণ। থার্টিফার্স্ট আর ভ্যালেন্টাইনস
ডেতে ফার্মেসিগুলোতে কনডম আর পোস্ট কয়টাল পিল বিক্রির
হিড়িক। বন্ধুদের আড্ডায় পিনিক নিতে এফ্রোডিসিয়াক
ইয়াবা আর গাঁজার ধোঁয়া। এ ধোঁয়া সমগ্র বাংলাদেশ অবক্ষয়ের
অনলে পুড়ে যাবার ধোঁয়া নয় তো?
এই সময়ে এই সমাজে একটা যুবক-যুবতীকে তার চরিত্র সুরক্ষিত
রাখতে কতটা কষ্ট-যন্ত্রণা-অপমান-অভিযোগ-পরীক্ষা-
ঠাট্টা-বিদ্রুপ আর ধৈর্যধারণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তা কেবল
ভুক্তভোগীই জানে। আর কেউ বোঝে না। বোঝার চেষ্টাও
হয়তো করে না।
এক্সট্রিম পর্যায়ে চলে গেলে চলন্ত বাসে-ট্রেনে-ট্য
াক্সিতে, বোটানিক্যাল গার্ডেন-বলধা গার্ডেন-
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঝোপের আড়ালে,
লিটনের ফ্ল্যাটে, নগরীর হোটেল-বার-লাউঞ্জে, পাঁচ-
সাততারা আবাসিক
হোটেলে মানবতা রেইপড হয়। মানবতার আর্ত-চিতকার
আমাদের আল্ট্রামডার্ণ- ব্রডমাইণ্ডেড-ফ্যাশন সচেতন
কর্ণকুহরে পৌঁছুতে পারে না।
Very nice
ভালো লেগেছে। আমাদের চিন্তা-চেতনা কতোখানি “ব্রেইন ওয়াশড” হয়ে গেছে ভাবলেও ভয় হয়।