মার্চ এগেইনস্ট হিপোক্রেসি

2

by শাফকাত রাব্বী অনীকঃ

৭০ বছরের একজন মহিলা, যার হাঁটুতে একাধিক অপারেশন, তিনি কেন রাস্তায় নেমে মিছিল করেন না তা নিয়ে টিক্কা-টিপ্পনী কেটেছেন একদল মানুষ। ঠিক সেই মহিলাই যে মুহূর্তে বললেন আমি মিছিলে যাবো, সাথে সাথে তার বাসাতে মোতায়েন হলো ৩ প্লাটুন পুলিশ, বিজিবি, আর ৩ ট্রাক বালু। যিনি হাঁটেনই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, সেই তাকে বহন করতে যেন আসতে না পারে কোন গাড়ি তা নিয়ে সে কি প্রাণান্ত চেষ্ঠা- যেখানে লাজ-লজ্জার কোন লেশমাত্র নেই। বাই চান্স ভদ্রমহিলা যদি পায়ে হেটে বেড় হতে চান, তাহলে যেন তাকে শাড়ি পরা অবস্থায় ৩ ট্রাক বালু ডিঙ্গাতে হয় সেই ব্যবস্থা করে নিজেদের চেতনার রকেট সায়েন্টিস্ট ভাবছেন নির্বোধের দল। খিস্তি খেউরে অভ্যস্থ নিম্ন রুচির সমর্থকদের খুশি করতে এধরণের চটকদারি আইডিয়াই যে একটি দলের একমাত্র ভরসা, তা তো বলাই বাহুল্য।

মাত্র ক’দিন আগেই পতাকা মাথায় তুলে দাড়িয়ে থাকলো ২৭ হাজার মানুষ। পাকিস্তানীদের হাতে থাকা পতাকার রেকর্ড ভাঙ্গা হলো চেতনার জোসে। আর এই মহান রেকর্ড ভাঙ্গার রেশ কাটতে না কাটতেই, গতকাল থেকে পতাকা বানানোর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে গেল বিভিন্ন স্থানে। গ্রেপ্তার করা হলো দর্জিকে, পতাকা বানানোর অপরাধে। স্বাধীন দেশে এখন নাকি পতাকা বানাতে পুলিশের পারমিশনও লাগে! এসব দেখে পতাকার রেকর্ড ভাঙ্গা চেতিয়ালের দল শুধুই মুচকি হাসে। এইতো তাদের পতাকা প্রেম!

১৬ই ডিসেম্বরে খবর বেড় হয়েছিলো কোথায় কোন পতাকা বিক্রেতাকে নাকি পতাকা বিক্রিতে বাধা দিয়েছিল কে-বা-কাহারা। তাই নিয়ে উত্থিত চেতনায় সেকি জ্বালাতন। অথচ গতকাল দোকানে দোকানে গিয়ে সরকারী পুলিশ বলে দিল কেউ যেন পতাকা বিক্রি না করে। পুলিশের মুরুব্বীদের শঙ্কা নাকি ছিল একটাই। চেতনার পতাকা যেন চেতনাহীন বিরোধী দলের হাতে না যায়! অর্থাৎ চেতনার ব্যাবসা যার, পতাকা যে শুধুই তার!

৫ লাখ লোক চৌরাস্তার মোড় দখলে নিয়ে, ২৪ ঘন্টা টিভি কাভারেজ দিয়ে, মিলনমেলা বসানো হয়েছিল প্রজন্মের সহবাস লাইভ টেলিকাস্টিং করতে। সে কি বাহবা, মারহাবা, মারহাবা, যেন পুরো দেশ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ সব এক কাতারে উদ্ধার হচ্ছে। সাথে সাথে চলেছে বিরোধিদের দিকে টিটকারি। কোথায়? তোমাদের কোন জমায়েতে এতো লোক কি হয় কখনও?

হ্যাঁ, লোক হয়েছিল, একবার না দুই বার। তাও আবার ৫ লাখ না। কেউ বলে ৫০।

কিন্তু ওগুলোতেও হিপোক্রিটদের মন ভোলে না। ওসব পঞ্চাশ-ফঞ্চাশ ডাজ নট কাউন্ট। কেননা যারা এসেছিল ওরাতো ছিল হুজুর। যারা চেক্টিভিস্টদের চোখে ছিল প্রান্তিক, চেতনা বিবর্জিত লুজার। সুতরাং ওদের কেন গণনায় ধরবে হিপোক্রিটের দল?

তো আজ যখন বিএনপির ডাকে আসতে চাইলো নন-হুজুরদের দল, সাথে সাথে করা হলো সারা দেশ অচল। হুজুরদেরতো তাও মিটিং এর পারমিশন দেয়া হয়েছিল। নন-হুজুরদের তাও দেয়া হলো না। চেতনার ফেরিওয়ালার আবার সেই মুচকী হাসি। পারলে পায়ে হেঁটে আয়না, দেখি তোরা কতগুলো নন-হুজুর।

যখন পায়ে হেঁটেও আসবে বলছে মানুষ, ঠিক তখন চেতনার পাইকারের শেষ সম্বল হয়ে দাড়ালো হুঙ্কার, লাঠি, বন্দুক, গুলি আর চেতনার সমন্বিত শিৎকার।

আর এই উন্মত্ততার মাঝেই ৫০ বছরের বেশিকাল ধরে টিকে থাকা আওয়ামী লীগ আজ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে শুধু তার নেতৃত্ব ও সমর্থকদের হিপোক্রেসির বন্যায়। যদিও জাতীয় জীবনে কমবেশি হিপোক্রেসি হয়েছে আগেও । কিন্তু ক’সপ্তাহের ব্যাবধানে একের পর এক নির্লজ্জ হিপোক্রেসির এমন কন্টিনিউয়াস খেলা এর কেউ আগে দেখেছে বলে জানা নেই।

2 thoughts on “মার্চ এগেইনস্ট হিপোক্রেসি

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s