নিরীহ পাবলিক
২৭ ডিসেম্বর ২০১৩/ দুই দিন আগেও যেই সরকার আর্মি, পুলিশের সশস্ত্র পাহারায় জোর পূর্বক গাড়ি চলাচলে বাধ্য করছিলো তারাই এখন আবার সেই আর্মি, পুলিশ দিয়েই জোর পূর্বক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোর কর্তৃপক্ষকে সরকারীভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা যেন অপরিচিত কাউকে রুম ভাড়া না দেয়। হোটেল ওয়ালার জ্ঞাতী গোষ্টি ছাড়া কেউ যদি থাকতে না পারে তাহলে তাকে হোটেক বলার মানে কি? সরকারের এইসব ভাঁড়ামো কর্মকান্ডে এমন নিদারুণ পরিস্থিতেও নিরীহ পাবলিক কৌতুক বোধ করে। কিন্তু যাদের সব দেহছিদ্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঠাসা তারা নিশ্চয় এসবের মর্মার্থ বুঝতে পারেন, বুঝতে পেরেই মনে মনে তাদের চেতনাবাদী নেত্রীর প্রশংসা করেন। গত চল্লিশ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নানান দিক নিত্যনতুন আলোকে উদ্ভাসিত হয়েছে। বিগত কিছুদিন যাবত এই চেতনা উপচে পড়ছে। চেতনায় উদ্ভাসিত এইসব কর্মকান্ডে কৌতুকবোধ না করে বরং এগুলোকে সরবে বা নিরবে আত্নস্ত্ব করার মধ্যেই প্রকৃত বাঙ্গালীত্ব নিহিত আছে। এছাড়াও চেতনাপন্থী বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিকদের গত চার দশকের কর্মকান্ডে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কতিপয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা রাজাকার ব্যতীত সকল বাঙ্গালীরই গলাধঃকরন করা কর্তব্য। চেতনার তিন লক্ষণঃ
১/ মিথ্যাচারঃ যে যত বেশী মিথ্যা বলতে পারবে সে তত বড় চেতনাধারী। গাঁজাখুরি গল্পের আবেগী বয়ান বিশেষভাবে চেতনা বর্ধক। শুনেছিলাম গ্রামদেশে পলাতক মুক্তিযোদ্ধার কৌতুক প্রচলিত আছে- যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়া যুবক এখন গর্বের সাথে নিজের বীরত্ব জাহির করে বেড়ায়, ‘আমিতো পাঞ্জাবীদের সাথে একবার মুখোমুখি যুদ্ধ করেছি, সে-কি গোলাগুলি! হঠাৎ একটা বুলেট আমার কানের পাশ দিয়ে সাঁই করে চলে যাচ্ছিলো, তাকাইয়া দেখি বুলেটের গায়ে লেখা ‘মেইড ইন চায়না’/ আমাদের চেতনাবাদী পলাতক মুক্তিযোদ্ধারাও এমন গল্প করেন এবং সেগুলোই চেতনাবাদীদের চেতনার মূল উপজীব্য, মুক্তিচেতনা জাগিয়ে রাখার একমাত্র ভাবসম্পদ। আর আমাদের চেতনাবাদী শাসকগোষ্ঠির মিথ্যাচার তো এখন মহাকাব্যের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
২/ গুম, খুন, লাশোল্লাসঃ গুম করে খুন করা কিংবা খুন করে গুম করা। সদল বলে পিটিয়ে কোন নিরস্ত্র মানুষকে লাশ বানানো, লাশ নিয়ে মানুষখেকো জংলী কায়দায় লাফালাফি করে উল্লাস করা এসবই এখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ হয়ে গেছে। চেতনাপন্থীদের রাজত্ব আর কিছু দিন চললে ডিসকোভারী চ্যানেল আমাজন জংগল ছেড়ে ঢাকা শহরে আসবে মানুষখেকোদের ভিডিও দৃশ্য ধারন করতে। হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ দূরত্বে বসে তারা ভিডিও করবে আর চেতনাপন্থী লগী বৈঠা বাহিনী রক্ত মাখা দাঁত বের করে অট্টহাসি দেবে টিভির পর্দায়।
৩/ ভারতের দালালীঃ ভারতের দালালী না করে কেউই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাধারী হতে পারে না। ভারতের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানো হবে, দেশে দূর্ভিক্ষ লাগিয়ে হলেও ভারতের স্বার্থে বাঁধ নির্মান করা হবে, ভারতকে ট্রানজিট দিতে নদীর মাঝখানে রাস্তা বানিয়ে দেয়া হবে, ভারতীয় বাহিনী যাকে যখন খুশি গুলি করে মেরে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখবে। একমাত্র রাজাকার ছাড়া কেউ এসবের বিরুদ্ধে কথা বলবে না, বলতে পারে না। এজন্যই এর আগে যখনই ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোন মিছিল সমাবেশ হয়েছে তাতে চেতনাধারী বাহিনী হামলা করেছে। করাই স্বাভাবিক। কারণ বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে ভারতের শাসকগোষ্ঠির সেবাদাসী হিসেবে টিকে থাকার জন্য। বন্ধু রাষ্ট্রের গুলিতে সীমান্তে বীর বাঙ্গালী বেঘোরে প্রান দিবে-এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অংগীকার, জাতির পিতার স্বপ্ন। বন্ধুরাষ্ট্রের দেয়া বাঁধে বাংলার জনতা পানির অভাবে আর্সেনিক খেয়ে মরবে এটাই আমাদের গৌরবের অর্জন। এই সত্য যারা এখনো বুঝতে পারে নাই তারাই ভারতের বিরোধীতা করে- তারাই রাজাকার। মূর্খরা ভাবে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করেছে। চেতনাধারীরা ঠিকই জানে এইদিন বাংলাদেশের অধীনতা পাকিস্তানের কাছ থেকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে মাত্র।