এখন যা জরুরি

খোমেনী ইহসান 

যেখানে পরিস্থিতি এমন যে সরকার বিরোধীদেরকে সমূলে নির্মূল করতে পারবে না আবার বিরোধীরাও গণঅভ্যুত্থান করতে পারবে না সেখানে সমঝোতা জরুরি।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়ে গেছে। যে যেভাবেই দেখিনা কেন হিংসাত্মক রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে নিয়মরক্ষার এ নির্বাচন করেছে সরকার। এতে সংবিধানে স্পিরিট, গণতন্ত্র ও জনগণের কল্যাণ চিন্তা কতখানি কাজ করেছে তা নিয়ে তর্ক করলে অনেক করা যাবে।
তবে বাংলাদেশে যে ধরনের জাতীয় পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে করে সংবিধান সম্মত আইনত বৈধ এ নির্বাচন করার বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না আওয়ামী লীগের। আমাদেরকে এটা মানতে হবে।

জরুরি অবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে অন্ধকূপে পতিত হয়েছে, তার ব্যাপকতা আমরা কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারি না। সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী সুশীল সমাজের কারো বিচার হয়নি। দুর্নীতি বেড়েছে। বিরোধী দলও টাকার বিনিময়ে দলের পদ-পদবী বিক্রি করলো। জনগণের পক্ষে কথা বলার মতো লোক কোথাও নাই। বিরোধী দলও গণবিরোধী রাজনীতি করেছে।

এ অবস্থায় আমরা শুধু প্রতিশোধের কথা শুনেছি। সরকারি দলের লোকেরা বলছে এখন প্রতিশোধ নিতে হবে। বিরোধীরা বলছে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তারা প্রতিশোধ নেবে। দুই পক্ষের এই প্রতিশোধ ‍উন্মত্ততা কতো জঘন্য তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের তরফে করা হত্যাযজ্ঞ আর বিরোধীদের বোমা-ককটেলবাজির নিষ্ঠুরতার মধ্যে দৃশ্যমান হতে দেখেছি।

সব মিলিয়ে এখন যা পরিস্থিতি তাতে পরষ্পরকে দোষ দেয়া ও ঘায়েল করাটা মেনে নেয়া যায় না। কে জিতলো বা হারলো তার হিসাব কষে পুলকিত হওয়াটা কোনো সংবেদনশীল মানুষের কাজ হতে পারে না। এখন খুব জরুরি দরকার হলো রিকন্সিলিয়েশন বা সমঝোতার পথটি উন্মোচিত করা। সমঝোতার কাজটি দ্রুত করতে হবে। এখন দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা খুব বেশি দরকারি হয়ে পড়েছে।

আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ আগামী কাল যে নির্বাচনোত্তর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন তাতে তিনি পষ্ট করে সমঝোতার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের আশ্বস্ত করবেন। আমি চাই প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতির ব্যাপারে নির্মোহ থাকবেন। নিজের স্বার্থের হিস্যা মাথায় রেখে হলেও তিনি সমঝোতার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করবেন।

সমঝোতার জন্য শেখ হাসিনার কাছে আমি কিছু প্রস্তাব তুলে ধরছি-

১. দশম সংসদ বসবে শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য। এ সংক্রান্ত বিল পাশের পরপরই সংসদ ভেঙে যাবে। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা কালকের সংবাদ সম্মেলনে তার ওয়াদার কথা রাখঢাক ছাড়াই জানাবেন।

২. কম সময়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে কতদিন সময় নেবেন প্রধানমন্ত্রী তা পষ্ট করে বলবেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি অবশ্যই বিরোধী দলকে লক্ষ্য করে কোনো দমনাভিযান পরিচালনা করবেন না। তার দলের নেতাকর্মীদেরও এ ব্যাপারে নিবৃত্ত করবেন।

৩. দ্রুত ইনক্লুসিভ নির্বাচনের ওয়াদা করার পর শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে অবশ্যই সহিংস আন্দোলন বন্ধ করতে বলবেন। বিরোধী নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দেবেন। যৌথবাহিনীর অভিযান বন্ধ করবেন। গুলি বন্ধ করতে বলবেন। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবেন।

৩. জামায়াত নেতাদের বিচারের বিষয়টিকে প্রতিশোধপরায়ণতার জায়গা থেকে না দেখার ওয়াদা করবেন। স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া ও প্রাপ্য সব মানবাধিকার সংরক্ষণ করে তাদের বিচার স্বাভাবিক গতিতে করতে দেবেন। জামায়াতের নেতাকর্মীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দেবেন। তাদের নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। জামায়াতকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যবস্থা করবেন।

সব শেষ কথা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবশ্যই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে তার সরকার নাগরিকদের প্রাণ রক্ষা, সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকারের ব্যাপার যথেষ্ট সংবেদনশীল থাকবে।

শেখ হাসিনা নিশ্চয় এটা বুঝবেন যে এখন খুব জরুরি হলো দেশকে স্থিতিশীল করার করণকর্তব্য পালন করা। এ জন্য নতুন করে দমনাভিযান বন্ধ করতে হবে এবং বিরোধীদেরকে সমঝোতা করতে বাধ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে তাকে এটা বুঝতে হবে যে, জামায়াতকে নির্মূল করা স্থিতিশীলতা আনবে না। কাজেই তাকেই ঠিক করতে হবে কিভাবে সবাইকে নিয়ে সমঝোতা করা যায়।

স্থিতিশীলতার বদলে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করলে আমরা মেনে নেব না। সব পক্ষকেই আমরা জবাবদিহি করতে বাধ্য করবো।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s