– আমান আবদুহু
ঘুম ভেঙ্গে গেছে কর্ণেল জিয়াউলের, চোখ দুটো অবশ্য এখনো বন্ধ। নাসিমার কথা শোনা যাচ্ছে, সম্ভবত ফোনে কথা বলছে কারো সাথে। মেজাজটা খিচড়ে গেলো। দুপুরের কথা মনে পড়ে গেছে, তখনও মেজাজ চরম খারাপ ছিলো। শরীরটা ভেঙ্গে আসছিলো, ইউনিফর্ম না খুলেই বেহুশের মতো ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে।
রাতে সাতক্ষীরায় অপারেশন ছিলো। এরপর ঢাকা পৌছতে পৌছতে বিকেল। র্যাবের পাজেরো গাড়ি গুলো অনেক কমফোর্টেবল, তবু জিয়াউলের অনেক ক্লান্তি লাগছিলো। গাড়ি বা ট্রেনে তার ঘুম আসে না। এমনকি বিমানভ্রমণের সময়ও সে ঘুমাতে পারেনা। সারা রাতের দৌড়াদৌড়ি আর দীর্ঘ দশ বারো ঘন্টার জার্নি শেষে বিকেলে বাসায় ঢুকে যদি দেখে জাফর সোফায় বসে আছে, তখন কেমন লাগে?
ছেলে আর মেয়ে দুটাই তখন কলেজ ভার্সিটিতে থাকে। বাসায় আর কেউ নেই। জাফরকে দেখে মেজাজ সামলে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছিলো তার জন্য। একবার ভেবেছিলো সার্ভিস রিভলবারটা দিয়ে গুলি করে দিলে কেমন হয়! কিন্তু গুলি করা হয়নি। জাফরের সাথে কোন কথাও বলেনি। তার মুখটা হাসি হাসি হয়ে উঠছিলো, সম্ভবত কুশল বিনিময় করতে যাচ্ছিলো। কিন্তু জিয়াউল তাকে ঐ সুযোগ দেয়নি। বেডরুমে এসে সোজা শুয়ে পড়েছিলো।
এখন ঘুম ভেঙ্গেছে। নাসিমার গলার স্বর আবারও আবছা শোনা যাচ্ছে। কতক্ষণ হলো? এক চোখ খানিকটা খুলে হাতটা টেনে চোখের সামনে আনলো। বিএনপির এক নেতা রিষ্টওয়াচটা এনেছে সুইজারল্যান্ড থেকে। প্রায় নয়টা বাজে। উত্তরা হেডকোয়ার্টারে বারোটার ভেতরে যাওয়া দরকার।
হাতটা বাড়িয়ে জিয়াউল দু’পায়ের মাঝে পুরুষাঙ্গটা ধরলো, শক্ত হয়ে আছে। গোসল করতে হবে। গতকাল রাতের ঘটনা মনে পড়াতে মেজাজ খারাপ ভাবটা একটু দূর হয়েছে। মেয়েটার শরীর খুবই ফ্লেক্সিবল ছিলো, বহুদিন এতো বেশি উপভোগ করেনি জিয়াউল। এজন্যই বোধহয় শরীরটা একদম ক্লান্তিতে ছেড়ে দিয়েছিলো।
জিয়াউলের বন্ধ চোখের ভেতর মেয়েটা চলে এসেছে। সাতক্ষীরা শহরের বাইরে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরের এক গ্রামে এমন সারপ্রাইজ থাকবে জিয়াউল স্বপ্নেও ভাবেনি। এমনকি গতকাল ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার পর রাস্তায় সে একবার চিন্তা করছিলো, ফিরে এসে ধানমন্ডিতে মিথিলার বাসায় যেতে হবে।
রাত দুইটার দিকে সে ছিলো শহরের এক বাড়িতে। অপারেশন তখনও শেষ হয়নি, তবে তার বিরক্ত লাগছিলো কিছু না পেয়ে। তেমন কোন টাকাপয়সা বা স্বর্ণ নেই, সোর্স ভুল ইনফর্মেশন দিয়েছে। বাড়ীর লোকগুলো তো নেইই। সে বাইরে এসে জীপে বসে ছিলো। প্লাটুনের কয়েকজন বাড়ির ভেতরে থেকে গিয়েছিলো, কিন্তু জিয়াউলের নজর উঁচু। সবজায়গায় সে নিজে সরাসরি ইনভলভ হয়না।
একটু পরে স্থানীয় লীগের লোকজন সহ গ্রুপের সবাই বেরিয়ে এসেছিলো। বুলডোজার মাত্রই বাড়ির সামনের দেয়াল ভাংতে শুরু করেছে। জিয়াউল একটা সিগারেট ধরিয়ে অলস চোখে তাকিয়ে আছে। ছাত্রলীগ সভাপতি ছেলেটা গাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করছে, হয়তো কিছু বলতে চায়। অথবা এমনিই হয়তো খাতির জমাতে চায়। এমন সময় রাশেদের ফোনটা আসলো।
কর্ণেল রাশেদ তার দীর্ঘদিনের বন্ধু, সত্যিকার একটা বন্ধু। একসাথে ক্যাডেট কলেজে পড়া থেকে শুরু। এখনও দুজনে একসাথে র্যাবে আছে। জিয়াউল ভালো কিছু পেলে সাথে সাথে রাশেদকে জানায়। রাশেদও সবসময় বন্ধুর কথা মনে রাখে। রাশেদ জানালো রাজাপুর নামে একটা গ্রামে আছে সে। বাড়ির মালিক আমেরিকান সিটিজেন। অনেক স্বর্ণ আছে, জিয়াউল যদি আসতে পারে তাহলে তা ওয়ার্থ করে।
সাথে একজন কনষ্টেবলকে দিয়েছিলো ঐ থানার ওসি, রাজাপুরের রাস্তা চেনে সে। প্রায় আধাঘন্টা পর যখন জিয়াউল ঐ গ্রামে পৌছলো, বাড়িটা পেতে কোন সমস্যা হলো না। রাশেদ বলে দিয়েছিলো পাকা দু’তলা বাড়ি। পুরো গ্রামে এমন বাড়ি একটাই। ছোট বাজারটার কয়েকশ গজ দূরে, রাস্তার উপরে। তার জন্য আসল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো একটা রুমে, রাশেদ তাকে ঐ রুমে নিয়ে গেলো। আমেরিকা থেকে ক্রিসমাসের ছুটিতে বেড়াতে এসেছে পরিবারটা, বড় মেয়েটার বিয়ে দেবে। প্রচুর স্বর্ণ আর দামী দামী জিনিসপাতি। সবাইকে অন্য একটা রুমে আটকে রাখা হয়েছে। পুরো বাড়িতে র্যাবের সেপাইরা ঘুরাঘুরি করছে, জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখছে। মেয়েটা ঐ রুমে ছিলো। প্রথমে অনেক ঝামেলা করেছিলো, রেগুলার ইয়োগা করা দুধে মাখনে বড় হওয়া চমৎকার একটা শরীর। আর জিয়াউল ভালো করেই জানে কিভাবে এসব ঝামেলা সামলাতে হয়।
জিয়াউলের অনেক ভালো লেগেছে। পরে বাইরে বের হয়ে দেখলো রাশেদ দাড়িয়ে সিগারেট টানছে। গেটের ভেতর দেয়ালের পাশে তিনজন লোক হাত পা বাঁধা হয়ে পড়ে আছে। জিয়াউল হেসে বন্ধুর হাত থেকে সিগারেট নিতে নিতে বললো, তুই শালা একটা স্যাডিষ্ট। এভাবে ফেলে রেখেছিস কেন? কি করবি?
রাশেদ বললো এরা হিন্দু, গুলি করা যাবেনা। বাড়িতে আগুন দিয়ে ওখানে ফেলে দিবো। প্রথম আলোর সাংবাদিক আছে বাইরে। ঘটনা হবে এলাকা থেকে যৌথ বাহিনী চলে যাওয়ার পর অপজিশনের লোকজন এসে এদের পুড়িয়ে সরকারের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে।
জিয়াউল অবাক হয়ে গেলো, বলিস কি? হিন্দু? বুঝতেও পারিনি দোস্ত। হাহাহাহাহা আল্লা বা ভগবান কিছু ডাকেনি। খালি ওহ গড ওহ বলছিলো। রাশেদও বন্ধুর সাথে অট্টহাসি দিয়ে উঠলো।
এতো খাটাখাটানির অপারেশন, তার উপর আবার দীর্ঘ রাস্তা ভ্রমণের পর জিয়াউল ভালোই ক্লান্ত ছিলো। কিন্তু বাসায় ঢুকেই যদি দেখে জাফর, কেমন লাগে? মনে পড়াতে মেজাজটা আবার খারাপ হলো।
নাসিমার এই খালাতো ভাইটা একটা চরিত্রহীন লোক। সমস্যা হলো তার পোষ্টিং এসএসএফ এ। জিয়াউল কিছু করতে পারছে না, কিন্তু তার মন বলছে কোন একটা ঘাপলা আছে। আগেও সে দুইতিনবার জাফরকে অসময়ে তার বাসায় আসতে দেখেছে। আর গত কিছুদিন থেকে নিজের অফিসের কাজ এতো বেড়ে গেছে, মাঝে মাঝে জিয়াউল একটানা কয়েকদিনও বাসায় আসতে পারেনা।
নাসিমার কণ্ঠ আবারও কানে আসছে। চোখ না খুলেই জিয়াউল ভাবলো, কার সাথে কথা বলছে সে? শুনতে চেষ্টা করলো কান পেতে, জিয়াউলের নামটা একবার বললো মনে হয়। নাসিমা কি ফোনে কথা বলার সময় খিলখিল করে হাসছে?