বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যত

17

ধরা যাক ২০২০ কিংবা ২০২৫/ খালেদা- হাসিনা দুজনই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন – তখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে? ইসলামিস্টরা কি তৃতীয় শক্তি হবে? জামাত কি ইসলামিস্টদের নেতৃত্ব দেবে না নতুন কোনো দল ইসলামিস্টদের প্রতিনিধিত্ব করবে? ইসলামিস্টরা কি বিএনপি-লীগ থেকেও শক্তিশালী হয়ে যাবে তখন?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ডিপ্লোম্যাটরা রাজনীতিবিদদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন, চিন্তিত নাগরিকরা করেন সাংবাদিকদের। বহু মানুষের সাথে আমিও বারবার আলোচনা করেছি এ প্রসঙ্গে। আমার কিছু বন্ধু আছে যারা মেধা, শিক্ষা ও পেশা – সব দিক থেকেই আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ; তাদের সাথে আলাপচারিতাতেও এই প্রসঙ্গটি বারবার ফিরে আসে। মনে হলো আমাদের আজকের ভাবনাগুলো লিখে রাখা খুব দরকার, ৩০ বছর পর এই সময়টাকে আমরা কীভাবে দেখছিলাম সেটা হয়তো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হবে।

প্রথমেই কিছু শব্দের সীমানা নির্ধারণ করি, এটা জরুরী, ভবিষ্যতে এই শব্দগুলোর প্রাসঙ্গিকতা বদলে যাবে।

আমি “ইসলামিস্ট” বলতে বোঝাচ্ছি তাদের যারা পলিটিকাল ইসলামে বিশ্বাস করেন এবং সে মতে রাজনীতি ও এক্টিভিজম করেন। পাঁচ বেলা মসজিদে যাওয়ার মানে কিন্তু ইসলামিস্ট না, আবার জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করাই ইসলামিস্ট হওয়ার একমাত্র শর্ত না। এটা একটা আমব্রেলা টার্ম এবং আমি সেই হিসাবেই ব্যবহার করেছি। ইসলামাইজেশান বলতে আমি অন্য ধর্ম থেকে ইসলামে আসা বলছি না এই লেখায়। শুধুমাত্র এই লেখার জন্য ইসলামাইজেশান শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে মুসলমানদেরই ইসলাম ধর্মের নতুন উদ্বোধন হওয়া অর্থে। এই ঘটনাটির কোনো সর্বজনগ্রাহ্য নির্ণায়ক শব্দ খুঁজে পাই নি দেখে এই ধারকর্জ। “সেনট্রিস্ট” বলতে আমি বুঝিয়েছি সে সমস্ত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা মানুষের কথা যারা সব দলের সহাবস্থানে বিশ্বাস করেন, বাস্তবতা ও যুক্তি-তর্ককে চেতনা ও আদর্শের ওপরে স্থান দেন এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে উগ্রবাদী নন। আমার অভিজ্ঞতা বলে বাংলাদেশে সঠিক অর্থে সেনট্রিস্ট দল না থাকলেও বিএনপি অন্য দুটি মূল থেকে চরিত্রে বেশী সেনট্রিস্ট এবং সব দলেই সেনট্রিস্ট প্রবণতার লোকজন আছে। যারাই শাহবাগে গেছে তারাই শাহবাগী – এই অর্থে আমি “শাহবাগী” বলছি না। আমার কাছে (এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত) আওয়ামী লীগের কাছে যখন টাকা থাকে তখন সেটা স্পিরিচুয়াল প্রজেক্টে পরিণত হয়, কোনো রাজনৈতিক দল থাকে না। শাহবাগী বলতে আমি বুঝি এই স্পিরিচুয়াল প্রজেক্টের ফুট সোলজারদের। লক্ষ্যনীয় হোলো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সংস্লিষ্ট না হয়েও আপনি এই স্পিরিচুয়াল প্রজেক্টের ফুট সোলজার হতে পারবেন।

সবার আগে আমার জীবনের ছোট্ট একটা পর্যবেক্ষণ।

৮৭-৯০ সালের কথা মনে করছি। আমি তখন ছোটো কিন্তু বড়দের কিছু কথা আমার স্পষ্ট মনে পড়ে। আমার বাবা যেহেতু ৫০ এর দশকে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন, তার বন্ধুরা প্রায়ই কে চীফ অফ স্টাফ হবে এ বিষয়ে খুব আলোচনা করতেন (তখনও তাদের সমসাময়িকরা কেউ কেউ চাকরি করছিলেন) /  এয়ার ভাইস মার্শাল জামাল (তখনও তিনি চীফ হন নি) প্রসঙ্গে তাদের কেউ কেউ মনে করতেন যে জামাল কোনোভাবেই চীফ হতে পারবে না কারণ – সহজ বাংলায় তিনি হুজুর এবং তার স্ত্রী হেজাবী।

২৫ বছর ফাস্ট ফরওয়ার্ড।

আজকে বাংলাদেশে শুধুমাত্র “হুজুর” হওয়ার কারণে উপরের দিকে ওঠাটা মনে হয় অতোটা কঠিন না কারণ “হুজুর” ও হেজাবীদের এখন যথেষ্ট ভিজিবিলিটি আছে সমাজের সব স্তরে। আমাদের ছোটোবেলায় এর ধারে কাছেও কিছু দেখি নি।

অন্যদিকে এখন যতো স্লীভলেস কামিজ ও ব্লাউজ দেখা যায় সামাজিক অনুষ্ঠানে, তার ধারে কাছেও কিছু আমরা দেখি নি ছোটোবেলায়। মজার ব্যাপার হোলো এই বিশেষ ব্যাপারটা অর্থাৎ স্লীভলেস কামিজ ও ব্লাউজ কিংবা কোনিকাল ব্রা পরাটা আমাদের জন্মের আগে মানে ৬০ ও ৭০ এর দশকে বাংলাদেশের আপার মিডলক্লাসে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো (হলিক্রস স্কুলের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটা CD বানানো হয়েছিলো বেশ কিছু বছর আগে। ঐ CD ‘র ফটোগ্রাফ দেখলে এর সত্যতা খুঁজে পাবেন)।

আবার

৮০’র দশকে আমার মা’দের যে বয়স ছিলো এখন আমাদের স্ত্রীদের সেই বয়স। তখন দেখতাম তারা প্রতি বৃহস্পতিবার বিকালে মিলাদ করতেন এবং আমার খেয়াল আছে এই মিলাদে আসতেন একদম উঁচু তলার স্ত্রীরাও। এটাকে তাদের সময়ের হ্যাং আউট বলবেন কি না আপনার ইচ্ছা কিন্তু আমার মনে হয় তখনকার অহিজাবীরা এখনকার অহিজাবীদের চেয়ে বেশী ধর্মসম্মত জীবন যাপন করতেন।

আমার ধারণা যারা ঢাকায় বড় হয়েছেন তারা কম বেশী আমার এই পর্যবেক্ষণগুলোয় সায় দেবেন। আপনি যদি এই সব বিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে “একটা” প্যাটার্ন বের করতে চান কিংবা সামাজিক পর্যবেক্ষণ থেকে রাজনৈতিক উপসংহারে আসতে চান, আপনি ভুল করবেন। এই সোশাল এভোলিউশানের কোনো সহজ ব্যাখ্যা নেই। তবে এরিক হবসবম ঠিক কাছাকাছি একটা প্যাটার্নের কথা উল্লেখ করেছিলেন শিল্প-বিপ্লবোত্তর ব্রিটেনে – যেখানে নতুন পুঁজি সৃষ্টির সাথে সাথে বিপুল ভাবে বেড়েছিলো ধর্মীয় এক্টিভিটি। একদল “উচ্ছন্নে” যাচ্ছিলো আরেক দল ক্রিশ্চিয়ানিটির ব্যাপক প্রসারকেই মনে করেছিলো এ রোগের দাওয়াই।

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে উল্লিখিত জটিলতা হোলো সমাজ পর্যায়ের। এর উপর যোগ করেন রাজনৈতিক জটিলতা – এমন কঠিন এক জিগ স পাজল তৈরী হবে যার কোনো সমাধান নেই। এবং সমস্যা হোলো এমন অবস্থায় আপনি যে দৃষ্টিভঙ্গিই পোষণ করবেন, খুব সহজেই আপনার মতো করে একটা ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। যেমন শাহবাগীরা মনে করেন যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশ পুরা আফগানিস্তান হয়ে যাবে। আবার বিএনপির লোকেরা মনে করে যে বাংলাদেশে ঐ রকম রাডিকাল ইসলামাইজেশানের কোনো সম্ভাবনাই নেই, বরং উদ্ধ্বত সেকুলারিজমই সবচেয়ে বড় সমস্যা। মোদ্দা কথা আপনার নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস যাই হোক না কেন, সেই অনুযায়ী এবং অনুপাতে একটি ভয়াবহ ভবিষ্যত আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে।

প্রথম প্রশ্ন হোলো বাংলাদেশে গত ২৫-৩০ বছরে বিশেষ করে শেষ ১৫ বছরে এতো দ্রুত ইসলামাইজেশান হোলো কেন?

আমার পরিচিত এক বাংলাদেশী ক্যানবেরান যিনি বাংলাদেশে ৮৪ সালে গ্রামে শিক্ষকতা করেছেন তার অভিজ্ঞতা হোলো তখন গ্রামে দশ জনের মধ্যে বড়জোর এক জন হিজাব করতো আর এখন সেই স্কুলেই দশ জনের মধ্যে আট জন হিজাব করে কিন্তু এখন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই “দুই নম্বর” কিন্তু ৮৪ সালে প্রতিটি মেয়েই সহজ সরল ছিলো। তার ধারণা এর মূল কারণ হোলো এনজিও – সহজ কথায় মিডল ইস্টের টাকা।

Image

তিনি যে ডেমোগ্রাফির কথা বলছেন সেখানে মিডল ইস্ট ও জামাতের টাকা ইসলামাইজেশানের কাজে এসেছে এ কথা সত্য (তবে বাংলাদেশের সব অঞ্চলে না) কিন্তু সমস্যা হোলো তিনি ধর্মকে একটা প্রডাক্ট হিসেবে জ্ঞান করছেন অর্থাৎ যত বেশী টাকা (= মাইলেজ = ইনভেস্টমেন্ট), ততো বেশি ইসলামাইজেশান। সোশাল এভোলিউশানের এরকম শুধু টাকা-ভিত্তিক ব্যাখ্যা একেবারেই খাটে না।

কিন্তু এই ব্যাখ্যার সবচেয়ে বড় খুঁত হোলো – যে ইসলামাইজেশানের জন্য এখন মনে হচ্ছে যে বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির উত্থান হতে চলেছে অর্থাৎ শহুরে অনূর্ধ্ব ৪০ জনগোষ্ঠির মাঝে ইসলামের প্রসার সেখানে এই অয়েল মানি প্রায় কোনো কাজেই আসে নি।

আমি দেখেছি যে অসংখ্য তরুণ-তরুণী যারা উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্ত ঘরের সন্তান এবং শহরের নাম করা স্কুল কলেজ থেকে পাশ করে পেশার দিক থেকে খুবই সফল – এরা ইসলামের প্রতি অনুরাগী হয়ে উঠছে যেটা ৮০’র দশকে আমার ছেলেবেলায় প্রায় কখনোই দেখা যেতো না। আমার এক বন্ধু টেলিভিশনের মডেলিং থেকে দাড়ি রাখা উঁচু বেতনের এগজিকিউটিভ হয়ে গেছে। আমাদের আরেক বন্ধু আইবিএ থেকে পাশ করে এখন আরবী শেখায়। এবং এই পরিবর্তন একটা দুটা না, হাজারে হাজারে।

এই ঘটনাটা কীভাবে ঘটলো?

প্রথমে আমার একটা অতি সরলীকৃত ব্যাখ্যা: আমরা স্কুল কলেজের বই পুস্তকে যা পড়ি, বিস্ময়কর হলেও সত্য যে বাস্তব জীবনে কেবল ইসলাম ধর্ম শিক্ষাই প্রাসঙ্গিক। বাংলা বইয়ে যে ভাষা শিখি সে বাংলাতে কেউই কথা বলে না, এমন কি টিভিতেও এখন আর তেমন শোনা যায় না। যে ইংরেজি বইয়ে থাকে সে ইংরেজি কোনোদিনও কোনো দেশে চর্চা হতো কি না আমার সন্দেহ, দশ বছরের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নির্ভুল বালকদের আজগুবি সব কেচ্ছা-কাহিনীতে ভরা। অঙ্ক আর বিজ্ঞানে শিখি যে দুই আর দুই চার – বাস্তব জীবনে এই যোগফল পাঁচ, ছয় এমন কি পাঁচ শও হতে পারে। বিজ্ঞানের প্রায় কোনোই ব্যবহার নেই দৈনন্দিন জীবনে (বিজ্ঞান ব্যবহার করা আর অন্যের বানানো টেকনোলজি এস্তেমাল করা এক জিনিস না)/ ইসলাম শিক্ষায় বলে সমর্পণ করো, শান্তি পাবে। বাস্তবে কী হয় এ সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুব অল্প কিন্তু যারাই ইসলামের প্রতি অনুরক্ত তারাই বলে যে ধর্ম শিক্ষা বই যা প্রমিজ করে তা ডেলিভারও করে, নিজেদেরকে সমর্পণ করে তারা শান্তির খোঁজ পেয়েছেন।

আমাদের কালে, আমি বলবো মোটামুটি মিড নাইনটিজ থেকেই বিশ্বব্যাপী একটা ঘটনা ঘটেছে আর সেটা হোলো আমাদের জীবনে এখন কোনো ফিলোসফি নেই। মানুষ এমন একটা প্রাণী যে নিজের জীবনের পরিপূর্ণতা দেখার জন্য কোনো একটা ফিলোসফির বাস্তবায়ন দেখতে চায়। আমাদের দেশে ৬০ থেকে নিয়ে ৮০ এর দশক পর্যন্ত সোশালিজমের মধ্যে দিয়ে তরুণরা দর্শনের খিদেটা মিটিয়েছে। নানা কারণে নাইনটিজে এসে এই বন্দোবস্ত বদলে যায়। সভিয়েট য়ুনিয়েনের পতন, বাংলাদেশী বামদের আদর্শিক স্খলন, বিশ্বব্যাপী বামপন্থার প্রতি আকর্ষণ কমে যাওয়া – সবই মনে হয় এর পেছনে কম বেশী কাজ করেছে।

অন্তত আমাদের দেশে দর্শনের অভাব কিছুটা মিটিয়েছে ইসলাম – অন্তত কিছু মানুষের জীবনে। এর একটা অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া হোলো পলিটিকাল ইসলামের প্রতি আকর্ষণ-বোধ। ইসলাম ধর্মটা একটু বিচিত্র এই বাবদে। দশ জন লোক যদি ইসলামী অনুশাসনে মনোযোগী হয়ে ওঠেন দেখা যাবে যে পাঁচজনই সামগ্রিক মুক্তির জন্য পলিটিকাল ইসলামকে আবশ্যক মনে করে – এই ব্যাপারটা অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। বলাই বাহুল্য এই পাঁচজন যদি শিক্ষিত তরুণ হয় তাহলে ধীরে ধীরে দেখা যাবে যে কোনো একটা ইসলামী দলের মধ্যে দিয়েই তাদের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হচ্ছে।

শাহবাগী এবং আওয়ামী মনোভাব সম্পন্ন মানুষেরা এই ব্যাপারটার দুটো ভুল ব্যাখ্যা করে। প্রথমটা হোলো যে তারা মনে করে যে এই তরুনেরা অধিকাংশই জামাতী। ইন ফ্যাক্ট এই যে নতুন এনলাইটেন্ড ইসলামিস্ট ক্লাস, তাদের পলিটিকাল আইডেনটিটির দুটো মূল প্রতিপাদ্য হোলো জামাতকে অপছন্দ করা এবং কওমী মাদ্রাসা তথা হিফাজতকে একটু তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা এবং এর মধ্যে দিয়ে উভয়ের থেকেই আলাদা হওয়ার চেষ্টা করা। তার মানে কিন্তু আবার এই না যে বিএনপি যেভাবে আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করে – এটা সেই পর্যায়ের রেশারেশি। বলা যেতে পারে এটা একটা ইন্টেলেকচুয়াল ফ্যাড কিন্তু পরস্পরের সাথে রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক একাত্মতা ঘোষণা না করার জন্য যথেষ্ট। ভিকারুন্নিসা স্কুল থেকে পাশ করা মেয়েরা যেমন করে ভারতেষ্মরী হোমসের মেয়েদের দেখে অনেকটা সেরকম।

কিন্তু এই ভুলটা ততোটা মারাত্মক না যতোটা দ্বিতীয়টি। শাহবাগী, আওয়ামী, সেনট্রিস্ট, বিএনপি,সুশীল, ডিজুস – মানে আরবান ক্লাসের বিশাল একটা অংশ মনে করে যে এই ইসলামিস্টরা আন্ডার এচিভার কিংবা সহজ বাংলায় ভোন্দা গাজীর দল।

বাংলাদেশে ৬০ ও ৭০ এর দশকে সবচেয়ে মেধাবীরা বাম রাজনীতি করতো, এখনকার বাংলাদেশে সবচেয়ে মেধাবীরা রাজনীতি-বিমুখ বললে কম হবে, সম্ভবত অনেকে ঘৃণাই করে এই বিষয়টি। কিন্তু যারা রাজনীতি করে (অর্থাৎ সশরীরে এক্টিভিজম করেন, দল করেন, সংগঠিত হন – ফেসবুকে না শুধু), তাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ও পড়াশোনা জানা ছেলে-মেয়েরা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক ধারায় হয় ইসলামিস্ট, নয়তো বাম ধারার (কিন্তু বাম ধারার সংখ্যাটা খুবই কম) / ছাত্রদল কিংবা ছাত্রলীগের ছেলে-পুলেরা মেধার দিক থেকে ইসলামিস্টদের ধারে কাছেও না।

আরো একটা অদ্ভুত ব্যাপার হোলো সারা পৃথিবীতে যারা নিজেদের প্রগ্রেসিভ ঘরানার রাজনীতি করেন বলে দাবী করেন তারা অনেক বেশী সহনশীল হন আর ইসলামিস্টরা হয় অসহনশীল। বাংলাদেশে হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টা। এখানে যে নিজেকে লিবার্টিন বলে দাবী করে, সে আবার ফাসিও চায়। একদিকে সে নিজেকে সেকুলার বলছে অন্য দিকে “প্রয়োজনে লাখ খানেক মানুষকে হত্যা” করার পরামর্শও দিচ্ছে। এবং সব সময় সে রেগে থাকে – মানে ভয়ঙ্কর ধরনের রাগ। পরমতসহিষ্ণুতার দিক থেকে বাংলাদেশের তথাকথিত প্রগ্রেসিভ ক্লাস এতোটাই প্রতিক্রিয়াশীল যে “সভ্য মত বিনিময়” মোটামুটি অসম্ভব হয়ে যায়।

আশ্চর্য ব্যাপার হোলো ইসলামিস্টরা অপেক্ষাকৃত বেশী সহনশীল (আমি বাসুদা ও মেজবাহ আহমেদ পর্যায়ের ইসলামিস্টদের কথা বলছি না)/ তাদের সাথে অন্তত কিছু সময় আপনি গালিগালাজ ছাড়া তর্ক করতে পারবেন (এটা নিতান্তই আমার পর্যবেক্ষণ)।

কথা হোলো, আসল কথা হোলো – ইসলামিস্টরা কি সংগঠিত হতে পারবে এবং হলেও তারা কোন ধরনের ইসলামিস্ট হবে?

প্রথমত একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে বাংলাদেশের ইসলামিস্টরা চরিত্রে টার্কিশ ইসলামিস্টদের কাছাকাছি, তালেবানদের মতো না কারণ ইসলামিস্ট নেতা এবং নেতৃস্থানীয়দের বিরাট অংশ আদতে অন্টাপ্রেনিওর – সহজ ভাষায় তাদের কাছে টাকা আছে এবং তারা ইসলাম না বুঝলেও ব্যবসাটা ভালো বোঝেন। সুদূর ভবিষ্যতে তারা যদি কোনোদিন ক্ষমতায় যায় – যে একটি পেশার মানুষ তাদের ব্যাপারে সব চেয়ে খুশী থাকবে বলে আমার ধারণা – তারা হোলো ব্যবসায়ী শ্রেণী।

কিন্তু ক্ষমতায় যেতে হলে যে পরিমাণ সংহতি ও পরিপক্কতা দেখাতে হবে তা কি তারা পারবে?

সম্ভবত না।

বাংলাদেশের ইসলামিস্টরা বাঙালি ইসলামিস্টও বটে – অনর্থক তর্কে তাদের অনন্ত অনুরাগ। নিজেদের মধ্যে কারা শুদ্ধতম ইসলামের অনুসারী – এ আলোচনার ক্ষুধা তাদের কেয়ামতের পরেও বলবৎ থাকবে। এটাকে মুসলমানদের কুইনটাসেনশিয়াল বৈশিষ্ট্য বললেও অত্যুক্তি হবে না।

কিন্তু

শাহবাগীরা মনে করেন বিএনপির যে বিশাল জনসমর্থন আছে দেশব্যাপী তারা খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে ইসলামিস্ট হয়ে উঠবে। এর কারণ হিসেবে তারা যা মনে করেন তা হোলো বিএনপি আদর্শিক ভিত্তি দুর্বল পক্ষান্তরে ইসলাম একটি ১৪ শ বছরের পুরোনো আদর্শ। বিএনপি টিকে আছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের কারণে। তার মৃত্যুর পর এন্টি-আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্টের জন্য বেটার আউটলেট হয়ে যাবে ইসলাম এবং বিএনপি ছেড়ে সবাই ইসলামপন্থীই হয়ে যাবে। অর্থাৎ সেনট্রিস্টরা ক্রমশ এক্সট্রিমিস্ট হয়ে উঠবে। মোটামুটি কাছাকাছি ধারণা আমি দেখেছি কিছু কিছু বিএনপিপন্থীদের মাঝেও।

প্রশ্নটা আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে যিনি মোটামুটি পঞ্চাশ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি দেখেছেন কাছে থেকে এবং যার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ওপর আস্থা রাখা যায়। তিনি বললেন আর সব কিছু যদি মেনেও নেই, ইসলামিস্টদের নেতৃত্বটা দেবে কে? তার মতে ইসলামিস্টদের মধ্যে জামাত ছাড়া অন্য কোনো অংশ “রাজনীতি” “বোঝে” না এবং জামাতেরও যে একজনমাত্র নেতাকে তার মনে হয়েছে যে পরিবর্তিত পৃথিবীতে ইসলাম-পন্থী দলের ভূমিকা কী হবে এটা বোঝার মতো প্রয়োজনীয় সফিস্টিকেশান ও দূরদৃষ্টি আছে – তিনিও জেলে এবং সম্ভবত তার ফাঁসি হবে (আমার অপ্রয়োজনীয় মত: এই লোকটা আমার জানামতে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী এবং তার মৃত্যুদন্ড হওয়াটা হবে সঙ্গত)

কিন্তু যদি এমন হয় –

খালেদা-হাসিনার পর বাংলাদেশে অন্তত আওয়ামী লীগ-বিএনপির কোনো নেতা কোনোদিনও এ পরিমাণ ক্ষমতা সংহত করতে পারবেন না – সেটা জানা কথা। সে ফাঁকে ইসলামিস্টরা যদি একটা ইমরান খান খুঁজে পায়। পশ্চিম-ফেরত, ইংরেজিতে বক্তৃতা দেয়, ক্লীন শেভড, জন স্টুয়ার্ট মিল কোট করে, মিল্টন ফ্রিডম্যান কোট করে আবার কোরানের আয়াতও শুদ্ধ আরবীতে উচ্চারণ করে মেঠো বক্তৃতায়। অন্তত বিএনপি-আওয়ামী লীগের চেয়ে ইসলামিস্টরা যে গভর্নেন্সের দিক থেকে সফল হবে এ ব্যাপারে বেশীরভাগ লোক একমত হবেন। বিভিন্ন দলের সেনট্রিস্টরা যদি ইসলামের পতাকাতলে চলে এসে? এরকম একটা অবস্থার নিপুন বর্ণনা দিয়েছেন শফিকুর রহমান। তখন তো ইসলামিস্টরা এগিয়ে আসতে পারে।

আমি এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিই না। কিন্তু আমার ধারণা ইসলামিস্টরা সফল হবেন না। কেন?

সমস্যাটা ইসলাম নিজে। লিবারেল আইডিয়োলজির একটা সুবিধা আছে যেটা ইসলামের নেই। ব্যক্তিগত প্রশ্ন আসলেই লিবারেল আইডিয়োলজি বলতে পারে – এটা বাপু তোমার সমস্যা, ডু ওয়াটএভার য়ু লাইক। আপনি মদ খাবেন না স্লীভলেস কামিজ পরবেন এটা আপনার নিজের ব্যাপার – এখানে আমার কিছু করার নেই। বাই ডেফিনিশন ইসলাম একটা ধর্ম, তাকে রিএক্ট করতে হয়, দর্শকের ভুমিকা নিতে পারে না। ইসলাম বলতে পারে না গো ফাক য়োরসেল্ফ, এটা আমার সমস্যা না। রাষ্ট্র চালাতে গেলে “এটা আমার সমস্যা না” বলাটা খুব জরুরী, যেটা ইসলাম পারে না। ইসলাম একটা ধর্ম কিন্তু রাষ্ট্র একটা পলিটিকাল কনস্ট্রাক্ট। দিন শেষে বাস্তবতা হোলো য়োরোপিয়ান এনলাইটেনমেন্টের ফলাফল যে রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেই রাষ্ট্রব্যবস্থার দিক-নির্দেশনা কারী মতবাদ হিসেবে পলিটিকাল ইসলাম কমপ্যাটিবল না। রাষ্ট্রের দার্শনিক গন্তব্য হোলো ব্যক্তিস্বাধীনতা আর ইসলামের দার্শনিক গন্তব্য হোলো সমর্পনের মাধ্যমে অর্জিত শান্তি। প্রশ্নটা ইসলাম ভালো না লিবারেল ডেমোক্রাসি ভালো – তা না; বরং এটা কমপ্যাটিবিলিটির ইসু – “রাষ্ট্রব্যবস্থার” সাথে ইসলাম যায় কি না?

Image

আমাদের দেশে পলিটিকাল ইসলামের প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করতে হলেও কয়েকটা মৌলিক প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে। সারা পৃথিবীর ইসলামিস্টদেরই বোধ করি করতে হবে।

এগুলো কী?

পলিটিকাল ইসলামের দিক নির্দেশনা প্রত্যক্ষভাবে কোরানে নেই (যেমন আপনার নেতাকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করা হবে কি না)/  কিন্তু মুসলমানের ব্যক্তিজীবন কেমন হবে – এর অতি খুটিনাটি ব্যাখ্যাও কোরানে আছে। পলিটিকাল ইসলামকে রাষ্ট্র-পরিচালনাকারী মতবাদ হিসেবে যারা দেখতে চান তাদের এমন কিছু বিষয়ে আপোষ করতে হবে যার নির্দেশনা কোরানে আছে। যেমন ধরুন ইসলামিস্টদের বাংলাদেশে হিন্দু প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি না কিংবা পোষাক পরিধানে ইসলামের কিছু বাধ্য-বাধকতা আছে, এর মাঝে কোনো যদি কিন্তু নেই। কিন্তু অনেক মুসলমান ছেলেমেয়েই আছে যারা এই বাধ্য-বাধকতা মানেন না কিংবা মানতে চান না। এখন ইসলামিস্টরা চোখ বুজে থাকতে পারেন কেননা তারা বলতে পারেন যে ভাই এটা তো আমাদের মাথা-ব্যথা না কারণ আমাদের কাছে ক্ষমতা নেই। যখন ক্ষমতা আসবে তখন কিন্তু তারা দর্শক থাকতে পারবেন না, পক্ষ নিতে হবে। রাষ্ট্র পর্যায়ে ইসলামের বাস্তবায়ন করার জন্য (যার সরাসরি নির্দেশনা নেই কোরানে), তারা কি ব্যক্তি পর্যায়ের ইসলামের সাথে আপোষ করার মতো (যার সরাসরি নির্দেশনা নেই কোরানে) সাহস দেখাতে পারবেন?

আমার ধারণা বিশ্বব্যাপী এ ধরনের সাহসী পদক্ষেপের জন্য যে ধরনের কনসেনসাস প্রয়োজন, ইসলামিস্টরা তার ধারে কাছেও আসতে পারে নি। বাঙালি তর্কপ্রিয় এবং শিশুতোষ তর্কে তার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি (অর্থনীতির নোবেল প্রাইজ যে আসলে নোবেল প্রাইজ না এবং অর্থনীতির নোবেল লরিয়েটদের নোবেল লরিয়েট বলা হলে বিশাল অপরাধ হয়ে যাবে – এ নিয়ে বাংলার দামাল বুদ্ধিজীবী ন্যশনাল মিডিয়ায় দীর্ঘ সময় আলাপ করেন)।

এটা আমাদের মাথাব্যথা না – আপনি যেভাবে খুশী করেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মতামত নেই – এ ধরনের চিন্তা করাও বাঙালির পক্ষে অসম্ভব।

বাংলাদেশের মানুষ চরিত্রে সেনট্রিস্ট – সে ওয়াজে গিয়ে চোখের পানি ফেলে আবার যাত্রা দেখেও আদ্র করে মন। দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিকভাবে সফল হওয়ার চাবিকাঠি এই ব্যালেন্সিং এক্টের মধ্যে। যে একদিকে বেশী ঝুঁকে পড়বে তারই বিপদ। এই জিনিসটা বোঝে বিএনপি এবং এককালে আওয়ামী লীগও বুঝেছিলো। কাজটা করার জন্য সামষ্টিকভাবে যে পরিপক্কতা প্রয়োজন, ইসলামিস্টদের তা তাদের নেই। ভবিষ্যতে হবে কি না জানি না তবে ইসলামিস্টদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হোলো আওয়ামী লীগ। যে একমাত্র যুদ্ধে ধর্মের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা হোলো ধর্মযুদ্ধ এবং আওয়ামীবাদ ইসলামিস্টদের একটা ধর্মযুদ্ধই উপহার দিয়েছে। যে পোলারাইজেশান প্রজেক্ট আওয়ামী লীগ হাতে নিয়েছে তার একমাত্র ফলাফল হোলো দুটো ধর্মীয় উন্মাদনা: শাহবাগী চেতনা বনাম ইসলামী জজবা। এই ধর্মীয় উন্মাদনা চেতনাবাদকে কয়েকবার ধ্বংস করার জন্য যে যথেষ্ট – এ বিষয়ে আমার সন্দেহ নাই, পুরো দেশটাই না ধংসাত্মক উন্মাদনায় মশগুল হয় – সেটাই দেখার বিষয়।

সারভাইভাল এক্টে চিন্তা ভাবনার কোনো সুযোগ থাকে না। সমস্যা হোলো সারভাইভাল এক্টের বিজয়ীদের চিন্তা ভাবনা করতে না দেয়ার খেসারত দেয় পুরো জাতি – ইতিহাসে এর শত শত উদাহরন আছে।

সত্য হোলো; শুধুমাত্র যে একটি পথে ইসলামিস্টরা সফল হতে পারে, ঠিক ওই পথেই তাদের ধাওয়া করছে লীগ।

ফোটো ক্রেডিট:

David Lazar (Girl with green eyes and red headscarf)

পাভেল রহমান/AP

17 thoughts on “বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যত

  1. ভাল বিশ্লেষণ। অবস্থা পরিবর্তনশীল। ৬০ এর দশকে যা ভাবা যায়নি আজ তাই হচ্ছে- তেমনি সব ভবিষ্যৎ ভাবনা এখন বলা যায় না। আর এই কথা যুক্তি বিশ্লেষণে আসে না — আল্লাহই সব চাইতে বড় পরিকল্পনা কারী।

  2. “কাজটা করার জন্য সামষ্টিকভাবে যে পরিপক্কতা প্রয়োজন, ইসলামিস্টদের তা তাদের নেই।”
    নেই , কিন্তু তাই বলে তৈরি হবে না এটা আমার পক্ষে মানার মত না । অনেক কিছুই ছিল আগে । এক সময় অনেক কিছুই বাধা মনে করতো । মুসলিম সমাজে ধার্মীকরা সামাজিক অনুষ্টানে থেকে গুঠিয়ে থাকতো , যাহাতে আমি দেখেছি পরিবর্তনের ছোয়া , অনুষ্টান বর্জন না করে মোডিফাই করা । আমি বিশ্বাস করি বিজয় হবেই , হোকনা তা দেরিতে । এক শ্রেনী তো থাকবেই বিরোধীতাই স্বাভাবিক।

    • (y) চলতে চলতেই এই অগ্রযাত্রা সফল হবে ইনশাআল্লাহ্‌ । আর দায় আছে তাদেরও যারা শূন্যতা অনুভব করছেন কিন্তু সমাধান খুঁজছেন না

  3. লেখা ভালো লাগছে । এ নিয়ে প্রশংসা করে সময় নষ্ট করব না । শুধু আপনি যে ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বললেন সে আলোকে বলতে চাই, সত্যিকার অর্থে বিশ্বব্যাপী ঐ ব্যক্তিগত আচরণ কি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করবে কি করবে না টাইপ একটা আলোচনা সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা আপনি দেখছেন, সেটাকে আমিও দেখি । তবে এটা এমন যে,
    হলে ভালো হত । আর হচ্ছে না যে তাতেও ক্ষতি নেই । কারণ বাস্তবতা হচ্ছে এনিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছা সম্ভব হবে না । আর যখনই ঐক্যমতে পৌঁছতে গিয়ে ২/৩/৪ ভাগে বিভক্ত হব তখন সেটার প্রভাব বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনে পরবে ; যার বিশাল প্রভাব পরবে ক্ষুদ্র আয়তনে দেশে দেশে ।

    শুধু এ কারণেই না । আমি টোটাল অবস্থাটা নিদৃষ্ট অঞ্চলের উপর ছেঁড়ে দিতে চাই । এমন সময়ের দাবী অনুযায়ী । অর্থাৎ এখানে ৬০% মানুষ ইসলামকে মেনে নিলে তার ৪০%কে দেখবেন ইসলামকে বাহ্যিক মেনে চলতে আর বাকি ২০% মানছে মানছে না ……… তবে মানতে চাচ্ছে । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাকি ৪০% নিয়ে ?
    আমি আমার ২০%কে কোন আদলে দেখি তার উপর নির্ভর করছে ঐ ৪০% এর উপর আচরণ ।

    আদতে সম্ভাবনা নিয়ে আপনি কোন সন্দেহ প্রকাশ করেন নি । আমিও না । এখন বাকি যা নিয়ে আপনি চিন্তিত সেটা মূলত নির্ভর করছে আমরা সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে কতদ্রুত/কতসময়ে আগাচ্ছি । ওগুলো মূলত পথ চলতে চলতে দূরীভূত করা যতটা সহজ, আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে দূরীভূত করার সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পরিবর্তে নতুন সমস্যা তৈরি করার শামিল মনে করি ।

  4. দিল্লী তার হিন্দুস্তানি দালাল দিয়ে শ্রোতের বিপরীতে আওয়ামীলিগের এর নৌকা চালাইতেছে। মানেন আর না মানেন স্রোতের বিপরীতে চলতে চলতে নৌকার অবস্থা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে সংকটাপূর্ণ এখন। বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে আপনার এই জ্ঞানগর্ভ লেখায় হিন্দুস্তানের সরব ভূমিকা কেমনে অনুচ্চারতি রইলো আমার মতো আম পাব্লিক যে বুঝলাম না তা না।শাহবাগী যত না প্রকান্ড চিত্রায়িত হয় বাস্তবে একেবারই উলটো। তাদের গ্রহনযোগ্যতা বাংলাদেশে জাসদবাসদের চেয়েও কম। এটা হিন্দুস্তানি তেলাপোকা মার্কা একটা এসাইনমেন্ট। আর যে ইসলামিস্ট এক্টিভিটিস বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে আপনার তা শুধু বাংলাদেশে নয় গোটা বিশ্বেই লক্ষনীয়। হিজাবী মুসলিমাদের প্রতিরোধের জন্য দেশে দেশে আইন করা হচ্ছে, দেখেন নাই? তার কারণ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানুষের মাঝে সঠিক ইসলামের বানী অবারিত হয়েছে। বাংলাদেশতো কোন বিছিন্ন দেশ নয়, বরঞ্চ অনেক বেশী গ্লোবালাইজড। আওয়ামীলিগ, বিএনপি, সেন্ট্রিস্ট, এক্সট্রিমিষ্ট, শাহবাগী, হেফাজতী, জামাতীরা কখনও কোন সমস্যা ছিলও না, হবেও না। সমস্যা একটাই, তা হলো দিল্লীর নোঙড়া হস্তক্ষেপ। আর তা আনাড়ী।

    • সব কিছুতেই খালি ইন্ডিয়া পাকিস্তান। আপনে অবশ্য আরেক কাঠি সরেস, তাই ইন্ডিয়া বা ভারত না বইলা বলতেছেন – হিন্দুস্তান। বেশ বেশ বেশ।

  5. লেখাটা অসাধারণ হয়েছে। বেশ কিছু পর্যবেক্ষনের আসলে কোন জবাব নাই। কিন্তু একটা পয়েন্টে আমার একটু ডিজএগ্রিমেন্ট আছে, সেটা হলো ইসলাম পন্থীদের সফল না হওয়ার কারণ ইসলাম নিজে, ব্যাপারটাকে আপনি ইসলামের কঠোরতা হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু ইসলাম নিয়ে আমার অল্প-সল্প পড়াশোনা অনুযায়ী ব্যাপারটা আসলে সেরকম নয়। রাষ্ট্র ক্ষমতা অথবা যাই বলেন না কেন ইসলাম আগে ব্যাক্তি এবং সমাজের স্বাভাবিক শুদ্ধি অর্জনকে প্রাধান্য দিয়েছে। ইসলামে ক্ষমতা ফ্যাক্টর না, আপনি ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই অথবা ক্ষমতায় গিয়ে মানুষের চিন্তার জগৎকে এমনভাবে পরিবর্তন করবেন যাতে মানুষ নিজ থেকেই নিজের আচার-আচরণকে পরিশীলিত করতে পারে। আমার মতে শুধুমাত্র বাংলাদেশের ইসলামপন্থীইরাই না পৃথিবীর অনেক দেশের ইসলামপন্থীরা ব্যাপারটা ধরতে ব্যর্থ হয়েছে, এর ফলস্বরুপ মানুষকে বুঝাতেও ব্যর্থ হয়েছে। ইজিপ্টের রিসেন্ট ঘটনাগুলোও ইসলামপন্থীদের এই ব্যর্থতার ফল বলে আমার মনে হয়। মুরসী সমাজের একটি বড় অংশের মানসিক অবস্থা না বুঝেই এমন সব পলিসি নিতে শুরু করেছিলেন যেটা আল্ট্রা-সেক্যুলার জনগোষ্ঠী মেনে নিতে পারে নাই। আগে বিশাল জনগোষ্ঠী যাতে স্বাভাবিক ভাবেই, স্বউদ্যোগে নিজেরাই ইসলামের প্রাকটিস করতে পারে তাদের মানসিকতা সেভাবে গঠন করার উদ্যোগ নেয়ার দরকার ছিল। এখানে কুরআনকে সংবিধান হিসেবে ঘোষণা করলেই ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে এই ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসারও দরকার ছিল।
    এই ক্ষেত্রে কিছুটা সফল তুরষ্কের ইসলামপন্থীরা, তারা ইসলামকে একটা স্বাভাবিক ব্যবস্থা হিসেবে কিছুটা হলেও তুলে ধরতে পেরেছিল। অবশ্য এই ক্ষেত্রে কথিত পলিটিকাল ইসলামপন্থীদের চেয়ে ফেতুল্লাহ গুলেনের ঔষধ বেশী কার্যকরী হয়েছিল, যার ফল ইসলামপন্থীরা ঘরে তুলে নিয়েছিল। অবশ্য সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষনে মনে হয় পলিটিকাল ইসলামিস্টরা গুলেনের প্রভাবমুক্ত হতে গিয়ে অথবা নিজেরাই একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে (যেটা বেশীরভাগ ইসলামিস্টরাই মনে করে) এই ধারণার কারণে ভূল পথে পা বাড়াচ্ছে।

  6. ভিন্নমতঃ

    “সমস্যাটা লিবারেল আইডিওলজি’র নিজের। ইসলামে ব্যক্তি-সমাজ ও রাষ্ট্রকে যত ডিটেইলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, লিবারেল আইডীওলজিতে সেটা অনুপস্থিত। ফলে ‘ব্যক্তিগত’ প্রশ্নে লিবারেল আইডিওলজি অসহায় এবং দ্বিমুখী, কখনও কখনও বহুমুখী নীতি অবলম্বন করে। আপনি মদ খাবেন নাকি স্লিভ্লেস কামিজ পরবেন এটাকে ব্যক্তির নিজস্ব বিষয় বলে লিবারেল আইডিওলজি নিজের সীমাবদ্ধতাকে আড়াল করতে চায়, অপরদিকে ড্রাইভিং এর সময় রক্তে অ্যালকোহল এর মাত্রা কত হবে, কিংবা হিজাবের সিকিউরিটি ইস্যু কি কি এ প্রশ্নে সরব ও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। লিবারেল আইডিওলজি আপাত ‘ব্যক্তিগত’ বিষয়ের সাথে সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ককে রিকজনাইজ করে, তবে ‘ব্যক্তি স্বাধীনতার’ দাবীর মুখে অসহায় হয়ে ‘এটা রাষ্ট্রের সমস্যা না’ বলে পিছুটান দেয়। ইসলাম এখানে সাবলীলভাবে করণীয় ফ্রেমওয়ার্ক বাতলে দেয়।

    ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্র এই ব্যবস্থার অন্যতম established and organized কনস্ট্রাক্ট। দিন শেষে বাস্তবতা হল European এনলাইটেনমেন্টের ফলাফল যে রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেটা দিকনির্দেশনা দেয় কেবল রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নির্ধারনে কিভাবে বৃহত্তর গণমতের প্রতিফলন ঘটানো যাবে। আর ইসলাম detailed নির্দেশনা দেয় এই নীতি’র প্রকৃতি কেমন হবে। ফলে European পলিটিক্যাল কনস্ট্রাক্ট ইসলামী জীবন ব্যবস্থার সাথে কমপ্যাটিবল হতে পারে না। ইয়োরোপিয়ান কনস্ট্রাক্টে রাষ্ট্রের দার্শনিক গন্তব্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে নির্ধারিত হয়, আর ইসলামী কনস্ট্রাক্টে রাষ্ট্রের গন্তব্য ‘Justice’ এর ভিত্তিতে একটি সুস্থ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি যা প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব reflect করবে।

    “বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র Gullible ও সন্দেহপ্রবনতার একটা মিশেল। সন্দেহ প্রবণতা তৈরি হয়েছে বারংবার প্রতারিত হওয়ার মাধ্যমে, আর Gullibility এর কারন তাদের education এর প্রতি অনীহা; জ্ঞান ও যুক্তির অনুসন্ধান না করে perception বেইজড সিদ্ধান্তে আসার প্রবণতা। সাংসদ নির্বাচন যেমন তাদের কাছে রাস্তা মেরামতের ইসতেহার, তেমনি ইসলামী আইন ব্যবস্থার অর্থ কেবল ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ বাস্তবায়ন। তারা ইসলামী আইন ও ইকোনমি ব্যবস্থার বিশালতা বোঝে না, জানে না – তবে গলা ফাটাতে পারে ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ কিংবা ‘ধর্ম ব্যবসা’ নিয়ে। ফলে স্বল্প মেয়াদে, আবারো বলছি, স্বল্পমেয়াদে শুধুমাত্র ‘রাজনৈতিকভাবে সফল’ (দল) হওয়ার চাবিকাঠী হল এই আপাত ‘perception based’ জাতির অনুভুতিকে কাজে লাগানো। এটা বিএনপি ও আওয়ামীলীগ উভয়ই বোঝে। তবে দীর্ঘমেয়াদে একটি স্বনির্ভর, মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে যেটা প্রয়োজন সেটা হল শিক্ষা ও আদর্শ –প্রয়াস প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তনে। এটা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের নেই। ভবিষ্যতে হবে কিনা জানি না। ইসলামিস্টদের অ্যাডভান্টেজ এখানেই। তারা আদর্শ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা চর্চায় ফোকাসড – তাদের কর্মী ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়ার দিকে দেখলেই এর পরিচয় মেলে। এমনকি তাদের কর্মপন্থার ভিন্নমতগুলোও তাই একই ইসলামী আদর্শের Interpretation এর ভিন্নতা থেকে সৃষ্ট – তবে objective কখনই ভিন্ন নয়।”

  7. ২০০শত বা ৪০০ শত বছর আগে রাষ্ট্র ক্ষমতা ছিল গোত্রীয় বা সেনাবাহিনীর হাতে। তাদের পরিচিতিও হতো তেমন ভাবেই। আগামী ৫০/৬০ বছরের মধ্যে একটি পরিবর্তন হতে পারে।। সেটি হল ,ক্ষমতা ঘুরবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গ্রুপের মধ্যে। যেমন বর্তমানে শাহাবাগি আর হেফাজত…… এ ক্ষেত্রে কাছাকাছি সাদৃশ্যে থাকা বিভিন্ন গ্রুপ গুলো নিকটতম গ্রুপের হয়ে যাবে।

  8. এদেশ কখনও আফগানিস্তান হবে না, আবার তুরস্কও হতে দেয়া হবে না, আরব বা ইরান এদেশের মডেল হবে না, এদেশ নিজেই একটি আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্রের মডেল হবে। যেখানে ইসলামের সময়োপযোগী প্রয়োগ হবে। জনগণের কাছে ইসলামকে কঠিন ও ভয়াবহ করে না তুলে সহজ ও স্বাভাবিক করে দেয়া হবে। জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে প্রয়োজন ও অভ্যাসে পরিণত করে দেয়া হবে। কাজটি ১০ দিনের নোটিশে নয়, ১০ বছরের সাবলীল প্রক্রিয়ায় করা হবে। মানুষ এটাকে সহ্য করে নয়, গ্রহন করে নেবে। জীবন ও প্রগতিকে ইসলাম বাধাগ্রস্থ নয়, সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ করবে। মানুষ নিজেদের আগের চেয়ে সুখি সফল অগ্রসর নিরাপদ স্বাধীন আধুনিক ও মর্যাদাবান মনে করবে। এ কাজটি সঠিক সময়ে সঠিক গতিতে সঠিক কৌশল ও পদ্ধতিতে যিনি করতে পারবেন, তিনিই হবেন জাতির সঠিক নেতা।

  9. As I see in observation. Everybody should re
    ad the life of Muhammad(PBH) and the rule of 4 khalifa carefully then you can find the political Islam and its reality,

  10. লেখক বলছেন যে- রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত নির্দেশনা কুরআনে নেই।এটি একটি ভুল পর্যবেক্ষণ।লেখক যে বিষয়টি মিস করেছেন সেটি হচ্ছে,কুরআন সরাসরি নির্দেশ দিচ্ছে নবীর(স) সুন্নাহ অনুসরণের।কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ীই এর অনুসারীদেরকে নবী মুহাম্মাদ(স) এর সুন্নাহ তথা পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হয়।লেখক হয়তো লক্ষ্য করেননি যে কুরআন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিধান দিয়েছে মাদানী(অর্থাত্‍ মদিনায় অবতীর্ণ) সুরাগুলোতে।আর যেসব বিষয় কুরআনে নেই সেগুলো অনুসন্ধান করতে হবে নবীজির(স) সুন্নাহ-এ,কারণ আল্লাহর কিতাবের সুস্পষ্ট নির্দেশ।আর এভাবেই কুরআনের মাধ্যমে আমরা পাচ্ছি রাষ্ট্র পরিচালনার পরিপূর্ণ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি।প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান,যা গড়ে উঠেছে কুরআনের উপর ভিত্তি করে।আর রাষ্ট্রপরিচালনাও এই বিধানের বাইরে নয়।টয়লেট করা থেকে শুরু করে দেশ চালানো-সবকিছুর বিধানই আপনি ইসলামে পাবেন।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s