মাহবুব মিঠু।।
অবৈধ সরকারের অবৈধ সমাজ কল্যাণ (অকল্যাণ না হলেই চলবে) মন্ত্রী, জনাব সৈয়দ মহসীন আলী শিশুদের সামনে মঞ্চে বসে বিড়িতে সুখটান দিয়ে ফেইসবুকে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। অতঃপর তিনি ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে আবারো ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বিষয়টা এখানেই মিটে যাবার কথা। কিন্তু আদতে কি সেটা ভাল হোত? উনি তো অন্যায় করেননি শুধু। অপরাধও করেছেন। সাজা না পেয়ে বা আদালত কর্তৃক ক্ষমা না পেয়ে ফেইসবুকে ক্ষমা চাইলেই কি সব মিটে গেলো?
ওনার ফেইসবুক পেজে দেখলাম জাতির কিছু অতি সজ্জন এবং ক্ষমাশীল ব্যাক্তিবর্গ তাকে সাধুবাদ জানিয়ে ভরে ফেলেছেন। অবশ্য এই ক্ষমাশীলদের কেউ ওনাকে জিজ্ঞেস করেনি, দু’দিন আগে যে উনি প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন, তার জন্য ক্ষমা চাইবে কবে? অবৈধ নির্বাচনে জিতে নিয়ে (জিতে এসে নয়) প্রথম সাংবাদিকদের সামনে তিনি মুখ খুলে বলেছিলেন, ‘হু ইজ বিএনপি?’/ তখন এই ইজ্জত দেনেওয়ালেদের অনেকেরই মুখে কথা ফুটেনি। তার কয়দিন বাদেই আইন ভঙ্গ করে তীব্র নিন্দার শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে ক্ষমা চাইলেন, আর বিদ্যুতের বেগে তিনি মহান ব্যাক্তি বনে গেলেন? তিনি যদি প্রশংসারযোগ্য এবং সজ্জন ব্যাক্তি হয়ে থাকেন তবে সব ভুল এবং সব অন্যায়ের জন্যই ক্ষমা চাইতেন।
সাবাশ জনগন!
আমাদের অবৈধ মন্ত্রী বাহাদুর গরু মারিয়া জুতাদান প্রবচনের দারুন একখান উদাহরণ সৃষ্টি করিলেন! আপনারা সাধুবাদ জানাইয়া এই উদাহরণ সৃষ্টির ঘটনায় ইতিহাস হইয়া রহিলেন।
গলা ফাটাইয়া বলিতে ইচ্ছা করে, ওহে আবুল! আমার বাছাধন। তোমার কি ফেইসবুকে এ্যাকাউন্ট ছিল না?
ওহে কালা বিলাই! তুমি বলিলেই তো তোমাকে একখানা আস্ত এ্যাকাউন্ট ফ্রীতে খুলিয়া দিতাম!
সেই এ্যাকাউন্টে তুমি ক্ষমা চাহিতে! জনগণ তোমাকে মহান বলিয়া ক্ষমা করিয়া দিতো!
প্রশ্ন আসতে পারে, চুরি করা আর প্রকাশ্যে বিড়ি ফুঁকা কি এক হোল?
কিছুটা এক তো বটেই, আবার অনেক পার্থক্যও আছে। উভয়েই আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। পার্থক্য হচ্ছে অপরাধের গুরুত্বের ক্ষেত্রে। উভয়েই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে শাস্তির পরিমাণ অপরাধ ভেদে ভিন্ন। কোনটাতে গুরু শাস্তি, কোনটাতে লঘু শাস্তি।
যাইহোক, যারা মন্ত্রীকে বাহবা দিয়ে সিক্ত করেছেন, তাদের কেউ অবৈধ মন্ত্রীকে দু’টো প্রশ্ন করেনি।
প্রশ্ন- একঃ জরিমানার টাকা শোধ করেছেন তো?
প্রশ্ন- দুইঃ অবৈধ মন্ত্রী বাহাদুর! বলুন তো কোন কোন অপরাধ করে ফেইসবুকে ক্ষমা চেয়ে শাস্তি এড়িয়ে মহান হওয়া যায়? চট জলদি বলে ফেলুন। আমারও মনে খায়েশ জেগেছে অপরাধ করে ক্ষমা চেয়ে মহান হোতে।
বাঙলাদেশের এই সব ভদ্দরলোকেদের অনেকেই পেটের দায়ে দুই টাকার জিনিস চুরি করা চোরকে ধরে আচ্ছামতো প্যাঁদানি দিতে ভুল করে না। পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়েও দুর্বল চোরের অপরাধের ক্ষমা নেই। কিন্তু ভদ্দর লোকেরা আইনভঙ্গ করে ফেইসবুকে ‘সরি’ ষ্ট্যাটাস মারলেই খেইল খতম! চারিদেকে জয় জয়াকার।
মন্ত্রী বলে কথা! হোক না সে অবৈধ মন্ত্রী। তারপরেও মন্ত্রী তো!
আমাদের ক্ষমাশীল ব্যাক্তিরা ভুলে গেছেন, অন্যায় আর অপরাধ দু’টো ভিন্ন জিনিস। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হয়ে থাকলে আপনি, আমি কে তাকে ক্ষমা করার? ক্ষমা করতে হলে সেটা করবে আদালত। আগে জানতাম পৃথিবীর তাবৎ বাঙালীদের সবার দু’টো কমন পেশা আছে। উকিল এবং ডাক্তার। বিপদে পড়ে কারো কাছে গেলে কেউ আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না। আইন যে বানান করে লিখতে পারে না, সে ও দু’একটা ধারা বলে দেবে। আর অসুখে পড়েছেন? রাস্তার যে কোন আগন্তুককে বললেই সে হড়হড় করে ডায়াগনোসিসসহ পথ্য বাতলে দেবে। আজকে জানলাম, আমরা সবাই যোগ্য বিচারকও বটে!
ক্ষমাশীলদের মন্তব্যের সুর দেখে মনে হয়েছে, মন্ত্রী হয়ে উনি অপরাধ করে ক্ষমা চেয়েছেন, এটাই তো বিরাট ব্যাপার! আবার শাস্তি কিসের? জরিমানা কিসের? অথচ ঘটনা হবার কথা ছিল ভিন্ন। একজন সাধারণ মানুষ আইন ভঙ্গ করে সাজা বা জরিমানা দিলেই হয়ে গেল। কিন্তু মন্ত্রীদের মতো বড়সড় লোকদের শুধু সাজা পেলেই চলবে না। এরপরে ব্যাক্তিগতভাবে ক্ষমা চাইতেও হবে। পৃথিবীর সর্বত্র সেটাই ঘটে। আমাদের দেশে উল্টো। এটা আমাদের সামন্তবাদী মনোভাবে প্রতিফলন।
যারা বিনা শর্তে অবৈধ মন্ত্রী বাহাদুরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তারা কয়েকটি বড় দাগের ভুল করেছেন।
প্রথমতঃ সে জরিমানার টাকা দিয়েছে কিনা সে প্রশ্ন করা হয়নি। অপরাধের শাস্তি কি শুধু শক্তিহীনরা পাবে? আপনাদের মন্তব্যে সেই ইঙ্গিতই করে। এটা পুণরায় ক্ষমতাবানদের অপরাধ করতে উৎসাহিত করবে।
দ্বিতীয়তঃ তাকে মন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে মূলতঃ এই সকল ক্ষমাশীলরা অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে আসা একটা অবৈধ, ফ্যাসিবাদী সরকারকেই মেনে নিয়ে গণতন্ত্র হত্যায় নিজেকেও শরীক করল।
বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক Moinul Ahsan Saber ভাইয়ের আজকের ষ্ট্যাটাসটা দিয়ে লেখা শেষ করব। তিনি লিখেছেন
”মাঝেমধ্যে দুএকটি অন্যরকম ঘটনা দেখতে ইচ্ছা করে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী স্কুল পড়ুয়াদের অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসে সিগারেট টানছেন। হঠাৎ পুলিশ চলে এলো, স্যার, আপনি প্রকাশ্যে ধুমপান করতে পারেন না।
: বলে কী! আমি না মন্ত্রী!
:আপনি যেই হন, এটা পারেন না। এটা দন্ডনীয় অপরাধ। আপনাকে ফাইন দিতে হবে।
: কোত্থেকে দেব। মাত্র মন্ত্রী হয়েছি …/ মাছের চাষাবাদ কিছুই শুরু করিনি।
: দিতে হবে স্যার। এই যে স্লিপ।আর দেখুন সবাই আপনার দিকে কীভাবে তাকিয়ে আছে।
মন্ত্রী ছাত্র আর অভিভাবকদের দিকে তাকাবে। পদের সঙ্গে মানানসই না হলেও একটু লজ্জাও পাবে। চামচা কেউ এগিয়ে আসতে নিলে তাকে থামিয়ে ফাইন পরিশোধ করবে। তারপর বাচ্চা বাচ্চা ছাত্রদের দিকে ফিরে গলা নামিয়ে বলবে, তোমরা রেজাল্ট ভালো করেছ। আরো নিশ্চয় ভালো করবে। অনেক উন্নতি করো জীবনে। বড় কিছু হও। আর, যদি মন্ত্রী হও কখনো, শুধু মন্ত্রীই হোয়ো। একইসঙ্গে বেয়াক্কেলও হোয়ো না।”
https://www.facebook.com/moinul.saber/posts/10203095776985715?stream_ref=10
হ্যাঁ, এটা করলেই শুধু তিনি ধন্যবাদ পাবার যোগ্য হতেন একটা শর্ত সাপেক্ষে। শর্তটা হোল, একটা অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে অবৈধ মন্ত্রী হয়ে যে অন্যায় করেছেন, তারজন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কবে?
পদত্যাগ করে সবার কাছে একটা সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন কবে?