আমি এখন যে কথা বলব, সে সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা অনেকেরই থেকে থাকবে। আমার ছোট বোনের এক ক্লাসমেট আছে, ও খালার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। পারিবারিক স্ট্যাটাস খুব একটা স্বচ্ছল না বোধহয়। ফলে অন্যান্য উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের বন্ধুদের মায়েরা যতটা যত্ন নিয়ে, আবেগ ও মমতা নিয়ে টিফিন পিরিয়ডের জন্য টিফিন বানিয়ে দেবেন— ওর জন্য নিশ্চয়ই অতটা কখনও বরাদ্দ থাকবে না। অন্য বন্ধুরা টিফিনে যে টাকাটা চকোলেট- চিপস-চটপটি-বার্গারে ব্যয় করবে, তার পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না।
কিন্তু ওর শখ-আহ্লাদ তো কখনই কম হবার কথা না, পেটের ক্ষুধাটাও ওর সাথে খুব বেশি কম্প্রোমাইজ করবে না বেশিক্ষণ। ঐ মেয়েটা একসময় না পেরে তার বন্ধুকে যদি ন্যুডলস খেতে দেখে বলে, “কী খাচ্ছ? তোমার ন্যুডলসটা খুব মজা হয়েছে মনেহয় আজকে!” কিংবা পার্ক/ কিটক্যাট খেতে দেখে যদি বলে “জানো, আমার না পার্ক চকোলেট খুব পছন্দের।” বন্ধুরা তখন নিজেদের খাবারটা শেয়ার করে ওর সাথে। আমার বোনের মতো করে হয়তো বলে, আমি সকালে খেয়ে এসেছি, তুমি এটা খাও। হয়তো প্রথমে একটু-আধটু না করবে, কিন্তু আরেকটু সাধলে সে খাবে।
একটা জিনিস খেয়াল করুন— কলেজে পড়ুয়া একটা মেয়ের আত্নাভিমান কিন্তু প্রকট থাকে। আমার বোন এ ঘটনা বলার পর থেকে আমার মাঝে মাঝেই ঐ মেয়েটার কথা মনে হয়, যেমন আজকে মনে হচ্ছে। ও নিশ্চয়ই একবুক কষ্ট নিয়ে ওর বন্ধুদের টিফিন খাওয়া দেখে, এক্সট্রিম পর্যায়ে লজ্জার মাথা খেয়ে বন্ধুদেরকে পরোক্ষভাবে বোঝ ও ক্ষুধার্ত। নিশ্চয়ই ওর আত্নসম্মানে বাঁধে। হয়তো ভাবে, সবাই ওরকম আর শুধু আমিই কেন এরকম!
সমস্যা হচ্ছে, এদেরকে কিন্তু সরাসরি সাহায্যও করা যায় না যে, তুমি এ টাকাটা রাখো। নিজের কাছেই লজ্জা লাগে, আর ওরাও নিশ্চয়ই কষ্ট পায়, ভীষণ লজ্জিত হয়, হীনমন্যতায় ভোগে। কারণ সে একটা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ে, ভালো রেজাল্ট করে। আমার ব্যক্তিগত সাজেশান হচ্ছে, এই মানুষগুলোকে এমনভাবে ট্রিট করা যাতে ওরা বুঝতে না পারে ওদেরকে স করা হচ্ছে, খুব কাছের বন্ধুর মতো পাশে থাকা। একটু মাথা খাটালে আরও বুদ্ধি বের হওয়া সম্ভব। আর কিছু না পারলেও, ওদেরকে নিয়ে যেন আমরা কখনও হাসি-ঠাট্টা না করি, তুচ্ছ- তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে না দেখি। কথার বিষাক্ত কাঁটায় অন্তর রক্তাক্ত না করে দিই।