চেতনাৎসী ড্রোন এবং তুষারের আদর্শিক পদস্খলন প্রসঙ্গেঃ

1

by Aman Abduhu

ফ্যাসিজমের বড় একটা সুবিধা হলো, এখানে বৃহত্তর ডিসকোর্সের স্রোতে গা ভাসিয়ে আরামের সাথে ভেসে যাওয়া যায়। এবং ফ্যাসিজমের বড় একটা বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে ঐ স্রোতে গা ভাসানো বাধ্যতামূলক।

back-Drone_photo0497

 
মজার বিষয় হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আগে ফ্যাসিষ্ট শব্দটা গর্ববোধক ছিলো, তাদের কাছে ইতিবাচক অর্থবোধক ছিলো। আদর্শের পরিচয়বোধক ছিলো। ইটালীতে মুসোলিনির পার্টি সদস্য ওঅনুসারীরা বুক ফুলিয়ে স্লোগান দিতো “লিবরো আ ম্যাসেটো/ ফ্যাসিষ্টা পারফেটো”, অর্থ্যাৎ “বই এবং রাইফেল/ একজন যথার্থ ফ্যাসিষ্ট”।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরাজয় এবং সারা পৃথিবীজুড়ে ইন্ড্রাষ্টিয়ালাইজেশনের সাথে সাথে ইনডিভিজুয়ালিষ্টিক চিন্তাভাবনার উত্থানে এখন ফ্যাসিজম শব্দটা একটা গালি হয়ে গেছে। বিষয়টা অনেকটা বাংলাদেশে “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” ও “শাহবাগি” শব্দদ্বয়ের মতো।

ফ্যাসিজম নিন্দিত, কিন্তু ফ্যাসিজমের জয়জয়কার এখনো পৃথিবীর অনেক দেশে। বাংলাদেশ তার ইতিহাসে ফ্যাসিজমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে এখন। আদর্শ যখন বলবে লাল সবুজ পতাকা পড়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে, এবং তা না করলে তখন আপনে দেশদ্রোহী। চেতনার ইয়াবাখোর কমান্ডাররা যদি বলে জয় বাংলা স্লোগান না দিলে মুক্তিযোদ্ধা না, তাহলে জীবনের মায়া বাদ দিয়ে পরিবার পরিজন ফেলে পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধ করা লোকটা হয়ে যায় রাজাকার।

ব্যাক্তিগতভাবে ফ্যাসিজম নিয়ে আমি ফ্যাসিনেটেড। মানুষের সাম্প্রতিক ইতিহাসে মানুষ কিভাবে মানুষের মৌলিক একটা বৈশিষ্ট্য- স্বাধীন মত প্রকাশের আজন্ম বেদনাময় চিৎকার ও আকাংখা- কে বারবার দমাতে চেয়েছে এসব পড়তে গিয়ে বারবার আশ্চর্য হই। এখন অবশ্য আর পড়তে হয়না, চোখের সামনে দেখছি সবসময়। যখন পড়তাম, তখন একটা বিষয় আমাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছিলো।

ফ্যাসিজমের ভেতর থেকেই কোন না কোন সময় দ্বিমতের জন্মচিৎকার শুরু হয়। সে চিৎকারের মুখে লবণ দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টাও চিরন্তন। আপনি জামায়াত করেন, মধু মাখিয়ে যান কোন অসুবিধা নাই। যখন দ্বিমত করবেন তখন দেখবেন দ্বিনি ভাই চমৎকার। যশোরের দলত্যাগী এমপি শাখাওয়াতের ছেলে যখন প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলো তখন জামায়াতের লোকজন বলতে শুরু করলো, এইটা আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তি!! এতোটাই ব্যাক্তিগত প্রতিহিংসার জন্ম দেয় ফ্যাসিজম।

ট্রটস্কি ছিলো রাশিয়াতে পার্টির অনেক উপরের পর্যায়ের লোক। রেড আর্মির কমান্ডার, যুদ্ধমন্ত্রী। ষ্টালিনের সাথে যখন তার নীতিগত মতপার্থক্য হলো, দেখা গেলো দ্বিনী ভাই চমৎকার।

নাৎসী নেতা এবং গণহত্যার হোতা হিমলার ছিলো হিটলারের ডানহাত, শেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে যখন সে এলাইড ফোর্সের সাথে ডিলিংস প্রসঙ্গে হিটলারের সাথে দ্বিমত করলো, জারি হয়ে গেলো গ্রেফতার করে হত্যার নির্দেশ। সারাজীবন ধরে নাৎসি আদর্শের খেদমত তুচ্ছ হয়ে গেলো।

এসবকিছু কারণ ঐ একটাই, ফ্যাসিজম কখনো দ্বিমত সহ্য করেনা। স্রোতের সাথে ভাসতে হয়, স্রোতের সাথেই ডুবতে হয়। জীবনে মরণে আমি তোমার তুমি আমার।

সুতরাং চেতনাগুরু বিশিষ্ট কল্পগল্প নকলবাজ আইজাক জাফরের চোরামি ধরিয়ে দিলে এই বাংলাদেশে হতে হয় স্বাধীনতার শত্রু। আর ততদূর না গিয়েও, ড্রোন প্রসঙ্গে তার দাবীর সাথে দ্বিমত করে যুক্তিতর্ক খুঁজলেই দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নোংরা আক্রমণের টার্গেট হয়ে যেতে হয়।

তরুণ প্রজন্মকে একাত্তরের চেতনাৎসী আদর্শে দীক্ষিত করার আগে বিষয়টা ভাবা দরকার ছিলো, এখন ভেবে লাভ নাই। চেতনাগুরুরা যদি আদেশ জারি করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আপনার বউকে উলঙ্গ হয়ে একহাতে মোম্বাত্তি আরেকহাতে লালসবুজ বেলুন নিয়ে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রোড মার্চ করতে হবে, তাহলে তাই করতে হবে তুষার। আপনি এখানে যুক্তি ব্যাখ্যা খুঁজতে গেসেন? স্বাধীনতার শত্রু!! চেতনাশত্রুর জাটকা/ ফিলটারে খাইসে আটকা!

এইটা ফ্যাসিজমের চিরকালীন ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য। সুতরাং জেনেবুঝে আগুনে লাফ দেবেননা। জাফর ইকবাল ষাড়কে ড্রোনের আবিস্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ধন্য ধন্য রবে মেতে উঠুন; স্বাধনিতার চেতনা বাস্তবায়ন করুন। উনি যদি ভবিষ্যতে দাবী করেন উনি চেতনার বলে বলীয়ান হয়ে নতুন ধরণের স্মার্ট ফোন আবিস্কার করছেন, যেখানে রিংটোন হিসেবে জয়বাংলা স্লোগান দেয়, তাহলে তাকে স্মার্টফোনের আবিস্কারক হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়ে ধন্য ধন্য রবে ফেটে পড়ুন। স্রোতে গা ভাসিয়ে দিন। নিরাপদে থাকুন।

জয় বাংলা।

One thought on “চেতনাৎসী ড্রোন এবং তুষারের আদর্শিক পদস্খলন প্রসঙ্গেঃ

  1. হ, দুডা ওয়ার মুভি, দুডা ইউটিউব ভিডিয়ু লেকচার, কখান হিস্টুরি চ্যানেলের ডকুমেন্টারি আর কয়পাতা ব্লগ পইড়া যখন কোন ছাগু দর্শন আর রাজনীতি লইয়া ল্যাদায় তখন এইগুলানই বাইর হইব, কি কন ভাইজান ?

    ভাই “বৃহত্তর ফ্যাসিস্ট ডিস্কোর্স” লইয়া ল্যাদানোর আগে “ডিস্কোর্স” কইতে আসলে কি বুজায়, সেইডা একটু কষ্ট কইরা কিছু কিতাব-পাতি পইড়া আইলে কি ভাল হইত না? ছাগু হইলেই যে আবুল হওন লাগবো সেইডা কে কইছে?

Leave a comment