বাঙালি মধ্যবিত্তের মন ও মাদ্রাসা শিক্ষার ভবিষ্যৎ

1

by Alauddin Mohammad

 

বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জের নিম্নবিত্ত মুসলমানরা এখনো ১০০ টাকা আয় করলে পরম ভক্তিভরে ১০ টাকা রেখে দেয় এলাকার মসজিদ ও মাদ্রাসায় দানের জন্য। অনেক অঞ্চলে নতুন ফসল ঘরে তোলার আগেই স্থানীয় মাদ্রাসায় চলে যায় একটা অংশ। আর এভাবেই টিকে আছে দেশের মোট শিক্ষার্থীর প্রতি ৩ জনের ১ জনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য অংশ। আর এই মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে শহুরে মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকেদের দৃষ্টিভঙ্গি আবার খুব একটা সুবিধার নয়।

Madrassa

তাদের অনেকেরই এই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর শুভ্র জোব্বায় ভীষণ ভয়। আর ’৭১ এর একটি বিশেষ গোষ্ঠীর দোহাই দিয়ে তাঁদের গল্প-উপন্যাস-সিনেমায় মাদ্রাসা শিক্ষিত মোল্লা-মুন্সীদের খলনায়ক বানানোর চিরস্থায়ী প্রকল্প তো চলছেই। ইদানিংকালে আবার যুক্ত হয়েছে জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁদের ঠেকানোর জিহাদ। এ অবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নীরব থাকাটাও একটা নাগরিক ব্যাধি।

 

বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ কোন মাত্রায় আছে কিংবা আদৌতেই আছে কিনা এখানে সে তর্কে যাব না। তবে বর্তমান সরকারের কর্মপরিধির একটা বিরাট অংশজুড়ে যে রয়েছে ‘জঙ্গিবাদের উত্থান’ ঠেকানো এবং দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের মূলেও যে রয়েছে এই জঙ্গিবাদ ফ্যাক্টর সেটা নিয়ে অবশ্য তর্কের অবকাশ নেই। বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ইসলামী জঙ্গিবাদকেই বুঝিয়ে থাকেন। এই ইসলামী জঙ্গিবাদের সাথে ইসলামী শিক্ষার রয়েছে এক শক্তিশালী সম্পর্ক।

 

উপমহাদেশের মুসলমানদের শিক্ষার সূচিকাগার মাদ্রাসা শিক্ষা এভাবেই জড়িয়ে যায় জঙ্গিবাদের আমলনামায়। মাদ্রাসা শিক্ষা বললেই আমাদের মাথায় ইসলামী শিক্ষার একটা চিত্র ভেসে উঠলেও এই মাদ্রাসা শিক্ষাও কিন্তু একমুখী নয়। শিশুশিক্ষণ মক্তবের বাইরে বাংলাদেশে মূলত দুই ধরনের মাদ্রাসা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রথম প্রকারে আছে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত আলীয়া মাদ্রাসা এবং দ্বিতীয় প্রকারে আছে ওয়াহাবী দর্শনের মাদ্রাসা যেটি কওমী নামেই বেশি পরিচিত।

 

ঐতিহাসিকভাবেই এই দুই ধরনের মাদ্রাসা আলাদা আঙ্গিকে গড়া। ব্রিটিশ ভারতে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ সালে প্রথম আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। গোঁড়া থেকেই এই মাদ্রাসার সাথে রয়েছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার সম্পর্ক। অন্যদিকে কওমী মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা ওয়াহাবী দর্শনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। উপমহাদেশে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের শুরুটাই হয়েছে ওয়াহাবীদের দ্বারা যারা উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের জন্য ভারতের উত্তর প্রদেশে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেওবন্দ দারুল ওলুম মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার পথিকৃৎ হল শহীদ সৈয়দ আহমদ বেরেলভীর আদর্শ। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই মাদ্রাসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কংগ্রেসের প্রথম সারির মুসলিম নেতারা দেওবন্দ মাদ্রাসার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং মাদ্রাসার স্কলারগণ শায়খুল হাদিস হোসাইন আহমদ মাদানির নেতৃত্বে পাকিস্তান ধারণার সক্রিয় বিরোধিতাও করেন।

deoband

মাদ্রাসাটি আজো দেওবন্দ অঞ্চলের মুসলিমদের অনুদান বিশেষত এলাকাবাসীর ফসলের একটা অংশের দ্বারা পরিচালিত। বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোও দেওবন্দের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সরকারবহির্ভূত খাতের সাহায্যেই টিকে আছে।

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ২০১১ সালের তথ্যমতে, আলিয়া মাদ্রাসার মোট সংখ্যা ৭০০০ এবং তাহমিমা আনামের গার্ডিয়ানে প্রদত্ত তথ্যমতে, দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কলা এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের শতকরা ৩২ শতাংশই এই আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষালাভ করেছেন।

 

অন্যদিকে দেশে কওমী মাদ্রাসা রয়েছে প্রায় ৬৫০০টি এবং এর মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষের মতো। এই সংখ্যা তাহমিমা আনামসহ বাঙালি মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় পাঠ করছেন ভয়ার্তভাবে! কারণ এই মাদ্রাসা শিক্ষিতরা সমাজের যে তলানি থেকে উঠে আসছেন তাদের বিশ্বাস করা যায় না। যেকোনো সময় এরা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে! অথচ এই তলানিতে যে তলে তলে একটা নূন্যতম শিক্ষার ছোঁয়া পৌঁছে গিয়েছে সেদিকে তাঁহাদের নজর পড়বে না।

 

মসজিদে মাদ্রাসা শিক্ষিত মৌলভীদের পেছনে নামাজ আদায় আর বাবার জানাজার জন্য মহল্লার সবচেয়ে বুজুর্গ মাওলানাটির খোঁজ করা হলেও সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি কোন শ্রদ্ধাপূর্ণ দৃষ্টি নেই। মাদ্রাসা শিক্ষিত দাঁড়ি-টুপিওয়ালাদের কথা মাথায় আসলেই একটা অবজ্ঞার ভঙ্গি ফুটে উঠে তাদের মানস-চরিত্রে। তারা মাদ্রাসাশিক্ষিতদের দেখতেও চান সিনেমা-নাটকে রাজাকার-দেশদ্রোহী কিংবা দুষ্ট চরিত্রের অবয়ব হিসেবে। অথচ প্রকৃত বিচারে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের তুলনায় মাদ্রাসা শিক্ষিতদের সামাজিক অপরাধে সংশ্লিষ্টতার হার সিকি ভাগও নয়। ইদানিংকালে এই মাদ্রাসা শিক্ষিতদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা মধ্যবিত্তের অবজ্ঞা ও উন্নাসিক মনোভাবকে আরো উস্কে দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের কল্পিত প্রতিপক্ষ হিসেবেই দাঁড় করিয়েছে।

 

এ অবস্থায় আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিতদের কাছ থেকে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিও একটি রাজনৈতিক দাবি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এর অংশ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ এই মাদ্রাসার সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।

 

মাদ্রাসা শিক্ষার কিছু কিছু দিক হয়তো বর্তমান বাস্তবতায় সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ক্ষেত্রেও অনেকখানি সত্য। আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাটা মূলত ধর্মশিক্ষা কিংবা পরকালীন বিশ্বাসকেন্দ্রিক জীবন চেতনা থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বহুদূরে অবস্থিত। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা টিকেই আছে এক দ্বৈত চেতনার সম্মিলন হিসেবে। এ কথা বলা হয়তো অন্যায় হবে না যে, আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ইহলৌকিকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা ইহলৌকিকতা স্বীকারপূর্বক পরলৌকিক মুক্তির আলোকে প্রতিষ্ঠিত।

 

মাদ্রাসা শিক্ষার এই ইহলৌকিক জায়গাটা নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের পুনর্বিবেচনা সময়ের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিতরা যখন নিজেদের একটা ঊর্ধ্বতন স্থানে ভেবে নিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কারের দাবি তোলেন তখন মাদ্রাসা শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ তাদের দাবিকে লেজ কাটা বানরের পরামর্শতুল্যই ভেবে থাকেন। আর এভাবে তারা হয়ে উঠেন একে অপরের প্রতিপক্ষ।

 

এই মুখোমুখি অবস্থানের পরোক্ষ ফল হচ্ছে গণবিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রান্তিকীকরণ। বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়ে থাকে। এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যারা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ তার জন্যই অবধারিত হওয়ার কথা। কার্যত সে রকম একটা ব্যবস্থাই ঐতিহাসিকভাবে চলে এসেছে। সে ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে অনেক মাদ্রাসা শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গই জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছেন। ঢাকার দুই প্রান্ত যাত্রাবাড়ী এবং টঙ্গীকেন্দ্রীক উন্নতমানের আলীয়া ও ক্যাডেট মাদ্রাসার উত্থান মাদ্রাসা ছাত্রদের এ সুযোগকে আরো প্রসারিত করেছে। সে সুবাদে গত দুই দশক ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাদ্রাসা ছাত্রদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে এই বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের সহাবস্থান দিয়েছে আধুনিক শিক্ষার সাথে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের এক সমন্বয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থায় আসতে শুরু করে গুণগত পরিবর্তন যেখানে একই শ্রেণীকক্ষে ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের চিন্তার সংশ্লেষণ বাড়তে থাকে। এক কথায় মাদ্রাসা শিক্ষিতদের আধুনিক শিক্ষায় স্বাগতম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ওয়ালারা এ পরিবর্তনকে যেন মেনে নিতে পারলেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকগণ এক এক করে প্রথম পছন্দের বিভাগগুলোকে মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য অবাঞ্চিত ঘোষণা শুরু করলেন। যে নীতিনির্ধারকেরা মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার ও আধুনিকীকরণে সদা ব্যতিব্যস্ত তাঁরাই মাদ্রাসা শিক্ষিতদের জন্য আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবাঞ্চিত করলেন। রাষ্ট্রের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এ দ্বৈত ভূমিকা যেকোন বিচারেই অবৈধ এবং এটি শিক্ষাব্যবস্থার সংকটকে গভীরতর করেছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রান্তিকীকরণ মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকীকরণের প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিতদের বহু বছর ধরে চলে আসা দাদাগিরিকে ভণ্ডামির পৈতা পরিয়ে দিয়েছে। এমনকি সরকারি ধারার শিক্ষা ব্যবস্থাতে ধর্মীয় শিক্ষার পরিবর্তে ব্রতচারী কিংবা মানবতাবাদী শিক্ষা বাস্তবায়নের চেষ্টা মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে উচ্চকণ্ঠদের প্রতি মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনাস্থা, ঘৃণা ও অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। সে প্রেক্ষাপটে মাদ্রাসা শিক্ষা কীরূপে আধুনিক হবে ও কতটুকু আধুনিক হওয়া দরকার তার অনুধাবন ও দাবি মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মধ্য থেকেই আসতে হবে। অন্যদিকে সংস্কারের দাবিদারদের এটাও মাথায় রাখতে হবে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা ‘আধুনিকতা’কে যেভাবে ইহলৌকিকতা অর্থে গ্রহণ করে থাকেন মাদ্রাসা শিক্ষার মূলনীতির সাথে এর কোন তফাৎ আছে কিনা।

 

একদল অসভ্য বর্বর শ্রেণীকে সভ্য করতে হবে এই রকম ‘হোয়াইট ম্যান’স বার্ডেন’ জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার দিকে তাকানো বাংলাদেশি মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও নীতিনির্ধারকদের এক ধরনের মানসিক হীনমন্যতা। মাদ্রাসা শিক্ষার সামাজিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্বীকারপূর্বকই কেবল এই ব্যবস্থার পরিবর্তন কিংবা কালোপযোগীকরণ নিয়ে কথা বলা যায় এবং সেটা আসতে হবে মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকেই। সে পরিবেশ কীভাবে তৈরি করা যায় সেটা নিয়েই রাষ্ট্রযন্ত্রের ভাবনা-চিন্তা করা উচিত।

 

সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিকগণ বাংলাদেশের প্রতি তিনজন শিক্ষার্থীর একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হওয়ার অবস্থাকে ভয়ানক বলে দাবি করছেন। পরিস্থিতি সত্যিকার অর্থেই ভয়ানক কিনা এটা বলা মুশকিল। তবে এ তথ্যকে আমরা একটু অন্যভাবে পাঠ করতে পারি। যেহেতু বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাদ্রাসার চেয়ে ব্যক্তি ও সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতার মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা অধিক সে হিসাবে প্রতি ছয় জন শিক্ষিতের একজন ব্যক্তি অনুদানের মাদ্রাসার উদ্যোগে ন্যূনতম শিক্ষার আলো লাভ করছে। আর সে বিচারে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি অংশকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সামাজিকভাবে মানুষ হিসেবে তুলে ধরায় ও শিক্ষার বিস্তারে এই মাদ্রাসাগুলোর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে যে কারণে মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে যুক্ত হয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেন্দ্রে উঠে আসার সংগ্রাম।

 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত নীতিনির্ধারকগণ যদি এইভাবে মাদ্রাসা শিক্ষার দিকে দৃষ্টি দিতে সক্ষম হন কেবল তখনই তারা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাস আশ্রিত শিক্ষাব্যবস্থাটির নৈর্বক্তিক মূল্যায়নে সক্ষম হবেন। আর এ কাজটি করতে পারলে মাদ্রাসা শিক্ষিত এবং মাদ্রাসা শিক্ষকদের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার গ্রহণযোগ্য দিকটির প্রতি আকৃষ্ট করা যাবে। তাতে দুইটি ভিন্ন ধারায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে একটা আস্থার সম্পর্ক তৈরি হবে।

 

তখন হয়তো একটি অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকেও অধিকতর বিজ্ঞানমুখী এবং আধুনিক করে গড়ে তোলা যাবে। এটা না করে জঙ্গিবাদের ধোঁয়া তুলে স্বল্পকালীন রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য যেভাবে একটি প্রান্তিক শ্রেণিকে নির্মূলের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে তা আখেরে রাষ্ট্রের ভিতকেই নাড়িয়ে তুলতে পারে।

One thought on “বাঙালি মধ্যবিত্তের মন ও মাদ্রাসা শিক্ষার ভবিষ্যৎ

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s