উপাধি আর প্রশংসা – by Ayman Rahat

 

র বেলায় পাওয়ার সাথে চাওয়া সমান্তরালে বাড়ে। যতই পায় ততই চায়। যোগ্যতার বেশি কিছু পেলেও সাদরে স্বাগতম। মুখে যতই ‘আমি এর যোগ্য না বা মানুষের জন্য করি’ জাতীয় কথা বলুক না কেন উপাধি আর প্রশংসা না নেয়ার ভান করেও যত পায় তত নেয়। ঠিক অনেকটা হাসি দিয়ে ‘কি দরকার ছিল’ টাইপের। বিখ্যাত মানুষদের হঠকারিতা সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় এক্ষেত্রে।

আমরা জানি নোবেল দেওয়া হয় ছয় বিষয়ে। কিন্তু এটা একটা ডাহা মিথ্যা প্রচার। আলফ্রেদ নোবেল ১৮৯৫ সালে তার উইলে যে নির্দেশনা দিয়ে যান তাতে অর্থনীতি উল্লেখ ছিল না। তাতে অন্য পাঁচটি বিষয় ছিল। এবং এই পাঁচটি বিষয়ে কোন কোন প্রতিষ্ঠান বা কারা বিজয়ী নির্বাচন করবেন তার নীতিমালা নোবেল নিজেই দিয়ে যান। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয় ঐ পাঁচ বিষয়ে নোবেল দেওয়া। ১৯৬৮ সালে সুইডিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ৩০০ বছর পূর্তিতে নোবেল ফাউন্ডেশনকে একটি বিরাট অঙ্কের অর্থ দান করে যা নতুন একটি বিষয়ে পুরষ্কার দেয়ায় ব্যবহৃত হবে। বিষয় ঠিক হল অর্থনীতি। কিন্তু জটিলতা দেখা দিল নোবেলের করা ১৮৯৫ সালের উইলে। নোবেল পুরষ্কার নামে ঐ পাঁচটি ব্যতীত অন্য নতুন কোন বিষয়ে পুরষ্কার দেয়া উইল পরিপন্থী। তারপর সিদ্ধান্ত হল নোবেল নামে নয় তবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কারের সমমানের পুরষ্কার হিসেবে এটি ভূষিত হবে। আর এর নাম দেয়া হয় The Sveriges Riksbank Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel. পুরস্কারটি দেয়া হয় আলফ্রেদ নোবেলের স্মরণে। খেয়াল করে দেখবেন ইন মেমরি অব আলফ্রেদ নোবেল যার মানে এটা নোবেল পুরষ্কার নয়। অন্য পাঁচটির বেলায় সরাসরি নোবেল প্রাইয লেখা থাকে।

কিন্তু বিশ্ব মিডিয়া বা কর্তৃপক্ষ এটাকে মুখে মুখে সবসময় নোবেল পুরষ্কার বলে থাকেন। অবশ্য যখন অর্থনীতিতে পুরষ্কার দেয়া হয়ে থাকে তখন নোবেল প্রাইয উল্লেখ করা হয়না। অন্য পাঁচটিতে যেমন উল্লেখা করা হয়। দলিল কখনই এটাকে নোবেল পুরষ্কার বলে না। ১৯৬৯ সাল থেকে এযাবৎ কতো জনই না অর্থনীতিতে এই পুরষ্কার পেলেন কিন্তু এটা নোবেল পুরষ্কার নয় জেনেও নিজেদের টাইটেলে নিজেকে নোবেল লরিয়েট উল্লেখ করে থাকেন। আপনি অমর্ত্য সেন কিংবা পল স্যামুয়েলসনের বই হাতে নিলে দেখবেন নিজেদের নোবেল লরিয়েট দাবী করে এটা ওটা লেখা। এত বিখ্যাত মানুষ হয়েও কিন্তু তারা এই হঠকারিতা বেছে নিয়েছেন। সবই ঐ প্রথম বাক্যে সীমাবদ্ধ। উপাধি আর প্রশংসার বেলায় পাওয়ার সাথে চাওয়া সমান্তরালে বাড়ে।

 

জাফর ষাঁড় কিন্তু জানেন তিনি ড্রোন আবিষ্কারক নন। তিনি একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় তার কাছে Discovery, Invention আর Replica ‘র অর্থ খুবই পরিষ্কার।  তবুও ঐ প্রশংসার বেলায় যা পায় তাই নেয়। মিডিয়া আর কিছু চেতনাধারি তুষাররা তাকে ড্রোন আবিষ্কারক বলে সম্বোধন করায় তার বরং আরও ভাল লেগেছে। তাই এরকম একটা মিথ্যা উপাধি নিয়েও মনে মনে নৃত্য করেছেন। সব বিখ্যাত মানুষেরই এই বদ গুণটা আছে বলা যায়। জাফর ষাঁড়ের বেলায় সেটার ব্রেক ঘটুক সেটা আমিও প্রত্যাশা করিনা। কিন্তু সমস্যা হল তার মত একজন চেতনা সাপ্লাইয়ারের পক্ষে এরকম হঠকারিতা মানায় না। মানতে পারিনা। তার চেতনায়ই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s