by Hussain Sumrat
৪২ বছর আগে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিপক্ষে বাংলাদেশ একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন করার জন্য যুদ্ধ করেছিল সেখানে এদেশের কিছু লোক সশরীরে বিরোধিতা করেছিল। তাঁদের বিচার হবে এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বিভিন্নভাবেই এই বিচারটি পেছনে পরে গিয়েছে। এবং দেশের মানুষ ও যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল তাঁরাও ভেবে নিয়েছিল এই বিচার আর হবে না। কিন্তু পাপ যে কাউকে ছাড়ে না সেটি প্রমাণিত হল। একবার একটি পাপ করলে সেটি আমাদের পিছু লেগে থাকে বছরের পর বছর। যাইহোক অনেক পরে এই বিচারটি আবার সামনে চলে আসে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক মত দেয় এটি হওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে দেখা গেল বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী বাক্তি নেই। যারা আছে তাঁরা আসলে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। তাই আমরা মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এরকম লোকের বিচার শুরু করলাম। কিন্তু বিচার যতই সামনে যেতে লাগল ততই সেটি বিতর্কিত হতে লাগল। বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ল না। কিন্তু এখানে বিতর্ক থাকার কথা ছিল না। কারণ দেশের প্রায় সবাই এই বিচারে সমর্থন দিয়েছে। এখন দেখা যাক কি কি কারণে এটি এতো বিতর্কিত হল। আমি এখানে একান্তই আমার কাছে যা মনে হয়েছে সেগুলি নিয়ে আলোচনা করব। দয়া করে এখানে কেউ আমার রাজনৈতিক পরিচয় খোঁজার চেষ্টা করবেন না। যাইহোক, কারণগুলি – ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, জামায়াতের লবিস্ত নিয়োগ, সুবিচার, রাজনৈতিক ফায়দা, জুডিশিয়ারি বিভাগে এক্সিকিউটিভ বিভাগের খবরদারী, ক্ষমা করে দাও, মন্ত্রি-পাতিমন্ত্রীদের কুকথা, আওয়ামেলীগ, মরার উপর খাড়ার ঘা।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ আমরা বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের সাথে আওয়ামেলীগের সখ্যতা দেখেছি। ৮৬ তে যখন এরশাদ সরকারের অধীনে কেউ নির্বাচনে যাবেনা বলে ঠিক হল ঠিক সেই সময়ে লীগ ও জামায়াত নির্বাচনে গেল। যেখানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন কেউ নির্বাচনে গেলে সে জাতীয় বেঈমান। ঠিক তখন থেকেই দেখা যায় জামায়াতের সাথে লীগের একটি ভাল সম্পর্ক। ৯৬ এ তাঁরা এক সাথে বসেছে, আন্দোলন করেছে। কাজী জাফরের ভাষায় – আমরা যখন বিএনপির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক দাবিতে আন্দোলন করছিলাম তখন আমাদের তিন দলের পক্ষ থেকে একটি লিয়াজু কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেখানে লীগের পক্ষ থেকে মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, জামায়াতের পক্ষ থেকে আলি আহসান মুজাহিদ ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমি লিয়াজু রক্ষা করতাম। সেখানে আমি লক্ষ্য করতাম আওয়ামেলীগ আমাদের সাথে (জাতীয় পার্টি) কথা বলার চেয়ে জামায়াতের সাথে কথা বলতে বেশী আগ্রহী। কিন্তু হঠাৎ করে এই সম্পর্ক এতো মলিন হল কিভাবে এটি আমার কাছে মিলেনা।
সে সময়ে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী বিচারপতি বদরুল হাসান(লীগ সমর্থিত) গোলাম আযমের বাসায় যায় দোয়া নিতে। সেখানে তিনি তাঁর পায়ে সালাম করেন। এভাবে বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের সাথে তাঁদের সখ্যতা ছিল। একসাথে দাওয়াত খাওয়া, যেখানে এখন লীগ বলে জামায়াত আসলে বিএনপির সাথে কোন আলোচনা না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের ভাষায় – জামায়াতের সাথে আওয়ামেলীগের মধুচন্দ্রিমা এতো তারাতারি শেষ হল কিভাবে!
এই ব্যাপারগুলি সাধারণ মানুষের মনোজগৎ থেকে বের হয়নি। এই বিভিন্নরকম প্রশ্নের কারণে এই বিচারের প্রতি মানুষের একটি বাঁকা দৃষ্টি স্থাপন হয়। এছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার আছে।
জামায়াতের লবিস্ত নিয়োগঃ যেহেতু জামায়াতের টাকার আধিক্য আছে তাই তাঁরা দেশের বাইরে লবিস্ত নিয়োগ করেছে বলেও শোনা যায়। এছাড়া দেশের ভিতরে তাঁদের শিবির বাহিনী তো আছেই। যারা বিভিন্ন সময়ে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে। এই লবিস্ত নিয়োগের ফলে তাঁরা বিভিন্নভাবে এই বিচারের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করে। যা দেশের কিছু লোকের মনে বিভিন্নরকম প্রশ্ন উত্থাপন করে। যা কিনা বিচারকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে।
সুবিচার : অধিকাংশ মানুষ আশা করেছিল ৭১ সালে যারা অপরাধ করেছে তাঁদের শাস্তি হোক এবং ঐ সময় যারা এই অপরাধের স্বীকার হয়েছেন তাঁরা ন্যায়-বিচার পাক। কিন্তু এখানে একটি বিরাট প্রশ্ন দেখা দিল। কারণ ঐ সময়ে যারা অপরাধ করেনি তাঁরাও এখানে বলির পাঠা হিসেবে এসেছে। দু-একটি উক্তি এখানে উল্লেখ করা যাক। মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরি কাঁদের মোল্লার রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এবং একসময় তাঁকে আদালত অবমাননার জন্য ডাকা হয়। বঙ্গবীর কাঁদের সিদ্দিকি বলেন – আমি আমার জীবনে কাঁদের মোল্লা নামে কোন রাজাকারের নাম শুনিনি। এছাড়া যে ভিক্তিমের সাক্ষীতে তাঁর ফাঁসি হয় তিনি আদালতের বাইরে যে বিবৃতি দিয়েছেন তাঁর সাথে আদালতের বিবৃতির অনেক ভিন্নতা আছে। সাইদিকে নিয়ে বিরাট প্রশ্ন দেখা যায়। কারণ সাইদি যে এলাকার সে এলাকার মুক্তিযুদ্ধ সময়ের কম্যান্ডার বলেন সাইদি যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিজুদ্ধাও ছিলেন না এবং রাজাকারও ছিলেন না। সে কিভাবে এখন এতো বড় রাজাকার কম্যান্ডার হল। বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেন – ইব্রাহীম কুদ্দির হত্যার দায়ে সাইদিকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে কিন্তু ১৯৭২ সালে তাঁর স্ত্রী একটি ইজহার করেছিলেন যেখানে অপরাধীদের তালিকায় সাইদির নাম নেই। তাহলে কার স্বার্থে এই রায় দেয়া হল। দেখুন বিচারকে কিন্তু বিচার করতে হবে নইলে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলতে হবে। দরকার হলে বিচার না করলে এদেরকে জেল থেকে বের করুন এবং পিটিয়ে মেরে ফেলুন। তাও সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচান। কারণ ইতিমধ্যে সাইদির ফাঁসির রায়ের প্রতীবাদে ৬-৮ ঘণ্টায় ১৫০ লোকের (যদি ভুলে না যাই) জীবন চলে গেছে। এই সাধারণ লোকগুলি যে কাণ্ডজ্ঞানেই হোক সাইদিকে ভালবাসে অথবা অন্য কোন দলকে সমর্থন করে তাই বলে এটির অপরাধে তাঁদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা যাবে না।
এই রকম বিভিন্ন ঘটনার কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে খুব ন্যায্য ভাবে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন হয়।
রাজনৈতিক ফায়দাঃ দেশের কিছু লোকের মনে একটি সন্দেহ ছিল যে লীগ কি সত্যিকার অর্থেই বিচার করতে চায় নাকি এটি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করতে চায়? সেটি ধিরে ধিরে আরও গভীর হতে থাকে। কারণ দেখা যায় এই বিচারকে ভালভাবে করার চেয়ে তাঁর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার দিকেই তাঁদের বেশী নজর। বিচার শুরু করে তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিলেন। এতে করে বিএনপি জামায়াতের অ্যালায়েন্সে আরও শক্ত হল তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনে। তখন তাঁরা এই আন্দোলনকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার আন্দোলন বলে অভিহত করল। তখন বিএনপির সমর্থকরা বলল আপনারা বিচার করছেন করেন কিন্তু এখানে আমাদেরকে দোষ দিচ্ছেন কেন? আমাদের দাবী মিটিয়ে দিন তারপর দেখেন আমরা কোন কথা বলি কিনা। এতে করে বিএনপির সমর্থকদের মাঝে বিরক্তিভাব প্রকাশ পায়। কারণ তাঁরা কোন আন্দোলন করলেই একে বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার আন্দোলন। তাই এই বিচারের প্রতি এক অংশের লোকের অনীহা প্রকাশ দেখা গেল। কারণ মনে রাখতে হবে দেশের অনেক লোক আছে যারা বিএনপিকেই ভোট দিবে। তাই তাঁদেরকে যখন অপরাধীদের তালিকায় ফেলা হল তখন তাঁরা এই বিচার নিয়ে খুব প্রফুল্ল থাকবে এটি ভাবা যায় না।
এ সম্পর্কে ডঃ আসিফ নজরুল বলেন – যখন বিচার কাজ শুরু হল তখন সবাই একে সমর্থন দিল কিন্তু পরে দেখা গেল আওয়ামেলীগ বিচার করার চেয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করার জন্য বেশী বাস্ত।
জুডিশিয়ারি বিভাগে এক্সিকিউটিভ বিভাগের খবরদারীঃ আমাদের বিভিন্ন সরকারের আমলে দেখা যায় তাঁরা বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিত না। তাঁদের পছন্দমতো লোক নিয়োগ করে ও বিভিন্ন পদে বসিয়ে একে কলঙ্কিত করেছে। এই সন্দেহ এখানেও ছিল অনেক লোকের। এছাড়া একটি প্রশ্ন উঠে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিচার কিন্তু এখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত ও খ্যাতনামা আইনবিদ নেই কেন? এখানে তো তাঁদের নাম আগে আসা উচিত ছিল। এই সাথে প্রকাশ পেল স্কাইপ কেলেঙ্কারি। যেখানে ধরা খেল ট্রাইব্যুনাল খুব ভালভাবে চলছে না। বিচারকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেয়া হচ্ছে যা সেই আলোচনায় উঠে আসে। একটি রায় দিয়ে দিলেই আপীলেড ডিভিশনে নিয়ে আসার প্রলোভন।
এ সম্পর্কে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজ বিজ্ঞানী ডঃ পিয়াস করিম বলেন – পৃথিবীর কোন স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে জুডিশিয়ারি বিভাগের উপর এক্সিকিউটিভ বিভাগের এতো প্রভাব থাকে! অনেক দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে মানবতা বিরোধী বিচারের ট্রাইব্যুনালে ধ্বস নেমে গেল। তিনি “ক্যাঙ্গারু ট্রায়াল” শব্দটিও ব্যবহার করেন।
এ সম্পর্কে বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজুল্লাহ বলেন – এটি লোকের কাছে উপহাসের পাত্র হয়ে গেছে।
এই সকল কারণে দেখা যায় অনেক লোকের মনে অনেক প্রশ্ন জন্ম দেয়। যা এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
ক্ষমা করে দাওঃ এর মধ্যে কিছু লোক এলো অন্যরকম বাণী নিয়ে। কিছু লোক বলল – মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান তাঁরা সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন যুদ্ধে। কিন্তু তাঁরাই এটি নিয়ে এতো মাতামাতি করেননি। নেলসন মান্দেলাকে ২৭ বছর কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং তাঁর অনেক লোককে হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু তিনি যখন জয় পেলেন তখন তিনি তাঁর প্রতিপক্ষের বিচার না করে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। এইরকম বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে তাঁরা বলতে চাইলেন এইগুলিকে ক্ষমা করে দিয়ে দেশকে নতুনভাবে চালাতে।
এই বাপারগুলিও কারও কারও মন-মস্তিস্কে জায়গা করে নেয়।
মন্ত্রি-পাতিমন্ত্রীদের কুকথাঃ বিচার যখন চলছে তখন সেটি নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততো ভাল হয় অনেক সময়। কিন্তু সরকার দলীয় লোকরা এতো বেশী কথা বলেছে এটা নিয়ে তাতে কিছু মানুষজন বিরক্ত হয়ে গেছে এই বিচার নিয়ে। রায় নিয়ে যখন বিচারকরাই কথা বলছে না তখন মন্ত্রি-পাতিমন্ত্রীরা প্রত্যেকদিন এই নিয়ে বলছেন। তাঁরা বলছেন ঐ দিনে রায় বের হবে। ফাঁসি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন কিছু লোকের মনে প্রশ্ন জাগল এটিতো মন্ত্রীদের কাজ না। রায় দিবে কোর্ট কিন্তু তাঁরা তার আগেই কিভাবে জানে যে ফাঁসি হবে।
এই বেশী কথা বলাটা অনেক মানুষজন পছন্দ করেনি। বরং বিরক্ত হয়েছেন অনেকেই।
আওয়ামেলীগঃ সরকার বার বার বলছে বিচার নিয়ে বিরোধীদল ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা যুদ্ধাপরাধীর পক্ষের দল। কিন্তু কিছু লোকের চোখে পরল বিপরীত ঘটনা। তাঁরা দেখলেন এই বিচারকে লীগ নিজেই তর্কবিদ্ধ করেছে। ১৯৭৪ সালে যখন Bhutto (যিনি ৭১ এর খলনায়ক) ঢাকায় আসলেন তাঁর আগে অনেক মুক্তিজুদ্ধা রাস্তায় নেমেছিলেন তাঁকে না আসতে দেয়ার জন্য কিন্তু তখন লীগের লোক সেই মুক্তিজুদ্ধাদের পিটিয়েছে। আর লীগের সাপোর্টাররা ঢাকায় একটি স্লোগান দিয়েছিল Bhutto Jindabad । জামায়াত-শিবির যখন মিছিল করে তখন পুলিশ লাঠি-চার্জ ও গুলি করে। আবার সুজুগ পেলে শিবির পুলিশের উপর আক্রমণ করে। কিন্তু হঠৎ দেখা গেল সেই শিবির কর্মীরাই পুলিশকে ফুল দিচ্ছে। তখন বাজারে একটি গুঞ্জন শোনা গেল যে আড়ালে জামায়াতের সাথে লীগের কথা চলছে। বিএনপি থেকে জামায়াতকে সরে আসতে বলা হচ্ছে তাহলে এই বিচার বিলম্ব করে একসময় শেষ করে দেয়া হবে।
ফরহাদ মজহার বলেন – আমরা সবাই চাইছিলাম ৭১ যারা সত্যিকার অর্থে ভিক্তিম তাঁদের উপর ন্যায় বিচার করা হোক। কারণ এটি নিয়ে সমাজে একটি ক্ষত আছে। এই ক্ষত দূর করতে হবে। দূর না করে উপায় নেই। কিন্তু সব সরকার এটি নিয়ে আমাদের সাথে খেলা করেছে। তাই এবার সবাই আশাবাদী হতে চেয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল লীগ শুধু মাত্র কয়েকজন লোককে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য, এই বিচারকে বাঞ্চাল করার জন্য কাজ করছে।
কাজী জাফর বলেন – যুদ্ধের পর যখন বঙ্গবন্ধুকে বললাম বিচার করেন না কেন? তখন তিনি বলেছিলেন ওরে জাফর আমি কার বিচার করব! আমার চাচা (ভুল হতে পারে আমার, অন্য কোন আত্মীয় হতে পারে,অনেক আগের কথা তো) নিজেই শান্তি কমিটিতে ছিলেন। তাহলে কি আমি আমার ঘড় থেকেই মানুষ মেরে আবার একটি গৃহ যুদ্ধ বাধাব।
লীগের ভিতর এখনও রাজাকার আছে কিন্তু তাঁরা তাঁদেরকে না ধরে শুধু তাঁর বিরোধীপক্ষের লোকদের ধরছে। তাই কিছুলোকের মনে স্বাভাবিক ভাবেই একটি প্রশ্ন এলো এটি আসলে বিচার হচ্ছে না। এটিকে রাজনৈতিক উপায় হিসেবে লীগ বেছে নিয়েছে। যেখানে তাঁর দলের রাজাকারদের খাইয়ে-দাইয়ে মোটা করছে আর বাকীসব রজাকার।
মরার উপর খাড়ার ঘাঃ যখন শাহবাগে কিছু তরুণ সমাবেশ করল তখন অনেক লোক এতে যুক্ত হল এবং যারা যায়নি তাঁরাও ঘড় থেকেই সমর্থন করল। কিন্তু কয়েকদিন পর দেখা গেল এটিকে লীগ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। বিএনপি যখন নির্দলীয় সরকারের জন্য হরতাল ডাকে তখন শাহবাগ বলল তাঁরা এটিকে প্রতিহত করবে। তখন কিছু লোক বলল তোমরা বিএনপির এই হরতালকে প্রতিহত করবে কেন? এটি করলে লীগ করবে। বিএনপি তো তোমাদের বিপক্ষে হরতাল করছে না। তোমরা তোমাদের আন্দোলন কর, বিএনপি বিএনপির আন্দোলন করুক। এভাবে অধিকাংশ লোক শাহবাগের প্রতি আগের অবস্থায় থাকলেন না। পরে দেখা গেল লক্ষ-লক্ষ লোকের জায়গায় শ খানেক লোক দেখা যায়। তখন এই শাহবাগ হয়ে দাঁড়াল লীগের গলার কাঁটা। আবার বিভিন্ন কারণে যখন হেফাজতে ইসলাম রাস্তায় নামল তখন সেটি হয়ে গেল মরার উপর খাড়ার ঘা। কারণ এদের পক্ষেও অনেক লোকের সমর্থন ছিল। বিভিন্নভাবে প্রেক্ষাপট বদলে গেল। সাধারণ লোকজনের মনোজগতে বাসা বাঁধতে থাকল বিভিন্ন রকম প্রেক্ষাপট। বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে লোকজনের যে উচ্ছ্বাস ছিল বিচারকে কেন্দ্র করে তাতে আগের মতো উচ্ছ্বাস থাকল না। অনেকটা কিছু লোকের জন্য দাঁড়াল এইরকম – ধুর বিচার হলেই কি আর না হলেই কি। এই ঝামেলার মধ্যে নেই। এবং যখন সবদিক থেকে লীগের প্রতি মানুষের বিরক্তি আসল তখন আগের মতো আর প্রেক্ষাপট থাকল না। সবাই বুঝল লীগ এই বিচারকে দিরঘায়িত করছে ক্ষমতাকে প্রলম্ভিত করার জন্য।
পরিশেষে একটি কথা – কোন সৎ কর্ম অসৎভাবে করা যায় না।