by Jahid Islam
সোভিয়েত-আফগানিস্তান যুদ্ধ থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর এ সময় পর্যন্ত নির্মিত বাস্তব দুনিয়ার সবচেয়ে সেরা থ্রিলিং সিনেমার নাম ‘ওয়ার অন টেরর’/ এটা সিকুয়েল মুভি,পার্ট অনেক। সিরিয়ালও বলা যেতে পারে। ‘লিও স্ট্রাউস’ নাকি ‘স্যামুয়েল হান্টিংটন’ কে এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট রাইটার সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। আবার দুই জনের থিওরি জোড়া লাগিয়েও বানানো হতে পারে। তবে মানতেই হবে মাস্টার স্ক্রিপ্ট। প্রধান চরিত্রে এ শতাব্দীতে ইতিমধ্যে অভিনয় করেছেন জর্জ বুশ,টনি ব্লেয়ার। এরপর এসেছেন বারাক ওবামা, নিকোলাস সারকোজি, এবং সর্বশেষে এসেছেন ফ্রাঙ্কয়িস হলান্ডে। কাহিনী ও সময়ের বাস্তবতায় চরিত্রগুলো পরিবর্তন হয়েছে।
সিনেমার শুটিং হয়েছে আফগানিস্থান, পাকিস্থান, ইয়েমেন, কেনিয়া, তানজানিয়া, ইরাক, মালি, নাইজেরিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া সহ পৃথিবীর নানান প্রান্তে। অনেকগুলো স্পটে চিত্রায়ন এখনো চলছে।
সাধারণ দর্শকের দৃষ্টিকোণ থেকে আলকায়েদার সাথে এ খেলায় অংশ গ্রহণকারীদেরকে তাদের ভুমিকার ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করা যায় বলে আমার মনে হয়েছেঃ-
১/ প্লেয়ারঃ যারা সরাসরি এ খেলায় অংশগ্রহণ করে। যেমন- আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স।
২/ সহযোগীঃ যারা এই ওয়ার অন টেররে আমেরিকারকে সাহায্য করে। যেমন- পাকিস্থান।
৩/ ডাবল সাইডেড প্লেয়ারঃ যারা আলকায়েদাকে আর্থিক অনুদান এবং লোকবল সরবরাহ করে, আবার আমেরিকারকে তাদের ঘাঁটি ব্যবহার করে ওয়ার অন টেররে সাহায্য করে । যেমন –সৌদি আরব।
৪/ খেলায় অংশগ্রহণের ভয় দেখায়ঃ কতিপয় দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ক্ষমতায় থাকার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে একে ব্যবহার করতে চান। তাদের মূল বক্তব্য হল, “আমি এবং আমার দল ক্ষমতায় না থাকলে দেশ আফগানিস্থান, পাকিস্থান হয়ে যাবে অথবা আল কায়েদার ঘাঁটি হয়ে যাবে”। এ প্রপোজিশন নিয়ে খেলায় অংশ গ্রহণ করেছেন লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি । তার খেলা শেষ। এখনো খেলে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। তবে এ খেলা মনে হয় সহজে শেষ হবেনা। প্রফেসর ড. তারিক রমাদানের মত আমিও বিশ্বাস করি এ খেলা শেষ না হওয়ার ব্যপারে দুই পক্ষের মধ্যে (এক পক্ষে আমেরকা, অন্য পক্ষে রাশিয়া এবং চীন) ঐক্য আছে। এছাড়াও এখানে অন্য রিজিওনাল প্লেয়াররাও জড়িত আছে যারা নিজেদের আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষায় খেলছে। যেমন- ইরান, তুরস্ক, কাতার, ও সৌদি আরব।
যাই হোক, এটা হল ভূমিকা। এবার আসি আসল কথায়। সম্প্রতি আইমান আল জাওয়াহিরি’র ভিডিও টেপ বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়ার প্রকাশিত হয়েছে। এটি দেখিয়ে শেখ হাসিনা চার নম্বর গ্রুপে যোগ দিবেন দিবেন করছেন। যারা এ খবরে অবাক হয়েছেন, আসলে তাদের অবাক হওয়া দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমার কাছে এর কারণ খুব পরিস্কার। যারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে না। এর মধ্যেই এক জনের ফাঁসি হয়েছে, একজন জেলে মারা গেছে। সম্ভাবনার বিচারে বাকিদেরও ফাঁসি হওয়ার কথা, একজাক্টলি কি হবে আল্লাহই জানেন। ফাঁসি না হলেও এরা সবাই বয়স্ক। ৮/১০ বছরের মধ্যেই অনেকে স্বাভাবিকভাবেই মারা যাবেন। অতপর এ খেলা শেষ। এরপর কি হবে ?
খেলার নিয়ম অনুসারে এরপর অন্য কোন ইস্যু আসার কথা। ইসলামিক টেররিজম কিংবা আঞ্চলিক নিরাপত্তা একটা ভাল ইস্যু। বাজারে এর চাহিদা আছে। তাই একে সামনে ঠেলে দিতে হবে। এ কাজ করবে কে ? উত্তর সহজ। প্রচারের প্রধান ভূমিকায় থাকবে এই দেশের ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ অর্থাৎ দেশি নিউকনিয়ান সেপাইদের প্রমোশনাল ভেহিকল ‘প্রথম আলো’ । ‘নিউইয়র্ক টাইমস এবং ‘প্রথম আলো’ এর মধ্যে সমন্বয় করার কাজটি করবেন মাহফুজ আনাম এবং তার মেয়ে বিশিষ্ট ‘ফিকশন লেখিকা’ তাহমিমা আনাম। ভারতের ‘আনন্দবাজার’ ও থাকবে এ দলে । এ ছাড়াও এ দেশ থেকে থিঙ্ক ট্যাঙ্কে থাকবেন আবুল বারাকাত, শাহরিয়ার কবির,মুন্তাসির মামুন, সজীব ওয়াজেদ জয়, দীপু মনি ও গওহর রিজভী। এরা প্রমিনেন্ট প্লেয়ার, অনেকে থাকবেন পর্দার আড়ালে।
তবে এ খেলায় সরাসরি আমেরিকা নামবে না। বাংলাদেশের এ গোষ্ঠী চাইলেও না। কেননা ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠা করার মত যথেষ্ট তেল সম্পদ বাংলাদেশে নেই। আমেরিকা চায় বাংলাদেশ মোটামুটি স্থিতিশীল থাক। তাই তারা সবাইকে রাজনীতিতে ইনক্লুড করার কথা বলে। এমনকি জামায়াতকেও। এতে সব দলকে একজিস্টিং ফ্রেমওয়ার্কে আনা যাবে যাতে অবস্থা স্থিতিশীল থাকবে।
তবে এখানে আছে লোকাল ভেন্ডর ভারত যাদের এ হিসেবে একটু আপত্তি আছে । ফলে দরকষাকষির মাধ্যমে যেটাতে মার্কেটে ইকুইলিব্রিয়াম এসেছে সেটা হল, আমেরিকা খেলাটা মনিটর করবে। কিন্তু সেটা রিজিওনাল এলাই হিসেবে গ্রেটার ইন্টারেস্টের কথা চিন্তা করে আউটসোর্স করে দিবে ভারতকে। ভারতের এখানে বহুমুখী লাভ আছে। যেমন- আসাম সহ অন্যান্য অস্থিতিশীল অংশগুলোতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখা, বাংলাদেশের উপর দিয়ে অবাদে বিনা খরচে পণ্য পরবিবহন, নামে মাত্র মূল্যে বন্দর ব্যবহার করা, দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা নিয়ন্ত্রন করা ইত্যাদি। সর্বোপরি, বাংলাদেশ যদি ভারতের একটি স্থিতিশীল অঙ্গরাজ্য হিসেবে কাজ করে তাহলে সবচেয়ে ভাল হয়।
এটা করতে হলে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে যে কোন মূল্যে। এর জেন্য দরকার লং এবং শর্ট টার্ম প্ল্যান। শর্ট টার্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আওয়ামীলীগ এবার ক্ষমতায় এসেছে, এতে আনপ্রেসিডেন্টেড সমর্থন দিয়েছে ভারত। ফলাফল হিসেবে ভারত প্রতিদানও পেয়েছে একেবারে হাতে নাতে। উলফা কে আর্মস সরবরাহ এর অভিযোগে অভিযুক্তদের ফাঁসি হয়েছে। এরপর, লংটার্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসেছে এ নতুন প্রপোজিশন। ৩ মাসের পুরনো ভিডিও টেপ নিয়ে মাতামাতির ব্যপারটি আমি এভাবেই দেখি।
তবে এ খেলার আরেকটি মজার দিক আছে যেটি সাধারণত চার নম্বর ক্যটাগরির লোকেরা আগে থেকে বুঝতে পারেনা, অন্তত এখনো পর্যন্ত কেউ পারে নি। যারাই এ খেলায় অংশগ্রহন করে দেশের জনগণের সাথে “আল-কায়দা আল-কায়দা” খেলেছেন তাদের পরিণতি খুব একটা সুখকর হয়নি। উধাহরণ- গাদ্দাফি, পারভেজ মোশাররফ। এদেরকে ব্যবহার শেষে যথাস্থানে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে ঠিক যেমন মীর জাফর কে ছুঁড়ে ফেলেছিল ইংরেজরা।
ইতিহাস বলে থেকে মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। শিক্ষা না নেওয়ার পেছনে যুক্তি দেখায়- দিজ টাইম ইট ইজ কোয়াইট ডিফরেন্ট। লেটস সি হোয়াট হেপেন্স দিস টাইম !
লেখাটা অনেক সুন্দর হয়েছে। ফেবুতে শেয়ার করলাম।