পাকিস্তান ও ভারত নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে

ধরা যাক পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে খেলা হচ্ছে ঢাকা স্টেডিয়ামে। খেলা দেখতে এসেছে হিনা রাব্বানী – বসে আছেন ভিআইপি বক্সে। দর্শকদের উত্তেজিত অংশের একজন গালের মধ্যে লিখে নিলেন: “ভইরা দিমু হিনা”। সেটা দেখানো হোলো টিভিতে। পরের দিন অনলাইনে এর প্রতিক্রিয়া কী হবে? একটু সততার সাথে কল্পনা করুন।

– চরম মামা চরম
– সিরাম হইছে বস
– আমারটাও সাথে নিয়েন কইলাম
– আস্তে দিয়েন বস, পিছনে আছি

যিনি ভরে দিতে চান তাকে বীরের সম্ভাষণ দেয়া হবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে (এটাও এক অদ্ভুত প্রবণতা আমাদের, ভার্চুয়াল আর রিয়ালের মাঝে কোনো পর্দা দেখি না আর)। এবার একটু অন্যভাবে কল্পনা করুন। যে মেয়েটি “ম্যারি মি আফ্রিদি” লিখেছিলো সে কি “ভইরা দিমু হিনা”রই নারী সংস্করণ নয়? দুটোর মাঝে কি খুব পার্থক্য আছে? দুজনই বিপরীত লিঙ্গের একজন বিখ্যাত পাকিস্তানীকে কামনা করেন। কিন্তু মেয়েটাকে দেখা হয় অবক্ষয়ের নিম্নতম নিদর্শন হিসাবে আর ছেলেটাকে দেখা হবে বীর হিসাবে (তবে একটু ফাজিল টাইপ)।

ম্যারি মি আফ্রিদি নিয়ে ফেসবুকে যে সমালোচনার গণজোয়ার তার অন্তর্নিহিত কারণটি হোলো সেক্সিস্ট। ট্রাইবাল মানুষেরা বিভিন্ন সময়ে অন্য গোত্র দ্বারা নিজের গোত্রের মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়াকে জীনপুলের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখেছে (ম্যারি মি আফ্রিদি’র প্রতিক্রিয়া) কিন্তু একই সাথে অন্য গোত্রের মেয়েকে উঠিয়ে আনাকে দেখেছে শিরোপা হিসেবে (ভইরা দিমু হিনা’র প্রতিক্রিয়া)।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে আমি প্রথম অনুধাবন করি যে পাকিস্তান ও ভারত দুটো দেশ সম্বন্ধে আমাদের যে বক্তব্য তার প্রায় আগাগোড়াই ভণ্ডামিতে ভরা এবং যেহেতু সমাজে এ প্রসঙ্গে একটা হাশ হাশ প্রচলিত (কেননা সবাই এ প্রসঙ্গে কতোটা পলিটিকালি কারেক্ট বক্তব্য দেয়া যায় তারই প্র্যাকটিস করেন, সত্যের কিংবা নিজের মনের ধার ধারেন না), সেহেতু ক্রমাগতই দুটো দেশ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা অসুস্থ থেকে অসুস্থতর হচ্ছে। আমি এ নিয়ে কিছু বলতে চাই।

Image

আমার প্রথম অবজারভেশন হোলো সংজ্ঞার সমস্যা। পাকিস্তান বলতে দেশপ্রেমিক পাকিস্তানের সরকার বোঝায় না ভূগোল বোঝায়, না রাজনীতি বোঝায়, না সংস্কৃতি বোঝায়, না কি ঐ দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে বোঝায় এ সম্বন্ধে তার পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। উদাহরণ দেয়া যাক। মশিউল আলমের একটা গল্প বেরিয়েছিলো কয়েক বছর আগে “পাকিস্তান” নামে। এই গল্পে লেখক নিজেই বলছেন যে, “আই হেইট পাকিস্তান! আই হেইট অল অফ ইউ, পাকিস্তানিস!” এবং বলেছিলেন এক পাকিস্তানীকেই। ভালো কথা। আপনি সকল পাকিস্তানীকে ঘৃণা করেন কায়মনোবাক্যে – এর মধ্যে কোনো যদি কিন্তু নাই।

কিছুদিন পরের কথাও লেখক আমাদের জানান এই গল্পে। ইমতিয়াজ নামের যে তরুণকে এই কথাটা লেখক শুনিয়েছিলেন তার বোনকে দেখেই তিনি তার প্রেমে পড়ে গেলেন। তখন কিন্তু তিনি ভুলে গেলেন যে ইমতিয়াজের অনিন্দ্য সুন্দরী বোন ফারহানা কিন্তু বাঙালি নন, পাকিস্তানীই। সম্ভবত মশিউল আলমের মনে পাকিস্তান নামের যে ধারণা, তার মধ্যে মেয়েরা অনুপস্থিত – অন্তত ফারহানাকে যে পাকিস্তানের ঘেরাটোপে আটকে রাখা যাবে না সেটা নিশ্চিত। পাকিস্তানী মাত্রই ঘৃণিত, শুধু সুন্দরী মেয়েরা দুধভাত।

মনে করবেন না এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যারা বাংলাদেশে থাকেন তারা যেহেতু ব্যক্তিগত জীবনে ভারতীয় ও পাকিস্তানীদের খুব একটা দেখেন না সেহেতু তাদের পক্ষে ধারণা করা কঠিন যে দেশপ্রেমিক জনগণ যখন আসলেই ভারতীয় ও পাকিস্তানীদের সামনাসামনি হন তখন কী করেন। আই হেইট অল অফ ইউ, পাকিস্তানিস, ইন্ডিয়ানস মুখে বলা খুব সহজ। যারা ঘৃণা-বিদ্যায় এতো পারদর্শী তারা পাকিস্তানিস কিংবা ইন্ডিয়ানস দের ভিড়ে আসলে কী করেন সেটা না দেখলে তাদের কনভিকশানের দৌড় কতোদূর এটা বোঝা মুশকিল।

সৌভাগ্যক্রমে আমি এই তামাশা অনেক দেখেছি – অনেক। সাম্প্রতিকতম একটা উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশের এক চরম পাকিস্তান বিদ্বেষী ও আওয়ামী মনোভাব সম্পন্ন পরিবারের মেয়ের কথা। আমাদের এক বন্ধুর বন্ধু। অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন বহু বছর – বাংলাদেশে খুব ভালো পরিবার বলে কী একটা জিনিস আছে না – ওটা মেয়েটির আছে। কিছুদিন আগে হুট করে দেখি যে এই মেয়ের নতুন বয়ফ্রেন্ড পাকিস্তানী – আবার তার সাথে কথাও বলে উর্দুতে (যদিও এই মেয়ে খুব ভালো ইংরেজি জানে)। মেয়েটার ভাষ্যে এই ছেলেটা শুধুই পাঠান – এন্ড য়ু নো পাঠানস আর নট রিয়ালি লাইক পাঞ্জাবিজ।

দেখুন আমার দৃষ্টিকোণে খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয় – আপনি হিন্দু, পাকিস্তানি, আরব যে কারো প্রেমে পড়তেই পারেন (তবে এরশাদ এরশাদ খেলায় একটু অরুচি আছে) – কিন্তু আপনি তো আগে একটা শর্ত নিজেই বসিয়েছিলেন যে আই হেইট অল অফ ইউ, পাকিস্তানিস – এটা তো আমার কথা না। তাহলে কেন একটা পাকিস্তানীর সাথেও বা প্রেম।

এর বিপরীত নক্সাটা এতোই সহজলভ্য যে আলাদা করে কিছুই বলার নেই। দেশটারে ইন্ডিয়া ফাকায় দিচ্ছে, মালুগুলারে সাইজ করা দরকার, পোন্দে মাতরম – বলেন জাতীয়তাবাদী। যে ঘরে টিভি সেখানেই রয়েছে আয়াতুল কুরসীর ক্যালিগ্রাফি কিন্তু মুন্নী বদনাম হলে তিনি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেন না। কোনো এক অদ্ভুত কারণে তার নীচের তলার অভিষেকের বাবা-মা যার চোদ্দ গুষ্ঠীর কায়কায়বার এই দেশে, – তারা ইন্ডিয়াকে রেপ্রেজেন্ট করে কিন্তু মুন্নী ইন্ডিয়াকে রেপ্রেজেন্ট করে না কারণ মুন্নী তাকে আরাম দেয়। আরামদায়ীর কোনো ধর্ম ও জাতীয়তা হতে নেই।

বাংলাদেশে অবস্থা দাড়িয়েছে এমন যে পাকিস্তান ও ভারত সম্বন্ধে আপনার আসল মনোভাব কি সেটা ভুলেও উচ্চারণ করা যাবে না কারণ যদি ব্যালান্সিং এক্টে আপনি সামান্য ভুল করেন তাহলে আপনি হয় হবেন ছাগু কিংবা রাজাকার না হয় হবেন দালাল কিংবা চেতনাবাজ। ক্রিকেটের সময় আসলে ঘৃণার পারা আরেকটু উপরে উঠে – তখন আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া উভয়কেই পাক্কা সমান ভাবে ঘৃণা করেন এবং শুধু বাংলাদেশের সাথেই আপনার ঘনপ্রেম।

এই বিচিত্র প্রবণতা কেন গড়ে ওঠে বাংলাদেশে – অনেক ভেবেছি এই নিয়ে এবং পেয়েছি অনেক কারণ; কিন্তু সর্বপ্রথম কারণ হোলো এইটি: আমি নিশ্চিত হয়ে বলছি – মনের কোনো এক কোণে আমরা নিজেদের পাকিস্তানী কিংবা ভারতীয়দের সমকক্ষ বলে মনে করতে পারি না। মনে করি যে আমি ওদের চেয়ে ইনফিরিওর।

এই ইনফিরিওরিটির কারণে আপনার একটা ক্রোধ সৃষ্টি হয় আর এই ক্রোধের পলিটিকালি কারেক্ট এক্সপ্রেশন হোলো “আই হেইট অল অফ ইউ, পাকিস্তানিস” কিংবা “পোন্দে মাতরম” – নিজ নিজ পরিমণ্ডলে। (দয়া করে ভাববেন না যে ইন্ডিয়ানদের চেয়ে নিজেকে ইনফিরিওর মনে করে সে পাকিস্তানিদের তুলনায় নিজেকে খুব সুপিরিওর মনে করবে। এই যে না জেনে, না বুঝে শুধুমাত্র জাতীয়তা কিংবা চেহারা-সুরত দেখে কারো থেকে নিজেকে ইনফিরিওর কিংবা সুপিরিওর মনে করা – এটা একটা মূর্খতাজনিত রোগ। যে একবার ইন্ডিয়ানদের তুলনায় নিজেকে ইনফিরিওরয়র মনে করেছে সে খুব সম্ভবত শাদাদের চাইতেও নিজেকে ছোটো মনে করে)।

যে মানুষ নির্বিচারে ঘৃণা করতে সক্ষম, অর্থাৎ ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা, ইতিহাস কোনো কিছুর ভিত্তিতে আরেকটা মানুষকে না জেনেই তাকে ঘৃণা করে সে সুনিশ্চিতভাবে অক্ষম মানুষ। ঘৃণা একটি খুবই মূল্যবান অনুভূতি। কাজের মানুষ এটা অকাতরে বিলোয় না – সেটা করে গর্দভরা।

আপনি যদি কোনো একটা জাতিকে যে কারণেই হোক ঘৃণা করবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তাহলে আপনি নিজেকে একটা শর্তের মধ্যে আবিষ্কার করেন। শর্তটা কী বোঝানো মুশকিল – চেষ্টা করি। ইমতিয়াজ পাকিস্তানি। আপনার মনের মধ্যে ইমতিয়াজের যে অস্তিত্ব সেটা “অস্তিত্ব” হিসেবে কেবল তখনই কোয়ালিফাই করবে যখন আপনি তাকে ঘৃণা করবেন। ফলে ইমতিয়াজের অস্তিত্বকে একটা ঘৃণা-নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে কল্পনা করাও মুশকিল। এর পরেই আপনি নিজেকে বোঝাতে সক্ষম হবেন যে এই যে আপনি ইমতিয়াজকে ঘৃণা করছেন – এর মাধ্যমে যে একটা বিষয়কে “পবিত্র” মানেন (এই ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা) সেই পবিত্রতাকে গৌরবমণ্ডিত করছেন। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পবিত্র ও শুদ্ধতর হয়ে উঠবে আপনার কাজ দিয়ে না, মনের ঘৃণা দিয়ে।

এই পর্যায়টি খুব বিপজ্জনক একটা পর্যায়। কেননা এই সময়ে দেশপ্রেমিক নিজের প্রতি তীব্র একটা ভালোবাসা বোধ করে। এই ভালোবাসা হোলো মহত্তর একটা পবিত্রতার মাঝে নিজেকে শামিল করতে পারার তুষ্টি-জনিত গর্ববোধ। অক্ষম আবিষ্কার করে যে সে আর কোনোভাবেই তুচ্ছ নেই। বেভারলি হিলসে Chopard এর দোকানের সামনে দাড়ালেই যেমন মনে হয় এই বুঝি প্রীটি ওমেনের জুলিয়া রবার্টস বেরিয়ে আসবে এবং সব কিছু সিনেমা হয়ে যাবে।

বিপজ্জনক বলছি এজন্যে যে একজন বামন মানুষ এই ঘৃণার মৌতাত একবার খুঁজে পেলে তার পক্ষে এমন দ্বিতীয় কোনো মৌতাত খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন যা ঘৃণার মৌতাতকে টেক্কা দেবে। সে বারে বারেই ঘৃণার মাঝেই তার চৈতন্যের সারবত্তা খুঁজে পাবে। আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি – খুঁজে দেখুন – যে পাকিস্তানী কিংবা ভারতীয়দের ঘৃণা করে ইতিহাসের জন্য পাইকারী হারে, সে আপনার নিজের দেশেও বিরাট একটা জনগোষ্ঠীকে ঘৃণা করছে কোনো না কোনো কারণে। মনে রাখবেন, এই পর্যায়ে “ঘৃণা” আর কোনো স্টেট অফ মাইন্ড না, একটা লাইফ স্টাইল – তাকে ঘৃণা করতেই হয়। একটা অতি সাধারণ কথা কোনোদিনও তাকে বোঝানো সম্ভব হবে না যে এই যে ভাই আপনি একটা মানুষকে পাকিস্তানী বলেই ঘৃণা করা শুরু করে দিলেন এর মধ্যে দিয়ে কি তাকে অতিরিক্ত পাত্তা দিচ্ছেন না? পাকিস্তানীরা তো মানুষের জাত না বলে আপনার ধারণা, তাহলে তাকে আপনি এতো পাত্তা দিচ্ছেন কেন?

হুবুহু একই জিনিস আমি দেখি শাহবাগীরা যাদের ছাগু বলে প্রমত্ত হয় – তাদের মাঝেও। ইন্ডিয়ার প্রতি ঘৃণা বলতে তারা যে অনেক সময়েই হিন্দুদের ঘৃণা করা বোঝান – এই অনুভূতি টুকুও লোপ পায়। তারা ভুলে যান ছোটবেলায় যে কিছু বড় মানুষ আমাদের যে শিখিয়েছিলেন লাল পিপড়া হোলো হিন্দু পিপড়া – সেটা মুসলমানের সাম্প্রদায়িকতা ছিলো। গম্ভীর মুখে বলেন, “ভাই এর দরকার আছে”।

এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?

আমার জানা নেই কিন্তু আমি কী করি তা বলতে পারি। আপনিও বলুন, আমি শিখতে চাই।

বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে আমি পাকিস্তানী ও ভারতীয় – উভয় দেশের মানুষকেই মোটের ওপর ভালোবাসি – মানে অন্তত তাদের ঘৃণা করি না। আজকের প্রজন্মের বহু পাকিস্তানী যাদের ৭১ এর জন্য লজ্জিত হতে দেখেছি – তাদের আমি আগের প্রজন্মের পাপের উত্তরসুরী মনে করি না। ঠিক তেমনি তিস্তার পানির ভাগ পাচ্ছি না বা ফালানিকে মেরে ফেলা হয়েছে দেখে পুরা ভারতকে ঘৃণা করতে হবে এই চিন্তা ভাবনার মানুষও আমি নই। পাকিপ্রেম, মালুপ্রেম এবং বাঙ্গুপ্রেম – তিনটাই আমার মধ্যে ক্রিয়াশীল। ফুল হাতে না আসলেও আমি কাওকে অবিশ্বাস করি না এবং ল্যাটকামিও করি না। দেখুন; খুব কম মানুষের সাথে বিশ্বাস করতে হয় – এমন পরিস্থিতিতে আমি নিজেকে ফেলি – বাঙ্গুপ্রেম, মালুপ্রেম এবং পাকিপ্রেম বজায় রাখা আমার জন্য খুব মুশকিল কিছু না।

কেন?

কারণ আমার চোখে পুরা ভারতবর্ষ হোলো কংগ্রেগেশান অফ আ ভেরী লার্জ ক্রাউড অফ ইডিয়েটস। সত্যিকারভাবে অর্থে এমন কোনো পার্থক্য আমার চোখে পড়ে না যা থেকে মনে হবে যে চিটায়ঙ্গারা গুজরাটি কিংবা পাঠানদের চেয়ে অনেক অনেক আলাদা। একই আমাদের বেদনা, একই আমাদের খাসলত। একই রকম আমাদের নীচতা এবং একই রকম আমাদের গন্তব্য। শুধু কেউ বলেন আল্লাহ ভরসা, কেউ বলেন দুগ্গা দুগ্গা আর কেউ বা বলেন জয় বাংলা। অনেকেই দুই বঙ্গের মাঝেও বিশাল তফাৎ দেখতে পান, আমি পাই না। আমার চোখে ভারতীয় সরকার আর ভারতের মানুষ দুটো এক জিনিস না। কিন্তু ভারতের সাধারণ মানুষ আর আমাদের সাধারণ মানুষের মাঝে খুব বেশি পার্থক্য আমি দেখতে পাই না। ঠিক তেমনি ভাবে ৭১ এ যেমন, আজো তেমন পাকিস্তানের সরকার বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে নি যেটা পেরেছে সেখানকার সাধারণ মানুষ।

বাকী থাকে রাষ্ট্রের কথা। দেখুন ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র একটা আজগুবী ধারণা – সে হিসাবে পাকিস্তান একটা সাম্প্রদায়িক ধারণা – সন্দেহ নাই। কিন্তু রাষ্ট্র মাত্রই সাম্প্রদায়িক ধারণা। রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠতেই হবে – এটাই রাষ্ট্রের গন্তব্য। state is an imperfect solution for fighting idiots wo don’t have the necessary means or will to anhilate the others entirely. এতো বিপুল সংখ্যক গর্দভকে জায়গা করে দিতে হলে একটা পলিটিকাল সিস্টেমকে সাম্প্রদায়িক হতেই হবে। এই কথাটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য যেমন সত্য তেমনি সত্য বাংলাদেশের জন্যেও। এবং এই সাম্প্রদায়িকতাকে ধারণ না করলে আপনি কোনোভাবেই পলিটিকাল সিস্টেমের অংশীদার হতে পারবেন না।

কাওকে ঘৃণা না করে সবাইকে ভালবাসার ওয়াজ কি একটু বেশীই ক্যাথলিকসুলভ সুকোমল হয়ে গেলো?

হয় তো, কিন্তু এটাই আমি – আমি উপেক্ষায় বিশ্বাসী, ঘৃণায় না। সততার সাথে এতোটুকু বলতে পারি: কোনো পাকিস্তানী কিংবা ইন্ডিয়ান – এক মুহুর্তের জন্যেও আমার মনে হয় না – যে আমি পারবো না – এবসলিউটলি নেভার। এর একটাই কারণ: আমি কাওকে ঘৃণার মালা দিয়ে সম্ভ্রমের উচু চেয়ারে বসাই না। যে মানুষ একবার ঘৃণার ব্যবসা শুরু করবে সে কোনোদিনও সততার সাথে বলতে পারবে না – আই ডোন্ট গিভ আ ফাক। অনেকেই কথাটা বলেন রেগে গিয়ে – আমি বলি মন থেকে।

পুনশ্চ: অন্ধ দেশপ্রেম এবং জাতি বিদ্বেষ যে খুব বেশীদূর এগোয় না – এর একটা কারণ আছে। গর্দভদের নিজেদের মধ্যেকার যে প্রীতি সেটা ঘন হতে পারে খুব – কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয় না কখনোই।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s