আজকে সকাল ১০টা থেকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে(সুত্রঃ সংস্কৃতি মন্ত্রী) , মন্ত্রী এমপিদের সরকারের সাথে ব্যবসা করার আইন ভঙ্গ করে, প্রতিটা ব্যাঙ্ক এবং বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে বাধ্যতামূলক চাঁদাবাজি করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের এক সাথে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিশ্ব রেকর্ড।
একটা মর্মস্পর্শী ছবি
কে জানে, এমন একটা রেকর্ড প্রতিদিন আমরা ভাঙছি কিনা, স্কুল ঘর না থাকায় পৃথিবীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী প্রতিদিন খোলা মাঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার এবং পাঠ দান নেয়ার । কিন্তু, এঁর মধ্যেই ফেসবুকে, তন্দ্রা চাকমার স্ট্যাটাস অনেকেই দেখেছেন, খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায় সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া স্কুলের টিন-শেড ঠিক করে দেয়ার জন্যে ১.৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করতে।
পেছন থেকে তোলা, একটা ভাঙ্গা স্কুল ঘরের সামনে চার লাইনে দাড়িয়ে শপথ নিতে থাকা এই অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এই ছবিটা দেখলেই বোঝা যায়, এই রাষ্ট্র-যন্ত্র কি ভাবে তার জনগণের বেসিক চাহিদা পূরণ করতে পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
এক বছর আগে হয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের ভেঙ্গে যাওয়া স্কুলঘর ঠিক করতে যেই রাষ্ট্র ব্যর্থ , সেই রাষ্ট্রের কোন অধিকার নাই ৫০ কোটি টাকা খরচ করে, জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্ব রেকর্ড করার।
কিন্তু, সেই গুলো করছে আওয়ামী লিগের সরকার ।কেন করছে ? কারণ, এই দলের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নাই। এই দল জানে, তারা মানুষের ভোট জিতে ক্ষমতায় আসে নাই। তারা জানে, তারা ক্ষমতায় আসছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে দেশকে দুইটি ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন রকম গুটি-বাজি করে এবং ইন্ডিয়ার স্বার্থ রক্ষা করার মাধ্যমে। ফলে তাদের সমস্ত চিন্তা চেতনায় এই দুইটি ধারা প্রবাহিত হয়।
এই জন্যে আমরা দেখেছি, সমালোচনার মুখেও তারা ৫০ কোটি টাকা খরচ করে, এই অর্থহীন অনুষ্ঠানটা করে যাচ্ছে। কারো কথায় কান দিচ্ছেনা। এই গুলো ক্লাসিক স্বৈরচারী আচরণ। বড় বড় মূর্তি বানানো, বড় বড় অনুষ্ঠান করা । স্বৈরাচার নিজেই তার গড়া এই ফানুসে উড়ে বেরায়। তার ধারনা থাকে, মানুষের জীবনে শান্তি সুখের নহর বয়ে যাচ্ছে। এই জন্যে স্বৈরাচার নিয়ম করে, আচ্ছা জনগণের যেহেতু অনেক টাকা, সেহেতু আমরা সব রাস্তায় টোল বসিয়ে দেই। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেই।
এই অনুষ্ঠান আরও অনেক গুলো সম্পূরক প্রশ্নের জন্ম দেয় ।
তা হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই ভাবে কোন অনুষ্ঠানের জন্যে বাধ্যতামূলক চাঁদাবাজি করা আইন সম্মত কিনা? এ কোন রাষ্ট্র সৃষ্টি করলাম আমরা যার সরকার এই ধরনের ভ্যানিটি প্রজেক্টের জন্যে নিজেই চাঁদাবাজি করে? এই টাকার একাউন্টেবিলিটি কে নিশ্চিত করছে? এই টাকাটা অডিটেবেল কিনা? সরকার যাদের কাছ থেকে এই টাকা নিয়েছে, তারা এই অনুদানের কি পে-ব্যাক নিবে ?
এই টাকা সরকারী নিয়ম মেনে খরচ হয়েছে কিনা। এবং এই অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি-মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিকের তত্ত্বাবধানে হওয়াতে মন্ত্রী এমপিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সরকারের সাথে ব্যবসা না করার যে নিয়ম তার প্রকাশ্য বাত্যয় হলো, দুদক তার তদন্ত করবে কিনা? এই রাষ্ট্র কি, এতো নাঙ্গা হয়ে গ্যেছে যে, এই ধরনের দুর্নীতি করতে আজ রাখ ঢাক ও করতে হয় না?
এই প্রশ্ন গুলোকে উপেক্ষা করে
আজকে যখন সমালোচনার ঝড় ওঠে, ইসলামি ব্যাঙ্কের কাছ থেকে টাকা নেয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বরখেলাপ কিনা তখন বোঝা যায়, সরকার চাইছে নবীনদেরকে এবং প্রতিবাদীদেরকে দেশপ্রেমের একটা ধোঁয়াটে অন্ধকারে বুঁদ করে রাখা যাতে, আজকের প্রজন্ম , তার চোখের সামনে লুটপাট দেখেও সঠিক প্রশ্ন করতে ব্যর্থ হয়। যাতে সে সুশাসন না চায়, প্রকাশ্য দুর্নীতি দেখলেও বিভাজিত রাজনীতিতে নিজের অবস্থানের কারণে চুপ থাকে, প্রতিবাদী না হয়।
যাতে সে দেখতে ব্যর্থ হয়, সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার বাচ্চাদের সরকারী স্কুলের ঘর মাত্র ১.৫ লক্ষ টাকার জন্যে , নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয় যে সরকার সেই সরকারের ৫০ কোটি টাকার বিনিময়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার লুটপাটের মহোচ্ছবের কোন অধিকার নাই। এই উৎসব বার বার মনে করিয়ে দেয়, সেমুয়েল জনসনের বিখ্যাত উক্তি, patriotism is the last refuge of a scoundrel । বদমাইশের শেষ আশ্রয় হচ্ছে দেশ প্রেম।
এই প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে , দেশ কিন্তু মা। মাকে নিয়ে ব্যবসা করতে হয়না।
এবং যারা করে, তারা কোন একটা ধান্দার জন্যে করে। এই প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ, সেই ধান্ধাবাজদের সৃষ্ট ধোয়ার থেকে সত্যকে দেখতে পাওয়া এবং সঠিক প্রশ্নটা করা। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার দায়, এই চেতনা ব্যবসায়ীদের হাতে ব্যবহৃত না হওয়া।
আজকে আমাদেরকে তাই এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর চাইতে হবে। এই চাদাবাজি আইনসম্মত কিনা ? এর একাউন্টিবিলিটি কে দেখবে ? এবং মন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক আইন ভঙ্গ করে কিভাবে এই কাজ পায় ?
যাদের সামর্থ্য আছে, তারা সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া সরকারী স্কুলের পরিচালক দয়ানন্দ দাদার সাথে যোগাযোগ করবেন ০১৮২৮৮৬১৩০৩ নাম্বারে। এই স্কুলটি ঠিক করতে ১.৫ লক্ষ টাকা লাগবে। সরকার যদি না করে, আমরাই পারবো এই স্কুল ঠিক করে দিতে। এইটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা।
আই রিফিউজ টু বি ইউজড, আমি ব্যবহৃত হতে অস্বীকার করি । এবং এই ৫০ কোটি টাকার প্রতিটা পয়সার হিসেব চাই। সবাইকে ২৬শে মার্চের শুভেচ্ছা।
আমি একটা সুসংবাদ দেই, আমার ফেসবুক বন্ধু জাপান প্রবাসী দিদার কচি Didar Kochiভাই জানিয়েছেন, তন্দ্রাদির স্ট্যাটাস পড়ার পরে,তিনি এবং তার বন্ধুরা ইতিমধ্যেই ৮০০ ডলার কমিট করেছেন এবং ইতি মধ্যেই Tandra Chakma তন্দ্রা দিকে জানিয়েছেন, আগামি সপ্তাহের মধ্যে দের লক্ষ টাকা সুরেন্দ্র কারবারি পাড়ার মহাসেনের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়া সরকারী স্কুলের ফান্ডে দিবেন।
ধন্যবাদ কচি ভাই এবং আপনার বন্ধুদেরকে। এক টিকেটে দুই ছবি দেখার মত চেতনা ব্যবসা আর টাকা লুটপাট করা নতুন মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ীদের যুগে , আপনারাই দেখিয়ে দিচ্ছেন, দেশপ্রেম কি জিনিষ ।
৫০ কোটি টাকার সাথে তুলনা করলে, দেড় লক্ষ টাকা হয়তো কিছুই নাই, কিন্তু , মিথ্যার মধ্যে সত্যকে বেছে নেয়ার ইচ্ছাটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা।
সূত্র ঃ
তন্দ্রা চাকমার ফেসবুক স্ট্যাটাস।
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10152321709877152&set=a.310807447151.183524.719932151&type=1&stream_ref=10
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন। প্রায় তিন লাখ লোক একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।
http://bangla.bdnews24.com/ bangladesh/article759318.bdnews