ইসলাম সম্বন্ধে অমুসলিম মনীষীদের মতামত

by Raseduzzaman Tahan

ভারত তথা পৃথিবীর খ্যতনামা অমুসলিম মনীষীরা ইসলাম সম্বন্ধে সুধারণা পোষণ করতেন এবং করেন। মিঃ জি. সি. ওয়েলস বলেছেন- “আরবদের ভিতর দিয়েই মানুষ জগত তার আলোক ও শক্তি সঞ্চয় করেছে।…..ল্যাটিন জাতির ভিতর দিয়ে নয়।”

মেজর আর্থার গ্লীন লিনওয়ার্ড বলেন-“আরববাসীদের উচ্চ শিক্ষা সভ্যতা ও মানসিক উৎকর্ষ এবং তাদের উচ্চ শিক্ষার প্রণালী প্রবর্তিত না হলে ইউরোপ এখনো অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমগ্ন থাকত। বিজেতার উপর সদ্ব্যবহার ও উদারতা তাঁরা যে প্রকার প্রদর্শন করেছিল তা প্রকৃতই চিত্তাকর্ষক।”

পাদ্রী আইজ্যাক টেলর বলেন-“জগতের বহু দেশ ব্যাপী ইসলাম ধর্ম খৃস্টধর্ম অপেক্ষা সাফল্য লাভ করেছে। সর্বক্ষেত্রে খৃস্টধর্মের প্রচার ক্রমশঃ ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হয়েছে এবং ইসলাম ধর্মালম্বী জাতিকে খৃস্টধর্মে দীক্ষিত করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পরেছে, এমনকি যে স্থানসমুহে পূর্বে খৃস্টধর্ম প্রচারিত ছিল তাও ক্রমশঃ খৃস্টধর্মের প্রচারকগণের প্রভাবমুক্ত হতে আরম্ভ করেছে। মরক্কো হতে জাভা এবং সম্প্রতি পৃথিবীর একপ্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত স্বীয়প্রভাব বিস্তার করে ইসলামধর্ম সুদীর্ঘ পদবিক্ষেপে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকা প্রভৃতি সকল মহাদেশই অধিকার করতে অভিযান আরম্ভ করেছে।”

সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেন-“আমার আশা হয় অদূর ভবিষ্যতে সমস্ত দেশের শিক্ষক প্রাজ্ঞমন্ডলীকে সমিল্লিত করে কোরআনের মতবাদের উপর ভিত্তি স্থাপন করে জগতে একতামুলক শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব। কারন একমাত্র কোরআনই সত্য এবং মানবকে সুখ ও শান্তির পথে পরিচালিত করতে সক্ষম।” বলাবাহুল্য, তাঁর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বেই এ মন্তব্য।

স্যার উইলিয়াম মূর বলেন-“সম্রাট হিরাক্লিয়াসের অধীন সিরিয়াবাসী খৃস্টানগণ যেভাবে বাস করেছিলেন আরব মুসলমানদের অধীনে তাঁর অপেক্ষা অধিক পরিমাণে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা ভোগ করেছিলেন।”

ঐতিহাসিক শ্রীনগেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন-“ইসলামের বিশ্বজনীনত্বের সৌন্দর্যে মুগ্ধ মানবগণ আজ ধরায় এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত তাদের ভাব ও ভাষার আদান প্রদান করতে এবং কর্মের যোগসূত্র স্থাপন করতে প্রয়াসী। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের বক্ষব্যাপি এ সৌভ্রাতৃত্ব স্থাপন-তাও ইসলামের উদার শিক্ষার প্রকৃষ্ট অবদান।

আজ যদি জগতের লোক সে বিশ্ববন্ধু বিশ্বনবীর পদাঙ্ক অনুসরন করে সংসার পথে বিচরণ করতে পারে, সে পূর্ণকীর্তির চরিত্রকথা যদি সর্বত্র প্রচারিত হয় তা হলেই আইন-কানুনের শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য হাজার হাজার প্রহরী নিযুক্ত করার কোন আবশ্যকতা থাকবেনা। তা হলে হিংসা, দ্বেষ, কলহ,বিষাদ ধরাপৃষ্ঠ হতে মুছে যাবে। যদি তার উদাহরণে আপনার চরিত্রকে গঠিত করতে পারে তাহলে এ ভারতে স্বাধীনতার পথে কে অন্তরায়ে হতে পারে? তা হলে কখনও অশান্তির উদয় হয়না।”

ভারতের ব্রহ্মধর্মের নেতা আচার্য কেশবচন্দ্র বলেন-“যখন কোন বিশ্বাসী স্বর্গের ঈশ্বরের সাথে সংগ্রাম করে, তার সিংহাসন বিপর্যস্ত এবং তার পৃথিবীর রাজ্য ধ্বংশ করতে যত্ন করে, ঈশ্বরের প্রত্যেক যথার্থ সৈনিক ঈশ্বরের জয় পতাকা হাতে করে যুদ্ধ করতে অগ্রসর না করে অবিশ্বাস উপহাস বিমর্দ্দিত হবে। ভারতের বহ্মবাদীগণ যেন নিরন্তর এ প্রেরিত পুরুষের সম্মান করতে পারেন এবং তিনি স্বর্গ হতে যে বিশুদ্ধ একেশ্বরবাদের সংবাদ আনয়ন করেছেন যে তা গ্রহণ করতে সমর্থন হন।”(মহাজন সমাচার, পৃষ্ঠা ১২৭-১২৯)

পরিব্রাজক ব্যারিস্টার চন্দ্রশেখর সেন লিখেছেন-“কেবলমাত্র ষোল বছরের বালক হযরত আলীকে ও বিবি খাদিজাকে সাথে করে যিনি সনাতন ধর্ম প্রচার করতে সাহসী ও প্রবৃত্ত হন এবং সে প্রচারের ফলে সহস্রাধিকবর্ষ পৃথিবীর অর্ধেক স্থান ব্যাপী এ ধর্ম চলতেছে। তিনি ও তার সে বিধাতা প্রেরিত তাতে তিলমাত্র সন্দেহ নাই।”(ভূ-প্রদক্ষিণ,৫২৫ পৃষ্ঠা)

শ্রীমানবেন্দ্রনাথ রায় বলেন-“Learning from the Muslim Europe became the leader of modern Civilization……”[Historical Role of Islam] অর্থাৎ মুসলিম শিক্ষার প্রভাবেই ইউরোপ আধুনিক সভ্যতার নেতা হতে পেরেছে।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বলেন-“জগতের বুকে ইসলাম সর্বোতকৃষ্ট গণতন্ত্রমূলক ধর্ম। প্রশান্ত মহাসাগর হতে আরম্ভ করে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত সমস্ত মানবমন্ডলীকে উদার নীতির একসূত্রে আবদ্ধ করে ইসলাম পার্থিব উন্নতির চরম উৎকর্ষ লাভ করেছে।”

ডক্টর তেজ বাহাদুর সাপ্রু বলেন-“হিন্দুদিগকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় ইসলাম ধর্মের কতিপয় মূলনীতি- আল্লাহর একত্ববাদ ও মানবের বিশ্বজনীনত্ব।”

শ্রীভুদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন-“হিন্দু স্বধর্ম বিধেয়রুপ পাপের প্রাশ্চিত্তের জন্যই বিধাতা মুসলমানকে শাস্তারুপে এ দেশে পাঠিয়েছিলেন।”

গুরু নানক বলেন বলেন-“বেদ ও পুরাণের যুগ চলে গেছে; এখন দুনিয়াকে পরিচালিত করার জন্য কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ। মানুষ যে অবিরত অস্থির এবং নরকে যায় তার একমাত্র কারণ এটা যে, ইসলামের নবীর প্রতি তার কোন শ্রদ্ধা নেই।”

শ্রীজওহরলাল নেহেরু বলেন-“হযরত মুহাম্মাদের প্রচারিত ধর্ম, এর সততা, সরলতা, ন্যায়নিষ্ঠা এবং এর বৈপ্লবিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সমতা ও ন্যায়নীতি পাশ্ববর্তী রাজ্যের লোকেদের অনুপ্রাণিত করে। কারণ এ সমস্ত রাজ্যের জনসাধারণ দীর্ঘদিন যাবত একদিকে শাসকগোষ্ঠী কতৃক নিপীড়িত, শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছিল; অপরদিকে ধর্মীয় ব্যাপারে নির্যাতিত নিষ্পেশিত হচ্ছিল পোপদের হাতে। তাদের কাছে এ ইসলাম বা মুহাম্মদের নীতি নতুন ব্যবস্থা ছিল মুক্তির দিশারী।”

শ্রীমহাত্মা গান্ধী বলেন-“প্রতীচ্য যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত, প্রাচ্যের আকাশে তখন উদিত হল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং আর্ত পৃথিবীকে তা দিল আলো ও স্বস্তি। ইসলাম একটি মিথ্যা ধর্ম নয়। শ্রদ্ধার সাথে হিন্দুরা অধ্যয়ন করুক তাহলে আমার মতই তারা একে ভালবাসবে।”

শ্রীস্বামী বিবেকানন্দ বলেন-“ইউরোপের সর্বপ্রধান মনীষীগণ-ইউরোপের ভলটেয়ার, দারউইনি, বুকনার ফ্লনারিয়, ভিক্টর হুগো- কুল বর্তমানকালে ক্রিশ্চানী দ্বারা কটুভাষিত এবং অভিশপ্ত; অপরদিকে এ সকল পুরুষকে ইসলাম বিবেচনা করেন যে, এ সকল পুরুষ আস্তিক, কেবল এদের নবীর-বিশ্বাসের অভাব। ধর্ম সকলের উন্নতির বাধকত্ব বা সহায়কত্ব বিশেষ রুপে পরীক্ষিত হোক, দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়েছে, সেথাই আদিম নিবাসীদের রক্ষা করেছে। সেসব জাত সেথায় বর্তমান। তাদের ভাষা, জাতীয়ত্ব আজও বর্তমান।

ইউরোপে যা কিছু উন্নতি হয়েছে, তার প্রত্যেকটি খৃষ্টান ধর্মের বিপক্ষে বিদ্রোহ দ্বারা। আজ যদি ক্রীশ্চানীর শক্তি থাকত তাহলে ‘পাস্তের’ (Pasteur) এবং ‘ককে’র (Koch) ন্যায় সকলকে জীবন্ত পোড়াত এবং ডারউইন-কল্পদের শূলে দিত। এর সাথে ইসলামের তুলনা কর। মুসলমান দেশে যাবতীয় পদ্ধতি ইসলাম ধর্মের উপরে সংস্থাপিত এবং ইসলামের ধর্মশিক্ষকরা সমস্ত রাজকর্মচারীদের বহুপূজিত এবং অন্য ধর্মের শিক্ষকেরাও(তাদের নিকট) সম্মানীত।” (দ্রঃ স্বামী বিবেকানন্দের লেখা ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ পুস্তকের ১১৭, ১১৮ ও ১১৯ পৃষ্ঠা)

 

Raseduzzaman Tahan ewutahanbba@gmail.com

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s