যে সাধারণ মানুষের আবেগ ও স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হয়েছিলো সেই মানুষদের হয়ে রাজনীতি করার যোগ্যতা যে গণজাগরণ মঞ্চের নেই এবং তারা যে মানুষের রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করে না, সেটা আমি প্রায় ১১ মাস আগে বলেছিলাম যখন তারা রানা প্লাজায় ‘উদ্ধার অভিযান ফটো সেশন’ করতে এসেছিলো।
রাজনীতি তো মানুষের কথা বলবে। শেয়ার বাজারে পুঁজি হারানো মানুষের কথা বলবে, গার্মেন্টস শ্রমিকের অধিকারের কথা বলবে, পাঁচ বছর পর একদিনের রাজা ভোটারের ভোটের অধিকারের কথা বলবে, বলবে দেশের তেল-গ্যাস-বন্দর লুট হওয়ার কথা, রামপাল, টিপাইমুখ, সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, ধার্মিকের ধর্ম পালনের আর অধার্মিকের ধর্ম না পালন করার অধিকারের কথা।
গণজাগরণ মঞ্চ একটি বিশাল জন সমর্থন নিয়ে এই রাজনীতির কথাগুলো বলে দেশের রাজনীতিকে পাল্টে দিতে পারতো। কিন্তু তা না করে শাহবাগে প্রতিবাদী মানুষের জমায়েতকে এই মঞ্চ স্বৈরাচারী কায়দায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একটি মাত্র চেতনা নাৎসী দাবীতে আটকে রেখেছিলো দিনের পর দিন। দাবী একটাই, ‘ফাঁসি’! অন্য কোন দাবী মানেই ‘ছাগু’! বাংলা পরীক্ষা দিতে হবে দিনের পর দিন মাসের পর মাস; অন্য কোন পরীক্ষার দিনক্ষণ জানতে চাওয়ার মানে হচ্ছে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি, রাজাকারের তালিকায় নাম লেখানো!
এই মঞ্চের আড়ালে টিকফা চুক্তিতে লুট হয়ে গেছে আমাদের ভোক্তা অধিকার, রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার চুক্তির মাধ্যমে চুড়ান্ত করা হয়েছে সুন্দরবন ধ্বংশের নীল নকশা। এমন কী তাজরীন আর রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায় বিচারের আর্তনাদকেও টুটি চেপে স্তব্ধ করে রেখেছিলো এই চেতনা নাৎসী মঞ্চ।
এখানেই শেষ নয়। এই গণজাগরণ মঞ্চ থেকেই বিরোধী মিডিয়া বন্ধ করে বিরোধী কন্ঠস্বরকে রূদ্ধ করার এবং বিনা বিচারে হত্যাকে সমর্থন করে একটি চেতনা নাৎসী জনমত তৈরী করে দেয়া হয়েছিলো। কাউকে ‘ছাগু’ প্রমান করতে পারলেই তাকে বিনা বিচারে হত্যা করা বৈধ, বৈধ তার কণ্ঠস্বর চেপে ধরে জেলে পাঠিয়ে দেয়া বা গুম করে দেয়া। এই চেতনা নাৎসী জনমতের কারণেই রাষ্ট্র বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত প্রতিবাদী মিছিলে সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যার ম্যান্ডেট পেয়েছিলো এবং নির্বিচারে প্রতিবাদী মানুষকে হত্যা করা শুরু করেছিলো; যে ধারা এখনো বর্তমান। এই মঞ্চের ফ্যাসিবাদী দাবী রক্ষার্থেই সরকার বন্ধ করে দিয়েছে ‘আমার দেশ’, ‘দিগন্ত টিভি’, ‘ইসলামী টিভি’সহ অনেক গণমাধ্যম এবং জেলে পাঠানো হয়েছে মাহামুদুর রহমানের মত সম্পাদক ও আদিলুর রহমান শুভ্রর মত মানবাধিকার কর্মীকে।
জনগণের দাবীকে টুটি চেপে ধরে যে গণজাগরণ মঞ্চ রাষ্ট্রের সমান্তরাল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো, চাইলেই যারা জাতীয় পতাকা উঠানো-নামানোর এবং শপথ করিয়ে মানুষকে হেদায়েত করতে পারতো, তা মাত্র এক বছরের মাথায় এখন আর নেই! এখন তাদেরকে সরকারী দলের অঙ্গ সংগঠনের কর্মী এবং একদা প্রহরী পুলিশের সংঘাতে জড়িয়ে হেনস্তা হতে হচ্ছে!
এই হেনস্তা হবার ঘটনায় বিভিন্ন জন বিভিন্ন অনুমান ও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। যার মধ্যে একটি অনুমান হচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চ সরকারী দমন নিপীড়নের শিকার হয়ে মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে চাচ্ছে এবং ভারতের ‘আম আদমী পার্টি’র অনুরূপ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাচ্ছে।
গণজাগরণ মঞ্চকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ভারত পন্থী মিডিয়াগুলোর যে একটি দুর্দান্ত প্রচেষ্টা আছে, সেটা ৫ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে প্রকাশিক দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠা দেখলে বোঝা যায়। যে পত্রিকাটি পুলিশের নিয়মিত ট্রিগার হ্যাপী আচরণ বা ক্রস ফায়ারে সরকার বিরোধী রাজনীতিবিদদের হত্যাকাণ্ডের খবর ছাপে না, তারা সামান্য পুলিশি টানা হেঁচড়াকে তিন কলামে প্রায় সিকি পৃষ্ঠা জুড়ে কাভারেজ দিয়েছে।

গত ৫ এপ্রিল ২০১৪, শনিবার দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় গণজাগরণ মঞ্চের সাথে পুলিশের সংঘাতকে এভাবেই গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়!
বর্তমানে ভারত রাষ্ট্রটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিলেও তারা ক্ষমতাসীন দলটির অজনপ্রিয়তায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিকে খুঁজছে, যারা ভারতের মিত্র হিসেবে বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারবে। শুরু থেকেই গণজাগরণ মঞ্চের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ভারত তাই এখন আম আদমী পার্টির স্টাইলে এদেরকে রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
লক্ষ্য করুন, গণজাগরণ মঞ্চ কিন্তু আজ পর্যন্ত টিপাইমুখ, রামপাল, সীমান্ত হত্যা, তিস্তাসহ বাংলাদেশের নদীগুলো থেকে ভারতের পানি প্রত্যাহার বিষয়ে টু শব্দটি করে নাই। আর ভারতের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ থাকলে মঞ্চের অন্যতম সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসু কী ভাষায় ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছিলো তা মনে করার চেষ্টা করুন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বরাবরই মানুষকে বোকা বানিয়ে সারপ্রাইজ দিতে পছন্দ করে। ৯১ সালে এরশাদকে জেলে পাঠানোর দাবী করে ৯৬ সালে এরশাদের সাথে জোট করা আর ৯৩ সালে গোলাম আযমকে জেলে পাঠানোর দাবী করে ৯৪ সালে জামায়াতে ইসলামীর সাথে জোট করা এর অন্যতম প্রমাণ। সে কারণে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সরকারের এই সংঘাত যদি ভারতের পরিকল্পিত ছকে নতুন গৃহপালিত বিরোধী দল সৃষ্টির জন্য করা হয়ে থাকে তাহলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।
এ কারণেই শিরোনামে লিখেছি গণজাগরণ মঞ্চ ও সরকারের সংঘাতের মধ্যে একটি ত্রিভুজ প্রেমের গল্প আছে। আর সেই গল্পটির বিষয়বস্তু হচ্ছে প্রথম পক্ষ ভারতের ভালোবাসার দাবীদার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পক্ষ আওয়ামী লীগ এবং গণজাগরণ মঞ্চের মধ্যে সংঘাত (পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিত)।
অনেকেই কৌতুহলী হয়ে আছেন জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার কবির, নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, ড. আনোয়ার হোসেনরা এখন কোন পক্ষ নেন সেটা দেখতে। উনারা সবাই সেফ সাইডে খেলেন। যদি মিডিয়ার হাইপ তুলে আসলেই গণজাগরণ মঞ্চকে একটি রাজনৈতিক প্লাটফরম হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাহলে উনারা মঞ্চের পক্ষ নিয়ে গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতা বনে যাবেন। যদিও মিডিয়ায় হাইপ তুলে সেলিব্রেটি তৈরী করা গেলেও এখনো পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক নেতা তৈরী করতে পারার দৃষ্টান্ত নেই। সেই ক্ষেত্রে স্যার জাফররা আপাতত নিরপেক্ষ থেকে আকাশের তারা গুনবেন বলেই মনে হচ্ছে।
Halwa Rutir din off.So ja hobar ta ———.
gonojagoron moncho…mainsher mathar moncho.khub to falafali korsin.ki hoise.majkhan diya ay halagor karone dhormo pran manusher vitore hingsha dhukse.r re etao ekta ay sorkar er chail.amra bujhi to…=D
দীর্ঘ একটি বছর ধরে বাংলা পরীক্ষা দিতে দিতেই তো আয়ূ ফুরিয়ে গেল! বাকী পরীক্ষাগুলো কে দিবে? অংকের পরীক্ষাটা তো এখনো হয়নি, হিসাবটা কে মিলিয়ে দিবে?
অসাধারণ লেখা লিখেছেন। আপনার জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা!
এরা ফ্যাসিস্ট ও ফাঁসিসিস্ট! এদের ধইরা ধইরা মানুষ করতে হইবো।