নুর হোসেন
গত ২বছরে মিডিয়া বিএনপির বিপক্ষে এবং আওয়ামীলীগের পক্ষে যেভাবে কাজ করেছে তাতে একটা ব্যাপার পষ্ট। সেটা হচ্ছে বিএনপির মিডিয়া উইং সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ। সাহসী সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান একা চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার তাকে জেলে ভরে বিএনপির পক্ষের মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে যে দলের পক্ষে কথা বলার মতো মিডিয়া না থাকলে বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের উপর ব্যর্থতা কতটুকু বর্তায়? আমার মতে পুরোটুকুই। এইব্যাপারে একটা ছোটখাটো বিশ্লেষণ দেয়ার আগে বলে নেই মিডিয়ার কাজ কি? মিডিয়ার কাজ হচ্ছে পারসেপশন তৈরী করা. হ্যা! পারসেপশন মানে ধারণা। মিডিয়া পারে ধারণা তৈরী করতে। আর আমাদের দেশের ইতিহাস বলে ,একসময় ধারণা সত্যে রুপান্তরিত হয়. যেমন ধরেন মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদ। একটু হিসাব করেনতো নয় মাসে ৩০ লক্ষ শহীদ করতে হলে দিনে কতজন মরতে হয়? ঠিকই ধরসেন। ৩০ লক্ষ লোক নয়মাসে শহীদ হওয়া আজগুবি ব্যাপার। এবং এই ৩০ লক্ষ শহীদের ধারনাকে স্পষ্ট করেছে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধারণা দেয়া দৈনিক পত্রিকাগুলো।
এখন আসেন দেখি গত ১ বছরে বিএনপির সবচেয়ে বড় মিডিয়া ব্যর্থতা কোন গুলা ? অনেকগুলোর মধ্যে আমার মনে হয় এক নম্বর হচ্ছে বিএনপি যে একটা মুক্তিযোদ্ধাদের দল, এই দলটা যে একজন বীরসেনানী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সে মেসেজটা পরিষ্কার ভাবে বাংলাদেশের তরুণ জনগনের কাছে দিতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। ২ নম্বর ব্যর্থতা হচ্ছে দলটি ক্রমাগত ‘মিডিয়া আক্রমন’ সয়ে গেছে। মিডিয়াতে প্রায় রক্ষনাত্মক ছিল দলটির পজিশন। মামলা-হামলা-গুম-অত্যাচার- রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করলো আওয়ামিলিগ আর মিনমিন করে গেলো বিএনপি। কি তামাশা! গ্রামে-ঘাটে-গঞ্জে কুকুরের মত মারা হলো বিএনপির নেতা কর্মীদের, আর পত্রিকা/ টিভি গুলা “বিএনপি সন্ত্রাস করে বিএনপি সন্ত্রাস করে’ গেল.
এতে বিএনপির জনসমর্থন কমে নাই. কিন্তু তা বলে মারুফ কামাল যে তার পদে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ তাতে কারো দ্বিমত থাকার কথা না. আধুনিক যুগে প্রেস সচিবের দায়িত্ব শুধু প্রেস রিলিজ লেখা না. মিডিয়াকে দলীয় কেমপেইনের সাথে চতুরতার সাথে যুক্ত করা, প্রতিপক্ষ সম্পর্কে একটা নেগেটিভ ধারণা তৈরী করা, বিভিন্নভাবে মিডিয়াস্পিন তৈরী করা, দলের অফিসিয়াল লাইন অব পাবলিক কমিউনিকেশন কি হবে তা ঠিক করা. আওয়ামিলিগ এর মিডিয়া উইং প্রত্যেকটিতে সক্ষম হয়েছে। মিডিয়া উইংয়ের একটা ব্যাপক কাজ হচ্ছে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করা. এর মানে হচ্ছে পাবলিক ডোমেইন -এ কোন মেসেজ যাবে, মানুষ কি নিয়ে কথা বলবে, পত্রিকা রাজনীতির কোন বিষয় নিয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে ছাপবে, টিভি কোন বিষয় নিয়ে টক শো করবে তা ঠিক করে দেয়া।
আমি একজন সাধারণ বিএনপির সমর্থক হিসেবে মারফ কামালের ফেসবুক ফলো করি. উনার চিন্তা-ভাবনা বোঝার চেষ্টা করি. এবং প্রায় বছর খানেক ধরে উনাকে ফলো করার পরে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে উনার বিনেপির কেনো আধুনিক যুগে কোনো সমবায় সমিতির প্রেস সচিব হবার যোগ্যতা নেই. গত বছরের একটা বিরাট সময় যখন তরুণ সমাজের একটা বিরাট অংশ বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের অবস্থান নিয়ে বেওয়াকুফি করছে মারুফ কামাল সেই সময় একটা জিন্নাহটুপি মাথায় দিয়ে ফেসবুকের প্রফাইল ফটো দিয়ে রেখেছেন।
মারুফ কামালের ইদানিং কালের স্টেটাস দেখলে মনে হয় উনি বিধবা নারী! স্বামী মারা গেছে এখন অকুল পাথারে পড়েছেন। ভালো মতো ঠাউর করে উঠতে পারছেননা চারিদিকের পরিবেশ। এখনো তিনি আওয়ামীলীগের ধরায় দেয়া ইসু বুঝতে পারেননা । একটা উদাহরণ দেই:
“দীর্ঘদিনের গলাগলির পর গজাম ও ছালীর মধ্যে আচানক গালাগালি ও পুলিসের “নিরপেক্ষ লাঠিচার্জ” একটি সেমসাইড ড্রামায় খানিকটা ক্লাইমেক্স সৃষ্টি করেছে। এখন গল্প কোন দিকে মোড় নেয় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।ব্যাপারটা কি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো? নাকি কাজ ফুরানোয় গজামকে ছুঁড়ে ফেলা? অথবা ভাগাভাগির দ্বন্দ? কিংবা আরো বড়ো কোনো অপরাধ বা ঘটনা আড়াল করার উদ্দেশ্যে তৈরি মক-ফাইট? ভালো করে না বুঝে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
প্লিজ, ওয়েট এণ্ড সি।
ফুটনোটঃ গজাম=গণজাগরণ মঞ্চ।
ছালী=ছাত্রলীগ”
বিএনপির প্রেস সচিবের স্ট্যাটাস এটা !! উনি ‘ভালো করে বুঝতে পারছেননা গণজাগরণ মঞ্চের’ নতুন ধারাবাহিক নাটক। এটা উনি না বুঝতেই পারেন। কারণ আধুনিক যুগের ‘মিডিয়া স্পিন ‘ বোঝার ধারণা উনার নাই. কিন্তু আমাদের বোঝার বাকি নাই যে উনি যোগ্য লোক নন. উনি বিএনপির রাজনীতিতে নেমে পড়তে পারেন। কিন্তু প্রেস উইংয়ের মত সফিস্টিকেটেড বিষয়ে উনার কোনো ধারণা নাই. এটা উনি বুঝে সরে যাওয়াই শ্রেয়। ভাই আপনি পদত্যাগ করেন।