by আমান আবদুহু
সমকামিতা নতুন কোন ব্যাধি না। এর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ক্লাশ ফাইভে।
বৃত্তি পরীক্ষার জন্য আমরা ভোরবেলায় জাহিদ স্যারের বাসায় গিয়ে অংক পড়তাম। আমাদের মধ্যে মাহমুদ ছিলো একটু বেশি সুন্দর। চট্টগ্রামের ভাষায় যাকে বলে লাল-পোয়া। স্যারের বাইরের রুমে প্রাইভেট পড়ানোর টেবিল ইউথ বেঞ্চি ছিলো। একদিন স্যার কি একটা কাজে ভেতরের রুমে গেছেন। উনার কলেজপড়ুয়া শ্যালক মফিজ এসে মাহমুদের পাশে বসলো। আমি তেমন কিছু খেয়াল করিনাই। অংক নিয়ে ঘাম বের হয়ে যাচ্ছে। একটু পড়ে স্যার আসার পর হঠাৎ মাহমুদ বলে উঠলো, স্যার, মফিজ ভাই আমাকে দিয়ে উনার *** ধরাইসে।
আমরা সবাই চমকে উঠলাম। তারপরেই জাহিদ স্যার স্বমুর্তিতে আবির্ভাব হলেন। সে কি মাইর! তখন এক ধরণের বেত নতুন এসেছিলো, বাদামী রংএর বৃত্ত ওয়ালা। আমরা ডাকতাম কেরাত বেত। সেদিন মফিজের সর্বাঙ্গে স্যার তিন চারটা কেরাত বেত ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। লিটারালি মাথার চুল থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত। আর স্যারের বউ পর্দার আড়াল থেকে বারবার ডাকছিলেন আর থামতে অনুরোধ করছিলেন।
নিজে ভিকটিম হলাম ক্লাশ নাইনে উঠে। কিছুদিন ঢাকায় ছিলাম। প্রতিদিন সকালে বাসে করে মীরপুর থেকে ফার্মগেট যেতাম। শুরুর দিকে ভীড় থাকতো না, কাজীপাড়া শেওড়াপাড়া যেতে যেতে বাসের ভেতর দমবন্ধ ভীড় হয়ে যেতো। আমি আইল সিটে বসে আছি। হঠাৎ টের পেলাম কাঁধের নিচে বাহুতে একজনের উত্থিত অঙ্গ চেপে আছে। মনে করলাম ভীড়ের চোটে হইসে। ঝুঁকে সামনের সিটে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। তারপর ঐ লোকও একটু সরে এসে আবার। তখন আবার নিজের সিটে হেলান দিয়ে বসলাম। আবার। লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ক্লিনশেভ ত্যালতেলে চেহারার চল্লিশ পয়তাল্লিশ বছর বয়স্ক এক লোক। উদাসী দৃষ্টিতে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে প্রচন্ড মনযোগের সাথে মানুষজন গাড়িঘোড়া দেখে যাচ্ছে। ভেতরে কি হচ্ছে তার যেন কোন খবর নাই। বললাম, ভাই সরে দাড়ান একটু। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে সরে দাড়ালো।
দুইতিনদিন পরে আবার। হুবহু একই ঘটনা। একই লোক। এবার প্রথমবারেই মেজাজ চড়ে গেলো। বমি আসতেসিলো। সিট ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে পেছনে চলে গেলাম। এর কয়েকদিন পরে দেখি ঐ লোক আবার। তবে এইবার ঠেকায় নাই। আমি যে সিটে বসে আছে, তার কয়েক সিট সামনে দাড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে চোখাচোখি হলো। এর কয়েকদিন পর আমি জানালার পাশে সিট পেয়ে বসে আছি। কেন জানি অন্যমনস্ক ছিলাম। হঠাৎ পায়ের উপর কেউ হাত রাখাতে তাকিয়ে দেখি আমার সেই বন্ধু আমার পাশেই সিট পেয়ে গেছে। এবং আমি তাকানোতে হাত না সরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, বাবু তোমার নাম কি? মুখে সেই ত্যালতেলে হাসি।
হালার পুত হালা। লম্বায় তখন আমি তার চাইতে এটলিষ্ট একফুট উঁচা। মাত্র শেভ করা শুরু করেছি। জাহাঙ্গীর স্যারের কাছে সপ্তাহে তিনদিন গিয়ে ইচ নি সান সি গো বলে চিৎকার করে গলা ফাটাই। আর আমারে ডাকে বাবু?? ব্যাগের বাইরের পকেটে একটা লার্জ সাইজের স্ন্যাপ-ব্লেড থাকতো তখন। বাংলাদেশে বলে এন্টি কাটার। টাকা পয়সা জমিয়ে কিনেছিলাম, এসডিআই ব্রান্ডের। প্লাস্টিকের না। বাইরের কাভারটাও চকচকে স্টিল বা এলুমুনিয়ামের ছিলো। একটু জং ধরতে শুরু করলেই ব্লেড বদলে ফেলতাম। বের করে ব্লেডটা ঠেলে বের করলাম। তারপর তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ঐটা যদি গায়ে লাগে তাইলে কেটে দিবো। এখন হাত সরান।
দাড়ানো কয়েকজন তাকিয়ে ছিলো। আর ঐ বেচারা স্প্রিং এর মতো লাফ দিয়ে সিট থেকে উঠে পেছনের দিকে চলে গেলো। আর কোনদিন দেখিনাই তাকে।
এর অনেক বছর পরে অন্য একটা ঘটনার কথা জেনেছিলাম। তেমন কিছু করার ছিলো না। চেষ্টা করেছিলাম প্রতিবিধানের, কিন্তু আমার আওতার বাইরে ছিলো। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনা দেখেছি। জানি, এই বিকৃতি বাংলাদেশের সমাজে প্রচুর আছে। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা আত্মীয়দের হাতে নিগৃহীত হয়। তাদের মধ্যে অনেকে বড় হয়ে নিজেরাই নিগ্রহকারীর ভুমিকা নেয়। বাকীদের জীবনে মানসিক ট্রমা থেকে যায়, সারাজীবন কষ্ট দেয়।
আবার সমকামী জুটির মধ্যে সত্যিকার ভালোবাসা বা মানসিক টানও দেখেছি। দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছি। কিন্তু রোগ রোগই। কোন অজানা কারণে একজনের বেডসোর থেকে কেলভিন ক্লাইনের সুগন্ধি আসতে শুরু করলেও বেডসোরের পচন ও ক্ষতির পরিবর্তন হয়ে যাবেনা।
সবাই পুরুষ সমকামীদের দিকে ফোকাস করছেন। আমার ধারণা, বাংলাদেশে নারী সমকামী কম না। বরং বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। তাদের বিষয়টা বাইরে প্রকাশ হয়না। কিছু ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা যে দেখেছি বা জেনেছি, তার অনেকগুলোর ভিত্তিতে এ ধারণা। ছেলে মেয়ে যাই হোক, এরা সবাই মানসিক ভাবে অসুস্থ। এদেরকে জাহিদ স্যারের মতো ধোলাই দিলে কোন লাভ হবে না। ভালো কিছু হবে না। এদের কাউন্সেলিং দরকার, সামাজিক প্রেষণা দরকার সুস্থ জীবনযাপনের জন্য। পিতামাতা এমনকি দরকার হলে শিশু-কিশোরদেরও পর্যাপ্ত মাত্রায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।
এ সমকামিতা অনেক পুরনো ব্যাধি হলেও, নতুন ব্যাধি হলো এর সামাজিক আত্মপ্রকাশের চেষ্টা। মানুষের ইতিহাসে এমনটা খুব বেশি দেখা যায়নি। আধুনিক যুগেও এটা আগে ছিলো ব্যাক্তিগত বিকৃতি। সামাজিকভাবে অপরাধ ছিলো। সুতরাং অনেক পটেনশিয়ালিটি আর বাস্তবে আসতো না। এখন এর জন্য উৎসাহমূলক পরিবেশ তৈরী হবে আস্তে আস্তে। একদিন আমার ছোট ভাই বা বোন হয়তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবে, প্রাউড টু বি এ হোমো!!
এখন এই বিকৃতিতে সুন্দর শব্দে এলজিবিটি নাম দিয়ে ডাকা হচ্ছে। ভার্সিটির মেইল আসে, নিচে রংধনু চিহ্ন দিয়ে লেখা থাকে, উই প্রাকটিস ডাইভার্সিটি। চুলের ডাইভার্সিটি। এবং এই শয়তানিকে মানুষের চিন্তায় সহ্য করিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশে এরা সমকামিতার গর্ববোধক মিছিল বা গে প্রাইড প্যারেড বের করে। রাস্তাঘাটে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে ঘুরে বেড়ায়।
এই গর্ববোধক মিছিল শেষপর্যন্ত বাংলাদেশেও শুরু হলো। পয়লা বৈশাখে ঢাকায় প্রগতিশীল মঙ্গলযাত্রার সাথে এইসব সমকামিদের রঙীন শোভাযাত্রা দেখা গেলো। অনেকে বলছেন, একদিন বাংলাদেশে গে প্রাইড প্যারেড হবে। হবে কি? হয়েই তো গেছে। এইটা একটা বিশাল ঐতিহাসিক ঘটনা।
সুতরাং অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন। অভিনন্দন প্রিয় লেখক শফিক রেহমানকেও। তিনি এদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে এনেছেন। কড়া ষ্টিগমা না থাকলে এলজিবিটি রাইটস ও আনতেন বলে অনুমান করি। তিনি এখন যা করবেন তা হলো গে প্রাইড প্যারেডের ইতিহাস, দুনিয়ার কোথায় কোথায় হয় এবং কি হয়, তার সাথে রাজনৈতিক কিছু ঘটনা যেমন মালয়েশিয়াতে আনোয়ার ইব্রাহিমকে সডমির মিথ্যা চার্জে ঘায়েল করার চেষ্টা, এসব মিলিয়ে মিশিয়ে একটা লেখা লিখবেন।
আরও অভিনন্দন জানাই সমস্ত শাহবাগি প্রগতিশীল চক্রকে। অভিনন্দন নাস্তিকচক্রকে, যারা দীর্ঘদিন থেকে বাংলা অনলাইনস্ফিয়ারে সমকামিতা এমনকি পশুকামিতা বা পারিবারিক অজাচারের পক্ষেও ওকালতি করে যাচ্ছেন। অভিনন্দন বাঙালী সংস্কৃতি বনাম ধর্মকে, যা উদযাপনের সুযোগে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মার্দি গ্রাস প্যারেড হয়ে গেলো। পয়লা বৈশাখের দিনে এই কাজ হওয়াটা একটু কৌতুহল-উদ্দীপক। চারুকলা-টিএসসি-শাহবাগি কেন্দ্রিক প্রগতিশীল, যারা আবহমান বাঙালী সংস্কৃতি নির্ধারণ করেন, তাদের অনুষ্ঠানের সাথে সাথে এই অনুষ্ঠান উদযাপন উড়িয়ে দেয়ার মতো কিছু না। আজ থেকে পাঁচ-দশ বছর পরে গিয়ে কি তাহলে বাংলা গে প্রাইড শোভাযাত্রা করাটা মঙ্গল শোভাযাত্রা আর পান্তা-ইলিশের মতোই নববর্ষ উদযাপনের আরেকটা অংশ হয়ে দাড়াবে?
ছোটবেলায়ে আপনার যে এরখম মানুষের হামলার শিকার হতে হয়েছে তার জন্যে আমি আসলেই দুঃখিত। কিন্তু সব যৌন প্রকাশের মানুষই তো এরখম ঘৃণা জনক কাজ করে। যেমন পরুষেরা মহিলাদের বা বাচ্চা মেয়েদের ধর্ষণ করে না? তাই বলে কি আপনি সব পরুষদের ধর্ষণকারী বা পিডোফাইল বলবেন? নিশ্চয় না। তবে সমকামীদের ক্ষেত্রে এ বিবেচনা ভিন্ন হবে কেন? যে সমকামীরা অন্য কারোর খতি করে না, সুধু নিজেদের নিয়ে থাকতে চায় তাদের প্রতি আপনার এত রাগ কেন?
বরং যে যৌনতার মানুষই হোক না কেন এরখম যৌন নির্যাতনের কাজ করলে তাদের আইনগত বিচার হওয়া উচিত।
এইগুলারে ধইরা পিটান দরকার!
Brave man you are!!!